তনুশ্রী পর্ব-০৭

0
1555

#তনুশ্রী♥
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
#পর্ব_৭

তূর তনুকে নিয়ে বাড়িতে ডুকতেই পথ আটকে দাড়ায় মইনুল সহ রিমি আখতার। রিমি ভালোভাবে পরখ করেন বৌ ছেলেকে। কন্ঠ উতলা শোনায়,
– তোরা চইলা আইলি যে?
মইনুল বললেন,
– ওখানে ভালো লাগে নাই?
তূর জবাব না দিয়ে তনুকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। সিঁড়িতে পা দেবে তখনি ডাক আসে পেছন থেকে,
– বলবি তো কেন আসলি!
– পড়ে বলবো। মনে করতে পারো সময় চাইছি।
বলেই তূর ভিতরে চলে যায়। ঘরে গিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারে তনুকে। অবাক চোখে তাকিয়ে তনু৷ এ কয়দিনে একবারও তূর তার সাথে খারাপ আচরণ করেনি। কিন্তু আজ? তনু ঘাবড়ে যায়! জানালা বরাবর দাড়ায় তূর। কন্ঠ খেঁচা,
– আর কিছু বলছে তোমার আম্মায়?
মনমিনিয়ে বলে তনু,
– না!
– উনাকে সবধান হতে বলিও, নইলে সমস্যা আছে।
– কমু ক্যামনে? আপনেতো চইলাই আসলেন ওহেন থেইকা। ‘
– ঘেঁটুকে বললেই ও দলবল নিয়ে সাবধান করে দিয়ে আসবে। ‘
বলেই তনুর সামনে আসে তূর। বিছানায় বসে তনুর হাত শক্ত করে ধরে। তনু ব্যাথায় বলে ওঠে,
– লাগতাছে। ছাড়েন না।
– ধরছি এই কারনেই যে ভুলেও আর ও বাড়ির দিকে পা বাড়াবা না। নইলে জান ছিড়ে নেব একদম! ‘
তনুর চোখে পানি চলে আসে! গলায় দলা পাকাচ্ছে! কি এমন বলতো তার মা যে তূর এভাবে তনুর সাথে কথা বলছে? ভাবে তনু, পায়না ভাবনার কোন কুল কিনারা!
তূর নিজের নাক ডুকিয়ে নেয় তনুর গলায়। কেঁপে ওঠে তনু। বার কয়েক শ্বাস নিয়ে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে তূর!

চৈত্র মাস! ফ্যাপসা গরমে মোড়ল বাড়ির ফেঁপে উঠেছে। তূর ঘোড়ার গতিতে নামে সিঁড়ি বেয়ে। সোজা মইনুলের ঘরে প্রবেশ করে। মইনুল পালঙ্কে আরামে বসে পান চিবুচ্ছেন। তূর ঘরে গিয়ে বিছানার উপর রাখা সব পান মাটিতে ফেলে দেয়। তাকায় মইনুল। রাগে শরীর কাপছে তূরের। তিনি উতলা হওয়ার ভান ধরে বললেন,
– কি হয়েছে তূর? তুই রাগছোস নাকি?
– আজ একটুর জন্য তনু সব জানতে পারে নাই। জানলে ওকে দিয়ে কাজ হতো? মাত্র দশ দিন হাতে। লাগবে আরও বিষ থেকে তেইশটা মাল! পাড়ার ছোট ছেলেদেরও কি ইশয়াখ জোগাড় করতে পারে নাই? টাকার লোভ দেখালে তাদের জোগাড় করা কোন ব্যাপার? উফফ! আর একটু হলে তনুকে আনাই মুশকিল হয়ে পড়তো! ওই..’
– কে? কে তনুকে বলতে যাচ্ছিলো?
তূর সময় নেয়৷ মুখের দিকে তাকিয়ে মইনুল! ভয় মিশ্রিত মুখ! তূর বলে,
– থাক! কেউ না।
– কেউ না মানে? কে জানলো? নাকি আজিদ যে থালায় খাবে সেটাই ফুটো করবার চাচ্ছে? আজিদ কিছু বলছে না? মেয়ের প্রতি এহন দরদ ভাসছে? ‘
আমতাআমতা করতে করতে বললো তূর,
– আ.স.লে তনু আজিদ আর লতিফার কিছু কথা শুনেছিলো। তখনিই আমি যাই। ভ্যাগিস তখনি গেছিলাম। নাহলে একদম! ‘
– লতিফা সব জানে?
ভ্রু কুঁচকে বললো মইনুল। তূর মাথা নিচু করে চুপ রয়।
মইনুলের কন্ঠে রাগ,
– ওর আত্মীয় আমাদের এই ব্যাবসায় নামাইছে। আর ওয়ই ডুবাইতে চায়? না না! চল ইশয়াখের কাছে যাই। ‘
– না!
হকচকিয়ে বলে উঠলো তূর। মইনুলের ভ্রযুগল নেচেঁ ওঠে। কন্ঠ জিজ্ঞেসাবাদ এর ন্যায়,
– না কেনো?
– কিছু না!
– ওই লতিফার কিন্তু ধার বেশি। ওর ব্যাবস্হা করাই লাগবো। ‘
– কি দরকার আব্বা? ওনার দোষ নাই! ‘
– কেন? তোর এমন মনে হচ্ছে কেন?
চুপ থাকে তূর। মইনুল তূরকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে গোয়ালাদাপূর! নিজের ব্যাবসার ঘাটিতে!

______________
ইশা নিজের উত্তরের আশায় চেয়ে রয় ইশয়াখের দিকে। চকচকে দাঁত বের করে হাসছে ইশয়াখ! ইশার চাউনিতে শুধু ঘৃনা! এই বয়সি একটা ছেলে কি না কি করতে পারে! তা শুধু ইশয়াখকে দেখলেই বোঝা যায়। ইশয়াখ হাত দেখিয়ে মদের বোতল আনতে বলে। ইশা বাধ্যের ন্যায় এনে দেয়। বোতলের ছিপি খুলতে খুলতে বলে ইশয়াখ,
– ২২ শে নভেম্বর! রাত নয়টা প্রায়। অপরেশন হয়েছিলো সেদিন মাত্র ত্রিশটা। ত্রিশটার মধ্যে ছোট হিমু নামক বাচ্চাটা সেদিন মারা যায়। তাকে পুতে আসা হচ্ছিলো রাস্তা বেয়ে। ঘেঁটুদের ছুটি দিয়ে আসেছি তখন! ডাক্তাররা চলে গেছে অনেক আগেই! বখরার মাঠে আসতেই নির্জনতা ঘেরাও করে তা তো জানোই! কে না কে বাজে নাম ছড়িয়েছে সেই মাঠটায়। আর এই নির্জনতার সুযোগে কেউ হামলা করে আমার উপর! রাম দায়ের এক কোপ পড়ে ঘারে। তখনি তাকাতে পারিনি! ব্যাগে করে মাল নিয়ে আসছিলাম! ঝোলা সামনে দিকে টেনে নেই। পেছনে তাকাতেই কপালে আরেক বাড়ি পড়ে! মাটিতে পড়ে যাই! নিশ্বাস যায় আসে এমন অবস্থা! সেদিন সেই মুখোশধারী আমায় মৃত ভেবে পালিয়ে যায়। নিয়ে যায় মালের ব্যাগ! সেদিন ওই ত্রিশটা মাল থাকলে আজ এতকিছুর প্রয়োজন হতো? কোন সালায় নিয়ে গেছে যদি একবার জানতাম তাহলে…! ‘
কেঁপে ওঠে ইশা আম্বানি! বুকে ভয় ঘেরাও করে। তিনি ক্ষিন স্বরে বললেন,
– তাহলে কি ইশয়াখ?
– ওর কলিজা ছিড়ে নিতাম আমি!
– যদি কখনো সামনে পাও তখন কি করবে তাকে?
– কেটে টুকরো টুকরো করে ভাজা করে খাবো! ইশয়াখের গায়ে হাত দেয়ার সাহস দেখাবো সেদিন! কিন্তু তুমি এত প্রশ্ন করছো কেন এ বিষয়ে? ‘
ইশা ঘাবড়ে যান। আটকানো গলায় বলেন,
– এমনি! এমনিই আরকি!

দরজার কড়া নড়ে। বসার ঘর থেকে ইশয়াখ অতি তারাতাড়ি চলে যায় ভয়ে। ইশা শুকনো ডোক গিলে দরজার সামনে যায়। কন্ঠে ভয়ের আঁচ,
– কে?
মইনুল বলে ওঠেন,
– মোড়ল আসছিলাম।
স্বস্তির শ্বাস ফেলে দরজা খোলেন ইশা। তূরের মেজাজ আগুন! কারন লুকানো! ইশয়াখ বেড়িয়ে আসে ঘর থেকে। মইনুল সহ তূর সকলে বসে এক জায়গায়। ইশয়াক উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,
– তা কি খবর? ছেলেমেয়ে পাইছেন? নাকি ঘরের বউ তনু আনছেন? ‘
মইনুল হাসেন! ইশয়াখ চেয়ারে মলিন কাপড় খিচে নেয়।ঘেরাও করে ওঠে ভয়। কাউকে হারানোর ভয়! কিন্তু কেন? কথাতো অন্যকিছু ছিলো! মোহ বোধহয়! নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে তূর। ব্যার্থ চেষ্টা! মইনুলে চিন্তার ভান ধরে বলেন,
– আগে সব বউগুলোর মতন তনুর বোঝা কমাই অতঃপর মোড়লপাড়ার মিসকিন কতগুলো ছেলেরে আইনা ধরাই দিমু নে। ‘
– তা কবে আনছেন আগুন সুন্দরীকে?
মইনুল তূরের দিকে তাকান। তূরের চোখে আগুন ছুটছে!উত্তর তূর দেয়,
– যেদিন বলবি সেদিনই না হয় করা যাবে।
– পরশু!
– দেখি কদ্দূর কি করা যায়।
ইশয়াখ নিচু হাসি হেসে বলে,
– দেখি না, পরশু লাগবেই! এরপর আরও কয়েকজনকে লাগবে। তাহলে ডিল পুরো হবে। আর আপনারাও মুজুরি পেয়ে যাবেন! বলছিলাম তূর, তনুকে একবার পাঠালে মন্দ হয় না! ‘
রাগের নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে ফেলে তূর। উঠে দাড়িয়ে দরজার কাট খিঁচে ধরে দাড়ায়। ইশয়াখ বুজতে পারে। একটু চেঁচিয়ে বলে ইশয়াখ,
– আরে চিন্তা নাই! বুঝছি বউ হয় তো। কাজের পর তোমার চাচীগুলোর মতন তো ওতো বারিতেই পড়ে থাকবে। এর আগে শুধু একবার…’
মইনুল ইসারায় বলেন,
– এসব এখন থাক! কিন্তু লতিফার কিছু একটা ব্যাবস্হা করতেই হবে! সব জেনে গেছে মহিলা। আজিদকেও দুনিয়ায় রাখা ঠিক নয়! উপরে যাক দুটো! ‘
তূর ছুটে আসে দরজা থেকে। নিজেকে শান্ত করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। কেন তার এত রাগ হচ্ছে সকাল থেকে? ইশয়াখ চেয়াল শক্ত করে বলে,
– পাখি একটু বেশিই ছটফট করছে! খতম তাদের করতেই হবে!

পিলে চমকে ওঠে ইশার। লতিফা তাকে নানা ভাবে সাহায্য করছে! এই ভালো মানুষটার খুন ইশা কিছুতেই হতে দিতে চান না। তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে উঠে চলে যান তিনি!
ঘর থেকে বের হয়ে ইশা বেড়িয়ে যান ঘাটপাড়ে! এমন কড়া রোদে মাঠ পেড়িয়ে যাওয়া একপ্রকার অসম্ভব বটে! নৌকার মাঝি ঘাটে নৌকা বেধে কোথায় গেছে। ইশা আরেকটা নৌকার কাছে যায়।
– চাচা যাবেন?
পাতলা হ্যাংলা রোগা মাঝি গুলমাখা ময়লা দাতপাটি বের করে হাসে। বলে,
– ভর দুপুরে কই যাইবেন?
– মোড়লপাড়া!
– কিন্তু এই রৌদ্দুরে…
ইশা কোমড়ে গোজা টাকা বের করে। মাঝির চোখ চকচক করে ওঠে। ইশা দেখিয়ে বলে,
– পাঁচ টাকা বেশি পাইবেন। যাবেন নাকি বলেন!
– চলেন চলেন!
মাঝি নৌকায় বসে। সাথে ইশাও। চলতে থাকে নৌকা মোড়লপাড়া!

#চলবে….

আজকের পর্বটা খাপছাড়া হয়েছে। তারজন্য দুঃখীত!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে