#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০১
#Jechi_Jahan
আজ আমার বড় বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হঠাৎ একটা খারাপ পরিস্থিতি তে পরে বিয়ে টা আমাকেই করতে হচ্ছে।আমি বিয়েটা করবো না বলে বার বার মানা করে দিয়েছি।কিন্তু আমার বাবার কথায় বিয়েতে আর না করে পারলাম না।
আমি জানিনা এই বিয়ের ভবিষ্যত কি।কিন্তু এটা জানি যে এই বিয়ের মাধ্যমে অনেক মানুষের মন ভেঙ্গে যাবে।আমাকে রেডি করিয়ে স্টেজে বসানো হলো।আর কাজী সাহেব বিয়ে পরাতে লাগলো।
(আমার নাম তনয়া জাহান সবাই ভালো বেসে তনু ডাকে।আমার বোনের নাম অনয়া জাহান ওকেও সবাই ভালোবেসে অনু ডাকে।আমরা শুধু দুইবোন ছাড়া আমাদের আর ভাই বোন নেই।আমার মা রাজিয়া জাহান জানিনা কেন আমাকে ভালোবাসে না তবে আপুকে খুব ভালোবাসে।আমার বাবা আবদুল আজিজ আমাকেই বেশি ভালোবাসে। এটার কারণ গল্পের মাঝেই জানতে পারবেন)
অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেলো।আমার বিদায়ের সময় মা ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে ছিল আমার সামনে না আসার জন্য।আমি মাকে অনেক ডেকে ছিলাম কিন্তু দরজা খুলেনি।যাওয়ার সময় বাবা কে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলাম।গাড়িতে বসেও অনেক কেঁদেছি ভাবতে পারিনি যে আমার সাথে এমন হবে।গাড়িটা ওনাদের বাড়ীর সামনে থামে।
ভেতরে গেলে সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকে আর কিসব কানাঘুষা করে।
রহমান(আমার শ্বশুর)-তনয়া বড়দের সালাম কর।
আমি-হুম।(ওনার ছেলের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব টা নি তখন আমার শ্বশুরই দিয়েছিলেন।)
আমি একে একে সবাইকে সালাম করলাম কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি সাবিয়া খাতুনকে সালাম করতে গেলেই উনি পা টা পিছিয়ে নেন জানিনা কেনো।
সাবিয়া-জেনি তোর ছোট ভাবীকে উপরে নিয়ে যা।
জেনি(আমার ননদ)-কিন্তু মা এখানে তো আরো নিয়মকানুন বাকি আছে উপরে কেনো নিবো?
নিসা(আমার বড় জা)-আরে ফ্রেশ করে আনবে আর কি।এই ভারী ভারী লেহেঙ্গা আর গয়না পরে কতক্ষণ থাকবে ক্লান্ত হয়ে যাবেনা।যাও যাও।
সানিয়া-নিয়মকানুনের দরকার নেই ওকে ফ্রেশ করিয়ে খেতে নিয়ে আসো।যে বাড়ির বউই ঠিক নেই সেখানে আবার নিয়মকানুন কি ঠিক থাকবে।
নিসা-আচ্ছা তনু চলো তোমার রুমে যাই।
আমাকে একটা রুমে আনা হলো। রুমটা দেখে মনে হয় ওনারই হবে কারণ ওনার একটা বড় চবি লাগানো আছে রুমে।আমাকে রুমে এনে খাটে বসানো হলো।খাটে বসার সাথে সাথে আমি কান্না করে দিই।নিসা আর জেনি আমার কাছে আসে।
নিসা-কি হয়েছে তনু কাঁদছো কেনো???
আমি-কান্না করতেই আছি।
জেনি- ছোট ভাবী কোনো কি সমস্যা হচ্ছে?
আমি-আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা।(কান্না করতে করতে)
জেনি-কেনো কি হয়েছে?
আমি-আমি তোমাদের সবার মন ভেঙ্গে দিয়েছি।
নিসা-কি বলছো কি তুমি?
আমি-তোমরা তো এসব আমার জন্য করোনি করেছো আমার বোনের জন্য কিন্তু আমি এখন….
নিসা-চুপ!!!!কিসব উল্টাপল্টা কথা বলছো তুমি?
জেনি-ছোট ভাবী তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুইনা।
আমি-বিশ্বাস করো আমি নিজেও কল্পনা করিনি যে আমি এবাড়ির বউ হয়ে যাবো।
নিসা-তনু তোমার কি কিছু চোখে পরেনা।দেখেছো তো কি একটা ঘটনা ঘটে গেলো।ওই ঘটনাটার জন্য সবাই চিন্তায় ছিল তাই এমন করছে।
জেনি-বড় ভাবী দেরি হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি করো।
নিসা-হুম!!!জেনি তুমি তনুর এসব গয়নাগুলো খুলে দাও আর ওকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দাও।আমি শাড়ীটা আনি।(বলে চলে গেলো)
জেনি-ভাবী তুমি ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আর লেহেঙ্গাটা খুলে এসো।
আমি-না!!!
জেনি-আরে ওখানে বাথরোব আছে ওটা পরে নিও তাহলেই হবে।আসলে শাড়ী পরাবো তো নাহলে সমস্যা হবে।
আমি জেনির কথামতো ফ্রেশ হয়ে লেহেঙ্গা টা খুলে নিলাম আর বাথরোবটা পরে নিলাম।আমার ইচ্ছে করছে শাওয়ার নিতে কিন্তু এখন সম্ভব না।
আমি বের হয়ে দেখি উনি আর জেনি দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আমি ওনাকে দেখে কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না।হঠাৎ উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহন করে চলে গেলো।
জেনি-ভাবী আসো।
আমি-হুম।
জেনি-এই নাও(একটা শাড়ী দিয়ে)এটা পরো।
আমি-আমি পরবো?
জেনি-হ্যাঁ তুমিই তো!!! আসলে কি বলোতো আমি না সুন্দর করে শাড়ী পরাতে পারিনা।
আমি-আমিও পারিনা।
জেনি-ওকে আমি বড় ভাবীকে ডাকছি।
বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর কিছুক্ষণ পর বড় ভাবী সহ ভেতরে এসে আমাকে শাড়ী পড়াতে শুরু করলো।একটা নীল রংয়ের শাড়ী আমাকে সুন্দর ভাবে পরিয়ে দিলো।
নিসা-এই জেনি চুলগুলোও ঠিক করে দে।
জেনি-হুম ভাবী।(আমার চুল খুলে)
নিসা-মাসআল্লাহ তনু তোমার চুল তো খুব সুন্দর।
জেনি-হুম ভাবী আসলেই তোমার চুল সুন্দর।
আমি-তাই???(ওদের দিকে তাকিয়ে)
ওরা এবার দেরি না করে আমার মাথায় একটা বেনি করে দেয় আর মাথায় গোমটা দিয়ে দেয়।ওনারা আমাকে নিয়ে এবার খাবার টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসালো আর ওরাও বসলো।খাবার টেবিলে বসে আমার উঠে যেতে ইচ্ছে করছিলো।
—আচ্ছা তোমার বোন যেমন তুমিও কি তেমন?
—দুজনেই কি টাকার জন্য বিয়ে করেছো?
—তোমরা কি আগে এসব করে বেড়াতে?
—কার থেকে পেলে এমন শিক্ষা?
এমন আরো অনেক কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে। আমি কেনো জানি অপমান টা সহ্য করতে পারিনা আর এনারা এখন আমাকে অপমানই করছে।যারা এসব বলছে ওরা সবাই এ পরিবারের কেও না এমনে বাইরের আত্মীয়।ওদের এসব বলার মাঝে আমার শ্বশুর ধমক দিয়প ওদেরকে থামায়।
একটা ফুল ছড়ানো খাটে আমি বসে আছি।একটু আগের বলা কথাগুলো আমার মাথা এখনো ঘুরছে।আচ্ছা এতে আমাদের দোষ কোথায় চাপে পড়ে যেমন উনি বিয়েটা করেছে তেমনি আমিও করেছি।তাহলে এখানে আমাদের দোষ কোথায়?
এসব ভাবছিলাম হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ এ আমার ধ্যান ভাঙ্গে তাকিয়ে দেখি উনি এসেছে।
(শুরু থেকেই শুধু উনি উনি করছি এবার আসি পরিচয়ে।এই উনিটা ছিলেন আমার হবু দুলাভাই আর এখন আমার স্বামী।উনার নাম হচ্ছে তন্ময় চৌধুরী।উনি একজন ব্যবসায়ী বাবার ব্যবসা করে।উনি খুব ফর্সা আর লম্বা মানে চকলেট বয়)
ওনাকে ভেতরে আসতে দেখে আমি খাট নেমে যাই আর ওনাকে সালাম করতে যাই।আমি যখন ওনার পা ধরে সালাম করতে যাবো উনি ওমনি পা টা পিছিয়ে নেন আর আমাকে বলেন।
তন্ময়-আর নাটক করতে হবেনা।(রেগে)
আমি-কি???
তন্ময়-এইযে সেই দুপুর থেকে যে নাটকটা করছো সেটা আর আমার সামনে করতে হবেনা।(রেগে)
আমি-দুপুর থেকে আমি নাটক করছি?
তন্ময়-তা নয়তো কি আসলেই করছো?তুমি এতো বড় একটা লোভী সেটা আমি কল্পনাও করিনি।
টাকার জন্য তুমি নিজের বোনের হবুস্বামীকে ছিহ.
(রেগে)
আমি-কি করেছি আমি আপনার সাথে?
তন্ময়-কি করোনি সেটা বলো।তুমি আমাকে বিয়ে কেনো করেছো?(রেগে)
আমি-দুপুরে কি হয়েছিল আপনি দেখেননি।
তন্ময়-তাও তুমি কেনো বিয়ে করেছো?(রেগে)
আমি-…………
তন্ময়-যাই হোক তুমি এখন আমার চোখের সামনে থেকে যাও।আমি যেনো সকালে উঠে তোমাকে এই রুমে না দেখি যাও।
আমি-কোথায় যাবো আমি?(কান্না করে)
তন্ময়-কোথায় যাবে আমি কি করে জানি। তবুও তুমি আমার চোখের সামনে থেকে যাবে এখন।
আমি-এখন বাইরে গেলে সবাই কি বলবে।
তন্ময়-ওকে বারান্দায় যাও তুমি।(রেগে)
আমি-ঠিক আছে।বলে বারান্দায় চলে গেলাম।
তন্ময়-(তনু যদি এমন না করতো তাহলে হয়তো আমি ওকে বন্ধু হিসেবে হলেও মেনে নিতাম।কিন্তু ওর জন্য তো আমার জীবন শেষ হয়ে গেলো)
আমি-(এতে ওনার কোনো দোষ নেই এটা ভাগ্য)
+++সকালে+++
সকালে তন্ময় ঘুম থেকে উঠে যেনো অবাক হয়ে যায়।কারণ ওর রুম যেনো কোনো হুরপরী বসে আছে।কমলা রংয়ের শাড়ী পরা,কমলা রংয়ের চুড়ি,বেজা লম্বা চুল খোলা রেখে আয়নার সামনে বসে আছে। তন্ময় এক দৃষ্টিতে সেই হুরপরীটার দিকে তাকিয়ে আছে ওর মনে হচ্ছে এটা অনু।
তনয়া-(আমি সকালে উঠে গোসল করে এখন রেডি হচ্ছিলাম নীচে যাওয়ার জন্য।হঠাৎ আমার নজর গেলো তন্ময় এর উপর।উনি আমার দিকে কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)কিছু লাগবে আপনার?
তন্ময়-হুম তোমাকে।(অজান্তেই)
আমি-হুম???
তন্ময়-(হঠাৎ তনুর প্রশ্নে আমি বাস্তবে ফিরলাম।এবার তনুর দিকে তাকিয়ে আমার নিজের উপর রাগ হতে লাগলো)তুমি এখানে কেনো?(রেগে)
আমি-মানে?
তন্ময়-মানে কি হ্যাঁ মানে কি?তোমাকে না বলেছি সকালে যেনো তোমার এই মুখ আমি না দেখি।
আমি-রাতে ঠিক আছে তাই বলে সকালেও?
তন্ময়-তুমি যাবে কি না?
আমি-আমি এখন যেতে পারবোনা।
তন্ময়-যাবেনা না।(খাট থেকে নামতে নিয়ে)
আমি-(ওনাকে নামতে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই)
যাচ্ছি যাচ্ছি(বলে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যাই)
তন্ময়-এতে দৌড়ানোর কি হলো?দূর সকাল সকাল ভয় দেখিয়ে দিলাম।(রেগে)
-চলবে