ডেভিল বর
পর্ব – ১১
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – আঁচল…. দরজা খুলো।
আঁচল কোনো সাড়া দেয় নি। রেহান এবার চিন্তায় পড়ে যায়। কিভাবে রাগ ভাঙ্গাবে! এই মেয়ে তো দরজাই খুলছে না।
রেহান আরও কয়েক বার আঁচলকে ডাকে…
রেহান – আঁচল…. আমার ভুল হয়ে গেছে সোনা। একটু বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ। আর এমন হবে না। দরজা খুলো প্লিজ বেইবি।
আঁচল নাছোড়বান্দা দরজা খুলার নামও নেইনি। রেহান এবার খনিকটা রেগে যায়।
রেহান – আঁচললললল….. তুমি দরজা খুলবে নাকি আমি ভেঙ্গে ঢুকবো…? (দাঁতে দাঁত চেপে)
আঁচল তাও দরজা খুলে না। এবার রেহান রেগে দরজায় লাথি মারে।
লাথির শব্দ শুনে আঁচল ভয় পেয়ে যায়। যদি সত্যি সত্যিই রেহান দরজা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তো আমার কপালে শনি লেখা আছে মনে হই।
আঁচল এক লাফে উঠে দরজা খুলে দেয়। আঁচল দরজা খুলতেই রেহান ঘরে ঢুকে দরজা টা আবার লাগিয়ে দেয়। আঁচল বেশ ভয় পেয়ে যায়।
রেহান – আঁচল আমি সরি। সত্যিই বুঝতে পারিনি উনি তোমার ভাই। কি বলো তো সারাক্ষন তোমার মুখে ঐ জিসানের নাম শুনতে শুনতে আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খায়… যদি তুমি আবার জিসানের কাছে চলে যাও তো!
আমি সরি সোনা। আর মারবো না তোমায়। এই কান ধরছি দেখো।
আঁচল এবার রেগে চিৎকার করে উঠে..
আঁচল – কি পেয়েছেন আমাকে? কাঠের পুতুল আমি? যখন ইচ্ছে হবে মারবেন আবার ইচ্ছে হলে সরি বলবেন? আপনি আমাকে কিছু বলতে দিয়েছিলেন? আপনি জানতে চেয়েছিলেন ছেলেটা কে? তার আগেই আপনি যা নয় তা বলেছেন। কেনো বলুন তো? আমি কি মানুষ না? আপনার সব রকম অত্যাচার কেনো সহ্য করবো আমি? হোয়াই? (কাঁদতে কাঁদতে)
রেহান বুঝে উঠতে পারছে না আঁচলকে কিভাবে শান্ত করাবে। আঁচল যে পরিমাণ রাগ করেছে!
রেহান – আঁচল একটু শান্ত হও প্লিজ। বললাম তো আর এমন হবেনা। (আঁচলের হাত ধরে)
আঁচল এক ঝটকায় নিজের হাত টা সরিয়ে নেয়।
আঁচল – ডোন্ট টাচ মি ওকে। আমি আর আপনার সাথে এক মূহুর্ত ও থাকবো না। আপনি একটা জানোয়ার। আপনি প্রথম দিন থেকেই আমার উপর অত্যাচার করে যাচ্ছেন। আমি চলে যাবো। আপনার সাথে থাকবো না আমি। (চিৎকার করে)
চলে যাওয়ার কথা শুনে রেহানের প্রচুর রাগ উঠে যায়।
রেহান আঁচলের দু বাহু চেঁপে ধরে কাছে এনে বলে…..
রেহান – চলে যাবি মানে! তুই কি মনে করিস আমি তোকে এতো সহজে যেতে দিবো। নো ওয়ে।
স্বামী হই তোর আমি। তোকে মারতে পারি আবার ভালোবেসে কাছে টেনেও নিতে পারি। তুই চলে যাওয়ার কথা মাথায় আনলি কি করে? শুন আমি বেঁচে থাকতে এটা কখনো হবে না। আমায় ছেড়ে চলে যাওয়ার ভুত মাথা থেকে নামিয়ে ফেল। আমি মরে গেলে যা ইচ্ছে করিস। (রেগে)
আঁচল রেহানের এমন আচরনে ভয় পেয়ে যায়।
তাও বার বার এক কথাই বলে যাচ্ছে….. আমি চলে যাবো.. আমি আপনার সাথে থাকবো না।
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে আঁচলের।
রেহান নিজের রাগ কে কনট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বার বার আঁচলের মুখে ” চলে যাবো ” কথাটা শুনতেই রেহানের রাগের পরিমাণ কমার বদলে যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
হটাৎ আঁচল বলে উঠে….
আপনি খারাপ। আপনি শুধু আমার উপর অত্যাচার করেই যান। আমার জিসানই ভালো ছিলো। আপনি খারাপ।
রেহান এবার নিজের রাগের কনট্রোল হারিয়ে ফেলে। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁচলের গালে কষে চর মারে। আঁচল ছিটকে বিছানায় পড়ে যায়।
রেহান – তোর জিসান জিসান জিসান!!! বিয়ের প্রথম দিন থেকে সেই একি নাম বলে যাচ্ছিস। তোর জিসান তোকে কতোটা কষ্ট দিয়েছে ভুলে গেছিস তাই না। আর আমার ভালোবাসা তোর চোখে পড়ে না। তোর জিসান কি আমার থেকেও বেশি ভালোবেসেছিলো তোকে?
রেহান রেগে চিৎকার করে কথাগুলো বলতে থাকে কিন্তু আঁচলের কোনো রিয়েকশন না পেয়ে রেহান আঁচলের কাছে গিয়ে আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে সোজা করতেই দেখে আঁচল সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।
রেহান রাগে নিজের হাত দিয়ে দেয়ালে কয়েকটা আঘাত করে। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ঘন্টাখানেক পর রিমি রুমে এসে দেখে আঁচল ওভাবে বিছানায় পড়ে আছে। রিমি দৌড়ে আঁচলের কাছে এসে আঁচলকে ডাকতে থাকে।
রিমি – ভাবি… কি হয়েছে তোমার?
রিমি বুঝতে পারে আঁচল সেন্সলেস হয়ে আছে। রিমি দ্রুত পানি এনে আঁচলের মুখে ছিটাতেই আঁচলের সেন্স আসে।
রিমি – ভাবি কি হয়েছে বলো তো? তুমি সেন্সলেস হলে কিভাবে?
রিমির কথা শুনে আঁচল সব কিছু মনে করার চেস্টা করে।
আঁচল – জানিনা।
রিমি – আচ্ছা চলো আমি তোমাকে রুমে দিয়ে আসি। রেস্ট নেবে চলো। ভাইয়া যে কোথায় গেলো খবর নেই কোনো। এদিকে তোমার এই অবস্থা সে খেয়াল আছে ওর!
আঁচল – তুমি যাও রিমি। আমি নিজে রুমে যেতে পারবো।
রিমি – ওহো চলো তো। রিমি জোড় করে আঁচলকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আসে।
আঁচল – রিমি শুনো..
রিমি – বলো ভাবি
আঁচল – মা বাবাকে কিছু বলো না কেমন। শুধু শুধু টেনশন করবে।
রিমি – আচ্ছা বলবো না। তুমি রেস্ট নাও। আমি তোমার আর ভাইয়ার খাবার টা রুমে দিয়ে যাবো নি। তোমার নিচে নামার দরকার নেই।
রিমি চলে যায়। আঁচল দুচোখ বন্ধ করে।
রাত ১০ টা……
রিমি আঁচল আর রেহানের খাবার টা নিয়ে এসে দেখে আঁচল বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।
রিমি – ভাবি…..ভাইয়া এখনো বাসায় আসেনি?
আঁচল – তো আমি কি করবো?
রিমি – তুমি ফোন করে একটা খবর তো নিতে পারতে।
আঁচল – তুমি ফোন করে নাও।
রিমি – দেখো ভাবি… তোমার অতীতে কি হয়েছে সব ভুলে যাও। এখন তুমি কারো স্ত্রী। তোমার অতীতে যাই হয়ে থাকুক এতে আমার ভাইয়ার দোষ কোথায় বলো তো?
আমার ভাইয়া কেনো কষ্ট পাবে? আর রইলো ফোন করা…. ভাবি…. ভাইয়া তোমার সাথে রাগ করেছে আমার সাথে না। এখন তুমিই বলো ফোন টা কার করা উচিত আমার নাকি তোমার?
আঁচল চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।
রিমি – ভাবি আমার ভাইয়া টা অনেক অভিমানী। ওকে কষ্ট দিও না প্লিজ। ও হয়তো অভিমান করে এমন কিছু করে বসবে যা কেউ ভাবতেও পারবে না। — বলেই রিমি চলে আসে আঁচলের রুম থেকে।
এদিকে রেহানের মা চিন্তায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে…
রিমি – মা একটু শান্ত হও প্লিজ ভাইয়া চলে আসবে এখনি।
রেহানের মা – ও এমন কেনো করছে রে? ও তো কোনো দিন বাড়ির বাহিরে এতোখন থাকেনি। আমার ছেলেটা ঠিক আছে তো? (কাঁদতে কাঁদতে)
রিমি – মা ভাইয়ার কিছু হয়নি। তুমি দেখো ভাইয়া চলে আসবে।
রেহানের বাবা – কি চলে আসবে চলে আসবে বলছিস! এখনো তো এলো না। কোথায় গেছে কি করছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
রিমি – বাবা তুমিও এমন করছো কেনো বলো তো? তুমিও এতো চিন্তা করলে মাকে কে সামলাবে। (বলেই কেঁদে দেয়)
রেহানের বাবা একের পর এক রেহানকে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না।
এদিকে…
আঁচল বেলকনিতে হাঁটু ভাঁজ করে বসে কান্না করেই যাচ্ছে। ওর জন্যই আজ এতো গুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ও যদি রেহান কে মেনে নিতে পারতো আজ এমনটা হতো না।
হটাৎ বেল বাজতেই রেহানের মা বলে…
রেহানের মা – ঐ তো আমার ছেলেটা চলে এসেছে নিশ্চয়। — বলেই উঠে যেতে নিলে রিমি আটকে ফেলে।
রিমি – মা তুমি বসো আমি গিয়ে দেখছি।
রিমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেই চিৎকার করে উঠে….
রিমি – ভাইয়াআআ……
চলবে….