ডেভিল বর
পর্ব- ৯
শিফা_আফরিন
.
.
?
রুমে এসে আঁচল পিছন ফিরে দেখে রেহান দাঁড়িয়ে দু’হাত পকেটে গুঁজে মুচকি হাসছে। আঁচল আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে আসে।
সারা দিন আঁচলের ভালোই কাটে। রিমির সাথেও অনেক গল্প করে। তাছাড়া কালকে আঁচলের বাড়ি থেকে লোক আসবে ভাবতেই আঁচলের খুশি খুশি লাগছে।
রাতে…
আঁচল ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকে দেখে কেউ নেই।
আঁচল – যাক বাবা বাঁচা গেলো। অসভ্য টা রুমে নেই। আমি এই সুযোগে চেঞ্জ করে আসি। এই সব শাড়ি টারি পড়ে কি ঘুমানো যায় নাকি। আজিব।
আঁচল নিজের লাগেজ থেকে একটা লং টপস্ আর একটা প্লাজো বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
এদিকে রেহান বেলকনিতে ছিলো কেউ এসেছে ভেবে রুমে আসতেই দেখে কেউ নেই।
রেহান ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই বুঝতে পারে ভেতর থেকে লক করা।
রেহান – ওহহ। মহারানি নিশ্চয় ওয়াশরুমে আছে। রেহান বিছানার বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পরই আঁচল ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
রেহান আঁচলকে দেখে একদম হা!!
রেহানের মুখ থেকে আচমকা বেড়িয়ে আসে… মাশআল্লাহ।
আঁচল রেহানের কথায় বিরক্ত হয়নি বরং এই প্রথম বার রেহানের মুখের কথায় আঁচলের ভালো লাগছে।
রেহান ধীর পায়ে আঁচলের দিকে এগুতে থাকে।
রেহানের এগুনো দেখে আঁচল ভয়ে ঢোক গিয়ে। আঁচল শক্ত হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
রেহান আঁচলের অনেক টা কাছে চলে আসে। রেহানের প্রতিটা হার্টবিট যেনো আঁচল গুনতে পারছে। আঁচল চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।
রেহান আঁচলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে….
রেহান – বেইবি আমাকে পাগল করার জন্য তুমি তৈরি দেখছি!!
বলেই আঁচলের কানে চুমু দেয়।
আঁচল যেনো ফ্রিজড হয়ে গেছে রেহানের ঠোঁটের ছোঁয়ায়।
রেহান আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আঁচল এবার খনিকটা বিরক্ত হয়ে যায়।
আঁচল – আপনি কেমন মানুষ বলুন তো! আমার অতীত টা জানার পরও আপনি কেনো আমার সাথে এমন করছেন? হ্যা মানলাম আপনি আমার স্বামী। আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু তাই বলে প্রথম দিন থেকেই আপনার অধিকার দেখাবেন? আমাকে কি একটু সময় দেয়া যেতো না? (চিৎকার করে)
আঁচলের এমন রিয়েক্টে রেহান চুপ মেরে যায়। আঁচল কে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই দূরে সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রেহান চলে যাওয়ার পর আঁচল বিছানায় একপাশে শুয়ে কেঁদে যাচ্ছে। রেহানের এমন অধিকার ফলানো টা যেনো আঁচল কিছুতেই মানতে পারছে না।
প্রায় দু ঘন্টা পার হয়ে যায় রেহান রুমে আসে না। আঁচল ও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে রেহান ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রেহান – আঁচল কি আমায় কোনো দিনও মেনে নিতে পারবে না? আমি কি এতোটাই খারাপ। এতোটাই অযোগ্য। ও কি কোনে দিনও জিসান কে ভুলতে পারবে না। ও শুধু আমার রাগটাই দেখলো অত্যাচার টাই দেখলো। আমি যে ওকে প্রথম দিন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পারেনা ও!!
আমিও তো চেয়েছিলাম ওকে সময় দিতে। কিন্তু ভয় হয়েছিলো যদি ও আমায় ছেড়ে জিসানের কাছে চলে যায়। তাই তো ওকে সময় দিই।
ও কি শুধু ঘৃণা করেই যাবে আমায়। আমার রাগের মাঝে লুকানো ভালোবাসা টা বুঝতে পারবে না কোনো দিনও!!! (ভাবতে ভাবতেই রেহানের চোখ দিয়ে দু’ফোটা অশ্রু ঝড়ে)
নাহ! আমি এভাবে ওর ঘৃণার কাছে হেরে যাবো না। বরং আমার ভালোবাসা দিয়েই ওকে নিজের করে নিবো।
রেহান ছাদ থেকে রুমে এসে দেখে আঁচল গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। রেহান আঁচলের পাশে বসে আঁচলের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।
” সত্যিই এই মুখটায় জাদু আছে। যখনই দেখি শুধু আমাকে কাছে টানে “।
রেহান আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে আঁচলকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে….
আঁচলের ঘুম ভাঙতেই নিজেকে রেহানের বুকে আবিষ্কার করে। আঁচল কাল রাতের কথা ভাবছে।
আঁচল – কাল রাতে তো উনি রুম থেকে চলেই গিয়েছিলো। আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
তাহলে কখন আসলেন? আমিও বুঝতে পারিনি।
এইসব ভাবতে ভাবতে রেহানের দিকে তাকাতেই দেখে রেহান আঁচলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
আঁচল কিছু না বলে রেহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আঁচল – কেস টা কি হলো। অসভ্য টা একবারও আটকালো না। বাবা! ভালো হয়ে গেলো নাকি!
আঁচল শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয় ওয়াশরুম থেকে।
রেহান উঠে আঁচলের কাছে গিয়ে টাওয়েল
টা নিয়ে নেয়।
আঁচল – কি হলো?
রেহান – আমি মুছে দিচ্ছি বসো।
রেহান আঁচলকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে নিজে আঁচলের চুল মুছে দিচ্ছে। আঁচল রেহানের এমন কাজে অবাক না হয়ে পারে না।
রেহান – আচ্ছা বেইবি তুমি এতো সকাল সকাল শাওয়ার নিলে কেনো বলো তো। কাল রাতে তো কিছুই হয়নি।
আঁচল রেহানের কথা শুনে ভ্রু কুচকে রেহানের দিকে তাকায়।
রেহান – হুম সত্যিই তো। কাল রাতে কিছুই হয়নি। তুমি যা রেগে ছিলে বাপরে!
আঁচল – (আমিও কি ভাবি এই অসভ্য আজীবন অসভ্যই থেকে যাবে। কি সব বলে যাচ্ছে দেখো! মনে হই লজ্জা বলতে যে একটা শব্দ আছে সেটা উনি জানেনই না। হুহহহ….)
রেহান আঁচলের চুল মুছে দিয়ে আঁচলের চোখে কাজল দিয়ে দেয়।
রেহান – ব্যাস। এবার আমার মিষ্টি বউয়ের উপর কারো নজর লাগবে না। (মুচকি হেসে)
আঁচল চুপ করে আছে। রেহান আঁচলকে চুপ থাকতে দেখে বলে….
রেহান – আমার পারিশ্রমিক টা দিবে না?
আঁচল – মানে? ( অবাক হয়ে)
রেহান – ও বাবা! এতো কষ্ট করে চুল মুছে দিলাম। কাজল দিয়ে দিলাম তার বিনিময়ে আমি কিছুই পাবো না?
সেটা কি করে হয় বেইবি। (মুচকি হেসে)
আঁচল বুঝতে পারে রেহান কি চাইছে। আঁচল কিছু বলার আগেই রেহান আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
আঁচল – অসভ্য। বলেই রেগে রুম থেকে চলে আসে। আঁচল নিচে চলে আসতেই রিমির সাথে দেখা হয়।
রিমি – বাহ ভাবি। তোমাকে অনেক কিউট লাগছে।
আঁচল – হয়েছে এবার চলো। আজ আমি রান্না করি।
রিমি – কিন্তু মা!
আঁচল – মাকে আমি পরে যা বলার বলবো তুমি চলো তো।
রিমি আঁচলকে নিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
আঁচল সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানায় রিমিও আঁচলকে সাহায্য করে। হটাৎ বেল বাজতেই দিতেই রিমি বলে…
রিমি – ভাবি তুমি বরং ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজাও। আমি দেখে আসি কে এসেছে।
রিমি দরজা খুলতেই দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।
রিমি – কাকে চাই?
ছেলেটা – আঁচলকে!
চলবে…