#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৫
#Jechi_Jahan
উনি আমাকে আই লাভ ইউ বলায় আমি যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।আমি ওনাকে এখন কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিনা।
তন্ময়-কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে?
আমি-আ আমি কখন চ চলে গেলাম?
তন্ময়-চলে তো গিয়েই ছিলে আমাকে ছেড়ে।আর গেলে তো গেলে এমন দিনেই গেলে যেদিন কিনা আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।(জরিয়ে ধরেই)
আমি-এসব কি বলছেন আপনি?(ভয়ে)
তন্ময়-I really love you onu…..
আমি-(বুঝলাম উনি আমার জায়গায় আপুকে কল্পনা করছে।এ কথা মাথায় আসতেই আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম)
তন্ময়-(হঠাৎ আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়)
অনু তুমি………..তনু?
আমি-হ্যাঁ আমি!!!কি করছিলেন এটা?
তন্ময়-তুমি এখানে অনু কই???……….১ মিনিট!!!
আমি-কি?
তন্ময়-তুমি অনুর শাড়ী কেনো পড়েছো?
আমি-এটা আপুর শাড়ী???
তন্ময়-ওয়াও!!আবার নাটক শুরু করেছো তুমি?
আমি-আমি আবার কি করলাম?(মাথা নিচু করে)
তন্ময়-এই শাড়ীটা আমি অনুকে দিয়েছিলাম বিয়ে এর আগে।আর তুমি এখন সেটাও নিয়ে নিলে।
(রেগে)
আমি-এটা আমি কাল আমার আলমারিতে পেয়ে ছিলাম।এটাতে আপুর আমি জানতামনা।
(কান্না করে)
তন্ময়-আমার সাথে একদম মিথ্যা বলবেনা।এটা তুমি অনুর থেকে কেড়ে নিয়েছিলে তাইনা?যাতে ও এই শাড়ীটা না পরতে পারে।(রেগে)
আমি-আপনি এসব কি বলছেন?আমি এমন কেনো করবো?(কান্না করে)
তন্ময়-তুমি আর কি করার বাকি রেখেছো?(রেগে)
আমি-আমি কি এমন করেছি যে…….
তন্ময়-গেট আউট…
আমি-প্লিজ আমার কথাটা বিশ্বাস….
তন্ময়-আমার চোখের সামনে থেকে যাও।(রেগে)
আমি আর ওখানে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম আর ছাদে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম।
আমি-আল্লাহ তুমি কেনো আমার আপনজন দের আমার থেকে কেড়ে নাও।সবাই আমার কঠিন সময়েই কেনো আমায় ছেড়ে চলে যায়।১২ বছর আগে মাকে দূরে করে দিলে যখন আমার মাকে বেশি প্রয়োজন ছিল।আর তিন বছর আগে…..না ওর কথা নাই বা বললাম কিন্তু এখন।এখন তো তুমি তন্ময়কে ও আমার থেকে কেড়ে নিচ্ছ যাকে কিনা এখন আমার খুব প্রয়োজন।(কান্না করে)
জেনি-ভাবী।(কাঁধে হাত রেখে)
আমি-জেনি।(জরিয়ে ধরে)
জেনি-ভাবী ভাইয়াআতোমাকে কি বলেছে আমাকে বলো দেখো আমি কি করি।
আমি এবার কান্না করতে করতে ওকে সবকিছু বলি যা কিছুক্ষণ আগে ঘটেছিলো।আর জেনি এসব শুনে শুধু রাগে ফুসছে।
জেনি-ভাইয়া এমন করবে আমি ভাবিওনি।
আমি-জেনি আমি আর পারছিনা।উনিতো আমায় সহ্যই করতে পারেনা।এমন একটা অবস্থায় আমি ওনার সামনে কি করে দাড়াবো।(কান্না করে)
জেনি-ভাবী তুমি আজ ভাইয়ার সামনেই যেয়োনা।
আমি-কিন্তু কেনো?
জেনি-যেটা বলছি সেটা করোনা।
আমি-তা ঠিক আছে কিন্তু বাড়িতে থাকলে আমি কোনো না কোনো ভাবে ওনার সামনে পরেই যাব।
জেনি-তাহলে চলো আজ বাইরেই কাটাই।
আমি-বাবাকে বলে আসি।
///ওদিকে///
তন্ময়-তনুকে দেখলেই আমার এমন লাগে কেন?
যেনো মনে হয় ও আমার সামনে আসলেই শুধু নাটক করে।আর দূরে গেলে মনে হয় ওর সব কথা সত্যি।কি যে হচ্ছে আমার সাথে।(রেগে)
জেনি-ভাবী তোমার স্কুটি বাইক আছে?
আমি-হুম আছে তো।
জেনি-আগে বলোনি তো।
আমি-জানতে চাওনি তো,আচ্ছা এখন কি পরি?
জেনি-এই লাল কুর্তিটা পরো।
আমি-এটা অনেক গেরওয়ালা পরবোনা।
জেনি-আহ পরোতো।
এবার আমি ড্রেসটা পরে জেনি সহ ড্রয়িংরুমে আসলাম।ড্রয়িংরুমে এসে দেখি বাবা তন্ময় বসে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
আমি-এই মরেছে।(ভয়ে)
জেনি-শুনো ভাবী তুমি আগে চলে যাও।পেছনে কেও ডাকলে তাকানোর দরকার নেই ওকে।
আমি-তোমার ভাইয়া যদি….
জেনি-কিছু হবেনা আমি আছিতো।যাও!!!
আমিও এবার জেনির কথায় স্কুটির চাবিটা নিয়ে বাবাদের সামনে দৌড়ে চলে আসতে লাগলাম।
বাবা-এই দাঁড়া।
কে শুনে কার কথা আমি বাবার কথার পাত্তা না দিয়ে সেই দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে এলাম।
তন্ময়-জেনি তুই কোথায় যাচ্ছিস?
জেনি-তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।
তন্ময়-কি???(রেগে)
জেনি-আঙ্কেল আসি।
বাবা-সাবধানে যেও।
জেনি-আচ্ছা।(বলে বের হয়ে গেলো)
আমি আর জেনি সেই যে বের হলাম একেবারে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরলাম।কত জায়গায় গেছি নিজেরা ও জানিনা।আমি আর আজ ওই রুমে যাইনি নিজের রুমে জেনির সাথে থেকে গেলাম।
+++সকালে+++
আমি টিপ টিপ পা ফেলে আপুর রুমে প্রবেশ করি আর গিয়ে দেখি উনি রুমে নেই।মনে হয় ওয়াশ-রুমে গেছে তাই তাড়াতাড়ি আলমারির সামনে গেলাম আর একটা শাড়ী নিয়ে পিছনে ঘুরলাম।পেছনে ঘুরতেই দেখি তন্ময় আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু একটা
বলতে যাবো তার আগে উনি আমাকে দেওয়াল এর সাথে জোরে চেপে ধরে আর বলে।
তন্ময়-শান্তি পেয়েছো?(রেগে)
আমি-আমি ব্যাথা পাচ্ছি।(কান্না করে)
তন্ময়-আমাকে একা রেখে শান্তি পেয়েছো?(রেগে)
আমি-মানে???
তন্ময়-ওহ তুমি কিছুই জানোনা তাইনা।
আমি-আপনি কি বলছেন আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিনা।
তন্ময়-আমি এখানে থাকলে খুব বোরিং ফিল করবো কারণ আমি এখানে নতুন।(ডং করে)আর এই সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে তোমরা আমাকে এখানে একা রেখে চলে গিয়েছিলে তাইনা।
আমি-আমি শুধু আপনার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম তাই এমন করেছি।
তন্ময়-কেনো দূরে কেনো?(আমাকে ছেড়ে)
আমি-কারণ আপনি আমায় সহ্য করেননা তাই।
তন্ময়-তাই!!!ওকে দূরে যাওয়া বের করছি।
আমি-হ্যাঁ???
তন্ময়-আমাকে বোর করেছো না দেখো কি করি।
আমি-কি করবেন?(ভয়ে)
তন্ময়-বলবোনা।(আমার মুখের সামনে মুখ এনে)
আমি-সরি(মাথা নিচু করে)
তন্ময়-সেটা তোমার আগে ভাবা উচিত ছিলো।
***রাতে***
আমার ঘুম আসছেনা তাই শুধু এদিক-ওদিক গড়াগড়ি করছি।আর তন্ময় ও শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাঁটছে।আমি হতাশায় চোখটা একটু বন্ধ করতেই বাজি ফাটানোর আওয়াজ শুনি।আর সঙ্গে সঙ্গে আমি উঠে জানালার কাছে যাই আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বাকিগুলো দেখতে চেষ্টা করি।কিন্তু স্পর্শ ভাবে দেখা যায়না ছাদে গেলে দেখা যাবে।কিন্তু আমি একা কিভাবে যাবে আমার তো ভয় করবে।হঠাৎ আমার তন্ময়ের কথা মনে এলো।
আমি-শুনছেন।(তন্ময়ের কাছে এসে)
তন্ময়-(ফোন টিপছেই)
আমি-প্লিজ শুনুন না।(অসহায় ভাবে)
তন্ময়-কি???(বিরক্ত ভাবে)
আমি-আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন?
আমি-তোমার রিকুয়েষ্ট আমি রাখবো বলে কি করে মনে হয় তোমার।(রেগে)
আমি-(সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা নিচু করে নিই)
তন্ময়-বলো।
আমি-আমার সাথে একটু ছাদে যাবেন??
তন্ময়-কেনো পেত্নীর সাথে ব্যাটমিনট্যান খেলবে?
আমি-না আকাশ দেখবো।(ফট করে বলে ফেলি)
তন্ময়-পারবোনা।(বলে আবার ফোনে চালাচ্ছে)
আমি-গেলে আপনি যা বলবেন আমি তা করবো।
তন্ময়-সত্যি!!!(ফোনটা ফেলে দাঁড়িয়ে)
আমি-হুম(শুকনো ঢোক গিলে)
তন্ময়-আগে চলো তারপর বলছি।
আমি ছাদে এসে আকাশে উড়ে যাওয়া ফানুস আর বাজি গুলো ভিডিও করছি ফোন দিয়ে।
তন্ময়-এটার জন্য ছাদে আসা?(বিরক্ত হয়ে)
আমি-যেখানে এইসব হচ্ছে আমি আর আপু তো সোজা ওখানেই চলে যেতাম এসব দেখতে।কিন্তু আজকে প্রথম ছাদে এসে এসব দেখছি।
তন্ময়-অনুও আসতো এখানে?
আমি-হুম।
তন্ময়-তোমার কথা রাখবেনা?
আমি-হুম বলুন কি চান?
তন্ময়-আমরা কালকে বাড়িতে যাবো।
আমি-কি??(অবাক হয়ে)
তন্ময়-তুমি তোমার কথা রাখো।(বলে চলে গেল)
!!!!বিকেলে!!!
উনি সকালে বাবা মাকে কাজের চাপ দেখিয়ে বাড়িতে আসার পারমিশন পায়।কিন্তু আমার বাবা বিকেলে ছাড়া আমাদের বাড়ী আসতে দিবেনা।তাই তন্ময় বিকেলেই আমাদেরকে বাড়ীতে নিয়ে আসে।আমরা আসছি এটা বাড়ির কেও জানেনা।
রহমান-তোমরা???
জেনি-বাবা ভাইয়া আমাদের নিয়ে চলে এসেছে শুধু কালকে একটু ঘুরতে গিয়েছি বলে।(রেগে)
রহমান-এটা সত্যি তন্ময়?
তন্ময়-না বাবা তনুই আসতে চেয়েছিলো।
রহমান-তনু তুমি?
আমি-হুম আব্বু।(মিথ্যা বললাম)
সাবিয়া-এসেছো ভালো করেছো এবাড়ির কিছু নিয়মকানুন তোমাকে জেনে নিতে হবে।আর তাই তোমার বাড়ীতে থাকাও জুরুরি ছিল।(শক্ত হয়ে)
আমি-হুম মা।
বাড়ীতে এসেই সবার জন্য চা আর হালকা নাস্তা বানালাম ইউটিউব দেখে।আর সবাই সেটা ভালো ও পেয়েছে।যেহেতু রাতে আলাদা রান্না করা হয় তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমিই রান্নাটা করি।চুলায় রান্না বসালাম এমন সময় আমার শ্বাশুড়ি আসে।
সাবিয়া-তুমি রান্না করছো আজকে?
আমি-হুম।
সাবিয়া-যতই হোক তুমি বাড়ীর নতুন বউ।তাই আজকে এসব করার দরকার নেই কালকে থেকে করো।এখন নিসা আর জেনির কাছে যাও।
আমি-আচ্ছা মা।
আমি এবার নিসা ভাবীর রুমে গিয়ে দেখি জেনি আর নিসা ভাবী বসে বসে গল্প করছে।আমাকে দেখার সাথে নিসা ভাবী উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
নিসা-আসো আসো তোমারই অপেক্ষা করছিলাম
(খাটে বসিয়ে)
আমি-কেনো?
জেনি-সিকরেট জিনিস জানার জন্য।
আমি-মানে?
জেনি-মানে আমরা তোমার লাভস্টোরি জানবো।
আমি-কি?
জেনি-হুম ভাবী বলোনা বলোনা প্লিজ।
আমি-জেনি বাচ্চামো কেনো করছো?
নিসা-আরে বলোনা তনু।
আমি অনেকক্ষণ যুদ্ধ করেও ওদের বুঝাতে পারলাম না।এবার ওদের জোরাজোরিতে বলি।
আমি-ওকে।
জেনি-হুম।
আমি-বিয়ে আগে আমি একজনকে ভালোবাস তাম আর এখনো হয়তো ভালোবাসি।
নিসা-কবে থেকে?
আমি-তিন বছর আগে থেকে।
জেনি-ভাইয়া।😱😱😱
-চলবে