#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৬
#Jechi_Jahan
ওদের জোরাজোরিতে বলতে লাগলাম তখন দেখি জেনি হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠল।আর এই কারণে আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।
নিসা-তনু কিছু হয়নি বলো।জেনি(কি ইশারা করে)
আমি-ভাবী কি ইশারা করলে?
নিসা-চুপ থাকতে।
আমি-ভাবী তোমাদেরই বলছি কারোর সাথে সেয়ার করবে না তো।(অসহায় ভাবে)
নিসা-না তুমি বলো।
আমি-চার বছর আগে আমার কলেজের একটা ছেলে হুট করে এসে আমাকে প্রপোজ করে।আর আমি তখন এসবে ভয় পেতাম তাই রিজেক্ট করে দিই।কিন্তু ও আমার পিছু ছাড়েনা।রোজ কোনো না কোনো ভাবে আমাকে প্রপোজ করতো আর আমি শুধু রিজেক্ট করতাম।একদিন দেখি ও আমার সামনে একটা ছুরি নিয়ে দাঁড়ায়।
জেনি-কি😱কিন্তু কেনো?
আমি-হাতের রগ কাটবে বলে?
নিসা-তোমার??
আমি-না ওর।
জেনি-Continue….
আমি-ও সেদিন বলেছিলো আমি যদি ওকে রিজেক্ট করি তাহলে ও হাতের রগ কেটে ফেলবে।আর আমি ভয়ে একসেপ্ট করে ফেলি।
জেনি-এত ভিতু ছিলা তুমি?
আমি-হুম!!!তো একসেপ্ট করলেও আমি ওর গার্লফ্রেন্ড এর মতো ছিলামনা।আমি ওর থেকে দূরে দূরেই থাকতাম।আর এভাবে চলতে চলতে এক বছর কেটে যায়।আর আমার ভালোবাসার তিন বছরের শুরু হয়।আমি বুঝতে পারি যে আমি ও ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
জেনি-ভাবী এখনও কি আছে?(মুচকি হেসে)
নিসা-জেনি একটু সোবোর করো।
জেনি- Continue Again…
আমি-আমাদের রিলেশন অন্য রিলেশন গুলোর থেকে আলাদা ছিলো।একদম ছায়ার মতো ছিলাম দুজন দুজনের জন্য।কিন্তু হঠাৎ একদিন ও হারিয়ে যায়।আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
নিসা-মানে???
আমি-ও চলে যায় আমাকে ছেড়ে।আর আমি ভাবি আজ হোক কাল হোক ও আসবেই।কিন্তু আমার ধারণা ভুল ও আসেই না।পরে কলেজ থেকে জানতে পারি ও এতোদিন আমার সাথে থেকে টাইম পাস করেছে।কেনো জানিনা এ কথা আমার বিশ্বাস হলোনা।তাই ওকে অনেকগুলো ফোন দিই প্রথমে ধরতো না কিন্তু পরে ও আমার নাম্বার টাই ব্লক করে দেয়।(চোখের পানি মুচে)
জেনি-এখন ও কোথায় তুমি জানো ভাবী?
আমি-না আর জানতেও চাইনা।
নিসা-তুমি কি ওকে এখনো চাও?
আমি-আমি যদি এখন ওকে চাই ও তাহলে সেটা পুরো মনের হবেনা শুধু আবেগের হবে।
জেনি-ভাবী ভাইয়া!!!
আমি-তোমার ভাইয়া আমাকে এখনো মেনে নেয় নি তাই কারোর জন্যই কোনো ফিলিংস নেই।
নিসা-খুব সুন্দর!!! আচ্ছা তনু, মা তো মনে হয় একাই রান্না করছে একটু গিয়ে দেখে আসোনা মায়ের কিছু লাগবে কিনা।আমি আসছি…..
আমি-আচ্ছা(পেছনে ফিরে শকড)
অভি-হ্যাঁ তনু যাও মা একা আছে তো।(হেসে)
জেনি-তা ভাইয়া তোমরা কখন এলে?
অভি-নাটক করিসনা!!! তুই তো প্রথম দেখেছিস যে আমরা তোদের স্টোরি শুরু হওয়ার সাথে সাথে এসেছি।কিরে তন্ময় বল।(গুতা দিয়ে)
তন্ময়-(তনুর কথাগুলো শুনে জানিনা কেনো খুব কষ্ট হচ্ছিল।কষ্ট টা কিসের আমি নিজেও জানি না।তনুর ভালোবাসা হারানোর কষ্ট নাকি তনু অন্য কাওকে ভালোবাসে সেটার কষ্ট) নিশ্চুপ….
নিসা-কি তন্ময় কিছু তো বলো।(মুচকি হেসে)
তন্ময়-জেনি আমার জন্য এক কাফ কফি নিয়ে আয় তো।(বলে রুম থেকে চলে গেলো)
আমি-ভাবী এটা কোনো কাজ করলে?
নিসা-আরে দেখে আয় এখন শুধু আগুনের মতো জ্বলবে আর লুচির মতো ফুলবে।(হেসে হেসে)
আমি-তোমরাও না পারো বটে।দূর!!!!!
৮ দিন পরঃ-
এই ৮ দিনেও আমার আর তন্ময়ের সম্পর্কটা একই রকমই রয়েছে।কোনো পরিবর্তন নেই এই সম্পর্ক টাতে।আজ নাকি তন্ময়ের কোন বন্ধু একটা আসবে তাই আমাকে সবকিছু রান্না করতে বলেছে আমার শ্বাশুড়ি।এ কয়দিনে আমি প্রায় অনেক কিছুই রান্না করতে শিখেছি তাই রান্না
গুলো করতে সমস্যা হয়নি।আমি রান্না সহ বাকি
সব কাজ শেষ করে শাওয়ার নিতে রুমে গেলাম।শাওয়ার নিয়ে বাথরোব টা পরে বের হয়ে এলাম।রুমে এসে আমি একদম গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কারণ তন্ময় খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
আমি-আ আপনি?(ভয়ে)
তন্ময়-তোমাকে এভাবে দেখার খুব শখ হচ্ছিল। তাই দৌড়ে রুমে চলে এসেছি।(বিরক্ত হয়ে)
আমি-কি??(অবাক হয়ে)
তন্ময়-আমার রুম আমি আসবো না?(রেগে)
আমি-ওহ!!!এখন একটু বাইরে যান না।
তন্ময়-না আমি যেতে পারবোনা।(শুয়ে পরে)
আমি-আমি শাড়ীটা পরবো।(মাথা নিচু করে)
তন্ময়-তো পরো মানা করেছে কে??
আমি-প্লিজ!!!
তন্ময়-ওয়েট!!!(বলে খাট থেকে উঠে আলমারির কাছে যায় আর একটা ব্যাগ আমার দিকে এগিয়ে দেয়)এটা খুলে দেখো।(বলে ফোনটা বের করলো)
আমি-শাড়ী এটাতো আমার না।(ব্যাগটা খুলে)
তন্ময়-ঢং করোনা ওদিন অনুর শাড়ীটাও তোমার ছিলোনা।এখন এটা পরে রেডি হয়ে আসো।
আমি-কে দিয়েছে এটা?
তন্ময়-তোমার ৩ বছর আগের প্রেমিক।(রেগে)
আমি-তন্ময়!!!!
তন্ময়-আমি দিয়েছি।
আমি-কেনো?
তন্ময়-মা বলেছিলো দিতে এই এতো কথা বলো কেন?যাও রেডি হয়ে আসো ওরা চলে আসছে।
(রেগে)
আমি এবার তন্ময়ের দেওয়া শাড়ীটা পরে রুমে আসি আর রেডি হতে থাকি।শাড়ীটা কালো আর হলুদ কালারের তাই আমাকে বেশ মানিয়েছে।আমি চোখে একটু কাজল আর ঠোঁটে হালকা করে লাল লিপস্টিক দিলাম।চুলের মাঝখানে সিতি করে দুইসাইডের চুল মাঝখানে কাকড়া দিয়ে আটকে দিলাম।আর বাকিগুলো খোলা রাখলাম যেহেতু এখনো ভেজা চুল।
আমি-কেমন লাগছে?(আবেগের ভসে)
তন্ময়-পুরো শাতচুন্নির মতো।(হেসে হেসে)
আমি-সরি!!!ভুলে জিজ্ঞেস করে ফেলেছি।
তন্ময়-আমার চয়েস যে এতো ভালো তা এই শাড়ী টা দেখে প্রথম জানলাম।শাড়িটা তোমাকে সুন্দর লাগছেনা অনু হলে খুব সুন্দর লাগতো।
আমি-(ওনার কথা শুনে মাথাটা নিচু করে ফেলি)
তন্ময়-অবশ্য তোমাকে খারাপ ও লাগছেনা।(এটা বলে উনি সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
আমি কোনো গয়না পরলাম না কারণ আজ আমাকে গয়না ছাড়াই ভালো লাগছে।আমি আর দেরি না করে নীচে গিয়ে ভাবীদের সাথে কাজ করতে লাগলাম।হঠাৎ দেখি মা আমাকে দেখছে।
আমি-মা আপনার কিছু লাগবে?
সাবিয়া-(আজ এই মেয়েকে তো দেখি খুব সুন্দর লাগছে এই শাড়ীতে।একে বারে বাড়ীর পাক্কা গিন্নি লাগছে।সব তো ঠিক আছে কিন্তু গায়ে কোনো গয়না পরেনি কেনো?)হ্যাঁ আমার রুমে আসো।
(বলে নিজের রুমে চলে গেলো)
আমি-মা আসবো?(মায়ের রুমে গিয়ে)
সাবিয়া-হ্যাঁ আসো!!(আলমারিতে কি খুঁজে খুঁজে)
আমি-মা আপনি কি খুঁজছেন?আমাকে দিন আমি খুঁজে দিচ্ছি। (রুমে এসে)
সাবিয়া-তার দরকার নেই তুমি বসো।
আমি-দরকার হলে বলবেন।(খাটে বসে)
সাবিয়া-তোমাকে যে আমি গয়না দিয়েছি ওগুলা কি সাজিয়ে রাখার জন্য দিয়েছি।(কড়া কন্ঠে)
আমি-…..
সাবিয়া-দেখি চুল সরাও।(আমার পাশে এসে)
আমি-হুম।(চুল গুলো সরিয়ে)
আমি চুল গুলো সরিয়ে দিলে মা আমাকে একটা মোটা চেইন পরিয়ে দেয়।আর আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি।
আমি-মা এটা কি করছেন?(মায়ের হাত সরিয়ে)
সাবিয়া-চুপ থাকো তুমি আর একটাও কথা বলবে না।গয়না না পরে কেনো এসেছো নিচে।তোমাকে গয়না দিয়েছি কি আলমারিতে সাজিয়ে রাখার জন্য।এখন চুপচাপ বসে থাকবে।(কড়া কন্ঠে)
মা আমাকে বকতে বকতে গয়না পরাতে লাগলেন আর আমি চুপচাপ বসে আছি।মায়ের এমন বকে বকে গয়না পরানো দেখে আমার নিজের মায়ের কথা মনে পরে গেলো।ছোট বেলায় মাও আমাকে এভাবে বকে বকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করা তো।এসব মনে পরায় আমি মাকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে দিই।
সাবিয়া-কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
আমি-কিছুনা মা আমি আসি।(বলে চলে এলাম)
বেশকিছুক্ষণ পর তন্ময়ের বন্ধু রাকিব এলো সাথে একটা ছেলে এলো মনে হয় আরেকটা বন্ধু হবে।
তন্ময়-কেমন আছিস বন্ধু?(জরিয়ে ধরে)
রাকিব-রাকিব যেমন থাকে।(তন্ময়কে ছেড়ে)
তন্ময়-তুই আর বদলাবি না।এ কে?(ছেলেটাকে)
রাকিব-তোকে আমার এক কাজিন এর কথা বলেছি এই হচ্ছে সে।
তন্ময়-ও তুমিই তাহলে সিয়াম।
সিয়াম-হুম!!!কেমন আছেন?(জরিয়ে ধরে)
তন্ময়-ভালো।
এবার আমরা একে একে সবাই পরিচিত হলাম ওদের সাথে।আমি খেয়াল করলাম সিয়াম ছেলে টা আমার দিকে শুধু বার বার তাকায়।আর ওর তাকিয়ে থাকাও কেমন যেনো।তেমন কিছু বলিনি।
ওরা নাকি কিছুদিন থাকবে এখানে তাই ওদের জন্য আমি আর ভাবী রুম গুছাতে গেলাম।
রহমান-তন্ময় তুমি এটা কি করলে?
তন্ময়-কি করলাম বাবা।(ভয়ে)
রহমান-তুই তনুর মা বাবাকে মিথ্যা বলেছিস?
তন্ময়-(এই খবর টা বাবার কানে ৮ দিন পরে এল)
না তো আমি কেন মিথ্যা বলবো?
রহমান-আমার কাছে খবর এসেছে বুঝেছো।
তন্ময়-বাবা আমি কিছু বলিনি….
সাবিয়া-তোর কথা পরে বলিস।শুনো….
রহমান-কি???
সাবিয়া-তোমার ছেলে উন্নতি করেছে।(হেসে)
রহমান-মানে?
সাবিয়া-আজকে তনুকে দেখেছোনা একটা নতুন শাড়ী পরেছে।(তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে)
রহমান-হ্যাঁ ওকে খুব সুন্দর লেগেছিল।
সাবিয়া-জানো ওই শাড়ীটা কে দিয়েছে।
রহমান-তুমি???
সাবিয়া-আরে না তন্ময়..
রহমান-সত্যি!!!!
তন্ময়-বাবা ওদেরকে রুমে পাঠাই কেমন।(বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো)
রহমান-সত্যি ও দিয়েছিলো?
সাবিয়া-না আমি বলেছি দিতে।
রহমান-ওহ।
তন্ময়-রাকিব যা তোরা রুমে যা।
রাকিব-কোন রুমে?
তন্ময়-উপরে ওই দুই রুমে একটা তোর একটা সিয়ামের।যা তাড়াতাড়ি যা।
সিয়াম-আচ্ছা ভাইয়া এতো ব্যস্ত হবেন না আমরা যাচ্ছি।(উপরে উঠে গেলো)
তন্ময়-তনু রুম গুছিয়েছে কিনা আমি দেখে আসি তুই ও যা। (বলে তন্ময়ও উপরে উঠে গেলো)
আমি পুরো রুমটা ভালো ভাবে গুছিয়ে নিলাম।আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগ-লাম।আসলে না থেমে কাজ করেছি তো তাই।আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ কেও একজন পেছন থেকে আমার কোমড় চেপে জরিয়ে ধরে।আমি ভয়ে তার দিকে তাকালে অবাক হয়ে যাই।
আমি-আপনি???
-চলবে
(গাইজ ছেলেটা কে হতে পারে বলে মনে হয়?)