#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২০
#Jechi_Jahan
তন্ময় আমাকে এই প্রশ্ন করার পর আমি কি বলব তার আগেই তো শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আবিদ আমাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিবে ভাবতে পারিনি।
তন্ময়-কে ও???(রেগে চিৎকার করে)
আমি-ও ও আমার….
তন্ময়-তোতলাচ্ছো কেনো?(রেগে)
আমি-ক ক কই?
তন্ময়-তনু বলো এই ছেলেটা কে???
আবিদ-আমি বলছি।
তন্ময়-আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি?(রেগে)
আমি-ত ত তুই বলনা আ আবিদ।
আবিদ-না বলে আর থাকতে পারি।আমি তনয়ার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড আবিদ রহমান।আমি এতোক্ষণ এই কথাগুলো আপনাদের সাথে ফান করে বলেছি।
তন্ময়-কি???
আবিদ-তনু!!!ভাইয়ার মনে হয় কানে সমস্যা।
তন্ময়-না তেমন না আসলে রাগ উঠে গেছিলো।
আবিদ-এটাই স্বাভাবিক।কিরে তনু???
আমি-তুই একটা বেক্কল।(বলে চলে এলাম)
তন্ময়-What”!!
আবিদ-আরে এসব ছাড়ুন না।
তন্ময়-হুম।
আমি ওখান থেকে এসে জেনির কাছে গেলাম।
আমি-জেনি!!!
জেনি-হুম ভাবী।
আমি-তুমি আবিদকে কোথায় পেলে???
জেনি-পেলাম কোথাও একটা।
আমি-জেনি সত্যিটা বলো।
জেনি-তোমার ফোন থেকে।
আমি-আমার ফোন থেকে???
জেনি-কালকে সকালে তোমার ফোনের চবি দেখ ছিলাম আমি।চবি দেখতে দেখতে আবিদের চবি সামনে চলে আসে।আবিদের চবির নিচে লেখা ছিলো মাই ব্রেস্ট ফ্রেন্ড।
আমি-ওহ যোগাযোগ করলে কখন???
জেনি-কালকে রাতে।
আমি-নাম্বার কোথায় পেলে???
জেনি-রাতে ডিনারের পর আমি তোমার ফোনের কন্ট্রাক্ট নাম্বারগুলো চেক করে আবিদের নাম্বার টা নিই।কারণ তখন আমার মনে হয়েছিলো আমাকে আবিদই সাহায্যে করতে পারে।
আমি-কেমন সাহায্য??
জেনি-বলবো তো।
আমি-সেসব ঠিক আছে কিন্তু আবিদকে এখানে আনার মানে কি???
জেনি-কালকে তোমার স্বামী নিহাকে কেনো এনেছে জানো???
আমি-এখানে থাকার জন্য।
জেনি-আরে গাঁদা তোমাকে জেলাস ফিল করা নোর জন্য।
আমি-আমি কেনো জেলাস হবো উনি কি নিহার সাথে গা ডলাডলি করছে নাকি।
জেনি-করছেনা বাট তোমাকে দেখানোর জন্য আর জেলাস ফিল করানোর জন্য হলেও গা ডলাডলি করে ঘুরে বেরাবে।
আমি-তো এতে আবিদ কিভাবে এলো?
জেনি-কারণ আবিদের সাথে তুমি ফ্রী।ওর সাথে তুমি ঘুরবে,কথা বলবে,গল্প করবে আর এসব দেখে ভাইয়া জ্বলবে।
আমি-তুমি তো দিন দিন ফাজিল হচ্ছো।
জেনি-বারে যার জন্য করি চুরি সে বলে চোর।
আমি-আচ্ছা কিসের সাহায্যে বলো।
জেনি-কালকে ভাইয়া তোমকে এক প্রকার কষ্ট দিয়েছে।এখন যদি তুমি আবিদের সাথে মিশে মিশে ভাইয়াকে জেলাস ফিল করাও তাহলে ভাইয়ার ও কালকের মতো সেম কষ্ট হবে।আর এই কষ্ট টা দিতেই তো আমাদের আবিদের সাহায্য লাগবে বুঝেছে।
আমি-এখন ছাড়ো এসব নাস্তা করতে আসো।
আমরা সবাই নাস্তা করে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছি।এই আড্ডায় আমি আর আবিদ একসাথে বসেছি।বসেছি বললে ভুল হবে জেনিই বসিয়েছে। যা দেখে তন্ময় রেগে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।তন্ময় আর জেনি একসাথে বসেছে আসলে ওনাকেও জেনিই জোর করে বসিয়েছে।আজ আমাদের কাজ নেই কারণ তন্ময় বলেছে খাবার বাইরে থেকে অর্ডার করে নিবে।
আবিদ-আচ্ছা আমরা একটা খেলা খেলি।
নিসা-কেমন খেলা???
আবিদ- Truth to Dare….
জেনি-ওয়াও নট বেড।
আবিদ-ওকে তো সোফার কুসন দিয়েই শুধু করি।
আবিদ নিজের ফোনে একটা গান চালিয়ে দেয় আর কুসনটা একজন থেকে আরেকজনকে দেয়।
গান শেষ হলে কুসন অভি ভাইয়ার কাছে যায়।
আবিদ-ওহো ভাইয়া!!!ট্রুথ নাকি ডেয়ার????
অভি-উমমম ট্রুথ।
আবিদ-ওকে তো প্রশ্ন করা হোক।
জেনি-ওয়েট আমি করবো আমি করবো।(জোরে)
আবিদ-ওকে করো।
জেনি-তুই তোর এক্সকে কল করা বন্ধ করেছিস?
অভি-হ্যাঁ।(তাড়াতাড়ি বলে ফেলে)
নিসা-হ্যাঁ???
অভি-না,হ্যাঁ,না ওই আমার তো এক্সই নেই।
জেনি-🤣🤣🤣
অভি-পেন্তী একটা।
এবার আবার গান শুরু করা হয়।এবার গান শেষ হলে কুসনটা আমার কাছে এসে থামে।এবার সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আবিদ-ট্রুথ নাকি ডেয়ার???
আমি-হুমমমম ডেয়ার।
আবিদ-বাহ বাহ সাহসটা এখনো রেখেছিস???
আমি-নাটক না করে বল।
নিহা-আমি বলি?
আমি-বলো।
নিহা-আমাদের জন্য কফি বানিয়ে আনো।
আমি-এটা কোনো ডেয়ার হলো।
নিহা-আরো কঠিন দিবো??(মুচকি হেসে)
আমি-না যাচ্ছি।(বলে উঠে রান্না ঘরে গেলাম)
নিহা-(তনুকে দেখলে আমার শুধু হিংসা হয় তাই চোখের সামনে থেকে দূরে পাঠিয়ে দিলাম)
আবিদ-ওকে তো খেলা শুরু করি।
অভি-হুম।
আমি কফি বানিয়ে এনে দেখি তন্ময় বাদে একে একে সবার কাছে দান যায় আর সবাই শুধু ট্রুথ চয়েস করিছিলো।অবশেষে তন্ময় ও দান পায় কিন্তু উনি ডেয়ার চয়েস করেন।
আবিদ-তনু তোর স্বামীর পকেট মারমো আজকে।
আমি-কি???
আবিদ-ওকে তো দুলাভাই এর টা আমি চয়েস করবো।অন্য কেও এতে ভাগ দিওনা।
তন্ময়-ওকে বলো কি করতে হবে।
আবিদ-বেশি কিছু না আমাদের কিছুক্ষণ পর একটু ঘুরাতে নিয়ে যাবে আর একেবারে বিকালে নিয়ে আসবে।
তন্ময়-এটা কোনো ব্যাপার নাকি।
জেনি-সব খরচ তোকেই দিতে হবে।
তন্ময়-কি???
আমরা-🤣🤣🤣🤣🤣
তন্ময়-আমার একটা শর্ত আছে।
আবিদ-আবার শর্ত ও???ওকে বলো।
তন্ময়-আমি বাইক এ যাবো।
আবিদ-ওয়াও আমার বাইক আছে আমিও যাব।
অভি-তো আমি???আমার তো বাইক নেই।
তন্ময়-তোমরা গাড়ীতেই যেয়ো।
অভি-হুম।
তন্ময়-ওকে তো এখন রেডি হয়ে আসো।
অভি-হুম যাচ্ছি।
তন্ময়-আর তনু তুমি আমার সাথে আসো।
আমি-হুম চলুন।(বলে রুমে গেলাম)
জেনি-আবিদ ভাইয়া।
আবিদ-হুম জেনি।
জেনি-প্ল্যান মনে আছে তো?
আবিদ-হুম আছে আমাকে শুধু তনুর আশেপাশে ঘেঁষতে হবো এটাই তো।
জেনি-হুম!!!কালকে ভাইয়া ভাবীকে জেলাস ফিল করানোর জন্য নিহাকে এনেছিলো আর আমি ভাইয়াকে জেলাস ফিল করানোর জন্য তোমাকে এনেছি।
আবিদ-বুদ্ধি আছে।
————————————
আমি-তন্ময় প্লিজ।
তন্ময়-না।(শার্ট পরতে পরতে)
আমি-আমি জামা পরবোনা।
তন্ময়-এই জামাটাই পরবা।(একটা আকাশি কুর্তি এগিয়ে দিয়ে)
আমি-দূর!!(জামাটা নিয়ে পরে এলাম)
আমি আর তন্ময় রেডি হয়ে নিচে আসি।নিচে এসে দেখি আবিদও আকাশি কালারের শার্ট আর শার্টের উপর একটা ক্রীম কালারের ব্লেজার পরা।
আমিও কুর্তির সাথে ক্রীম কালারের হিসাব পরে ছিলাম বলতেই আমাদের ড্রেসআপ পুরো সেম।
আবিদ-আরেহ বাস কি মিল দেখ।
আমি-সত্যি তো।(মুচকি হেসে)
তন্ময়-মনে হচ্ছে Together for each others।(শক্ত কন্ঠে)
আবিদ-আরে নাহ ওটা আপনার আর তনুর জন্য।
তন্ময়-বাকিরা এখনো আসেনি তাইনা।
আবিদ-হুম এখনো আসেনি।
তন্ময়-তনু আমার জন্য একটু পানি আনো তো।
আমি-আনছি।(বলে রান্না ঘরে গেলাম)
তন্ময়-আবিদ তুমি গিয়ে বাইকটা বের করো।
আবিদ-ওকে ভাইয়া।
আমি তন্ময়ের জন্য পানি এনে ওনার হাতে ধরিয়ে দিই।তন্ময় পানিটা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমিও তাকিয়ে আছি।হঠাৎ তন্ময় আমার মুখের উপর পানিটা মেরে দেয়।যার ফলে আমার মুখ সহ হিজাব আর জামা ভিজে গেছে।
আমি-তন্ময়!!!
তন্ময়-ওহ শিট ড্রেসটা তো ভিজে গেছে।
আমি-কি???(রেগে)
তন্ময়-চলো চলো চেঞ্জ করবে(বলে রুমে আনল)
আমি-এমন কেনো করলেন।
তন্ময়-আমার সাথে মেচিং করে পরো।(আলমারি থেকে আমার সব শাড়ী বের করে)
আমি-আমি কি এটা বলছি???
তন্ময়-তোমার জানার দরকার নেই।
আমি-উপপপ।
তন্ময়-(অনেক খুঁজে একটা কালো রংয়ের জর্জেট শাড়ী পেলো যেটা তনু কোনোদিন পরেনি)নাও এটা পরে আসো।
আমি-এগুলা আবার গুছিয়ে রাখুন।
তন্ময়-সেটা আমি করছি তুমি যাও।
আমি ওয়াশরুমে এসে চেঞ্জ করে আগের জামাটা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম আর আগের জামাটা বারান্দায় শুকাতে দিয়ে রুমে এলাম।আমি মুখটা টিস্যু দিয়ে মুছে শাড়ীর সাথে মেচিং করে ঠোঁটে গাড় লাল লিপস্টিক দিলাম আর কালো রংয়ের হিজাব পরে নিলাম।আমি রেডি হয়ে যেই বেরো তে যাবো তন্ময় আমায় টেনে রুমে নিয়ে যায়।
তন্ময়-দাঁড়াও।
আমি-আর কি??
তন্ময়-ওয়েট!!(বলে আমার হাতের চুড়িগুুলো যেগুলা মা দিয়েছি—খুলে আমার দুই হাতে সাদা পাথরের অনেকগুলো চুড়ি পরিয়ে দেয়)
আমি-এগুলো???
তন্ময়-এখন পারফেক্ট চলো।
আমি আর তন্ময়ের একই রংয়ের ড্রেসআপ।তন্ময় সাদা শার্টের উপর কালো ব্লেজার পরেছে তাই আমাকেও কালো শাড়ী পরতে বলেছে।
জেনি-এতো দেরি করলে কেনো?
আমি-সরি।
আবিদ-এই তুই এদিকে আয় তো।(আমাকে টেনে অন্য দিকে নিয়ে)
আমি-কি হয়েছে সবার সামনে এভাবে নিয়ে….
আবিদ-তুই তো পুরা চেঞ্জ।
আমি-কেনো কি হয়েছে???
আবিদ-একটু আগে কি ছিলি আর এখন কি??
আমি-সেসব পরে বলবো এখন চল।
আমি এবার তন্ময়ের কাছে এসে দেখি উনি আমার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝলাম না এতে রেগে যাওয়ার কি আছে।
জেনি-আচ্ছা বড় ভাইয়া,বর ভাবী আর নিহা গাড়ী তে যাবে আর আমরা বাইকে যাবো ওকে।
তন্ময়-না!!!
জেনি-তো???
তন্ময়-আমি আর নিহা একি বাইক এ যাবো আর আবিদ আর তুই একি বাইকে যাবি।তনু কোথায় যাবে আমি জানি।নিহা আমার বাইকে উঠো।
নিহা-ওকে(হাসিমুখে বাইকে উঠল)
আমি-(তন্ময়ের এই কথায় আমি খুব কষ্ট পাই)
জেনি-(এতো মেঘ না চাইতেই জল)ওকে তো ভাবী তুমি আবিদের বাইকেই উঠো আমি গাড়ীতে করে যাচ্ছি।
আমি-হুম।(বলে আবিদের পেছনে বসলাম)
তন্ময়-(এই জেনিটা তো একটা ফাজিল)
আবিদ-তনু আমাকে পেছন থেকে ধর নাহলে বাইক স্টার্ট দেওয়ার সময় পরে যাবি।
জেনি-হ্যাঁ ভাবী ধরে বসো নাহলে পরে যাবা।(তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে)
আমি-ওকে(বলে যেই আবিদকে ধরতে যাবো ওমনি তন্ময় আমাকে টেনে বাইক থেকে নামিয়ে দেয়)আউচ!!!
তন্ময়-তুমি আমার সাথেই চলো।
জেনি-মাত্র না বারণ করলি।(মুচকি হেসে)
তন্ময়-তুই চুপ থাক।
নিহা-তাহলে আমি???
জেনি-গাড়ীতেই বসো।
এবার আমরা একসাথে বাইকে করে রওনা দিলাম।প্রায় অনেক জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু একটা জায়গায় ঘুরতে গিয়ে আমার ভয় করতে শুরু করলো।কারণ ওখানে আমি আমার চেনাপরিচিত
দুজন ব্যক্তিকে দেখলাম।আমার ভয় করছে এ নিয়ে যে তন্ময় যদি এদের দেখল তাহলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
-চলবে
#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২১
#Jechi_Jahan
আমার ঠিক সামনে আপু আর আদিল ভাইয়া দাঁড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে।আমি ওদের দিকে এক নজরে তাকিয়েই আছি।আমি আর কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে হেঁটে ওদের কাছে যাই।
অনু-তনু??(তনুকে জরিয়ে ধরে)
আমি-হুম আমি।(আপুকে ছাড়িয়ে)
অনু-তুই এখানে কি করছিস???
আমি-সবাই মিলে ঘুরতে এসেছি।
আদিল-শালী দেখি আমাকে ভুলেই গেছে।
আমি-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
আদিল-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আমি-কেমন আছেন?
আদিল-এইতো ভালো।
আমি-আপু তোমরা এখান থেকে চলে যাও।
অনু-কেনো???
আমি-তন্ময়ের পরিবারের লোকেরা এখানে আছে তোমাদের এখানে দেখলে কেলেংকারী হবে।
আদিল-অনু চলে যাক আমি থাকি।
অনু-কি বললে???
আদিল-তনু তোমার বোন কানে কম শুনে???
আমি-এমা না না।
অনু-তনু জানিস এ না একটা ফাজিল।
আমি-আচ্ছা আপু আমি যাই সবাই আমাকে না দেখলে খুজতে খুজতে এখানে চলে আসবে।
অনু-আচ্ছা যা আমরাও চলে যাচ্ছি(জরিয়ে ধরে)
আমি-ওকে বাই।
৯ দিন পরঃ-
আমি আজ সকাল থেকে খেয়াল করছি সবাই কেমন আমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখছে।কেও আমাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না।আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর ইশারায় দিয়।আমি বুঝতে পারছিনা যে কেনো এমন করছে।
আমি-তন্ময়!!!
তন্ময়-কি???(ইশারায়)
আমি-সবাই আমার সাথে এমন করছেন কেনো?
তন্ময়-কি করলাম???(ইশারায়)
আমি-কেও আমার সাথে কথা বলছেন না দুরত্ব বজায় রাখছেন।কেনো বলতে পারেন??.
তন্ময়-আমি জানিনা।(ইশারায় বলে চলে গেলো )
তন্ময় আজ কোথায় গেছে জানিনা।উনি চলে যাওয়ার পর আরো খারাপ লাগতে শুরু করলো।একে তো কেও কথা বলছেনা তার উপর রুমে একা একা বসে আছি।দুপুর থেকে সেই রাত পর্যন্ত কেও আমার সাথে কথা বলেনি।বলতে গেলে আমার আজকের দিনটাই পুরো ফাউল।
তন্ময়-ওই দুপুরে খাওনি কেনো???
আমি-আপনি কথা বলেছেন???(অবাক হয়ে)
তন্ময়-ওই আমি এটা জিজ্ঞেস করেছি।
আমি-খিদে ছিলোনা।
তন্ময়-এখনও খিদে নেই???(রেগে)
আমি-নেই বলেই তো খাচ্ছি না।
তন্ময়-এখন খেতে চলো।
আমি-এসেই জ্বালাতে শুরু করেছেন???
তন্ময়-রাতে আরো জ্বালানো বাকি আছে।যাও!!!
আমি-তন্ময় রোজ রোজ……(আমাকে থামিয়ে)
তন্ময়-যাও!!!
আমি-যাচ্ছি।
আমি খেতে বসে দেখলাম আজ আমার পছন্দের সবজি পোলাও আর গরুর মাংস রান্না করা
হয়েছে।আমি তাই আর কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করলাম।খেয়াল করলাম খাওয়ার সময় ও তন্ময় ছাড়া কেও কথা বললো না।আমি খেয়ে সোজা রুমে চলে গেলাম আর তন্ময়ের আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু তন্ময় আসেই না ওয়েট করতে করতে ১১ঃ৫০ হয়ে যায়।আমি এবার ওনাকে ডাকার জন্য নিচে গেলাম।কিন্তু উনি ওখানে নেই শুধু উনি না বাড়ির কেওই নেই।আমি একে একে সবার রুম খুঁজে দেখলাম কিন্তু কেও কোথাও নেই।আর কোনো জায়গা না পেয়ে অবশেষে ছাদে চলে গেলাম।
আমি ছাদে যাওয়ার সাথে ছাদে রংবেরং এর আলো জ্বলে উঠলো আর সবাই বলতে লাগলো।
সবাই-Happy Birthday Tonu…..
আমি-😱😱😱
তন্ময়-শুভ জন্মদিন তনয়া(এগিয়ে এসে)
আমি-(খুশিতে কেঁদে দিলাম)
জেনি-একি ভাবী তুমি কাঁদছো কেনো???
আমি-তোমরা সকাল থেকে এমন করলে কেনো?
জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি।(কান্না করে)
সাবিয়া-খুশি পেতে হলে একটু কষ্ট সহ্য করতে হয় বুঝেছিস।
অভি-আরে এটা তো দেখছি ইমোশনাল পার্টি হয়ে যাচ্ছে।আসো কেক কাটো।
নিসা-হুম মা আসুন কেক কেটে ফেলি।(বলে মাকে নিয়ে কেকের সামনে চলে গেলো)
তন্ময়-তনু চলো।(আমাকে নিতে যেয়ে)
আমি-তন্ময়!!!(ওনাকে থামিয়ে)
তন্ময়-হুম!!!
আমি-থ্যাংকিউ।
তন্ময়-(কিছু না বলে আমাকে জরিয়ে ধরে)
অভি-ওই ওসব পরে হবে এখন কেক কাট।
আমি-চলুন!!!
তন্ময়-হুম চলো।
আমি গিয়ে কেকটা কাটলাম আর কেকের ফ্রাস্ট বাইক তন্ময়কে দিলাম তন্ময়ও আমাকে খাইয়ে দিলো।আমি একে একে সবাইকে খাইয়ে দিলাম
আর সবাই আমাকে খাইয়ে দিলো।কেক কাটার পর তন্মস বাদে সবাই আমাকে একটা করে গ্রিফ্ট দিয়ে গেলো আর আমরা রুমে চলে আসি।
আমি-সবাই তো গ্রিপ্ট দিলো আপনারটা কই??
তন্ময়-আমি এসব আলগা পিরিত দেখাইনা।
আমি-কি????
তন্ময়-জোক।(বলে শুয়ে পরলো)
আমি-তন্ময়!!!
তন্ময়-হুম!!!
আমি-কিছু না।
তন্ময়-কি বলতে চাইছিলে বলো।(আমাকে ওনার কাছে টেনে নিয়ে)
আমি-আপনার আপসোস হয় তাইনা।
তন্ময়-কেনো???
আমি-এই যে আপুর সাথে বিয়ে না হয়ে আমার সাথে বিয়ে হওয়ায়।
তন্ময়-আগে হতো কিন্তু এখন প্রাউড ফিল হয়।
আমি-কেনো???
তন্ময়-এই যে তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে।
আমি-আচ্ছা ছাড়ুন।(ওনার থেকে সরে এসে)
তন্ময়-তনু তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
আমি-বলুন???
তন্ময়-তোমার আর আমার বিয়ে হওয়ার বেশ কয়েক মিনিট আগে আমার ফোনে একটা মেচেজ আসে।মেচেজ টাতে একটা ভিডিও ছিল জানো সেই ভিডিও তে কি ছিলো।
আমি-কি ছিলো???
তন্ময়-ভিডিও তে ছিলো তুমি অনুকে বিয়ের দিন পালাতে সাহায্য করছিলে।অনুর গয়না খুলে দিচ্ছিলে শাড়ী খুলে দিচ্ছিলে।আর লাষ্টে আরেক টা মেচেজ আসে।
আমি-কি মেচেজ আসে???
তন্ময়-“তনয়া তোমাকে বিয়ে করার জন্য অনুকে বিয়ের দিন পালাতে সাহায্য করছে।তনয়া অনুকে জোর করে বিয়ের দিন পালাতে রাজি করিয়েছে”
আমি-আপনি বিশ্বাস করেছিলেন???
তন্ময়-করেছিলাম আর এখনও করি।
আমি-(ওনার কথা শুনে চোখে পানি জমে গেলো)
তন্ময়-এখন যদি তুমি কান্না করো তাহলে কিন্তু আমি থাপ্পড় মারবো তনু।
আমি-(ওনার কথায় চোখের পানি মুচলাম)
তন্ময়-তনু!!!
আমি-হুম!!!
তন্ময়-আই লাভ ইউ।
আমি-(নিচের দিকে তাকিয়ে তাছিল্যে হাসি)
তন্ময়-এটা আমি #তন্ময়ের_তনু ভেবেই বলেছি তন্ময়ের অনু ভেবে নয়।
((বিকালে))
পুরো বাড়ীটা আজকে সাজানো হচ্ছে আমার জন্মদিন উপলক্ষে।তন্ময় নাকি আমার জন্মদিন পালন করবে তাই এতো বড়ো করে আয়োজন।আমার পছন্দ মতোই ঘরটা সাজানো হচ্ছে নীল,সাদা আর গোলাপি বেলুন দিয়ে ঘরটা সাজানো হচ্ছে।আজও এনারা আমায় কোনো কাজ করতে দেয়নি সব কাজ নিজেরা করেছে।
সকালে আপু আমাকে ফোন দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়।আমি তখন আপুকে অনেক জোরাজোরি করে এখানে আসতে রাজি করি
য়েছি।আজকে সন্ধ্যায় এখানে আসবে।
তন্ময়-পছন্দ হয়েছে?(আমার পাশে দাঁড়িয়ে)
আমি-এখনো তো সাজানোই হয়নি।
তন্ময়-তাই???(মুচকি হেসে)
আমি-হুম।((মুচকি হেসে)
তন্ময়-তনু!!!
আমি-আপনাকে বলেছিনা আমকে তনু বলে ডাকবেন না।
তন্ময়-আমার ইচ্ছে আমি যা ডাকি।
আমি-হুম!!!
তন্ময়-আজ আমি যা বলবো আমার সব কথা শুনবে।
আমি-ওকে।
সন্ধ্যায় তন্ময় আমাকে গোলাপি রংয়ের একটা গ্রাউন পরিয়ে সাজিয়ে দিলো।আর তন্ময় সাদা শার্টের উপর নীল কোর্ট আর নীল প্যান্ট পরেছে।আমরা দুজন একসাথে নিচে নেমে এলাম।নিচে এসে বাড়ীতে অনেক মেহমান এসেছে আমার আত্মীয় স্বজনরা তন্ময়ের আত্মীয় স্বজনরা।
সাবিয়া-এতো দেরি করলি কেনো।বাহ তনুকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।(আমার গাল টেনে)
আমি-তোমাকে ও তো সুন্দর লাগছে।
তন্ময়-আর আমাকে???
আমি-লাগছে মোটামুটি।
তন্ময়-মোটামুটি???
সাবিয়া-আচ্ছা ছাড় তো এসব।সবাই চলে এসেছে
তাড়াতাড়ি কেক কাটতে আয়।
আমি-হুম।
আমি কেক কেটে প্রথমে তন্ময়কে খাওয়ালাম উনিও আমাকে খাইয়ে দিলো।এবার সবাই আমায় খাইয়ে দিলো।যখন সবাই আমার কাছে এসে আমাকে গ্রিফ্ট দিবে তখন তন্ময় বলে।
তন্ময়-আজকে তনুর জন্মদিনের প্রথম উপহার ওকে আমি দিবো।
সবাই-ওকে ওকে দাও।
তন্ময় এবার আমার সামনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একটা আংটি বাক্স বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিলো।ওনার এই কান্ড দেখে আমি খুশিতে কান্না করে দিই।
তন্ময়-দূর!!!(উঠে দাঁড়িয়ে)এর এই একটাই কাজ সারাক্ষণ শুধু কান্না করা।
আমি-এটা খুশির কান্না।(চোখের পানি মুচে)
অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে কিন্তু আপুরা এখনো এলোনা।আমি শুধু দরজার দিকে বার বার তাকাচ্ছি কিন্তু ওরা আসেনা।হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে ওঠে আমি তাকিয়ে দেখি আপু।
আমি-আপু তোমরা কই???
অনু-আমরা এসেছি।
আমি-কই এসেছো??(আশেপাশে তাকিয়ে)
অনু-আমরা বাইরে তুই বাইরে আয়।
আমি-আচ্ছা।(বলে বাইরে গেলাম)
অনু-তনু!!!
আমি-এখানে কেনো??বাড়ির ভেতরে চলো।
অনু-না না সমস্যা হবে।
আদিল-ওসব ছাড়ো তো অনু আর তনুকে ঢ় উইস করো।হ্যাপি বার্থডে তনু।
আমি-ধন্যবাদ ভাইয়া।
অনু-হ্যাপি বার্থডে তনু।(তনুকে জড়িয়ে ধরে)
আমি-ধন্যবাদ।
আমরা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে লাগলাম।হঠাৎ কেও একজন আমাকে পেছন থেকে ডেকে ওঠে।আমি তার গলা চিনে ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলি।
-চলবে।