ডেভিল বর
পর্ব – ৫
শিফা_আফরিন
.
.
?
আঁচল বুঝতেও পারেনি রিমি চলে গেলেও বাহিরে দাঁড়িয়ে একজন সব শুনছে।
আঁচল – ওহো রিমি তো বলেছিলো বাবা নাকি সকালে চা খায়। আমি বরং বাবার জন্য চা করে নিয়ে যাই। নিশ্চয় উনি দেখে অনেক খুশি হবে।
আঁচল রেহানের বাবার জন্য চা বানাতে থাকে আর রেহান কে বকতে থাকে।
আঁচল – আস্ত একটা ডেভিল। কোনো কাজ করে না বাবার টাকায় বসে বসে খায়.. লজ্জাও করেনা নাকি।
বিয়ে করেছে কোথায় বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াবে তা না সারা দিন বাসায় থেকে ঢ্যং ঢ্যং করে… ধুররর।
ওই লুচু ব্যাটা কাজে না গেলে তোহ আমার ১২ টা বাজাবে।
হায় খোদা এই ডেভিল টাকে বিয়ে না করে ইঁদুরের বিষ খেয়ে মরে যেতাম তাও ভালো ছিলো। আমার জীবন টাই শেষ করে দিলো হুহহহ।
—- তাই বুঝি? থামলে কেনো বলো বেইবি,,,
আঁচল চা হাতে নিয়ে যেই রান্না ঘর থেকে বের হতে নিবে অমনি কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়ায়।
রেহান এতক্ষন বাহিরে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো আঁচল বুঝতেও পারেনি।
রেহান চোখ মুখ শক্ত করে কথাটা বলে। রাগে রেহানের চোখ দু’টো রক্তবর্ণ ধারন করেছে।
আঁচল রেহানকে দেখা মাত্রই ভয়ে হাতে থাকা চার কাপ টা ফেলে দেয়….
আঁচল – আহহহ….
চার কাপ টা ফেলে দেওয়ায় অনেকটা চা আঁচলের পায়ে পড়ে। বেচারির পা টা বোধহয় পুরেই গেলো।
রেহান দ্রুত আঁচলের কাছে আসে।
রেহান – আঁচল…. কাপটা পড়লো কিভাবে? সাবধানে কাজ করবে তো নাকি..
আঁচল – আ..আপনি ক…কখন এসেছেন? (ভয়ে ভয়ে)
রেহান – অনেক আগেই এসেছি আর তোমার সব কথাও শুনেছি।
এবার রুমে চলো আগে তোমার পা ঠিক করি তার পর তোমার শাস্তি।
আঁচল – কিশের শাস্তি? (কাঁদো কাঁদো হয়ে)
রেহান – আমাকে যে এতক্ষন এতো কথা বললে তার শাস্তি। (রেগে)
আঁচল – সরি। আর হবেনা। (কেঁদেই দিলো)
রেহান – আগে চলো তো তার পর বুঝাচ্ছি। (বলেই আঁচলকে কোলে নিতে নেয়)
আঁচল – আরে কোলে নিবেন কেনো?
আমি হেঁটে যেতে পারবো। এতোটাও লাগেনি।
রেহান – আমি নিশ্চয় তোমার কাছে জানতে চাইনি। (দাঁতে দাঁত চেপে)
রেহানের রাগ দেখে আঁচল চুপ মেরে যায়। রেহান আঁচলকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে যায়।
রুমে এসে রেহান আঁচলকে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
রেহান আঁচলের সামনে ফ্লোরে বসে পরে।
রেহান – দেখি পা টা…
আঁচল – আরে বললাম না আমার বেশি লাগেনি। সামান্য গরম। আসলে হটাৎ করে পরে যাওয়াতে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম।
রেহান – আমি তোমাকে ইন্টারভিউ দিতে বলিনি। পা দেখাও। (দাঁতে দাঁত চেপে)
আঁচল রেহানের দিকে পা টা একটু এগিয়ে দিতেই রেহান আঁচলের পা টা নিজের হাঁটুর উপর রেখে দেখতে থাকে বেশে লেগেছে কিনা।
রেহান – জ্বলছে বেশি?
আঁচল – সামান্য গরম। জ্বলবে কেনো…
রেহান – তাও অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিলে ভালো হবে যদি দাগ পড়ে যায় তো…..
আঁচল – ঠিক আছে আমি পরে লাগিয়ে নিবো নি।
রেহান আঁচলের কথার কোনো জবাব না দিয়ে নিজে অয়েন্টমেন্ট এনে আঁচলের পায়ে লাগিয়ে দেয়।
আঁচল উঠে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের হাত ধরে ফেলে….
রেহান – কোথায় যাচ্ছো?
আঁচল – (এই রে ঠিক আটকে ফেলেছে। ভেবেছিলাম কেটে পরবো।)
রেহান – কি হলো চুপ করে আছো কেনো?
আঁচল – ইয়ে মানে…. নিচে যাবো। বাবার জন্য চা করতে।
রেহান – বাবার চা এতক্ষনে নিশ্চয় রিমি দিয়ে এসেছে। তুমি বরং তোমার শাস্তির জন্য তৈরি হয়ে নাও। (মুচকি হেসে)
আঁচল – শাস্তি! (ভয় পেয়ে)
রেহান – হুম। কি জেনো বলছিলে। আবার বলো।
আঁচল – ক…কি ব….বলছিলাম (ভয়ে ভয়ে)
রেহান – তুমি বলবে নাকি আমাকেই বলতে হবে। (রেগে)
আঁচল – আ..আমি বলছিলাম যে.. আপ…আপনি কোনো কাজ ক..করেন না। এটা তো ঠিক না তাই না। (তোতলাতে তোতলাতে)
রেহান – ওহ.. এখন ঠিক ভুল তুমি শিখিয়ে দিবে আমায়?
আঁচল – না একদমই না।
রেহান – তোমার তো অনেক সাহস হয়েছে দেখছি। আমি কাজ করিনা বলে কথা শুনাচ্ছো। তুমি জানো… আজ পর্যন্ত আমার মা ও কাজ নিয়ে কথা শুনায় নি। আর তুমি কাল এসে আজই খুটা দিচ্ছো?
আবার বলছিলে বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াতে…. তাই না
আঁচল – না… মা.মানে হ্যা
রেহান – তার মানে তুমি মেনে নিয়েছো যে তুমি আমার বউ।
আর আমি তোমার স্বামী। তাই তো?(মুচকি হেসে)
আঁচল – আমি সেটা কখন বললাম? (অবাক হয়ে)
রেহান – তুমিই তো বললে… ” বিয়ে করেছে কোথায় বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াবে তা না “…… বলো নি?
আঁচল রেহানের কথা শুনে যেনো সপ্তম আসমান থেকে ঠাস করে জমিনে পড়েছে।
আঁচল – (এএএ মা এই ডেভিল টা বলে কি। এ তো পুরো আমার কথায় আমাকেই ফাঁসিয়ে দিলো… মনে মনে)
রেহান – কি হলো বেইবি। বলো?
আঁচল – হ্যা বলেছি।
রেহান – তুমি যদি মেনে থাকো তুমি আমার বউ তার মানে আমি তো তোমার স্বামী হবোই তাই না।
আমি না হয় আমার বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াবো।
কিন্তু তার জন্য তো আমিও আমার বউয়ের কাছে কিছু চাইতেই পারি কি বলো?
তুমি রাজি তো বেইবি? (মুচকি হেসে)
রেহানের কথা শুনে আঁচলের কাশি উঠে যায়….
চলবে…