তন্ময়ের তনু পর্ব-০৮

0
2789

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৮
#Jechi_Jahan

তন্ময় আমাকে রুমে রেখে চলে যায় আর আমি এখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই আছি।আমি আসলে বুঝার চেষ্টা করছি যে তন্ময় কেনো আমার পিঠে টিকা দিলো।আমি এবার আয়নায় নিজের পিঠের দিকে তাকালাম।দেখলাম আজ আমার পিঠটা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।

আমি-ওহ!!! এই জন্য টিকা দিলো মুখে বললে কি হতো আজব।(রেগে)

তন্ময়-ওই!!!

আমি-ক কি?(তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়-তুমি নাস্তা বানিয়েছো?

আমি-কেনো ভালো হয়নি?(ভয়ে)

তন্ময়-কেনো বানিয়েছো?(রেগে)

আমি-কি হয়েছে বলুন না।(ভয়ে)

তন্ময়-হাত কাটা অবস্থায় তুমি নাস্তা বানিয়েছো।

আমি-এই কথা?দূর!!!(খাটে গিয়ে বসে)

তন্ময়-ওই নিজের খেয়াল রাখতে পারোনা।এই হাত কাটা অবস্থায় নাস্তা বানাতে গেলে কোন আক্কেলে।(রেগে)

আমি-বানিয়েছি তে কি হয়েছে?

তন্ময়-তোমার হাতটা একটু কাটলে আমার কোন চিন্তা ছিলোনা।কিন্তু তোমার হাতটা বেশি কেটেছে আর এই হাত নিয়ে যে নাস্তা বানাতে গেছো।যদি তোমার হাতে ইনফেকশন হয় তখন কি করবে?

আমি-হলে হবে আপনার কি?(বিরক্ত হয়ে)

নিসা-তন্ময়ের অনেক কিছু।(দরজার কাছ থেকে)

আমি-ভাবি!!!(উঠে দাঁড়িয়ে)

নিসা-আরে বসো বসো।আচ্ছা তনু তোমার বুদ্ধি সুদ্ধি নেই।তন্ময় তো সত্যিই তো বলেছে এই হাত নিয়ে কেনো গেলে নাস্তা বানাতে।(ভেতরে এসে)

আমি-এবার তুমিও শুরু করো।(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-দেখেছো ভাবী কেমন….

নিসা-থামো তো(তন্ময়কে থামিয়ে)আচ্ছা তনু তুমি মেহেদি লাগাতে পারো?

আমি-হুম পারি!!!

নিসা-ওকে তো চলো আজকে মেহেদি লাগাবো।

আমি-ওকে চলো।

তন্ময়-ও মেডাম কই???(তনুকে উদ্দেশ্য করে)

আমি-কি?

তন্ময়-হাত কাটা ভুলে গেছো।

নিসা-আরে কিছু হবেনা চলো আগে নাস্তা করবে।

আমি-চলো।(ভাবীর সাথে যেতে গিয়ে)

তন্ময়-ভাবী তুমি যাও তনুকে আমি নিয়ে আসছি।

নিসা-ওকে (বলে চলে গেলো)

তন্ময়-চলো(আমার হাত ধরে নিচে যেতে লাগল)

আমি-(আচ্ছা তন্ময় এমন করছে কেনো আমার জন্য।আগে তো আমাকে সহ্যই করতে পারতোনা)

তন্ময়-(দিন দিন আমি কেমন তনুর প্রতি উইক হয়ে যাচ্ছি।তনুকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা)

আমরা এবার নিচে গিয়ে নাস্তা করে নিলাম।জেনি দেখি দুই তিনটা মেহেদি নিয়ে ছাদে চলে গেলো। আর ভাবীও আমাদের নিয়ে ছাদের দিকে যেতে লাগছো।ছাদে দেখি রাকিব আর সিয়ামও আছে।

সিয়াম-আরে তনু ভাবী তুমিও মেহেদী লাগাবে?

আমি-হুম।

সিয়াম-তনু ভাবী তুমি মেহেদী লাগাতে পারো?

আমি-হুম ভাইয়া।

সিয়াম-তাহলে আমাকেও লাগিয়ে দিবেন?

তন্ময়-ছেলে হয়ে মেহেদি লাগাবে?

সিয়াম-ওই আর কি?

নিসা-আচ্ছা আমরা মেহেদি লাগানোর কথা কেন তুললাম কেও বলতে পারো?

তন্ময়-সময় নষ্ট করার জন্য।

নিসা-চুপ থাকো।

জেনি-আমি বলি!যেহেতু তনু ভাবী নতুন বউ তো ওনাকে কিন্তু নতুন বউয়ের মতো লাগেনা।কারণ ওনার হাতে তো মেহেদি নেই তাই।

আমি-এতোদিন পর তোমার মনে হলো যে আমায় এখন নতুন বউয়ের মতো লাগতে হবে?

জেনি-কথা বাদ দাও আসো মেহেদী লাগাই।

আমরা এবার মেহেদি লাগাতে শুরু করলাম।আমি প্রথমে সিয়ামকে লাগাতে লাগলাম।কিন্তু সিয়াম শুধু আমার শরীর ঘেঁষে বসায় আমি অল্প একটু লাগিয়ে সরে যাই।এবার জেনি আমার হাত এ লাগাতে শুরু করে।আমার হাতে মেহেদি লাগানো শেষ হলে তন্ময় আমাকে নিয়ে উঠে যায় আর ছাদের রেলিং এর কাছে নিয়ে যায়।

তন্ময়-বিকালে ঘুরতে যাবে?

আমি-(অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি)

তন্ময়-কি?

আমি-কি?

তন্ময়-বিকালে ঘুরতে যাবে?(বিরক্ত হয়ে)

আমি-সবাই মিলে যাবো(বলে পেছনে ফিরলাম আর পেছনে ফিরে দেখলাম যে সিয়াম একনজরে আমার পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।আমার চুল খোঁপা করে রাখায় পিঠটা পুরো দেখা যাচ্ছে।)

তন্ময়-পেছনে ফিরে আছো কেনো?

আমি-আমার খোঁপাটা খুলে দিবেন?

তন্ময়-ঠেকা পরে নাই তো আমার।

আমি-প্লিজ।

তন্ময়-মেহেদি নষ্ট হয়ে যাবে।(ফোনটা বের করে)

আমি-আমার পিঠ দেখা যাচ্ছে।(মাথা নিচু করে)

এটা বলার সাথে সাথে তন্ময় খোঁপাটা খুলে দেয়।

বিকালে বাবা আর মা ছাড়া আমরা সবাই ঘুরতে আসি সাথে ভাবীর বোন নিহাও আসে।আমি খেয়াল করে দেখি যে নিহা আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে যে মনে হয় আমি ওর শত্রু।

আমি-ভাবী!!!

নিসা-হ্যাঁ তনু?

আমি-নিহা এভাবে রয়েছে কেনো?কেমন গম্ভীর।

নিসা-ও কিছু না ওর একটু মন খারাপ।

আমি-ওহ!!!

আমরা যেখানে ঘুরতে এসেছি সেখানে একটা ফুচকার দোকান দেখেছি।আর আমি ফুচকা খুব পছন্দ করি তাই দৌড়ে তন্ময়ের কাছে চলে যাই।

আমি-তন্ময় আমি ফুচকা খাবো।

তন্ময়-…………..

আমি-কথা বলছেন না কেনো?

তন্ময়-কি বলবো?(রেগে)

আমি-আমি ফুচকা খাবো।

তন্ময়-ওকে চলো।(নিহাকে দেখে)

নিহা-(বেশ খুশি আছো দেখছি বিয়ে করে)তন্ময়!

তন্ময়-আমি তোমার বড় না আমাকে ভাইয়া না ডেকে কি সারাক্ষণ তন্ময় তন্ময় ডাকো।(রেগে)

নিহা-ওসব আমার ধারা হবেনা।

তন্ময়-তুমি….

আমি-(তন্ময়কে থামিয়ে)কি জন্য ডাকলে বলো?

নিহা-তোমাকে বলবোনা তন্ময় কে বলবো।

তন্ময়-তো বলো তাড়াতাড়ি।(রেগে)

নিহা-আমিও ফুচকা খাবো।

তন্ময়-আমাদের সাথে গেলেই তো হয়।

নিহা-এখনতো পারমিশন ও নিতে হবে।

তন্ময়-চলো।

তন্ময় আজ ইচ্ছে করে তনুর হাত ধরে হাঁটছে নিহাকে দেখানোর জন্য।আসলে নিহা তন্ময়কে খুব ভালোবাসতো কিন্তু তন্ময় নিহাকে তার বোন ভাবে।আর এই জন্য যখন নিহা তন্ময়কে প্রপোজ করে তখন তন্ময় একসেপ্ট করেনা।

আমি-মামা তিন প্লেট ফুচকা দেন আর একটা তে বেশি করে ঝাল দিবেন।

তন্ময়-৩ প্লেট না ২ প্লেট দেন আর একটা প্লেটে দুইজনের জন্য দিবেন।

আমি-কেনো???

তন্ময়-দেখোই না।(নিহার দিকে তাকিয়ে)

নিহা-(আদিক্ষেতা দেখে বাঁচি না)তনু!!!

আমি-হুম।

নিহা-তুমি আমাকে চিনো?

আমি-আপনি বড় ভাবীর বোন।

নিহা-হুম!!!

আমি-কেনো?

নিহা-না এমনি।

তন্ময়-তনু ফুচকা।(তনুর মুখে একটা দিয়ে)

আমি-এটা কি হলো?(ফুচকা খেতে খেতে)

তন্ময়-আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।

আমি-কিন্তু কেন….(মুখে আরেকটা দিয়ে দিল)

তন্ময়-নিহা খাও।(তনুকে খাওয়াতে খাওয়াতে)

তন্ময় এবার আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে নিজেও খাচ্ছে আর বার বার নিহার দিকে তাকাচ্ছে।আমরা ঘুরাঘুরি করে প্রায় সন্ধ্যার দিকে বাড়ী ফিরলাম।আর নিহা নিজের বাড়ীতে চলে গেলো।

সাবিয়া-জেনি!!!

জেনি-হুম মা!!!

সাবিয়া-আজ নিসাকে বল ডিনার বানাতে।

জেনি-আচ্ছা মা।(বলে রুম থেকে চলে গেলো)

রহমান-অবশেষে তুমি তনুকে মেনে নিলে।

সাবিয়া-কে বলেছে তোমাকে।

রহমান-আমি নিজের চোখে দেখছি।

সাবিয়া-হুম সবে মানে শুরু করলাম।

—ডিনারের পরে—

সবার খাওয়া হলে আমি,ভাবী আর মা সবকিছু গুছিয়ে রাখি।তখন হঠাৎ মা বলে উঠে।

সাবিয়া-তনু!!!

আমি-হুম মা।

সাবিয়া-তুমি দুপুরে কি একটা বানিয়েছিলে না।

আমি-মালাই???

নিসা-তুমি এই হাত নিয়ে….

আমি-কিছু হয়নি।কি বলছিলেন মা???

সাবিয়া-ওইটা তুমি তন্মকেয় দিয়ে আসো।

আমি-কেনো?

সাবিয়া-আরে সবাইকেই দিবে আগে ওকে দিয়ে…

আমি-আচ্ছা মা।

তন্ময়-তোমার হাত আবার কেটেছো?

আমি-না।(মালাইটা পেছনে লুকিয়ে রেখেছি)

তন্ময়-দেখি(আমার কাছে এসে হাতটা সামনে আনলো)মালাই???(জোরে)

আমি-কেনো আপনি পছন্দ করেন না।

তন্ময়-আরে এটা আমার ফেভারিট।(বলে আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে খেতে শুরু করলো)

আমি-এটা আপনার ফেভারিট?

তন্ময়-হুম খেয়ে দেখোনা(আমাকে খাইয়ে দিয়ে)

আমি-এটা আমি বানিয়েছি।

তন্ময়-আচ্ছা রাকিব আর সিয়াম কে দিয়ে আস।

আমি ওনার কথা শুনে বোকা বনে গেলাম।কোনো প্রশংসা না কিছু না দূর বলে নিচে যাওয়ার সময় দেখি জেনি মালাই নিয়ে উপরে আসছে।

আমি-জেনি কই যাও?

জেনি-সিয়াম ভাইয়াকে এটা দিয়ে আসতে।

আমি-(ওই সিয়াম টাকে আমার একদম সুবিধার মনে হচ্ছে না।আসার পরে আমার সাথে যা যা করেছে এখন যদি জেনির সাথেও করে)জেনি তুমি এটা আমাকে দাও আমি দিয়ে আসছি।

জেনি-ওকে(বলে চলে গেলো।

আমি-ভাইয়া আসবো(সিয়ামের রুমের সামনে)

সিয়াম- আসো তোমার জন্য মানা আছে নাকি।

আমি-আপনার জন্য মালাই এনেছি।

সিয়াম-ওই টেবিল টায় রেখে দিন।

আমিও সিয়ামের কথায় ওর খাটের পাশে থাকা টেবিলে মালাইটা রেখে দিই।আর যখন পেছনে ঘুরি তখন দেখি সিয়াম দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে