তন্ময়ের তনু পর্ব-০৭

0
2901

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৭
#Jechi_Jahan

আমি-আপনি!!!(অবাক হয়ে)

সিয়াম-সরি ভাবি আমি আসলে পা পিছলে পরে যাচ্ছিলাম তাই আপনাকে ধরে ফেলেছি।
(আমাকে ছেড়ে)

আমি-আপনি পা পিছলে পড়বেন কেন?এখানে তো পা পিছলে পরার মতো কিছুই নেই।

সিয়াম-জানিনা ভাবী,,,সরি!!!

আমি-আচ্ছা পরেরবার সাবধানে হাঁটবেন।

সিয়াম-আচ্ছা ভাবী আপনিও সাবধানে থাকবেন।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক কাজ করেন।কাজটা একটু কমিয়ে করবেন।(মুচকি হেসে)

আমি-ঠিক আছে আপনি থাকুন আমি যাই।(বলে নিজের রুমে চলে এসে খাটে বসে পরলাম)

তন্ময়-কি হয়েছে তনু?

আমি-(উনি যে রুমে ছিলো আমি খেয়াল করিনি)
আপনি আমাকে তনু কেনো ডাকেন???(রেগে)

তন্ময়-তোমার নামই তো তনু।(অবাক হয়ে)

আমি-আপনি আমাকে তনু ডাকবেন না।(রেগে)

তন্ময়-আমার বয়েই গেছে।(ভেংচি কেটে)

আমি-বয়ে গেলে বয়ে গেছে তবু তনু ডাকবেন না।
(রেগে)

তন্ময়-কেনো শুনি?(শোয়া থেকে উঠে বসে)

আমি-কারণ আমাকে তনু শুধু তারাই ডাকে যারা আমাকে ভালোবাসে।আর আপনি তো আমাকে সহ্যই করেন না তাই তনু ডাকবেন না।(রেগে)

তন্ময়-কেনো আমি কি তোমায় ভালোবাসি না?
(মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো)

আমি-না বাসেন না।(রেগে)

এগুলো বলে দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম।আসলে কি বলেছি আমরা এতোক্ষণ খেয়ালই করিনি।

আমি-(দূর সিয়ামের রাগ যে কেনো এনার উপর তুললাম।আর কি যে বলে ফেললাম ছিহ…)

তন্ময়-(তনু বলছে বলছে তার উপর আমি এটা কি বললাম মুখ ফসকে।মাথাটা পুরো গেছে)

আমি-সরি””””””

তন্ময়-কেনো?

আমি-আমি এসব রাগের মাথায় বলেছি কিছু মনে করবেন না প্লিজ।(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-ওহ!!!ওকে যাও মা হয়তো ডাকবে।

আমি আর দেরি না করে রুম থেকে বের হয়ে নীচে চলে এলাম।আর নিচে রান্নাঘরে মায়ের কাছে এলাম।দেখছি মা ছুরি দিয়ে সবজি কাটছে।আমি গিয়ে মায়ের থেকে ছুরি আর সবজিগুলো নিয়ে নিলাম আর কাটতে লাগলাম।

সাবিয়া-মাত্র না গেলে।(হাত ধুতে ধুতে)

আমি-ভালো লাগছিলো না তাই।(ভয়ে ভয়ে)

দেখলাম মা আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।মনে হয় আমার কথাটা বিশ্বাস করেনি।

সাবিয়া-তুমি যে রান্না জানতেনা আমাকে আগে বলোনি কেনো হম????

আমি-এখন জানি তো।

সাবিয়া-আমি এখনের কথা বলেছি?

আমি-শেখার জন্য বলিনি।(ভয়ে ভয়ে)

সাবিয়া-তুমি তো দেখি মিথ্যাও বলতে পারোনা।

আমি-ইয়ে মানে,,,,,আউচ(হাত কেটে গেছে)

সাবিয়া-এই এই কি হয়েছে দেখি?(আমার হাতটা ধরে ফু দিতে দিতে বললো)অনেকটা কেটে গেছে।

আমি-মা ঠিক আছে সমস্যা নেই।

সাবিয়া-কি সমস্যা নেই??চলো বেন্ডেজ করে দি।

আমি-মা আমি করে নিবো।

সাবিয়া-দাড়াও!!!তন্ময় কি রুমে?

আমি-হুম!!!!

সাবিয়া-ওর কাছে গিয়ে বলো হাত বেঁধে দিবে।

আমি-মা তার কি দরকার আছে।

সাবিয়া-এটা আমার আদেশ তনু।(কড়া কন্ঠে)

আমি এবার ভয়ে ভয়ে রুমে ওনার কাছে গেলাম।

অভি-নিসা বলছি যে তনু মেয়েটা ভালো তাইনা?

নিসা-হুম আসলেই মেয়েটা খুব ভালো।

অভি-আল্লাহ যা করে ভালের জন্যই করে তাইনা?

নিসা-মানে?

অভি-এই যে অনু মেয়েটা তো ভালো না তাই বিয়ে এর দিন পালিয়ে গিয়েছে।আর আমার গুরুধর ভাই তো অনুর প্রেমে পাগল।এখন চিন্তা করো অনু যদি বিয়ের পরে তন্ময়কে ছেড়ে পালিয়ে যেতো তাহলে কি তনু ওর লাইফে আসত।ভাগ্যিস
বিয়ের আগে পালিয়েছে তাই তো তনু এসেছে।

জেনি-ভাইয়া!!!(দরজার কাছে দাঁড়িয়ে)

অভি-আয় ডাইনি।

জেনি-ভাবী ভাইয়া এতোক্ষণ এগুলো কি বলল?

নিসা-আরে তোমার ভাই পাগল।

অভি-পাগল তাই না!!!আচ্ছা আমার শালীটাকে তন্ময়ের বিয়েতে দেখিনি কেনো?(মুচকি হেসে)

জেনি-হ্যাঁ তো ভাবী নিহা আসেনি কেনো?ও তো ভাইয়াকে খুব ভালোবাসে তাহলে এলোনা কেনো?

নিসা-কারণ আমি বারণ করেছিলাম।আরে জানো তো ও তন্ময়ের জন্য কত পাগল।না জানি বিয়েতে আসলে কি কান্ড পাকাতো।(বিরক্ত হয়ে)

অভি-জেনি এটা পাগলের প্রমাণ প্রমাণ বুঝেছিস।
(ফোন টিপতে টিপতে)

নিসা-অভি।(জেরে চিল্লিয়ে)

***ওদিকে***

তন্ময়-এতোক্ষণ হলো এসেছো কিছু বলছোও না কিছু করছোও না সেই দাঁড়িয়েই আছো।কিছু কি বলবে?(বিরক্ত হয়ে)

আমি-(ওনাকে দেখেই আমি ভয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর হাতের কথা কি বলবো)না কিছু না।

তন্ময়-আরেকটা কথা!!আসার পর থেকে দেখছি হাতদুটো পেছনে লুকিয়ে রেখেছো।কি আছে হাতে যে পেছনে লুকিয়ে রেখেছো।(উঠে দাঁড়িয়ে)

আমি-(এইরে ধরা খেয়ে গেলাম)কিছু না।

তন্ময়-দেখি কি আছে হাতে?(আমার কাছে এসে হাত দুটো সামনে আনার চেষ্টা করে)

আমি-কিছু নেই তন্ময় ছাড়ুন।(ধস্তাধস্তি করে)

তন্ময়-একি তোমার তো হাত কেঁটে গেছে।(আমার হাতেটা নিজের হাতে নিয়ে)

আমি-…….(ভয়ে চুপ করে আছি)

তন্ময়-গাঁধি একটা!!!!হাতটা পুরো রক্তে লাল হয়ে গেছে আর উনি হাত লুকিয়ে রাখছে।(রেগে)

এবার উনি আর কিছু না বলে আমার হাতটা ফু দিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করছে।আর আমি ওনার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি।

***খাবারের টেবিলে***

রাকিব-আন্টি খাবারটা খুব মজা হয়েছে।অনেক দিন পর খাচ্ছি এমন খাবার।কে বানিয়েছে?

সাবিয়া-তোমার বন্ধুর বউ।

রাকিব-তনু ভাবি???

নিসা-হুম!!!স্পেশালি তোমার জন্য।

রাকিব-ওয়াও!!!আজ নিজেকে নিয়ে কিছুক্ষণ গর্ভ করবো ভাবছি।

তন্ময়-রান্না করেছে আমার বউ আর গর্ভ করবি নিজেকে নিয়ে।এটা কেমন কথা?

রাকিব-বন্ধু খাবার গুলো আমার জন্য বানানো হয়েছে বুঝেছে।তোমরা তো শুধু দর্শক।

তন্ময়-ওহ তাই না???

রহমান-খাওয়ার সময় এতো কথা বলছো কেন?

বাবারা খেয়ে উঠলে এবার আমরা মেয়েরা খেতে বসি শুধু আমি বাদে।আমি সবাইকে সার্ভ করছি।

জেনি-ভাবী তুমি সার্ভ কেনো করছো বসো।

আমি-জেনি আমি না খাবো না।

নিসা-কেনো খাবেনা আসো বসো।

আমি-ভাবী আমার না খিদে নেই।

নিসা-খেলে খিদা চলে আসবে আসো।

আমি-না তোমরা খাওয়া।

সাবিয়া-কি শুরু করেছো তনু!এমনিতে হাত কেটে বসে আছো তার উপর খাবোনা বলছো।

আমি-মা আমার সত্যি খেতে ইচ্ছে করছেনা।

সাবিয়া-তন্ময় তুই দেখেও কিছু বলছিস না।

তন্ময়-ওর খেতে ইচ্ছে না করলে জোর করছো কেনো?(সোফায় বসেই)

সাবিয়া-তোর বাবাকে বলবো এটা?

তন্ময়-এই তনু খাচ্ছো না কেন?(সোফা থেকে দাঁড়িয়ে)

আমি-কি?

তন্ময়-শরীল দেখেছো পেন্সিলের মতো চিকন।ফু দিলেই তো উড়ে যাবা।

আমি-আচ্ছা ফু দেন আমি যদি না উড়ি তাহলে খাবোনা বলেদিলাম।

তন্ময়-মা একে জোর করে খাইয়ে দাও।

তন্ময়ের কথায় মা এবার আমাকে জোর করে খাইয়ে দিলো।তবে একটা জিনিস খেয়াল করি যে তন্ময় প্রথমে আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করে নি।কিন্তু বাবার কথা বলতেই আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করছে।নিশ্চয়ই বাবাকে ভয় পায়।
আমার খাওয়া শেষ হলে আমি রুমে চলে আসি।তখন হঠাৎ জেনি রুমে আসে।

আমি-জেনি কিছু লাগবে?

জেনি-তোমাকে লাগবে।

আমি-মানে???

জেনি-তোমাদের বাড়ীতে তোমার সাথে ছিলাম যে আমার খুব ভালো লেগেছে।বারান্দায় বসে গল্প করা,রাতে চুরি করে কফি খাওয়া আর বই পড়া সব তো তোমার সাথে তোমাদের বাড়ীতে করেছি।

আমি-আচ্ছা!!!

জেনি-তো আমি বলছি যে আমার সাথে আজকে থাকোনা।আমার খুব ভালো লাগবে।

আমি-ওকে!!!!

তন্ময়-কেও কোথাও যাবেনা।(রেগে)

জেনি-কেনো?

তন্ময়- যাবেনা মানে যাবেনা।

আমি-ও বলছে যখন থাকিনা।

তন্ময়-জেনি তুই যা এখান থেকে।

জেনি-ভাইয়া আমি….

ব্যাস ওকে আর বলতে না দিয়ে হাত ধরে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো।

তন্ময়-খুব বাইরে থাকা হচ্ছে তাইনা।

আমি-আ আমিতো….

তন্ময়-যাও শোও গিয়ে(ধমক দিয়ে)

আমি এবার দৌড় দিয়ে খাটে গিয়ে শুয়ে গেলাম।

তন্ময়-(জানিনা কেনো তনুকে অন্য কোথাও যেতে দিতে মন চায়না।আচ্ছা অনু ও তো আমার থেকে দূরে চলে গেছে ওর জন্য আমার এমন লাগেনা কেনো)নেক্সট টাইম এই ভুল করোনা।

রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় আর আমি দেখি তন্ময় আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।আর উনি যে এটা ঘুমের মধ্যে করেছে এটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি বালিশের দেয়াল দেখে।মাঝখানে বালিশের দেয়াল তো দূরে থাক একটা বালিশও নেই।দুটো বালিশই দুই সাইডে পরে আছে।আমি ও আর কোনো হেলদুল না করে আবার একইভাবে ঘুমিয়ে গেলাম।

***সকালে***

আমার এখানে এসে একটা অভ্যাস হয়ে গেছে রোজ সকালে গোসল করা।আজও তার ব্যাতি ক্রম হয়নি।গোসল করে আমি নাস্তা বানাতে চলে গেলাম।নাস্তা বানিয়ে শেষ করে রুমে এসে দেখি উনি খাটে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে মোবাইল টিপছে।আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে লাগলাম।হঠাৎ উনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার কাজলের কৌটো থেকে একটু কাজল নিয়ে আমার পিঠে তিলের মতো করে লাগিয়ে দেয়।আমি তো অবাক।

আমি-আপনি এটা কি করেছেন?

তন্ময়-তোমার এই সাদা পিঠ দেখানোর জন্যই কি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো?(রেগে)

আমি-মানে?

তন্ময়-তোমার বুঝতে হবেনা।(বলে চলে গেলো)

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে