তন্ময়ের তনু পর্ব-০৯

0
2716

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৯
#Jechi_Jahan

সিয়াম ভাইয়া দরজাটা বন্ধ করলে আমি খুব ভয় পেয়ে যাই।আর মনে মনে বলি জেনি কে বাঁচাতে গিয়ে কি আমি নিজে ফেঁসে গেলাম।

আমি-ভাইয়া আমি বাইরে যাবো তো দরজা কেন বন্ধ করলেন?(ভয়ে ভয়ে)

সিয়াম-একটা কাজ আছে।(আমার কাছে আসতে আসতে)

আমি-আপনার কাজ আছে তো আমাকে যেতে দিন।আমি থাকলে হয়তো সমস্যা হবে।(ভয়ে)

সিয়াম-কাজ তো তোমাকেই নিয়ে।(আমার কাছে এসে আমাকে হুট করে জরিয়ে ধরে)

আমি-ভাইয়া কি করছেন?(দস্তাদস্তি করে)

সিয়াম-I need you tonu!!!!

আমি-ভাইয়া প্লিজ এমন করবেন না না ছাড়ুন আমাকে।(বলে ওনাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই।আর দরজার কাছে চলে যাই)

সিয়াম-(দেখলাম তনু দরজার কাছে কাছে চলে গেছে।তাই উঠে ওর পা টা ধরে ফেলে দিই)

আমি-(দরজার কাছে আসতে না আসতেই সিয়াম আমার পা টা ধরে টেনে বিছানায় ফেলে দেয়)

***ওদিকে***

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন তনু আসা না তখন তন্ময় রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে যায়।আর নিচে গিয়ে নিসাকে জিজ্ঞেস করে।

তন্ময়-ভাবী তনু কই?

নিসা-তোমার কাছে নেই?

তন্ময়-না ও তো চলে এসেছিলো।

নিসা-তাহলে তো আমি জানিনা।

জেনি-ভাইয়া ভাবী সিয়াম ভাইয়ের রুমে।

তন্ময়-তুই কিভাবে জানিস?

জেনি-আরে মা আমাকে বলেছিলো সিয়াম ভাইয়া এর জন্য মালাই দিয়ে আসতে।তো আমি ভাইয়ার রুমে মালাই নিয়ে যাওয়ার সময় ভাবী আমাকে যেতে না দিয়ে নিজে চলে গেল তাই বললাম।

তন্ময়-আচ্ছা আমি গিয়ে দেখে আসি।

আমি-সিয়াম ভাইয়া আমাকে ছাড়ো।

সিয়াম-আজকে পেলাম কিভাবে ছাড়বো।

আমি-ভাইয়া এমন করোনা প্লিজ।(কান্না করে)

সিয়াম-কান্নাকাটি করে লাভ নেই।(বলে আমার শাড়ীটা সরাতে গেলেই আমি ওনার হাতটা ধরে ফেলি।আর ওনাকে আমার উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করতে থাকি)

আমি-ভাইয়া প্লিজ এমন করোনা।আমি নিচে কাওকে কিছু বলবোনা। তবুও আমাকে ছেড়ে দাও আমার এই ক্ষতি করোনা।(কান্না করে)

তন্ময়-সিয়াম তনু কি তোমার রুমে?
(দরজা ধাক্কিয়ে)

আমি-তন্ম…..(আমার মুখটা চেপে ধরে)

সিয়াম-(ওহ সিট তন্ময় এসে গেছে এখন আমি কি করবো।তনুতো তন্ময় কে সবকিছু বলে দিবে।না না এমনটা হতে দেওয়া যাবেনা।আমায় এখন এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে আমাদের এভাবে দেখলেও সব দোষ তনুরই হয়)ভাইয়া!!!

তন্ময়-হ্যাঁ সিয়াম তনু কি আছে?(দরজা ধাক্কিয়ে)

সিয়াম-ভাইয়া আমাকে বাঁচাও।(জোরে)

তন্ময়-কি হয়েছে সিয়াম?(দরজা ধাক্কিয়ে)

সিয়াম-ভাবী আমার সাথে কি করছে?(জোরে)

তন্ময়-তনু তোমার সাথে কি করছে?

সিয়াম-ভাইয়া প্লিজ আসো(জোরে)

আমি-(আমার মুখ আর হাত চেপে ধরে রাখায় আমি কিছু করতেও পাচ্ছিনা কিছু বলতেও পাচ্ছিনা।কিন্তু সিয়াম এখন যা করছে যা বলছে তাতে তন্ময় পুরোপুরি আমাকে ভুল বুঝবে)

সিয়াম-ভাবী ছাড়ো আমাকে এমন কেনো করছ?
(আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে)

আমি-(মাথা দিয়ে শুধু না না করছি)

এবার দরজাটা জোরে ধাক্কাতে লাগলো তন্ময়।দরজা ধাক্কাতে দেখে সিয়াম আমার মুখটা ছাড়ে। আর ধাক্কাতে ধাক্কাতে একসময় খুলে ফেলে আর আমাদের এভাবে দেখে তন্ময় অবাক হয়ে যায়।

সিয়াম-ভাবী প্লিজ ছাড়ো আমাকে।(আমার হাত দুটো ওর শার্টের কলারে চেপে ধরে)

আমি-তন্ময়!!!!(তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে)

সিয়াম-ভাইয়া দেখো ভাবী কি করছে?

আমি এবার সিয়ামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে গিয়ে তন্ময়কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

তন্ময়-কি হয়েছিলো এখানে?

সিয়াম-ভাইয়া ভাবী রুমে আমার কাছে আসে এই মালাইটা নিয়ে।আমাকে মালাইটা দিয়ে যাওয়ার সময় ভাবী হঠাৎ দরজাটা বন্ধ করে দেয় আর আমার সাথে জোর করে এমন করে।

আমি-(এতোক্ষণ ধরে কাঁদছিলাম কিন্তু এবার রাগ হচ্ছে কারণ সিয়াম তো মিথ্যা বলেছে)ভাইয়া আপনি তন্ময়কে মিথ্যা কথা কেনো বলছেন?

সিয়াম-ভাবী আমি একটা বাইরের ছেলে।তুমি প্লিজ আমার নামে এতো বড় একটা অপবাদ দিও না।তুমি ভাইয়াকে সত্যিটা বলো।

আমি-তন্ময় সিয়াম ভাইয়া সব মিথ্যা…………
(ব্যাস আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই তন্ময় আমাকে জোরে থাপ্পড় মেরে দেয়।তন্ময় এর এই থাপ্পড়ে আমি যেনো পুরো থ হয়ে যাই)

তন্ময়-তনু তুমি এতো নিচ ছিহ!!!

আমি-তন্ময়…..

তন্ময়-চুপ আর একটা কথাও না।আমি মনে করে ছি আমি হয়তো তোমাকে ভুল ভেবেছি।কিন্তু না আমি তোমাকে নিয়ে ঠিকই ভেবেছি।

আমি-তন্ময় আপনি আমার কথাটা….

তন্ময়-কোনো কথা শুনবোনা আমি তোমার।আজ একটা বাইরের ছেলেকে তুমি ছিহ।বাবা জানলে তো নিজেকে কোনোদিন ক্ষমাই করতে পারবেনা।এমন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে আমার যে কিনা।

আমি-তন্ময় প্লিজ আপনি….

তন্ময় এবার আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে
আমার হাত টেনে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো।যেতে যেতে বাবার রুমে গিয়ে আমাকে ধাক্কা মেরে একে বারে বাবার পায়ের সামনে ফেললো।আমাকে সবার সামনে টেনে আনায় সবাই রুমে এসেছে।

রহমান-তন্ময় এসব কি হচ্ছে?(জোরে চিল্লিয়ে)

তন্ময়-এটা আমার তোমাকে জিজ্ঞেস করার কথা বাবা যে এসব কি হচ্ছে?(রেগে)

রহমান-তনু কি হয়েছে?(আমাকে তুলে)

তন্ময়-ওকে জিজ্ঞেস করোনা ও নিজের কুকর্মের কথা নিজে কিভাবে বলবে?(রেগে)

সাবিয়া-কি হয়েছে সেটা বল।

তন্ময়-সিয়ামকে জিজ্ঞেস করো।

রহমান-তোর যাতে সমস্যা তুই বল।(রেগে)

তন্ময়-এমন কাজের কথা আমার মুখেও আসেনা যেমন কাজ তোমার আদরের বউমা করেছে।

সাবিয়া-সিয়াম কি হয়েছে বাবা?

সিয়াম-ইয়ে আন্টি কিছু হয়নি।এমনে একটু,,,,,,

তন্ময়-সিয়াম সত্যিটা বলো।(রেগে)

রাকিব-সিয়াম কি হয়েছে বলনা।

সিয়াম-আন্টি ভাবী কিছুক্ষণ আগে আমার রুমে এসেছিলো মালাই নিয়ে।আমাকে মালাইটা দিয়ে চলে যাওয়ার সময় ভাবী হঠাৎ দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আর আমাকে বিছানায় ফেলে জোর করে,,,,

তন্ময়-ব্যাস আর বলোনা শুনেছো তো বাবা।

রহমান-ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে।

তন্ময়-বিশ্বাস করতাম না কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখেছি ওদের এই অবস্থায়।আর সিয়াম একটা বাইরের ছেলে ও মিথ্যা কেনো বলবে।

রহমান-তোমরা যে যাই বলো আমার তোমাদের একজনের কথাও বিশ্বাস হয় না।হয়তো সিয়ামের বুঝতে ভুল হয়েছে আর নাহয় তন্ময়ের বুঝতে।

জেনি-ভাবী তুমি এই জন্য আমাকে সিয়াম ভাইয়া এর রুমে যেতে দাওনি।

রহমান-জেনি।(রেগে)

তন্ময়-দেখেছিস তোকে যেতে দেয়নি কিন্তু নিজে সিয়ামের রুমে ঠিকই গেছে এসবের জন্য।

সাবিয়া-তুমি এমন আমি ভাবতেও পারিনি তনু।আমি তোমাকে মেনে নিতে শুরু করেছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না মানলেই ভালো হতো।

এবার একে একে সবাই রুম থেকে চলে গেলো।আর আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি।এতক্ষণ সবার কথা শুনেও আমি চুপ করেছিলাম কারণ এখন কিছু বললে কেও বিশ্বাস করবেনা।সিয়াম আমাকে এমন একটা অপবাদ দিলো যে আমি পুরো এক নিমেষেই নিরুপায় হয়ে গেলাম।

রহমান-তনু কি হয়েছিলো আমাকে বলো।

আমি-তুমিও বিশ্বাস করবেনা আমি জানি।

রহমান-আমি তোকে বিশ্বাস করি বল।

আমি-বাবাকে ওই রুমে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বললাম।বাবা এসব শুনে রেগে গেলেন।

রহমান-ওই ছেলেটার এতো বড় সাহস।(রেগে)

আমি-এখন কিছু করোনা বাবা।(কান্না করে)

রহমান-যারা তোকে অবিশ্বাস করেছে তারা এক দিন ঠিক তাদের ভুল বুঝবে।যা ঘুমাতে যা।

আমি রুমে এসে দেখি তন্ময় কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে।আজ বিছানার মাঝখানে বালিশের দেয়াল নেই।উনি মুখে না কিছু না বললেও বিছানা দেখে আমি বুঝে যাই যে উনি আমার সাথে এক বিছানায় থাকতে চায়না।আমি চুপচাপ গিয়ে বালিশটা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসি।বেলকনি তে বসে বসে আমি কান্না করছি আর কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে আমি ঘুমিয়ে পরি।

***সকালে***

সকালে উঠে আজও গোসল করে নাস্তা বানাতে গেলাম।রান্নাঘরে গিয়ে দেখি ভাবী নাস্তা বানাচ্ছে। আমিও গিয়ে কাজ করতে গেলে ভাবী বলে উঠে।

নিসা-তুমি এখানে কেনো এসেছো?

আমি-নাস্তা বানাতে ভাবী।

নিসা-তার দরকার নেই নাস্তা আমি বানিয়ে নিব।

আমি-ঠিকাছে আমি হেল্প তো করি।

নিসা-তোমার হেল্পও লাগবেনা যাও।

আমি-এমন করছো কেনো ভাবী।

নিসা-কেমন করছি যাওনা।(রেগে)

ভাবীর ধমকে আমি ভয় পেয়ে যাই তুই ভাবীকে আর কিছু না বলে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যাই।রান্নাঘর থেকে বের হয়ে রুমে চলে আসি।রুমে এসে দেখি তন্ময় রুমে নেই তাই আমি গিয়ে খাটে একটু বসি।আমি বসার পরই তন্ময় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।তন্ময়কে দেখার সাথে সাথেই আমি ভয়ে খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যাই।

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে