তন্ময়ের তনু পর্ব-০৩

0
3130

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৩
#Jechi_Jahan

উনি আমার উপর উঠায় যেনো আমার ধম বন্ধ হয়ে আসছিলো।আর ওনার ধমকে তো আমার জান যায় যায় অবস্থা।কিন্তু উনি কোনো হেলদুল না করে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে।

তন্ময়-দেখেছো একবার নিজেকে?

আমি-(ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা)

তন্ময়-শুনে রাখো তনয়া!!!অনু মতো সাজলেই অনু হওয়া যায়না।তোমার কোনো যোগ্যতা নেই অনুর মতো হওয়ার।(রেগে)

আমি-(ওনার কথায় চোখ থেকে পানি পরে যায়)

তন্ময়-(দেখলাম তনু কাঁদছে তাই তনুর চোখের পানিটা মুচে দিই আর বলি)এই চোখের পানিটা অন্তত আমার সামনে পেলোনা তনু।কারণ এসবে আমি গলবোনা।(বলে আমায় ধাক্কা দিয়ে দেয়)

আমি-(ওনার ধাক্কায় আমি দূরে ছিটকে পরি)

তন্ময়-আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবেনা।
(বিছানা থেকে উঠতে উঠতে)

আমি-হুম।(উঠে বসে)

তন্ময় ওয়াসরুমে গিয়ে বেশ লম্বা একটা সাওয়ার নেয়।সাওয়ার নিয়ে চেঞ্জ করে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে যায়।বের হওয়ার পর দেখে তনু রুমে নেই।তনুকে না দেখে তন্ময়ের রাগ উঠে যায়।

তন্ময়-এই মেয়েটা আবার আমাকে বাবার কাছ থেকে বকা শুনাবে।উপরে আসার সময় বাবা বার বার করে বলেছিলো যাতে তনুকে সহ সাথে করে নিচে নিয়ে যাই।এখন আমি কি করবো?(রেগে)

অভি(তন্ময়ের বড় ভাই)-তন্ময় নিচে চল।

তন্ময়-ভাইয়া তনু কোথায়?

অভি-বাহ বউকে খুব চোখে হারাচ্ছিস দেখছি।

তন্ময়-ভাইয়া প্লিজ!!!বলবে তনু কই?

অভি-তনু গাড়ীতে বসে আছে আর তোর জন্য গাড়ীটা ছাড়ছে না।ভাই আমার তাড়াতাড়ি কর।

তন্ময়-আমি রেডি চলো।

আমি-(এতোক্ষণ গাড়িতে বসে আছি।আমার খুব ভয় করছে তন্ময়ের জন্য আমি যে ওনার কথা মানিনি না জানি কি শাস্তি হয়)জেনি”””””

জেনি-হুম ভাবী।(গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে)

আমি-তুমি আমার পাশে বসোনা।

জেনি-ওকে.(তনুর পাশে গিয়ে বসে)

আমি-বাঁচালে তুমি।

জেনি-এখনও বাঁচালাম সকালেই তো বাঁচালাম।

আমি-সকালে তুমি না থাকলে যে কি হতো।(ভয়ে)

“””ফ্লাসব্যাক”””

আমি-জেনি এখন আমরা কি করবো?

জেনি-ভাবী আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া।

আমি-মানে???

জেনি-আমি নিজেও জানিনা।

আমি-প্লিজ জেনি এটা মজা করার সময় নয়।

জেনি-ওয়েট ওয়েট ভাবতে দাও।

আমি-কি ভেবেছো?

জেনি-মাত্র তো ভাবতে শুরু করলাম।

আমি-ওকে ওকে ভাবো।

জেনি-ভাবী পেয়ে গেছি।

আমি-কি???

জেনি-ইউটিউব!!!!

আমি-এখানে ইউটিউব কোথা থেকে আসলো?

জেনি-ভাবী তুমি একটা বেক্কল।আরে ইউটিউব থেকে দেখে দেখে আমরা রান্না করবো।

আমি-ওকে।

আমি এবার ইউটিউব থেকে দেখে দেখে খাবার গুলো বানালাম।যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী আমাকে একা একাই খাবারগুলো বানাতে হবে।বেশ কিছুক্ষণ পর আমি খাবারগুলো বানিয়ে টেবিলে রেখে দিলাম।আসার সময় আমার শ্বাশুড়ি আমার হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে দেন।

শাবিয়া-চা টা তন্ময় কে দিয়ে আসো।

আমি-আমিই দিয়ে আসবো?(ভয়ে)

শাবিয়া-শুধু দিয়ে আসবেনা তন্ময় কে সাথে করে তারপরেই নিচে আসবে।(কঠিন গলায়)

বাকিটা সবার জানা আছে……..

“”””প্রেজেন্ট””””

অভি-এই জেনি সর।(গাড়ীর কাছে এসে)

জেনি-কেনো?

অভি-গাঁদী তন্ময় বসবে ওখানে।

জেনি-ওহ ওকে!!!(বলে গাড়ী থেকে বের হলো)

তন্ময়-তুই এই গাড়ীতেই বস।(গাড়ীতে উঠে)

জেনি-ওকে(তন্ময়ের পাশে বসে)

গাড়ীটা চলতে শুরু করলো আর কিছুক্ষণ পর তার গন্তব্যে পৌঁছালো।আমরা গাড়ি থেকে বের হয়ে সেন্টার এর ভেতরে প্রবেশ করলাম।আমি যতদূর যাচ্ছি ততোদূর পর্যন্ত সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।এই তাকিয়ে থাকার মানে টা আমি বুঝতে পারলেও কিছু করার নেই।
আমাকে আর তন্ময়কে পাশাপাশি বসানো হয়।

রহমান-তনু তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো?

আমি-না বাবা!!!

তন্ময়-বিয়ে তো করেই ফেলেছে আর সামস্যা কি থাকবে?আর থাকলেও তার সবটা নাটক।

রহমান-তন্ময়(আস্তে)

তন্ময়-আমি কিছু মিথ্যা বলিনি।

রহমান-তুমি কি ভুলে যাচ্ছো কালকে কি হয়েছে।

আমি-(বাবার কথায় কালকের কথা মনে পরে)

\\\ফ্লাসব্যাক\\\

আজ আপুর বিয়ে বলে আমি খুব খুশি।সব কাজ আমি নিজেই করছি।আমি আপুর বিয়ে উপলক্ষে একটা একটা টিয়া কালারের গ্রাউন পরেছিলাম আর মেচিং করে সেজেছিলাম।আমি আর কিছু না করে দৌড়ে আপুর কাছে চলে গেলাম।

আমি-আপু(পেছন থেকে জরিয়ে ধরে)

অনু-উপপ ছাড়তো(তনুকে ছাড়িয়ে)

আমি-আজকেও এমন করবে।(অসহায়ভাবে)

অনু-ওই চুপ থাকতো।(ধমক দিয়ে)

আমি-হুম বকে নাও শ্বশুর বাড়ি গিয়ে এই তনু
কেই মিস করবে বলে দিলাম।

অনু-একদম কানের সামনে গ্যান গ্যান করবিনা তাহলে থাপ্পড় মারবো।(ধমক দিয়ে)

আমি-হুম বুঝলাম!!!একি??

অনু-কি?

আমি-তুমি গয়না খুলছো কেনো?

অনু-ওয়াসরুমে যাবো তাই।

আমি-ওয়াসরুমে যাবে বলে গয়না খুলবে?

অনু-বেশি কথা না বলে গয়না গুলো খুলতে একটু সাহায্য কর না।

আমি-ঠিক আছে।(গয়না খুলতে খুলতে)

অনু-গয়নাগুলো খুলে যা কিছুক্ষণ পরে আসিস।

আমি-তোমাকে স্টেজে নিয়ে যাবো।

অনু-বেশি কথা বলিস না যা।(রেগে)

আমিও আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।আর বেশ কিছুক্ষণ পর বাবা আমাকে
ওনার কাছে ডাকলো আর বললো-

আবদুল-তনু যা অনয়াকে নিয়ে আয়।

আমি-এখনই???

আবদুল-হুম না হয় দেরি হয়ে যাবে তো।

আমি-আচ্ছা।

আমি আবার আপুর কাছে যাই আর এবার গিয়ে দেখি আপু রুমে নেই।আমি ভাবি ওয়াশরুমে তাই ভেতরে গিয়ে দেখি আপু ওয়াশরুমেও নেই।এবার আমি ভয়ে আপুকে পুরো বাড়ী খুজেনিলাম।কিন্তু আপুকে কোথাও পেলাম না।এবার আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আপু পালিয়েছে।আমি আর কিছু না ভেবে দৌড়ে বাবার কাছে চলে যাই।

রহমান-আরে তনু এতো হাঁপাচ্ছো কেন?

আমি-ইয়ে আব্বু….

আবদুল-কি হয়েছে তনু আর অনয়া কই?

আমি-আব্বু আপু…..

আবদুল-আপু কি??

আমি-আব্বু আপু তো পালিয়েছে।

আবদুল-কি??

আমি-হ্যাঁ আব্বু আমি আপুকে সব জায়গায় খুজেছি কিন্তু কোথাও পেলাম না।

রহমান-তনু তুমি সিওর তো।

আমি-আমি সত্যি বলছি আপু বাড়ীতে নেই।

এ কথাটা পরিবারের লোক ছাড়া আর বাইরের কেও জানতে পারেনি।এখন সবাই এক চিন্তায় আছে যে আপু পালালো কেনো।আর আরেক টেনশন হচ্ছে বরকে একা কিভাবে পাঠাবে।

আবদুল-আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন আমি বুঝতে পারিনি আমার মেয়ে যে এমন করবে।
(তন্ময়ের বাবার হাত ধরে কেঁদে কেঁদে)

রহমান-বেয়াই আপনি এমন করছেন কেনো?কিছু হয়নি বর কনে কে নিয়ে তবেই যাবে।(হেসে)

আবদুল-মানে???

রহমান-মানে হলো আমরা প্রথমে তন্ময়ের জন্য অনয়াকে পছন্দ করেছিলাম আর এখন তনয়াকে পছন্দ করছি।দেবেন আপনার মেয়েকে?

আঙ্কেল এর কথা শুনে আমি যেনো সেখানেই থমকে গেলাম।আমি আর যাই করি এই বিয়েটা করতে পারবোনা।আমি দৌড়ে বাবার কাছে যাই।

আবদুল-তনু যদি….

আমি-না আঙ্কেল আমি বিয়ে করতে পারবোনা।আপনি অন্য কাওকে দেখেন।আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি পারবোনা।(আঙ্কেল এর হাত ধরে)

রহমান-তুমি আমার কথাটা রাখবে না।

বাবা আমার হাত ধরে টেনে আপুর রুমে নিয়ে যায়।রুমে আপু সবকিছু রেখে চলে গেছে লেহেঙ্গা
গয়না বাকি সবকিছু।বাবা আমাকে খাটে বসায়।

আবদুল-তনু তুই তো আমার জন্য সব করিস আজ এটা করতে পারবিনা?(কান্না করে)

আমি-বাবা এটা এতো সহজ নয়।(কান্না করে)

আবদুল-মারে তুই আমার কথাটা রাখ।

বাবা আমাকে আরো বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে লাগল।কিন্তু আমি বিয়ে করবোনা বলেই জানিয়ে দিলাম।
কিন্তু বাবার জোরাজোরিতে সেই রাজি হলাম।

—-ওদিক—-

তন্ময়-না বাবা আমি তনুকে বিয়ে করবোনা।

রহমান-তনুর মধ্যে খারাপ কি আছে?

তন্ময়-না বাবা ওর মাঝে কোনোকিছুই খারাপ নেই কিন্তু আমি পারবোনা ওকে বিয়ে করতে।

রহমান-তনু অনুর থেকেও ভালো।

তন্ময়-আমি অনুকে পছন্দ করেছি আর অনুকেই বিয়ে করবো।তনুকে আমি বিয়ে করবোনা।

এবার তন্ময় ও ওর বাবার একপ্রকার জোরা জোরিতে বিয়েতে রাজি না হয়ে পারলোনা।

///প্রেজেন্ট///

আমি ওই ভাবনা থেকে বের হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাবা এসেছে।আমি বসা থেকে উঠে সোজা বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

আবদুল-না তনু কাঁদেনা।(চোখের পানি মুছে)

আমি-তুমি এতো দেরি করে কেনো এলে?

আবদুল-আমার ভুল হয়ে গেছে।সরি!!!!

আমি-চলো বাবা বসবে চলো তোমার সাথে অনেক কথা আছে।(বাবাকে নিতে গিয়ে)

আবদুল-দাড়া আগে সবার সাথে দেখা করে নিই।

বাবা ওদিকে সবার সাথে দেখা করতে গেলে।জেনি আমাকে টেনে তন্ময় এর সাথে দাঁড় করিয়ে দেয় আর চবি তুলতে থাকে।

জেনি-ভাইয়া ভাবীকে একটু ধর।

তন্ময়-তার দরকার নেই।

জেনি-গাঁদা।(এবার জেনি নিজে এসে আমাদের ঠিক করে দেয়।আর বাকি চবি গুলোতেও জেনিই আমাদের ঠিক করে আর চবি তুলে দেয়)

প্রায় সন্ধ্যার সময় বউভাত এর অনুষ্ঠান শেষ হয়।আমরা সবাই এক সাথে বাড়ী চলে আসি শুধু জেনি ছাড়া।কারণ ও আগেই বাড়ী চলে এসেছে।বাড়িতে এসে আমি আর তন্ময় একসাথেই রুমে গেলাম আর রুমে গিয়েই আমরা শকড হলাম।

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে