#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৪
#Jechi_Jahan
আমি আর তন্ময় অবাক হয়ে একে অপরের দিক এ বার বার তাকাচ্ছি।কারণ আমরা যখন রুমে আসি তখন দেখি রুমে তন্ময়ের বড় ছবিটা নেই।কিন্তু সেই ছবির জায়গায় আমাদের দুজনের ছবি লাগানো যেই ছবি কিছুক্ষণ আগে তুললাম।
তন্ময়-তুমি লাগিয়েছো এটা?(রেগে)
আমি-না না আমি লাগাইনি।
তন্ময়-মিথ্যা বলোনা তনু?(রেগে)
আমি-আমি সত্যিই লাগাইনি বিশ্বাস করুন।আ আর আমিতো মাত্রই এলাম।
তন্ময়-তুমি ছাড়া এ কাজ আর কে করবে?
আমি-আমি কিভাবে করবো?আপনি নিজেই দেখুন না ছবিটা কিছুক্ষণ আগের তোলা।
তন্ময়-তুমি লাগাওনি সেটা মানলাম কিন্তু কাওকে না কাওকে দিয়ে নিশ্চয়ই লাগিয়েছো।তুমি কি ভেবেছো এসব দেখলে আমি গলে যাবো।মোটেও না এই তন্ময় যেটা বলে সেটা করে।
জেনি-গোড়ার ডিম করে।(তন্ময়ের পেছন থেকে)
তন্মম-তুই???
জেনি-হ্যাঁ আমি!!!বাড়ীতে আসতে না আসতেই যা শুরু করেছিস না এসে আর পারলাম না।
আমি-জেনি কেও কি এই ঘরে এসেছিলো?
জেনি-না তো আমি ছাড়া কেও আসেনি।
তন্ময়-দেখেছো!!!এটা নিশ্চয়ই তুমিই করেছো।
আমি-আমি সত্যি কিছু করিনি।
জেনি-কি করোনি তোমরা?
আমি-জেনি ছবিটা এখানে কে লাগিয়েছে??
জেনি-ওহ!!!তা পছন্দ হয়েছে?
তন্ময়-না মোটেও পছন্দ হয়নি।কে করেছে এটা?
জেনি-ওহ আসলে এই ছবিটা আমি আমার এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলাম এই ফ্যামের সমান বানিয়ে দেয়ার জন্য।তো পরে আমি ছবিটা এনে এখানে লাগিয়ে দিই তোমাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
তন্ময়-এটা সারপ্রাইজ হলো।(রেগে)
জেনি-কেনো তোমার পছন্দ হয়নি?
তন্ময়-এখানে পছন্দ হওয়ার কোনো কিছু থাকলে তো পছন্দ হবে।এই মেয়েটার ছায়াও আমার পছন্দ না আর ছবিতে কি পছন্দ হবে।(রেগে)
জেনি-কিসব বলছো তুমি?(রেগে)
তন্ময়-বলছি!!!তনু যদি এখনই এই ছবিটা বাইরে না ফেলে আসে তাহলে এ রুমে ওর জায়গা নেই।
জেনি-ভাইয়া তুমি কিন্তু এবার একটু বেশি বেশি করছো।(জোরে চেঁচিয়ে)
তন্ময়-দেখেছিস এই মেয়েরা তোকেও আমার থেকে আলাদা করে দিচ্ছে।জেনি একে সামনে থেকে এক্ষুনি সরা। (রেগে)
জেনি-তোমাকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ভাইয়া।যে তুমি মেয়েদের সম্মান করতে সে তুমি কিনা আজ নিজের স্ত্রীকে সরাতে বলছো।ওকে আমিও বাবাকে এ কথা বলে আসছি।(বলে রুমে থেকে চলে যায়)
(আমি এতোক্ষণ চুপ করেছিলাম আর এদের কথা শুনছিলাম।কিন্তু কথাগুলো শুনার মতো ছিলোনা এক একটা কথা তীরের মতো।যেনো তীরটা এসে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।কথা গুলো শুনে চোখের পানি থামছেই না)
তন্ময়-এখনো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?
ওনার কথায় আমি রুম থেকে বের হতে যাবো।
তন্ময়-বাইরে কোথায় যাচ্ছো?
আমি-আপনিই তো বলেছেন।(কান্না করে)
তন্ময়-রুমে আসতে বলেছি।
ওনার কথায় এবার আমি রুমে এলাম আর ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।আমি ফ্রেশ হয়ে আসলে উনিও ফ্রেশ হতে চলে যায়।
রহমান-কি তোর ভাইয়া এমন করেছে?(রেগে)
জেনি-তো আর কি বলবো বাবা।
রহমান-তুই বস আমি এখনি ওর কিছু একটা….
জেনি-বাবা দাঁড়াও!!!!
রহমান-কি???
জেনি-ভাইয়াকে তুমি এভাবে বকে বকে বুঝিয়ো না।এতে হীতে বিপরীত হয়।
রহমান-মানে বুঝলাম না।
জেনি-আমরা এমন করাতে ভাইয়া ভাবে ভাবীর কারণেই আমরা ভাইয়ার সাথে এমন করি।আর ভাইয়া সেই ভাবীর উপরেই দোষ দেয়।
রহমান-তোর কথা বুঝেছি আমি।দেখ এবার আমি কি করি।(মুচকি হেসে)
(খাবার টেবিলে)
সবাই আজ একসাথেই খেতে বসেছে।জেনি ইচ্ছে করে আমাকে আর তন্ময়কে একসাথে বসিয়েছে।
সবাই যে যার মতো খাবার খাচ্ছে।হঠাৎ বাবা বলে
রহমান-তন্ময় কালকে তোমরা কোথায় যাবে?
তন্ময়-কালকে আমি অফিসে যাবো।
রহমান-আরে তুমি আর তনয়া।
তন্ময়-বললাম তো আমি কাল অফিসে যাবো।আর তনয়ার টা তনয়াকে জিজ্ঞেস করো।
রহমান-তনয়ার কোথাও যাওয়ার নেই।যাওয়ার হলে তোমাকে নিয়েই যাবে।
তন্ময়-মানে?
রহমান-কালকে তুমি,তয়না আর জেনি মিলে তয়নাদের বাড়িতে যাবে নিয়ম অনুসারে।
তন্ময়-আমি ওসব নিয়ম মানতে পারবোনা বাবা।
রহমান-তুমি মনে হয় আমার সকালের কথাটা ভুলে গেছো।চাইলে মনে করিয়ে দিতে পারি।
তন্ময়-কয়টায় রওনা দিবো?(নিচে তাকিয়ে)
রহমান-সকালে!!!
আমি রুমে বসে আমার আর ওনার জামাকাপড় গোছাচ্ছি আর উনি শুধু রুমে পায়চারি করছে।
তন্ময়-শুনো!!!
আমি-জ্বি।
তন্ময়-আমি তোমাদের বাড়ী থেকে রোজ সকালে অফিসে চলে যাবো।আর এই ব্যাপারটা যাতে বাবা না জানে।কি বললাম বুঝেছো।
আমি-হুম।
তন্ময়-হুম যাও।
আমি এবার জামাকাপড় গুছিয়ে বারান্দায় চলে যাই আর ঘুমিয়ে পরি।ওদিকে তন্ময় চোখজোড়া খোলা রেখে শুধু চিন্তা করে যে কিভাবে ওই বাড়ী তে যাবে।কারণ ওখানে গেলেতো অনয়ার স্মৃতি গুলো ওকে রোজ কাঁদাবে।
—-সকালে—-
আমি,জেনি আর তন্ময় আমরা একসাথে আমার বাড়ীতে এলাম।বাড়ীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি কারণ কেও ভেতর থেকে এখনো আসেনি।
হঠাৎ দেখি আমার কাজিনরা সবাই আমাদের দিকে এগিয়ে আসে আর ভেতরে প্রবেশ করায়।
আবদুল-এসেছো তোমরা তাহলে?
আমি-হুম বাবা(জরিয়ে ধরে)
আবদুল-যা তোর মায়ের সাথে দেখা করে আয়।বউভাত এ যায়নি এখন গিয়ে দেখা কর।
আমি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি মায়ের রুমে যাই।আর মা আমাকে দেখে মুখটা ফিরিয়ে নেয়।
আমি-মা তুমি কেমন আছো?বউভাত এর দিন বাবা বলেছিলো তুমি নাকি অসুস্থ তাই বউভাত এ আসতে পারোনি।এখন কেমন আছো তুমি?
(মায়ের কাছে গিয়ে)
মা-মিথ্যা বলেছে তোর বাবা আমি ইচ্ছে করেই যাইনি তোর বউভাতে।যাতে তোর এই মুখ আমায় দেখতে না হয়।(রেগে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি-মা আমার বুঝার বয়স থেকে দেখে আসছি তুমি আমাকে একটুও পছন্দ করো না।আর এই প্রশ্নটা আমি তোমাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তুমি আমাকে কিছুই বলোনি।মা আজ আবার জিজ্ঞেস করবো।বলোনা কেন তুমি এমন করো কেনো আমায় পছন্দ করো না???
মা-তোর এই মুখটা আমার সামনে থেকে সরা।
আমি-মা বলোনা।
মা-তোকে যেতে বলেছি না।(রেগে)
আমি এবার মায়ের রুম থেকে কান্না করতে করতে চলে আসি।আর বাইরে এসে দেখি জেনি আর তন্ময় আমার বাবা আর কাজিনদের সাথে বসে বসে গল্প করছে।
সকাল থেকে আমার কাজিনদের সাথে অনেক গল্প করেছে তন্ময় আর জেনি।বিকালে ঘুরতেও বের হয়েছি আমরা আর সন্ধ্যায় ফিরে এসেছি।
জেনি-ভাবী এই রুমটা খুব সুন্দর।
আমি-হুম কারণ এটা আমার রুম।
জেনি-কি?তাহলে তোমরা কোন রুমে থাকছো?
আমি-আপুর রুমে।
জেনি-ওহ!!!
আমি-আচ্ছা জেনি তোমার জামাকাপড় গুলো দাও আলমারিতে রেখে দিই।লাকেজ থেকে কয় দিনই বা বের করে পরবে।
জেনি-আচ্ছা আমিও রাখি।
আমি আর জেনি দুজনে মিলে আলমারিতে জামা কাপড় গুলো রাখছিলাম।হঠাৎ জেনি জামাগুলো থেকে একটা শপিংব্যাগ বের করে।
জেনি-ভাবী এটা কি একদম নতুন।
আমি-আমিও তো জানিনা দেখে তো বের করে।
জেনি-ওয়াও শাড়ী।(ব্যাগ থেকে বের করে)
আমি-এই শাড়ীটা তো আমার না।
জেনি-যারই হোক বাট শাড়ীটা খুব সুন্দর।ভাবী তুমি কালকে এটা পরো প্লিজ।
আমি-তা ঠিক আছে কিন্তু কার না কার।
জেনি-ভাবী তুমি আমার কথা রাখবেনা।
আমি-আচ্ছা কালকে পরবো।
রাতে আমরা খাওয়া দাওয়া করে যে যার রুমে চলে গেলাম।আমি রুমে এসে পরলাম এক মহা ঝামেলায়।আপুর রুমে বারান্দা নেই আমার রুমে বারান্দা আছে।এখন বারান্দা না থাকলে আমি থাকবো কোথায় ফ্লোরে তো শুতেও পারবোনা।
তন্ময়-কি হলো ঘুমাতে আসো।
আমি-কই?এখানে তো বারান্দা নেই।
তন্ময়-তোমাকে আজ থেকে বারান্দায় বা ফ্লোরে শুতে হবেনা।শীত এসেছে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
আমি-তাহলে শুবো কই?
তন্ময়-খাটে।
আমি-কিন্তু…
তন্ময়-মাঝখানে বালিশের দেয়াল দিয়ো।
আমি-আচ্ছা
আমরা দুজন একসাথে শুয়ে গেলাম মাঝখানে দুটো বালিশ লম্বা করে দিয়ে।সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি গোসল করে কালকের শাড়ীটা পরলাম যেটা কালকে আলমারিতে পেলাম।শাড়ীটা এস কালারের তাই মেচিং করে চুরি আর কানের দুল পরলাম।আমি নিচে গিয়ে সবার জন্য কালকের মতো নাস্তা বানালাম।আর বেশ কিছুক্ষণ পর রুমে এসে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিলাম।পর্দাটা সরিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে ছিলাম।আমি এবার পেছনে ফিরে দেখি তন্ময় আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি-আপনি উঠে গেছেন যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
কিন্তু উনি আমার কথার পাত্তা না দিয়ে খাট থেকে উঠে যায়।আর আমার দিকে এগিয়ে এসে হঠাৎ করেই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।ওনার এমন জরিয়ে ধরাতে আমি যেনো জমে গেলাম।
আমি-ত তন্ময় আপনি এ এটা কি ক করছেন?
তন্ময়-I love you….
-চলবে