ডেভিল বর
পর্ব – ১৮
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – ছাড়তে বললেই ছেড়ে দেয়ার মানুষ আমি নই সোনা। (মুচকি হেসে)
আঁচল – কেনো! ছাড়বেন না কেনো শুনি?
আপনার হিয়া আছে তো! যান ওর কাছেই যান। অসহ্য…
রেহান – আচ্ছা তোমার এতো জ্বলছে কেনো বলো তো? তার মানে সামথিং সামথিং। (চোখ মেরে)
আঁচল – নাথিং —- বলেই রেহান কে ধাক্কা মেরে উঠে চলে আসে।
বিকেলে…
রেহান হিয়া আর নিশাত (আঁচলের কাজিন) বেরিয়ে পড়ে।
এদিকে আঁচল নিচে নামতেই আঁচলের মা বলে…
আঁচলের মা – গেলি না কেনো তুই? একটু ঘুরে আসলে তো ভালো লাগতো।
আঁচল – তার মানে ওরা চলে গেছে তাই তো?
আঁচলের মা – হ্যা। মাত্র বেরিয়েছে।
আঁচল – (বাহ বাহ…! আমাকে একবার জিগ্যেস করার প্রয়োজন বোধ করেনি। মনে মনে)
আঁচলের মা – কিরে কি হলো?
আঁচল – কিছুনা মা আমি রুমে যাই।
আঁচল অনেক খন রুমে বসে থেকে ছাদে চলে আসে।
এদিকে রেহান, নিশাত আর হিয়া সন্ধার দিকে বাড়ি ফেরে।
রেহান রুমে গিয়ে দেখে আঁচল নেই।
রেহান বেলকনিতে ও খুঁজে আঁচল কে পায়নি।
রেহান একে একে সবার রুমে দেখে আঁচল কোথাও নেই।
রেহান – কোথায় গেলো? পুরো বাড়িই তো খুঁজলাম।
আঁচলের মা – কি হলো রেহান আঁচলকে পেয়েছো?
রেহান – না মা।
আঁচলের মা – তাহলে! কোথায় মেয়েটা। ও তো না বলে বাহিরে যাওয়ার মেয়ে না।
রেহান – মা আমি একটু ছাদে গিয়ে দেখে আসি।
আঁচলের মা – এরকম সন্ধা বেলা ও ছাদে যাবে কেনো বলো তো?
রেহান – তাও। আমি দেখিই না একবার।
আঁচলের মা – হ্যা তাই করো।
রেহান একপ্রকার দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উঠে।
ছাদে আসতেই দেখে আঁচল ছাদের এক কোণে গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে।
রেহান ধীর পায়ে আঁচলের কাছে যায়। আঁচলের কাধে হাত রাখে।
হটাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে আঁচল চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রেহান।
রেহান আঁচলকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখ দু’টি ফুলে গেছে, মুখটাও লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেকক্ষন কান্না করছিলো।
আঁচলকে এরকম দেখে রেহানের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে।
রেহান আঁচলকে জেলাস ফিল করাতে চাইছিলো, কষ্ট দিতে না।
রেহান – আঁচল কি হয়েছে? কাঁদছিলে কেনো?
আঁচল – কই!! কাঁদবো কেনো আবার?
রেহান – আমি সরি সোনা।।
আঁচল – কেনো? আপনি তো কোনো ভুল করেন নি। আর হিয়া সত্যিই অনেক সুন্দরী। আপনার জন্য পারফেক্ট। আপনার তো এতে কোনো ভুল হইনি।
রেহান এবার বুঝতে পারে আঁচলের কান্না করার কারন।
রেহান – (নাহ! অনেক হয়েছে আর কষ্ট দিতে পারবো না ওকে। তার চেয়ে বরং সব কিছু বলে দিই।)
রেহান – দেখো আঁচল তুমি ভুল ভাবছো। হিয়াকে আমার ভালো লাগতে যাবে কেনো। আমার তো বউ আছে নাকি? এতো কিউট বউ থাকতে অন্য মেয়ের দিকে কেনো নজর দিবো বলো তো? (আঁচলের গালে হাত রেখে)
আঁচল – থাক। এই সব নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। যান রুমে যান।
রেহান – আরেহ বাবা আমি তো তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমন করছিলাম।
আঁচল – (ওহো!! এতো চালাক তুমি? ইচ্ছে করে আমায় কষ্ট দিয়েছো এতো দিন? দাড়াও আমি যে কি জিনিস হারে হারে বুঝাবো তোমায়…. মনে মনে)
আঁচল – আপনি এখানে থাকতে চাইলে থাকুন আমি নিচে গেলাম।
আঁচল চলে আসতে নিলে রেহান আঁচলের হাত ধরে আটকে ফেলে।
রেহান – কি হয়েছে আঁচল? বললাম না তোমাকে জেলাস ফিল করাতে চাইছিলাম। ইভেন হিয়ার ও একি উদ্দেশ্যে বুঝেছো?
আঁচল – আমি এই সব কথা শুনতে চাইনা। ছাড়ুন। — আঁচল নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে চলে আসে।
আঁচল মুখে যতোই কথা শুনাক, রাগ দেখাক কিন্তু সে তো আজ মহা খুশি! কারন রেহান হিয়াকে ভালোবাসে না।
আঁচল নিচে আসতেই হিয়ার সাথে দেখা হয়। আঁচল মুখে একটা গম্ভীর ভাব এনে হিয়াকে ভেংচি কেটে চলে আসে।
হটাৎ পেছন থেকে কারো ডাক শুনে দাড়িয়ে যায় আঁচল। পেছন তাকিয়ে দেখে রিয়াদ অনেক গুলো আইসক্রিম নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রিয়াদ – এই নিন মহারানি। আপনার আইসক্রিম।
আঁচল – এত্তোগুলো!!! আঁচল এক লাফে সব গুলো আইসক্রিম নিয়ে নেয়।
এদিকে রেহান দাড়িয়ে দাড়িয়ে আঁচলের কান্ড দেখে হাসছে।
এতো বড় মেয়ে তাও আইসক্রিম দেখে বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছে!!
আঁচল নিজের রুমে চলে যায়।
রিয়াদ – রেহান…
রেহান – জ্বী ভাইয়া বলুন।
রিয়াদ – আঁচল কে সব বলে দিয়েছো?
রেহান – জ্বী ভাইয়া। তাও আপনার বোন বিশ্বাস করতে চাইছেনা।
রিয়াদ – কোনো ব্যাপার না ঠিক হয়ে যাবে। (মুচকি হেসে)
হিয়া – ভাইয়া আমার ট্রিট খানা?
রেহান – ওরে মারে! শালিকা তোমার ট্রিট পেয়ে যাবা। আপাতত তোমার সাথে কথা বললেও আমার বউ আমায় ১৬ টা বাজাবে।
হিয়া – হিহিহিহি নো সমস্যা! সময় মতো চেয়ে নিবো।
রেহান – ওকে ডিয়ার। এবার আমি যাই বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে না জানি কি কি করতে হয়।
রেহান রুমে এসে দেখে আঁচল বিছানায় বসে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে।
আঁচলের মুখ দেখে রেহান হাসি চেঁপে রাখতে পারছে না।
বাচ্চাদের মতো মুখে আইসক্রিম লাগিয়ে ফেলেছে বেচারি।
রেহান আঁচলের পাশে বসতেই আঁচল ভ্রু কুঁচকে রেহানের দিকে তাকায়।
আঁচল – কি চাই?
রেহান – আইসক্রিম চাই। (মুচকি হেসে)
আঁচল কথা না বাড়িয়ে একটা আইসক্রিম রেহানের দিকে এগিয়ে দিতেই রেহান হাত দিয়ে আটকে ফেলে।
রেহান – উহুম… এটা না।
আঁচল – তাহলে কোনটা। আমার কাছে আর আইসক্রিম নেই। এটা নিলে নিন না হলে বিদায় হোন।
রেহান আঁচলের কথা শুনে মুচকি হেসে আঁচলের দিকে এগিয়ে যায়।
রেহানের এগিয়ে আসা দেখে আঁচল ভয় পেয়ে যায়।
আঁচল কিছু বুঝে উঠার আগেই রেহান আঁচলের ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা আইসক্রিম টুকু খেয়ে ফেলে।
আঁচল রেহানের এমন কাছে স্ট্যাচু হয়ে যায়। আঁচল এমন ভাবে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আঁচলের চোখ দু’টি এখনি বেরিয়ে আসবে।
রেহান – এটাই আমার কাছে স্পেশাল। (মুচকি হেসে)
আঁচল কিছু না বলে বেলকনিতে চলে আসে।
অনেকক্ষণ পর রেহান ও বেলকনিতে যায়।
রেহান – আর কতদিন ওয়েট করতে হবে বলো তো?
আঁচল – মানে! কিশের জন্য?
রেহান – ” ভালোবাসি ” কথাটা শুনার জন্য।
আঁচল – এতোই যখন শুনতে ইচ্ছে করছে তো যান না হিয়ার কাছ থেকে শুনে আসুন।
রেহান – কে হিয়া!! আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই বুঝেছো?
আঁচল – অসম্ভব। বলেই চলে আসে।
রেহান – ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না।
আঁচল রুমে এসে শুয়ে পড়ে।
রেহানের মোবাইলে ফোন আসাতে রেহান রুমে আসেনি। বেলকনিতে দাড়িয়ে কথা বলছে।
আঁচল – এতোখন কার সাথে কথা বলছে? ঐ হিয়া শাকচুন্নি টা নয় তো?
আঁচল কান পেতে শুনার চেষ্টা করে রেহান কি কথা বলছে। কিন্তু কিছুই শুনতে পারে না।
আঁচল একরাশ বিরক্ত আর রাগ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে….
আঁচল চোখ খুলতেই দেখে রেহান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আঁচল চোখ পিটপিট করে রেহানকে দেখে যাচ্ছে।
আঁচল – ( কি হলো!! এতো সকাল সকাল উঠে কোথায় যাচ্ছে? মনে মনে)
রেহান – বেইবি…. উঠে গেছো?
আঁচল – হুম।
রেহান – ওকে। শুনো কাল রাতে বাবা ফোন করেছিলো মা বাবা আর রিমি গ্রামের বাড়িতে যাবে জমি নিয়ে মেবি সমস্যা হয়েছে। আমি যেতে চাইছিলাম মা বারন করেছে। তুমি তো একা থাকতে পারবে না তাছাড়া তোমাকে নিয়ে যাওয়া ও সম্ভব না। এমনিতেই ঝামেলা বেঁধে আছে। তাই আমি থেকে যাবো।
আঁচল – (ওহহহ যাক বাবা কাল রাতে ঐ শাকচুন্নি টা ফোন করেনি! মা ফোন করেছিলো। মনে মনে)
রেহান – কি হলো চুপ কেনো?
আঁচল – কিছুনা। আপনি এখন কোথায় যাবেন?
রেহান – আমি মা বাবাকে স্টেশন অব্দি দিয়ে আসবো। তারপর ট্রেনে করে চলে যাবে। আমি বিকেলে তোমায় নিতে আসবো রেডি থেকো।
আঁচল – আমি কোথায় যাবো?
রেহান – বাবা মা চলে যাচ্ছে বাড়ি খালি পড়ে থাকবে? তাই ভাবছিলাম আমরা চলে গেলেই ভালো হয়।
আঁচল – আচ্ছা ঠিক আছে।
রেহান আঁচলের কাছে এসে আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আঁচল উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।
আঁচলের মা – কিরে রেহান চলে গেলো কেনো? না খেয়ে এতো সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে যে?
আঁচল – মা আমার শশুর শাশুড়ি আর রিমি উনাদের গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাই ও চলে গেছে উনাদের ড্রপ করে আসতে।
আর আজ বিকেলে আমিও চলে যাবো। ও বলে গেছে রেডি হয়ে থাকতে। ও নিয়ে যাবে এসে।
আঁচলের মা – সেকি! আজই চলে যাবি?
আঁচল – হ্যা।
আঁচলের মা – (বাহ! আমার মেয়েটা কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে। যাক ঐ অসভ্য ছেলেটার ভুত মাথা থেকে নেমেছে এটাই অনেক। মনে মনে)
আচ্ছা এখন খেতে আয়।
আঁচল – হুম আসছি।
আঁচল খেতে বসে। হিয়াও আসে।
হিয়া – আপুই শোন…
আঁচল – হয়ছে রে পাকনি বুড়ি আর বলতে হবে না ও আমাকে সব বলেছে। (মুচকি হেসে)
হিয়া – ভাইয়া তোকে বলেছে?? (অবাক হয়ে)
আঁচল – হুম। তুই যে এতোবড় ড্রামা কুইন আমি জানতামই না।
হিয়া – এই আপুই তুই আর আমার উপর রেগে নেই তো? জানিস আমারও কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু ভাইয়া বললো তোর মুখ থেকে ভালোবাসি কথা শুনতেই এতো কিছু। বাই দ্যা ওয়ে তুই ভাইয়া কে বলেছিস তো?
আঁচল – কি বলবো? (অবাক হয়ে)
হিয়া – ঐযে যার জন্য এতোকিছু। (চোখ মেরে)
আঁচল – বেয়াদব মেয়ে। বেশি বড় হয়ে গেছিস না? দাড়া তোর বিয়ের ব্যাবস্থা করছি৷
হিয়া – হ্যা কর না। আমি তো এক পায়ে খাড়া। (হেসে দিয়ে)
চলবে….