#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২২
#Jechi_Jahan
আমি তন্ময়ের দিকে ভয়ে তাকিয়ে আছি।কিন্তু তন্ময় আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে।তন্ময় আমার দিকে আস্তে আস্তে আগাতে লাগলো।ওনাকে এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেলি।তন্ময় আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর উনি আমার হাতটা সরিয়ে ফেলে।
তন্ময়-এতো ভয় পাচ্ছো আমাকে?(বাঁকা হেসে)
আমি-(ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি)
তন্ময়-হাই অনু!!(অনুর দিকে তাকিয়ে)
অনু-(কিছু না বলে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি)
তন্ময়-আরে কিছু তো বলো।
অনু-(নিশ্চুপ)
তন্ময়-তোমরা কেওই কিছু বলছোনা আচ্ছা তুমি বলো।(আদিলের পাশে দাঁড়িয়ে)কেমন আছো?
আদিল-হুম ভালো।
তন্ময়-তা তো থাকবেই।(অনুর দিকে তাকিয়ে)
আদিল-দেখুন মিস্টার তন্ময় আমি বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্থাটা….
তন্ময়-কি বুঝেছেন?(আদিলের সামনে দাঁড়িয়ে)
আদিল-এই যে আপনি অনুকে….
তন্ময়-এই যে আমি অনুকে একসময় ভালোবাস তাম আর ওকে বিয়ে করতে চাইতাম।কিন্তু হঠাৎ এমন কি হলো যে আমি ওকে দেখে কোনো রিয়ে-ক্ট করছিনা????
আমি-তন্ময়…..
তন্ময়-তুমি চুপ করো তনু।
আদিল-দেখুন এখানে তনুর কোনো দোষ নেই।ও আমাদের ব্যাপারে কিছুই জানতো না।
তন্ময়-না জানলে তোমাদের সাথে কি ও সাদে লুকিয়ে কথা বলে।
আদিল-তুমি জানলে কেমন রিয়েক্ট করবে তাই।
তন্ময়-আমাকে সত্যি বললে আমি কোনো রিয়েক্ট করিনা কিন্তু মিথ্যা বললে খুনও করি।
অনু-তন্ময় আমি তোমাকে সবটা বলছি।
আমি-আপু???
অনু-তোমার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে থেকে আমি আদিলকে ভালোবাসতাম।যেহেতু বাবাকে ভয় পেতাম তাই সাহস করে কিছু বলতেও পারিনি।কিন্তু আদিল এটা শুনে অনেক কান্না করে আর সুইসাইট করারও চেষ্টা করে তাই অবশেষে সিদ্ধান্ত নিই বিয়ের দিনই আমি আদিলের সাথে পালাবো।আমি পালানোর পরে শুনি তনুর সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে।আমি জানতাম যে তুমি আমায় ভালোবাসো তাই ভয় পেতাম যেনো আমার কারণে আমার বোন কে না কষ্ট দাও।
তন্ময়-অনু তুমি কি জানো তুমি বিয়ের দিন পালিয়ে যাওয়ায় আমার ঠিক কতটা লাভ হয়েছে।
অনু-মানে???
তন্ময়-এইযে তনুর মতো একটা বউ পেলাম।(তনুর কাছে গিয়ে ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে)
আদিল-এটা কি সত্যি???(অবাক হয়ে)
তন্ময়-অনু জানো!!!তোমার কথা মতো আমি প্রথম প্রথম তনুকে কষ্ট দিয়েছিলাম বাট বলেনা ভালোবাসা হয়েই যায় আমারও হয়েছে।
অনু-তন্ময় থ্যাংকিউ।(তন্ময়ের হাত ধরে)
আদিল-ওই লজ্জা করেনা ছোট বোনের স্বামীর হাত ধরছো।
অনু-যাহ ফাজিল।(আদিলকে ধাক্কা মেরে)
আমি-আপু”””
অনু-হুম???
আমি-যেমন তন্ময়কে সব সত্যি বললে তেমন পরিবারের সবাইকেও বলোনা যাতে তোমাদেরকে মেনে নেয়।আর তাছাড়া আদিল ভাইয়া তো খারাপ না যে তাকে মেনে নেবে না।বরংছো তন্ময় এর থেকে দ্বিগুন ভালো।
তন্ময়-(রেগে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে)
অনু-তা সম্ভব না রে কেও মেনে নেবেনা।
তন্ময়-আমি মানাবো।
আদিল-মানে???
তন্ময়-না জানলেও চলবে।
জন্মদিনের পার্টি শেষে তন্ময় সবাইকে একসাথে সবাইকে বসিয়ে আপু আর আদিল ভাইয়ার কথা বলে।আপু আর আদিল ভাইয়াকে বাড়ীর ভেতর জোর করে আনা হয়।ওরা ভয়ে একপাশে জড়ো সড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আবদুল-তুই যে আমার মেয়ে এটা আমার ভাবতে ও ঘৃণা লাগে।(অনুর দিকে তাকিয়ে)
আমি-বাবা……
আবদুল-তুই চুপ থাক তনয়া।সেদিন শুধুমাত্র অনয়ার কারণে আমি তোর উপর এতো জোর খাটিয়ে ছিলাম।এর কারণে তোকে সেদিন বিয়ে করতে হয়েছে।(রেগে)
রাজিয়া-তুমি চুপ করবে।
আবদুল-তুমি আবার মাঝখান থেকে কেনো কথা বলছো।(রেগে)
সাবিয়া-আহা বেয়াই এমন করছেন কেনো??
রাজিয়া-আদরের মেয়ের জন্য তো এমন করবেই।
আবদুল-আমরা বাবা-মেয়ে কথা বলছি তুমি এসবে একদম নাক গলাবে না।
রাজিয়া-সেদিনও নাক গলাইনি বলে এই মেয়ের জন্য(তনুর উপর আঙুল ঠেকিয়ে)তোমার আর আমার সম্পর্ক ভাঙ্গতে যাচ্ছিলো।
আবদুল-ওই কথা এখানে একদম তুলবেনা রাজিয়া।
রহমান-বেয়ান সম্পর্ক ভাঙ্গতে যাচ্ছিলো মানে???
অনু-কিছুনা কাকু।(ভয়ে তাড়াতাড়ি বলে দিলো)
রহমান-কি???
তন্ময়-তোমরা চুপ করবে(রেগে)
সবাই-(চুপ)
তন্ময়-যা হয়েছে তা হয়ে গেছে এটা নিয়ে এত কথা কিসের আমি বুঝিনা।অনু আর আদিল একজন আরেকজনকে ভালোবাসতো তাই বিয়ে করে ফেলেছে।কিন্তু তোমরা সেটা মানার বদলে….
(বলতে গিয়ে থেমে গেলো)
এভাবে আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে তন্ময় সবাই কে মানতে বাধ্য করলো।এ বিষয় নিয়ে কথা শেষ হলে আমরা যে যার রুমে চলে যাই।আজ আম্মু, আব্বু,আপু আর আদিল ভাইয়া এখানে থাকবে।
আমি চুলে খোপা করে জামার চেইনটা অল্প খোলা রেখে খাটের উপর বসে আছি।শীতকাল হলেও আজ কেনো জানি আমার কাছে গরম লাগছে।হঠাৎ আমার পিঠে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম।স্পর্শ টা চিনলেও এখন কিছু না বলেই বসে আছি।আসলে আমার মাথায় এখন একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে যেটা হচ্ছে “এ মেয়ের কারণে তোমার আর আমার সম্পর্ক ভাঙ্গতে গিয়েছিলো”
তন্ময়-কি ভাবছো?(পিঠে হাত রেখেই)
আমি-তন্ময় আমার ঠান্ডা লাগছে।
তন্ময়-তাই!!(বলে গলায় মুখ গুঁজে দিলো)
আমি-উপ ছাড়ুন না।(দস্তাদস্তি করে)
তন্ময়-আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবো।
আমি-আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
তন্ময়-সকালে একেবারে ফ্রেশ হইয়ো।(আমাকে টেনে ওনার কোলে বসিয়ে)
আমি-ড্রেসটা চেঞ্জ করবো শুধু মেকআপ আমি তুলে ফেলেছি এখন ছাড়ুন।
তন্ময়-তাই তো ছাড়তে চাইছিনা।
আমি-আপনি…
তন্ময়-তখন কি বলেছিলে আমার থেকে আদিল দ্বিগুণ বেশি ভালো।
আমি-আপনি ওটা নিয়ে পরে আছেন?
তন্ময়-এতে আমার ইগো হার্ট হয়েছিল।
আমি-তো আমি কি করবো?(বিরক্ত হয়ে)
তন্ময়-তুমি আমার ইগো শান্ত করবে।
আমি-কিভাবে???
তন্ময়-এভাবে(বলে আমায় বিছানায় শুইয়ে দেয়)
-(সকালে)-
তন্ময়-বাবা,,,,,বাবা,,,(সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)
রহমান-কি???(সোফা থেকে দাঁড়িয়ে)
তন্ময়-আগে সবাইকে ডাকো।
সাবিয়া-সবাই আছে।
তন্ময়-আব্বু আর আম্মু কই?
অনু-বাবা আর মা সকালে চলে গেছে।
তন্ময়-ওহ।
জেনি-কি বলবি বল।
তন্ময়-বাবা আজকে বাড়ীতে ইমন আসবে।
আমি-ইমন??(চাপা কষ্ট অনুভব হলো)
অভি-ইমন বাংলাদেশ এসেছে।
জেনি-তাহলে নিশ্চয়ই বউকে নিয়ে এসেছে।
রহমান-তন্ময়ের আগে ইমন বিয়ে করেছে বলে তন্ময়ের তো সেই এক রাগ হয়েছিলো মনে আছে।
নিসা-হ্যাঁ বাবা তন্ময়ের চেহারা দেখার মতো ছিল।
আমি-ইমন কে??(তন্ময়ের পাশে গিয়ে)
তন্ময়-আমার ঝেঠাতো ভাই তবে আমার থেকে বয়সে ৪-৫ বছরের ছোট।
আমি-আচ্ছা তো বিয়ের দিন আসেনি কেনো?
তন্ময়-ইমন আমার আগে বিয়ে করেছে আর বিয়ের পর পরই ওরা লন্ডন চলে গেছে।যার ফলে ও আমার বিয়েতে আসতে পারেনি।
আমি-ওহহ।
সাবিয়া-তোর জেঠা আর জেঠিরা আসবে???
তন্ময়-হুম ওরাও আসবে।
রহমান-তাহলে আজ ওদের জন্য সবকিছু স্পেশাল করবে।কি বলো তনু???
আমি-হুম বাবা।
আমি,ভাবী আর আপু একসাথে রান্না করছি।আপুকে আমাদের সাথে রান্না করার জন্য ভাবীই বলেছে।এখন আপুকে ওরা আত্মীয় হিসেবে মেনে নিয়েছে।কি অদ্ভুত ব্যাপার,আপু এ বাড়ীর বউ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এখন আত্নীয় হিসেবেই আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।ভাবীর ফোন আসায় ভাবী রান্নাঘর থেকে চলে যায়।
অনু-তনু!!!
আমি-হুম,,,
অনু-তুই কি ইমনকে এখনো ভুলতে পারিসনি।
আমি-কিভাবে ভুলবো বলোতো।
অনু-এই কি বলছিস তুই এসব???(তনুকে ওর দিকে ফিরিয়ে)
আমি-এভাবে কেনো রিয়েক্ট করছো বলো তো?
তুমি কি ভাবছো যে ইমন আমার সামনে আসলে আমি ওর কাছে দৌঁড়ে চলে যাবো।আপু আমি ওর কাছে আর কোনোদিন যাবোনা কোনদিন না।
অনু-তন্ময় যখন ওর জেঠাতো ভাই ইমনের কথা বলছিলো তখন আমি তোকে দেখেছি।তুই কষ্ট পাচ্ছিলি ওই নামটা শুনে।
আমি-ওর কথা আর তুলোনা আপু।আমি আর ওর ব্যাপারে ভাবতে চাইনা।
অনু-ঠিক আছে তুলবোনা।
তন্ময়-তনু,,,তনু,,,(রান্নাঘরে ডুকতে ডুকতে)
আমি-হুম””””
তন্ময়-আমার সাথে চলো।(বলে হাত ধরে রুমে নিয়ে এলো)
আমি-আপনি কি পাগল আপুর সামনে এভাবে নিয়ে এলেন।
তন্ময়-তোমার প্রান্তনের নামও ইমন।
আমি-(আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি)
তন্ময়-আমি তোমাদের সব কথা শুনেছি।
আমি-তন্ম….(হুট করে জরিয়ে ধরলো)
তন্ময়-আমি জানি তুমি এখন আমাকেই ভালোবাসো।
আমি-তন্ময়!!!
তন্ময়-বলো!!!
আমি-একবার ভালোবেসে থোকা খেয়ে গেছি এবার থোকা খাবো না তো???
তন্ময়-বিশ্বাস রাখতে পারো।
আমি-ঠিক আছে এখন ছাড়ুন রান্না করতে হবে।
তন্ময়-না ছাড়বো না।
আমি-তন্ময় ছাড়ুন।(ওনাকে জোর করে ছাড়িয়ে রুম থেকে চলে এলাম)
আমরা রান্না শেষ করে গোসল করতে চলে গেলাম।আমি গোসল করে একটা বাদামি রংয়ের শাড়ী পরলাম।রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের পানি ঝারতে লাগলাম।আয়নায় খেয়াল করে দেখি তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি-কিছু কি লাগবে??(ওনার দিকে ফিরে)
তন্ময়-হুম!!!
আমি-কি???
তন্ময়-একটা বাচ্চা।
আমি-তন্ময়!!!(রেগে)
তন্ময়-বারে এতো ডং করছো কেনো??
আমি-হঠাৎ কি হলো যে এটা বলছেন।
তন্ময়-বলবোনা।
আমি-প্লিজ বলুন না।
তন্ময়-ওকে বলছি আমার পাশে বসো।
আমি-হুম বলুন।(ওনার পাশে বসে)
তন্ময়-জানো অভি ভাইয়া তো বাবা হবে।
আমি-কি???দূর আপনি মিথ্যা বলছেন।
তন্ময়-এটা কেনো মনে হলো।
আমি-এমন হলে আমি জানতাম না।
তন্ময়-মনে আছে রান্না ঘরে ভাবীর কল এসেছিল।
আমি-হুম তো???
তন্ময়-তখনই এই খবরটা জানা যায়।
আমি-তাই বলে আমাকে জানাবে না।
তন্ময়-তোমায় জানাবে বলেছিলো কিন্তু আমি বলেছি আমি বলবো তাই এখন বললাম।
আমি-ওহ তো নিচে চলুন।
তন্ময়-রেডি হবা না??
আমি-আমি রেডিই আছি জাস্ট চুলগুলো শুখালে হবে।
তন্ময়-ও তো চলো।
আমি আর তন্ময় এবার নিচে গেলাম।নিচে গিয়ে সবার সাথে গল্প করতে লাগলাম।হঠাৎ দরজা দিয়ে কেউ ভেতরে আসতে লাগলো।আমরা সবাই দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।শেষে একটা ছেলে বাড়ীর ভেতর ডুকে কিন্তু ছেলেটাকে দেখার সাথে সাথে আমার চোখে পানি জমে যায়।
-চলবে।
#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৩
#Jechi_Jahan
আমি ইমনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আর ইমনও আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমি ইমনের দিকে অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি।হঠাৎ তন্ময় গিয়ে ইমনকে জরিয়ে ধরে আর ইমনও তন্ময়কে জরিয়ে ধরে।
তন্ময়-কেমন আছিস ইমন??
ইমন-ভালো ভাইয়া।
তন্ময়-ভালো থাকবিই তো আমার বিয়ে যে করেছি।ভালো তো থাকতেই হবে।
ইমন-তুমি এখনও ওটা নিয়ে পরে আছো।
তন্ময়-আচ্ছা ছাড়!!!ইভা কেমন আছো???(ইমনের বউ)
ইভা-হুম ভাইয়া আমিও ভালো আছি।
জেঠা-ওই আমাদের চোখে পরছে না।
তন্ময়-আরে জেঠা তোমাকে ভুলতে পারি।
জেঠা-তো এতক্ষণ এটা কি হচ্ছিল???
তন্ময়-আচ্ছা ভেতরে আসো।
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে পানি জমে গেলো।আসলে আমি এতক্ষণ ইমনের বউয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।ইমনের বউ খুব সুন্দর তাই হয়তো ইমন আমাকে ছেড়ে ওকে বিয়ে করতে পেরেছে।আমি সুন্দর হলেও হয়তো ইভার মতো সুন্দর ছিলাম না।এসব ভেবে চোখে জমে থাকা পানিটা বের হয়ে গেলো।এসবের মাঝে হঠাৎ আপু আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।
অনু-তনু ইমন এখানে কি করছে???
আমি-(কিছু না বলে কাঁদতে আছি)
অনু-তনু এবার তুই কাঁদছিস কেনো???
আমি-এটা কি স্বাভাবিক নয়।(কেঁদে কেঁদে)
অনু-না স্বাভাবিক নয় তুই আজকে কি বলেছিস সেটা এখনই ভুলে গেছিস।
আমি-আপু তোমার কি মনে হয় আমি এখন কেন কাঁদছি???(কেঁদে কেঁদে)
অনু-ইমনকে না পাওয়ার জন্য।
আমি-না!!!(কেঁদে)
অনু-তাহলে???
আমি-ওকে দেখে ওকে ঠকানো টা মনে পরে গেলো।(কেঁদে কেঁদে)
অনু-বোন আমার এখন তুই কান্না থামা কেউ দেখে ফেললে খুব খারাপ একটা অবস্থায় পরতে হবে।
আমি-আপু!!!
অনু-কি??
তন্ময় ওর জেঠা-জেঠির সাথে কথা বলতে বলতে যখন তনুর দিকে তাকায় তখন দেখে তনু কাঁদছে।
তন্ময় এবার তাড়াতাড়ি তনুর দিকে পা বাড়ায়।
আমি-আমি তন্ময়কে ছেড়ে ইমনের কাছে কোনো দিনও যাবোনা।(কান্না থামিয়ে)
অনু-হুম….
তন্ময়-তনু তুমি কাঁদছো কেনো??
আমি-শরীলটা খারাপ লাগছে।(থতমত খেয়ে)
তন্ময়-তো তুমি আগে বলোনি কেনো???
আমি-বাড়িতে মেহমান আসবে এখন আমার শরীরের কথা বললে তো সবাই আমাকে নিয়েই পরে থাকতেন।
তন্ময়-অনু তোমার বোন এসব কি বলে হ্যাঁ(রেগে)
অনু-ও তো আমাকেও এখন বলেছে।
তন্ময়-বুঝে গেছি,,,তনু চলো রেস্ট নিবে।
আমি-পাগল নাকি ওনারা এসেছে এখন….
তন্ময়-কিছু হবেনা তুমি চলো।
জেঠি-কিরে তন্ময় বউয়ের সাথে পরিচয় করাবিনা?
আমি-আসসালামু আলাইকুম।(তন্ময়কে ছেড়ে জেঠির কাছে এসে পা ধরে সালাম করলাম)
জেঠি-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
তন্ময়-(আল্লাহ জেঠি যেনো অনুর কথা না বলে)
আমি-আসসালামু আলাইকুম জেঠা!!
জেঠা-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আমি-কেমন আছেন আপনারা??
জেঠা-আমরা ভালো আছি।
জেঠি-তোমার নাম কি মা????
ইমন-তনয়া জাহান।
জেঠি-তুই কি করে জানলি???
ইমন-ভাইয়ার থেকে।
জেঠি-আমাদের কখনো বললো না আর তোকে বলে দিলো।
আমি-বলেছে হয়তো।
জেঠি-এ আমার ছেলে আর ওর বউ।(ইমন আর ইভাকে দেখিয়ে)
আমি-হুম(এই ছেলেকে তো খুব ভালো করে চিনি)
জেঠি-পরিচিত হও।
আমি-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।(ইমনকে)
ইমন-ওয়ালাইকুম আসসালাম।(অবাক হয়ে)
আমি-আসসালামু আলাইকুম আপু।(ইভাকে)
ইভা-ওয়ালাইকু আসসালাম।
তন্ময়-মা তনুর নাকি শরীর খারাপ লাগছে।
আমি-না মা।
সাবিয়া-ওমা তো গিয়ে রেস্ট নে।
আমি-না মা আমি ঠিক আছি।
রহমান-নারে তুই আজ অনেক কাজ করেছিস তাই হয়তো শরীর খারাপ লাগছে।যা মা গিয়ে একটু রেস্ট নে।
আমি-আচ্ছা।
তন্ময় আমাকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো আর আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।আমায় বিছানায় শুইয়ে তন্ময় আমার হাত ধরে পাশে বসে থাকে।
তন্ময়-তনু!!
আমি-হুম”””
তন্ময়-সত্যি করে বলো তো কেনো কাঁদছিলে??
আমি-কি???(শোয়া থেকে উঠে গেলাম)
তন্ময়-এতো অবাক হচ্ছো কেনো????
আমি-অবাক হওয়ারই তো কথা।
তন্ময়-কেনো কাঁদছিলে???
আমি-কোনটা শুনতে চান সত্যিটা নাকি মিথ্যাটা?
তন্ময়-যেটা তুমি বলতে চাও।
আমি-তখন ইমনের নাম শুনে ওর ঠকানোটা মনে পরে গেছিলো তাই কাঁদছিলাম।(সরি তন্ময় এখন ও পুরো সত্যিটা আপনাকে বলতে পারলাম না)
তন্ময়-তনু।(হুট করে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি-কি হয়েছে তন্ময়???(পিঠে হাত দিয়ে)
তন্ময়-তুমি কি ইমনকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।ওর কথা শুনলেই আমার কষ্ট হয় খুব কষ্ট হয়।প্লিজ ওকে ভুলে যাওনা।
আমি-তন্ময়!!!
তন্ময়-প্লিজ আমার জন্য ওকে ভুলে যাও।আমি তোমাকে কোনোদিক থেকে কমতি রাখবোনা।এত ভালোবাসবো যে ওকে আর মনে পরবে না।প্লিজ ওকে মন থেকে ভুলে যাও।
আমি-তন্ময় আমি ওকে ভুলে যাবো।
তন্ময়-আমার কসম দিয়ে বলো।
আমি-তন্ময়(ওনার থেকে দূরে গিয়ে)
তন্ময়-কি হয়েছে পারবেনা।
আমি-আমি আমার কসম দিচ্ছি আমি ওকে ভুলে যাবো।
তন্ময়-Thank you.(বলে আবার জরিয়ে ধরলো)
((খাবার টেবিলে))
জেঠা-বাহ আজকে কতদিন পর এমন খাওয়ার খাচ্ছি।বিদেশে তো এসব খারাবের চিটে পুটেও নেই।আজ মনে মতোই খাচ্ছি।
জেঠি-তোমার শুধু খাওয়া আর খাওয়া।
জেঠা-আরে বাঙালি খাবারের তো তলনাই হয়না।
জেঠি-রান্না খুব ভালো হয়ে কে বানিয়েছে?
নিসা-তনু বানিয়েছে।
জেঠা-বাহ তনু তুমি তো খুব ভালো রান্না করো।
আমি-তোমার ভালো লেগেছে?
জেঠা-খুব ভালো।
ইমন-(তনু আসলেই অনেক সংসারি হয়ে গেছে।নাহলে আগে দইবড়া ছাড়া আর কিছুই পারতো না।আর এখন সব রান্নাই পারে)
জেনি-আচ্ছ ভাবী আরেকটা জিনিসও বানিয়েছে।
সাবিয়া-কি???
জেনি-দইবড়া!!!
ইমন-(দইবড়া???)
আমি-ও আমি তো দিতেই ভুলে গেছি।(আগে এই দইবড়াটা আমি শুধু ইমনের জন্যই বানাতাম আর আজ এই দইবড়াটা তন্ময়ের জন্য বানিয়েছি।
জেনি-ওয়েট,,,ওয়েট,,,ওয়েট,,,এই দইবড়াটা প্রথমে ভাইয়াকেই খেতে হবে।
তন্ময়-আমি কেনো প্রথমে খাবো।
জেনি-কারণ এটা স্পেশালই তোর জন্য বানানো।
জেঠা-ওমা এটা কেমন কথা।
অভি-ওই দে দে।
আমি আর জেনি সবাইকে দইবড়া দিতে লাগলাম কিন্তু আমি ইমনের সামনে পরে গেলাম।আমি যেই ইমনকে দইবড়াটা দিতে যাবো ইমন ওমনি আমাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।
ইমন-আমি দইবড়া পছন্দ করিনা।
আমি-ঠিক আছে।(বলে চলে এলাম)
তন্ময়-তনু এটা কি হলো???
আমি-কি হয়েছে???
ইমন-(আমি বললাম আর ও চলে গেলো।ও তো জানে ওর বানানো দইবড়া আমার কতোটা পছন্দের।)
তন্ময়-ইমন তোমাকে বলেছে খাবেনা তাই বলে তুমি একটু জোরও করবেনা।
আমি-ওনার পছন্দ না হলে আমি কিভাবে জোর করতে পারি।
তন্ময়-ওকে জোর করতে হবেনা ওকে দাও ও খাবে।
আমি-হুম!ইভা এটা ভাইয়াকে দাও,(ইভাকে দিয়ে)
ইভা-নাও!!
ইমন-হুম।(বাটিতা নিয়ে)
সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে যে যার রুমে চলে যায়।শুধু বাবা মা রা নিচে বসে কথা বলছে।
ইভা-ইমন কি হয়েছে তোমার???
ইমন-কি হবে???
ইভা-এখানে আসার পর থেকে তুমি কেমন মনমরা হয়ে আছো।
ইমন-কই???
ইভা-একটুও হাসোনি তুমি।
ইমন-হাসবো??
ইভা-হুম!!!
ইমন-এই নাই।(দাঁত দেখিয়ে হেসে দিলো)
ইভা-হা হা হা
# এদিকে #
তন্ময়-বলো তো আমার কথা ঠিক কিনা???
আমি-হ্যাঁ ঠিক!!!কিন্তু এখন কেনো এসব প্ল্যান?
তন্ময়-কেনো এখন প্ল্যান করতে পারবোনা।
আমি-এগুলা তো তখন করে যখন তারা মা-বাবা হবে বা হতে চলেছে।
তন্ময়-তো আমি বাবা হওয়ার আগে বাচ্চার নাম ঠিক করতে পারবোনা?
আমি-না!!!
তন্ময়-দেখো আমি আবার বলছি আমার মেয়ে হলে নাম তানবি রাখবো আর ছেলে হলে তৌহিদ রাখবো।
আমি-আপনি তো কিছুক্ষণ আগেও এটা বলে ছেন যে ছেলে হলে তৌহিদ আর মেয়ে হলে তানবি নাম রাখবো।
তন্ময়-হুম আমার প্ল্যানিং দেখেছো।
আমি-হুম।
রাতে জেনি বায়না ধরে সবাই মিলে একটা খেলা খেলবে তাই সবাইকে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো।
অভি-পিচ্ছি এটা কোনো কথা???
জেনি-কি???
অভি-এখন আমাদের খেলার বয়ষ আছে?
জেনি-আরে দাঁড়াও তো।
ইমন-আচ্ছা জেনি খেলবে টা কি???
তন্ময়-হুম খেলতে নিয়ে এলি কিন্তু খেলবি কি??
জেনি-ট্রুথ এন্ড ডেয়ার!!!
নিসা-ওয়াও তাহলে তো মজা হবে।
আদিল-তো খেলা শুরু করো।
জেনি আমাদের সবার মাঝখানে একটা কাঁচের বোতল রেখে ঘুরিয়ে দেয়।কাঁচের বোতলটা প্রথম এ আদিল আর অভি ভাইয়ার দিকে যায়।সামনের মুখ আদিল ভাইয়ের দিকে আর পেছন এর দিক অভি ভাইয়ার দিকে।যার মানে আদিল ভাইয়া যা বলবে তা অভি ভাইয়াকে করতে হবে।
আদিল-কি নিবে অভি ভাইয়া ট্রুথ না ডেয়ার??
অভি-ডেয়ার।
আদিল-যা বলবো তা করবে তো??
অভি-আরে বলেই দেখো না।
আদিল-আমাকে ৫ হাজার টাকা দাও।
অভি-কি???
আদিল-হ্যাঁ দাও।
অভি-এটা কিন্তু কথা ছিলোনা।
আদিল-এটাই কথা ছিলো দাও দেখি।
অভি ভাইয়া বাধ্য হয়েই বিকাশ থেকে আদিল ভাইয়াকে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়।এই নিয়ে আমরা কিছুক্ষণ হাসাহাসি করি।জেনি আবার বোতলটা ঘুরিয়ে দেয়।আর এবার বোতল গিয়ে থামে ভাবী আর তন্ময়ের দিকে।মানে ভাবী প্রশ্ন করবে তন্ময়কে আর তন্ময় তার উত্তর দিবে।
নিসা-ট্রুথ না ডেয়ার???
তন্ময়-ভাইয়ার মতো আমি ফাঁসতে চাইনা তাই আমি ট্রুথ নিবো।
নিসা-আমি এখন তোমাকে যেটা জিজ্ঞেস করবো সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তন্ময়-বলো।
নিসা-বিয়ের দিন অনু পালিয়ে গিয়ে কি কোনো ভুল করেছিলো???
ভাবীর অদ্ভুত প্রশ্নে আমরা সবাই চুপ হয়ে যাই।
তন্ময়-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) না!!!
নিসা-কেনো??
তন্ময়-ও না পালালে আমি তনুকে পেতাম না।
নিসা-আমি এই উত্তরই আশা করেছিলাম।
তন্ময়-হুম।(আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে)
জেনি আবার বোতলটা ঘুরিয়ে দেয়।আর এবার বোতলটা আমার আর ইভার দিকে থামে।ইভা আমাকে যা বলবে আমি তা করবো।
ইভা-ট্রুথ নাকি ডেয়ার???
আমি-ট্রুথ!!!
ইভা-এমন কাও কে কি ভালোবেসেছো যাকে কখনো ছাড়তে চাওনি বা চাওনা।
আমি-হুম বেসেছি!!!আমি যাকে ভালোবেসেছি সে খুব ভাগ্যবান কারণ তাকে আমি ভালোবেসে ছিলাম।তাকে কখনো ছাড়তে চাইনা।আর সব চেয়ে বড় কথা সে এখন আমার সামনে।(বলে সোজা ইমনের দিকে তাকিয়ে তন্ময় এর দিকে তাকালাম আর মুচকি হাসলাম)
ইভা-পেয়ে গেছি উত্তর।
ইমন-(জানি তুমি আমাদের দুজনকেই বলেছো)
১৭ দিন পরঃ-
এই ১৭ দিনে আমি ইমনকে যত পেরেছি তত ইগনোর করেছি।এই কয়দিনে তন্ময় যখনই আমার হাত ধরে বা জরিয়ে ধরে ঠিক তখনই ইমন আমাদের সামনে চলে আসে।তবে এই কয়েকদিন ধরে আমার শরীর টা খুব খারাপ লাগছে।সারাক্ষণ ঘুম আসে,মাথা ঘুরে,বমি আসে আরো খারাপ লাগে শরীল।আমি এসব কাওকে বলিনি।শরীরের এমন অবস্থা দেখে আমি কালকে ডক্টর দেখিয়ে গিয়েছিলাম।ডক্টর কিছু টেস্ট করেছে যার রিপোর্ট আমি আজ নিতে এসেছি।
আমি-আসসালামু আলাইকুম ডক্টর।
ডক্টর-ওয়ালাইকুম আসসালাম,কেমন আছো??
আমি-আছি মোটামুটি।
ডক্টর-রিপোর্ট নিয়ে এসেছো।
আমি-কি এসেছে রিপোর্টে ডক্টর?
ডক্টর-আমি যেটা ভেবেছিলাম।
আমি-কি ভেবেছিলেন আপনি???
এরপর ডক্টর আমাকে যেটা বলে তা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।
-চলবে