ডেভিল বর
পর্ব – ১৫
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – নো বেইবি। তুমি পাশে থাকলে কোনো সমস্যাই হবে না। (মুচকি হেসে)
আঁচল ও বাহিরে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই আঁচলদের বাসায় পৌঁছে।
আঁচল বাড়িতে ঢুকেই তার মাকে দেখতে পায়৷
আঁচল দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে।
আঁচলের মা – কেমন আছিস মা?
আঁচল – অনেক ভালো মা। তুমি কেমন আছো বলো?
আঁচলের মা – তুই ভালো আছিস শুনেই আমি শান্তি।
আঁচলের বাবা – কিরে মা আমায় ভুলে গেছিস তাই তো?
আঁচল তার মাকে ছেড়ে দৌড়ে বাবার কাছে যায়।
আঁচল – না বাবা কেনো ভুলবো বলো তো?
আঁচলের বাবা – তুই এখনো আমার উপর রেগে আছিস নারে মা?
আঁচল – উহুম….. একদমই না।
রেহান ও গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নেয়।
আঁচলের মা – হয়েছে এবার তোমরা উপরে যাও।
আঁচল রিমিকে একটা রুমে নিয়ে যায়৷
আঁচল – রিমি তুমি এই রুমেই থেকো। আর পাশের টা আমার রুম কোনো সমস্যা হলে ডেকো কেমন।
রিমি – ওকে ভাবি।
আঁচল রেহান কে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
আঁচল – নিন আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর আমি যাবো।
রেহান – কেনো?
আঁচল – কেনো মানে? ফ্রেশ হবো না নাকি আমি?
রেহান – হ্যা। তা চলো না দুজন একসাথেই যাই৷ (চোখ মেরে)
আঁচল – অসভ্য। — বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রেহান হাসাতে হাসাতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।
কিছুক্ষণ পর…
আঁচল রুমে এসে দেখে রেহান এখনো বের হয়নি।
আঁচল – (আজিব! এতোখন ধরে ওয়াশরুমে ঢুকে আছে। এদিকে আমি যে এখনো ফ্রেশ হয়নি সে খেয়াল আছে উনার।)
আঁচল গিয়ে দরজায় নক করে..
আঁচল – এইযে… হলো আপনার? আর কতোখন ওয়েট করবো বলুন তো। আজকে সারা দিন কি আপনি ওয়াশরুমে থাকার প্লান করেছেন নাকি?
রেহান কোনো সাড়া দেয়নি। আঁচলের প্রচুর রাগ হয় রেহানের উপর।
আঁচল চলে আসতে নিলেই কেউ আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে আসে।
আঁচল ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিয়েই রেহান মুখ চেঁপে ধরে।
আঁচল তাকিয়ে দেখে রেহান মুচকি হাসছে।
আঁচল – আপনি সাড়া দেননি কেনো? আর এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি বলুন তো? এভাবে ওয়াশরুমে নিয়ে এসেছেন!
রেহান – অসভ্যতামি কেনো হবে? আমি কি অন্যের বউ কে টাচ করেছি নাকি? আমি তো আমার রাগী বউকেই টাচ করেছি।
আঁচল – কি! আমি রাগী?
রেহান – কি মনে হই তোমার? (ভ্রু কুঁচকে)
আঁচল – (ঠিকই তো। বিয়ের প্রথম দিন থেকে তো শুধু রেগেই আসছি। মনে মনে)
আঁচল – আপনার হয়ে গেছে?
রেহান – হুম।
আঁচল – তাহলে আপনি বেরুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
রেহান – জ্বী না। আমার সামনেই ফ্রেশ হতে হবে।
আঁচল রেহানের কথায় রেগে গিয়ে রেহান কে ধাক্কা দিতে গেলে রেহান আঁচলকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আঁচলের ঠোঁটের কোণে চুমু দেয়।
আঁচল চোখ বন্ধ করে ফেলে। রেহান তা দেখে মুচকি হেসে আঁচলকে ছেড়ে দেয়।
রেহান – ফ্রেশ হয়ে নাও কেমন। আমি গেলাম (মুচকি হেসে)
আঁচলও মুচকি হাসে। আজ রেহানের স্পর্শে আঁচলের কোনো রাগ হয়নি।
কিছুক্ষন পর আঁচল বের হয়ে রেহান কে খুজতে থাকে।
আঁচল নিচে নেমে দেখে রেহান ড্রয়িং রুমে বসে আঁচলের কাজিন দের সাথে গল্প করছে।
তার মধ্যে হিয়া (আঁচলের কাজিন) তো প্রায় রেহানের সাথে ঘেঁষে বসে আছে।
হিয়া আঁচলের ১ বছরের ছোট। দেখতে অনেক সুন্দরী। মুখের কথাও অনেক সুন্দর।
আঁচল খেয়াল করে রেহান কিছু একটা বললেই হিয়া হাসতে হাসতে বার বার রেহানের উপর পড়ে যাচ্ছে। আঁচল রেগে কটমট করে সেখান থেকে চলে আসে।
রেহান খেয়াল করে আঁচল অনেকটা রেগে গেছে। আঁচল চলে যাওয়ার পর রেহান ও হিয়ার কাছ থেকে উঠে আসে।
রেহান – (বাহহ… আমার বউ টা মনে হই জ্বলছে। তাহলে তো একটু জ্বালাতেই হয়।)
রেহান রুমে এসে দেখে আঁচল বেলকনির দোললায় বসে আছে।
রেহান গিয়ে আঁচলের পাশে বসতেই আঁচল রাগি লুক নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
রেহান আঁচলের কান্ড দেখে হেসে দেয়।
আঁচল রিয়াদের রুমে আসে।
আঁচল – ভাইয়া…
রিয়াদ আঁচলের ডাকে আঁচলের দিকে অসহায় ভাবে তাকায়।
আঁচল – ভাইয়া তুমি আমার সাথে কথা বলো নি যে। আমি কি তোমার পর হয়ে গেলাম?
রিয়াদ আঁচলের কথায় কেঁদে দেয়।
রিয়াদ – বোন আমায় ক্ষমা করে দিস। আমি কখনো চাইনি এইভাবে তোকে কষ্ট দিতে। তোর লেখাপড়া নষ্ট করে দিতে। কিন্তু আমি যে তোর কষ্ট দেখতে পারছিলাম না। ঐ জিসানের জন্য যে তুই প্রতিটা দিন কাঁদতি আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না। তাই তোকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম।
আঁচল ওর ভাইয়ের কান্না দেখে থমকে গেছে। এই প্রথম রিয়াদ কে কাঁদতে দেখছে আঁচল। আঁচলের অনেক কষ্ট হচ্ছে রিয়াদের চোখের পানি দেখতে।
আঁচল রিয়াদের পাশে বসে রিয়াদের চোখের পানি মুছে দেয়।
আঁচল – এই সব থাক না ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমি এই কয়দিনে জিসান কে ভুলে গেছি। আর রেহান… উনি সত্যিই অন্য রকম ভাইয়া।
আমার অতীত টা জানার পরও যে আমাকে এতো টা ভালোবাসবে আমি ভাবতেও পারিনি। শুধু তাই নয় উনাকে আমি অনেক কষ্ট ও দিয়েছি ভাইয়া। কিন্তু তারপরও উনি আমাকে কিছু বলেনি শুধু পাগলের মতো ভালোবেসে গেছেন।
রিয়াদ আঁচলের কথা শুনে আঁচলের দু গালে হাত রেখে বলে…
রিয়াদ – তুই পারবি তো বোন সব কিছু ভুলে রেহানের সাথে সারা টা জীবন সুখে কাটাতে?
আঁচল – হ্যা ভাইয়া। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই পারবো আমি।
রিয়াদ আঁচল কে জড়িয়ে ধরে
রিয়াদ – জানিস বোন আমার আর কোনো কষ্ট নেই।
আমার বোন টা সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। ভালো খারাপের পার্থক্য করতে শিখেছে আমার বোন টা।
আঁচল – হয়েছে এবার চোখ মুছো। আর শুনো অনেক দিন কিন্তু আইসক্রিম খাইনি। সো আজ তোমার ছাড় নেই বলে দিলাম।
রিয়াদ – অনেক দিন কোথায় রে? মাত্র তো ৩ দিন হলো। (ভ্রু কুচকে)
আঁচল – সেটাই অনেক দিন আমার কাছে। ও তুমি বুঝবে না। তিন দিন তো নয় যেনো তিন বছর ভাভাগো ভাভা।
রিয়াদ – ঠিক আছে সন্ধার সময় পেয়ে যাবি।
আঁচল – থ্যংকু।
দুপুরে…
আঁচলের মা সবাই কে খাবার টেবিলে ডাকে। আঁচলের কাজিন রাও বসে।
হিয়া – আমি বরং রেহান ভাইয়ার সাথেই বসি — বলেই রেহানের পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়ে।
রেহান – হুম তাই ভালো। (আঁচলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)
আঁচল এইসব দেখে প্রচন্ড রেগে যায়।
আঁচল না খেয়েই উঠে পড়ে।
রিয়াদ – আঁচল তুই তো কিছুই খাস নি। উঠে পড়লি যে?
আঁচল – আমার পেট ভরে গেছে ভাইয়া আমি আর খাবো না।
আঁচলের কথা শুনে সবাই হা হয়ে আঁচলের দিকে তাকায়।
আঁচলের মা – তোর পেট ভরে গেছে মানে!! তুই তো এখনো খাবারে হাত ই দিস নি।
আঁচলের – ( খাবার না খাবার না! উনাদের ঢ্যং দেখেই আমার পেট ভরে গেছে। আর খাবো কি ভাবে? যত্তসব)
মা আমি রুমে গেলাম।
রিয়াদ – রেহান.. আঁচলের কি হয়েছে বলো তো? ও হটাৎ এমন রিয়েক্ট করলো কেনো?
রেহান – ভাইয়া আপনি বুঝতে পারেন নি? আঁচল হিয়াকে আমার পাশে বসতে দেখে একটু জেলাস ফিল করছে। (হেসে)
আঁচলের বাবা – একটু না অনেক খানি (বলেই হো হো করে হেসে দেয়)
রিয়াদ – তার মানে বাবা তুমিও??
আঁচলের বাবা – হ্যা আমিও বুঝতে পেরেছি। আঁচল হিয়াকে রেহানের পাশে দেখতে পারছে না।
হিয়া – কিন্তু আমি তো শুধু ভাইয়ার সাথে ফান করি। আর তোমরা তো জানোই আমি অনেকটা মিশুক স্বভাবের। তাছাড়া ভাইয়া আমার বড় আপুর বর আমি ভাইয়ার দিকে ঐ রকম নজর দিবো কেনো? আপুই কি পিচ্চি নাকি? একটুও বুদ্ধি নেই।
ওকে আপুই যখন পছন্দই করে না তাহলে আমি বরং ভাইয়ার সাথে বেশি কথা বলবো না।
রেহান – আরেহ না না শালিকা। তুমিই পারবে আমাদের মাঝের দূরত্ব কমাতে। (মুচকি হেসে)
রেহানের মা – তার মানে তোমার আর আঁচলের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হয়নি?
রেহান – মা আপনি তো জানেন ই আপনার মেয়ে কতোটা জেদী। ওর সাথে স্বাভাবিক হওয়াটা এতো সহজ না। কিন্তু আমার মনে হই হিয়া এটা সহজেই পারবে।
কি বলো শালিকা আমায় সাহায্য করবে তো?
হিয়া – আবার জিগায়।। কিন্তু তার বিনিময়ে আমাকে ট্রিট দেয়া লাগবে কিন্তু।
রেহান – এটা নিয়ে ভেবো না ডিয়ার।
এদিকে আঁচল গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে এসে বসে আছে।
আঁচল – ওহ মাগো মনে হচ্ছে পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। কখন থেকে না খেয়ে আছি। ভেবেছিলাম ভালোমন্দ রান্না হয়েছে পেট ভরে খাবো!! ওই লুচু আমার খাবারের উপর ঠাডা ফালাই দিলো!
ছি ছি ঘরে বউ থাকতেও অন্য মেয়ের সাথে এতো ঘেঁষা ঘেঁষির কি মানে হই? তাও আবার আমারই কাজিনের সাথে। ইচ্ছে করছিলো ঐ দুই বজ্জাতের হাড্ডিকে গলা টিপে মেরে দিই। আমি যে না খেয়ে আছি তার দিকে কোনো নজর নেই ঠিকি হিয়ার সাথে গিলতে বসে গেছে ডেভিলের বাচ্চা ডেভিল।
এরই মধ্যে দরজা খুলার শব্দ পেয়ে আঁচল তাকিয়ে দেখে রিয়াদ হাতে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রিয়াদ – কিরে তুই ঐ সময় না খেয়ে চলে আসলি যে?
আঁচল – ভাইয়া আমার ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসছি।
রিয়াদ – ঠিক আছে এখন খেয়ে নে।
আঁচল – ভাইয়া খাবো না প্লিজ জোর করো না।
রিয়াদ – আঁচল…. খেয়ে নে বলছি। (ধমক দিয়ে)
রিয়াদ কে আঁচল বরাবরই অনেক ভয় পায়। তাই আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করে।
চলবে….