ডেভিল বর
পর্ব – ১৪
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো। সো চুপ থাকো।
আঁচল কিছু না বলে চুপ করে থাকে।
রেহান আঁচলকে ছাদে এনে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
আঁচল এই প্রথম রেহান দের বাসার ছাদে এসেছে।
আঁচল ঘুরে ঘুরে দেখছে।
ছাদের চার কোণায় চারটা লাইট লাগানো যার জন্য রাত হলেও অনেক টা আলোকিত হয়ে আছে ছাদ টা। আঁচলের সবচেয়ে ভালো লাগে দোলনা দেখে দোলনার পাশে অনেক গুলো ফুল গাছ ও লাগানো।
হটাৎ আঁচল পেটে কারো ছোঁয়া পায়।
রেহান আঁচলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আঁচলের ঘাড়ে থুতনি রাখে।
রেহান – ভালো লেগেছে?
আঁচল – হ্যা। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি।
রেহান – একটা কেনো! হাজার টা প্রশ্ন করো বউ। নো প্রবলেম।
আঁচল – আপনার বেলকনিতে ও দেখলাম অনেক গুলো ফুল গাছ আবার এখানেও।
এগুলো কি আপনার পছন্দ নাকি রিমির।
রেহান – ধুর বোকা! যদি রিমির পছন্দ হতো তাহলে নিশ্চয় আমার বেলকনিতে ফুল গাছ থাকতো না। আসলে আমারই ফুল অনেক প্রিয়।
আঁচল – ওহহ।
রেহান – চলো দোলনায় গিয়ে বসি। — বলেই আঁচলের হাত ধরে দোলনায় বসিয়ে রেহান আঁচলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
আঁচল – আজিব! এখানে কি শুয়ার জায়গা নাকি? এতো শুয়ার ইচ্ছে হলে ঘরেই তো শুতে পারেন তাইনা।
রেহান – এসব তুমি বুঝবে না পিচ্চি। রাতে বউয়ের কোলে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ দেখা টাও অন্যরকম লাগে।
আঁচল – ওহহ আচ্ছা।
রেহান – তুমি কিছু বলছো না যে! আমিই একা বক বক করে যাচ্ছি।
আঁচল – আমি আর কি বলবো?
রেহান – আচ্ছা কাল তাহলে বাড়িতে যাবে। আই মিন আমার শশুড়বাড়ি।
আঁচল – আমি তো কাউকে বলিনি।
রেহান – তাতে কি। সকালে জানিয়ে দিবা।
আঁচল – আচ্ছা দেখি।
রেহান – আচ্ছা আঁচল সত্যি করে একটা কথা বলবে?
আঁচল – হ্যা বলুন।
রেহান – যদি এখন জিসান ফিরে আসে তো? তুমি কি ওর কাছে ফিরে যাবা?
আঁচল রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহান অসহায় ভাবে আঁচলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানের চাহনি তে কিছুটা ভয়ও দেখা যাচ্ছে। যেনো আঁচলকে হারানোর ভয়। রেহান এক দৃষ্টিতে আঁচলের দিকে তাকিয়ে আঁচলের বলা উত্তরের অপেক্ষা করছে।
আঁচল – এই সব না বললে ভালো হয় না?
রেহান – আঁচল প্লিজ আমার কথার উত্তর দাও।
আঁচল – দেখুন আমি জিসান কে ভালোবাসতাম ঠিক। কিন্তু ও তো আমাকে ঠকিয়েছে তাইনা। এতো ভালোবাসার পরও যে আমাকে ঠকিয়েছে তার কাছে কিভাবে ফিরে যাবো আর।
রেহান আঁচলের কথা শুনে মুচকি হাসে যেনো কঠিন কিছু জয় করে নিয়েছে।
আঁচল – এবার তাহলে উঠুন। রুমে যাই এমনিতেও অনেক রাত হয়েছে। এতো রাতে ছাদে থাকার দরকার নেই।
রেহান আঁচলের কথা শুনে উঠে বসে আঁচলের দিকে তাকিয়ে বলে….
রেহান – রুমে কেনো? (ভ্রু কুচকে)
আঁচল – আজিব! সারা রাত এখানে কাটাবো নাকি?
রেহান – বুঝেছি তো বেইবি।
আঁচল – কি বুঝলেন?
রেহান – আদর করবা আমায় তাই তো? (চোখ মেরে)
আঁচল – আপনি এতো অসভ্য কেনো বলুন তো?
রাত হয়েছে আমার ভয় করে তাই বলছি।
রেহান মুচকি হেসে উঠে আঁচল কে আবার কোলে তুলে নেয়।
আঁচল – কি পাগলামো করছেন? আমি কি হেটে যেতে পারবো না নাকি?
রেহান – আমি থাকতে তুমি এতো কষ্ট করবে কেনো বেইবি। (মুচকি হেসে)
আঁচল – আহারে…
রেহান আঁচলকে নিয়ে রুমে চলে আসে।
আঁচল বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়তেই রেহান বলে উঠে….
রেহান – একি তুমি ঘুমানোর প্লান করছো নাকি হ্যা? (ভ্রু কুঁচকে)
আঁচল – তো কি করবো শুনি? আপনাকে নিয়ে নাচবো যত্তসব। (রেগে)
রেহান আঁচলের পাশে এসে শুয়ে আঁচলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়…
রেহান – উহুম…সারা দিন যে এতো কষ্ট দিলে এখন ভালোবাসা চাই। (মুচকি হেসে)
আঁচল – দেখুন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। প্লিজ ঘুমাতে দিন।
রেহান – নো ওয়ে। — বলেই আঁচলের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়।
আঁচল – ঘুমাতে দিন প্লিজ।
রেহান বুঝতে পারে আঁচলের হয়তো খারাপ লাগছে তাই ঘুমাতে চাইছে। রেহান আঁচলকে আর বিরক্ত করে নি। শুধু মুচকি হেসে আঁচলকে টেনে বুকে নিয়ে আসে।
আঁচল – কি হচ্ছে টা কি বলুন তো!
রেহান – চুপচাপ এখানেই ঘুমাউ। নয়তো আজ সারা রাত ঘুমাতে দিবো না বেইবি৷
আঁচল আর কথা না বলে রেহানের বুকেই শুয়ে পরে। বেচারি ঘুমাতে পারলেই বাঁচে। রেহান ও আঁচলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
সকালে….
আঁচলের ঘুম ভাঙ্গলেও নড়াচড়া করতে পারছে না। বুঝতে পারছে ওর উপর কেউ আছে। আঁচল ভালো করেই বুঝতে পারে লোক টা কে!
রেহান আঁচলের গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। এদিকে বেচারির যেনো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আঁচল ধীরে ধীরে রেহান কে সারতে নিলেই রেহান আঁচলকে আরও চেপে ধরে।
রেহান – উহো বেইবি… আমার ঘুম হয়নি। আমাকে ডিস্টার্ব করো না তো।
আঁচল – আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম কোথায়?
আপনার ঘুম হয়নি ভালো কথা। বিছানায় গিয়ে সারা দিন পড়ে পড়ে ঘুমান না। না করেছে কে আজিব!
রেহান – না আমি এখানেই ঘুমাবো। তুমি নড়াচড়া করলে খবর আছে তোমার।
আঁচল – আরেহহ! আজ না বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো আপনিই তো বললেন।
রেহান – হ্যা তো? এতো সকাল সকালই চলে যাবা নাকি?
আঁচল – না তা না। গুছানো বাকি আছে তাই। আর মার সাথে ব্রেকফাস্ট বানাতে যাবো ছাড়ুন।
রেহান আঁচলের কথার প্রতিউত্তরে কিছু না বলে আঁচলের গলায় চুমু দিয়ে উঠে পড়ে৷
আঁচল – আপনি না ঘুমাবেন? উঠলেন যে!
রেহান – তুমি ঘুমাতে দিলে তো! (গম্ভীর কন্ঠে)
আঁচল মুচকি হেসে উঠে যায়। আঁচলের মুচকি হাসি টা রেহানের চোখ এড়াতে পারেনি।
রেহান – (বেইবি তুমি আর কতো আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে পারো আমি দেখে নিবো… মনে মনে)
আঁচল ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে। এসে দেখে রিমি ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
রিমি আঁচলকে দেখেও না দেখার ভান করে।
আঁচলের কিছুই মাথায় ঢুকছে না। রিমি তো আঁচলকে প্রথম থেকেই অনেক ভালোবাসতো। তাহলে হটাৎ করে কি হয়ে গেলো মেয়েটার?
আমার উপর কোনো কারনে রেগে আছে? (হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আঁচলের মাথায়।)
আঁচল – রিমি… ব্রেকফাস্ট কি বানাবো একটু বলে দিলে সুবিধা হতো।
রিমি – তোমার কিছু করতে হবেনা। মা ঘুম থেকে উঠে করে নিবে। (আঁচলের দিকে না তাকিয়ে)
আঁচল – রিমি তুমি কি কোনো কারনে আমার উপর রেগে আছো। কাল রাত থেকে দেখছি তুমি কেমন বিহেভ করছো আমার সাথে।
রিমি – কেনো? কোনো খারাপ বিহেভিয়ার করেছি নাকি? ক্ষমা চাইতে হবে তোমার কাছে?
আঁচল – এসব কি বলছো? আমি এ’কথা বলিনি।
রিমি – তো কি বলেছো? কি মিন করতে চেয়েছো বলো।
আঁচল – না কিছুনা। আচ্ছা আমি যাই। ( রিমির সাথে কথা বললে ও হয়তো আরও রেগে যাবে তার চেয়ে বরং আমিই কিছু একটা বানিয়ে ফেলি। মনে মনে)
আঁচল রান্না ঘরে চলে যায়।আর এদিকে রিমি আঁচলের সাথে রেগে নিজের রুমে চলে আসে।
আঁচল পরোটা বানাচ্ছে হটাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে আঁচল রেগে যায়।
রেহান আঁচলকে জড়িয়ে ধরে আঁচলের ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।
রেহান – বেইবি তোমার ভেজা চুলের ঘ্রান তো আমাকে পুরা নিহত করে দেবে গো।
আঁচল বিরক্ত হয়ে রেহানের পেটে কনুই লাগিয়ে দেয়।
রেহান – আহহ আঁচল এই সব কি ছেলেমানুষী করছো বলো তো? (রেগে)
আঁচল – আমাকে কাজ করতে দিন বলছি। নয়তো আপনাকে গরম পানিতে চুবাবো বলে দিলাম। (রেগে)
আঁচলের রাগ দেখে রেহান ভয়ে রান্নাঘর ত্যাগ করে।
আঁচল ব্রেকফাস্ট রেডি করে সবাই কে ডাকে।
একসাথে সবাই ব্রেকফাস্ট করে নেয়।
রেহান – মা বাবা বলছিলাম যে কালকে তো আঁচলের বাড়িতে যাওয়া হয়নি তো আজকে নিয়ে যাই। ওর ও ভালো লাগবে বাড়িতে গেলে তাই আরকি।
রেহানের বাবা – হ্যা তা তো ভালো কথা। নিয়ে যা। কাল তো তোর জন্যই যাওয়া হয়নি।
রেহানের মা – তাই তো। যা কান্ড করলি কাল।
রিমি – আচ্ছা কালকের কথা বাদ দিলে ভালো হয় না? (বিরক্ত হয়ে)
রেহানের বাবা – হ্যা। আচ্ছা আমি উঠি।
রেহানের মা বাবা রিমি উঠে চলে যায়। রেহান এখনো বসে আছে।
আঁচল – আপনার কি খাওয়া শেষ হয়নি? আরও খাবেন আপনি? (অবাক হয়ে)
রেহান – হুম খাবো তো।
আঁচল রেহানের কথায় হা হয়ে যায়। বলে কি! এতো খাবার উনার পেটে জায়গা নিবে কিভাবে। ধুর যা করার করুক আমি গিয়ে গুছিয়ে নিই।
আঁচল উঠে চলে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।
রেহান – আমাকে না খাইয়ে চলে যাচ্ছো যে? (মুচকি হেসে)
আঁচল – খান না সবই খেয়ে নিন। নিষেধ করেছে কে যত্তসব।
রেহান দু’হাতে আঁচলের মাথায় ধরে নিচু করে আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
আঁচল বেচারি বড়সড় শক খায়।
আঁচল একদিকে রেহানকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে আর অন্য দিকে দেখছে কেউ চলে আসলো কিনা।
অনেক খন হয়ে যাওয়ার পরও রেহান আঁচল কে ছাড়েনি। আঁচল রেহানের সাথে পেরে না উঠে ক্লান্ত হয়ে রেহান কে ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করে দেয়।
হটাৎ রিমি চলে আসে। রিমি ওদের দু’জন কে এ অবস্থায় দেখে চোখে হাত দিয়ে উল্টো দিক ঘুরে যায়।
রিমি মনে মনে অনেক টা খুশি হয় এই ভেবে যে আঁচল হয়তো রেহান কে মেনে নিয়েছে।
রেহান আঁচলকে ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে থাকে সাথে আঁচল ও।
রেহান দেখতে পায় রিমি চোখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ রেহান সাথে সাথে আঁচলকে ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে যায়।
রেহান – আঁচল বেইবি যখন তখন তোমার রোমান্স করতে মন চাই হ্যা। এভাবে ড্রয়িং রুমে কেউ লিপ কিস করে বলো তো।
রেহানের কথায় আঁচল যেনো আকাশ থেকে ধুপ করে মাটিতে পড়ে।
আঁচল চোখ বড়বড় করে রেহানের দিকে তাকায়…
আঁচল -কিই…! আমি?
রেহান ইশারায় রিমিকে দেখিয়ে বলে…
রেহান – হ্যা তুমিই তো। (চোখ মেরে)
রিমি বুঝতে পেরে মুচকি হেসে চলে যায়। আর আঁচল রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে এসে গুছাতে থাকে।
বিকেলে…
আঁচল রেহানের মা বাবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে বের হয়। রেহান আর আঁচলের সাথে রিমিও যায়। যদিও প্রথম যেতে রাজি ছিলো না কিন্তু আঁচলের অনুরোধে রাজি হয়ে যায়।
রিমি গিয়ে গাড়িতে পেছনের সিটে বসে পড়ে।
আঁচল ও রিমির পিছন পিছন গিয়ে রিমির সাথে বসে যায়।
রেহান এই সব দেখে রেগে যায়। রেহান ড্রাইভিং সিটে বসে আঁচলকে বলে….
রেহান – আঁচল সামনে এসে বসো।
আঁচল – থাক না আমি বরং রিমির সাথেই বসি।
রেহান – তুমি আসবে কি না? (রেগে)
আঁচল রেহানের রাগ দেখে উঠে গিয়ে সামনে বসে পড়ে।
রেহান মুচকি হেসে এক হাতে আঁচলের একহাত ধরে অন্য হাতে ড্রাইভিং করতে থাকে।
আঁচল – কি করছেন? ছাড়ুন। হাত ধরে রাখলে গাড়ি চালাতে সমস্যা হবে আপনার।
রেহান – নো বেইবি। তুমি পাশে থাকলে কোনো সমস্যা নেই।
চলবে….