ডেভিল বর
পর্ব-১০
শিফা_আফরিন
.
.
?
রিমি দরজা খুলে দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।
রিমি – কাকে চাই?
ছেলেটা – আঁচলকে!
ছেলেটার কথা শুনে রিমি খানিকটা রেগে যায়।
রিমি – আপনি জানেন আঁচল আমার ভাবি হই। আর অন্য কারো ওয়াইফ কে আপনি নাম ধরে বলছেন কেনো?
ছেলেটা – এতো কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই। আপনি আঁচলকে ডাকুন। আঁচল আমাকে ঠিকই চিনবে।
রিমি – আরেহহ আজিব! আপনাকে আমরা চিনি না তাহলে কেনো ডাকবো বলুন তো?
ছেলেটা – আমরা নই। বলুন আপনি চেনেন না। এতো কথা না বলে ডাকুন আঁচলকে।
ওরা দু’জনের চেঁচামেচি শুনে আঁচল রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
আঁচল – কি হলো? কার সাথে চেঁচাচ্ছো?
আঁচল দরজার সামনে আসতেই ছেলেটাকে দেখে বড়সড় একটা শক খায়।
আঁচল – আদি ভাইয়া তুমিইইই!!! (অবাক হয়ে)
আদি – কি!! কেমন দিলাম সারপ্রাইজ টা? (মুচকি হেসে)
রিমি – ভাবি তুমি উনাকে চেনো?
আঁচল – আরে কি বলো চিনবো না কেনো? উনি আমার ফুপাতো ভাই আদি। অবশ্য ফুপাতো ভাই বললে ভুল হবে কারন আদি ভাইকেও আমার নিজের ভাই মনে করি। উনি আমার বিয়েতে থাকতে পারেননি দেশের বাহিরে ছিলেন তাই।
আদি ভাইয়া তুমি দেশে ফিরলে কবে।
আদি – এইতো কাল। আর আজ নাকি মামুনি রা আসবে তোকে নিতে আমাকেও বলছিলো তোকে দেখে যেতে তাই ভাবলাম আমিই আগে এসে তোকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিই। মামুমির কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে চলে এলাম।
আঁচল – খুব ভালো করেছো ভাইয়া। আমি খুউউব খুশি।
এই দেখো তোমাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে সব কথা বলে ফেলছি। তুমি ভেতরে এসো। — বলেই আদির হাত ধরে টেনে ভেতরে আনে আঁচল।
রেহান নিচে নামছিলো এমন সময় দেখে আঁচল একটা ছেলেকে হাত ধরে বসতে বলছে। মূহুর্তেই রেহানের ভেতর ভয় ঢুকে যায়।
ছেলেটা জিসান নয়তো? জিসান কি আঁচলকে ফিরিয়ে নিতে এসেছে?
না না! এটা হতে দিবো না। আঁচল আমার বিয়ে করা বউ। আঁচল এখন আমার আমানত। ওর দিকে কেউ নজর ও দিতে পারে না।
রেহানের রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করে আছে। ইচ্ছে করছে জিসান কে এখনি মেরে পুঁতে ফেলতে।
আর আঁচল!!! ও কিভাবে পারলো জিসানের হাত ধরতে!
আগে আঁচলকে দেখে নিই। তার পর ঐ জিসান!
রেহান রেগে আঁচলের কাছে আসে।
আঁচল রেহানকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
আঁচল – শুনুন.. উনি…
আঁচলকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রেহান আঁচলের হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়।
এদিকে রেহানের এমন কান্ডে আদি আর রিমি হা করে তাকিয়ে থাকে।
আদি – কি হলো বলুন তো?
রিমি – কিছুই তো বুঝলাম না।
রেহান আঁচলকে রুমে এনে দরজা লক করে দেয়।
আঁচলের এক হাত পিছনে নিয়ে মোচড় দিয়ে ধরে। আঁচল ব্যাথায় কুকড়ে উঠে।
আঁচল – আহহ রেহান কি হচ্চে টা কি। আমার হাত টা ছাড়ুন। লাগছে আমার। (কাঁদো কাঁদো হয়ে)
রেহান – লাগুক। তুই যদি আজ মরেও যাস তবুও আমার কষ্ট নেই। তোর এত বড় সাহস হলো কি করে? তুই আমার ওয়াইফ ভুলে গেছিস?
আঁচল – কি করেছি আমি? এতো মেজাজ দেখাচ্ছেন কেনো? মানুষ মনে হয়না আমাকে? আপনার সব রকম অত্যাচার মেনে নিবো কেনো বলুন তো? (কেঁদে দিয়ে)
রেহান রেগে আঁচলের গালে কে ঠাস করে চর মেরে দেয়। আঁচল ছিটকে মেঝেতে পড়ে যায়।
রেহানের এমন আচরণ আঁচল মোটেই মানতে পারছে না। সব কিছু যেনো এলোমেলো লাগছে আঁচলের।
আঁচল গালে হাত দিয়ে রেহানের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রেহান আঁচলকে টেনে তুলে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।
রেহানের এমন হিংস্র রুপ দেখে আঁচল ভয়ে কাঁপছে।
রেহান – আমি তোর উপর অত্যাচার করি তাই না। আমার ভালোবাসা তোর অত্যাচার মনে হই। আর তোর ঐ জিসান তোকে অনেক ভালোবাসতো তাই না। এই জন্যই তুই তোর জিসানের সাথে চলে যাওয়ার প্লান করছিলি।
আঁচল – মানে? (অবাক হয়ে)
রেহান – মানে কি বুঝতে পারছিস না? তোর জিসান এই বাড়িতে কি করছে? কেনো এসেছে ও এই বাড়িয়ে? তোকে নিয়ে যেতে তাই তো? আর তুইও তোর জিসানের সাথে পালানোর প্লান করছিস। (চিৎকার করে)
এবার আঁচল বুঝতে পারে। আদি কে জিসান ভাবছে রেহান। আঁচলের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
আঁচল এক ঝটকায় রেহান কে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে….
আঁচল – জিসান! কে জিসান? উনি আমার ভাইয়া বুঝেছেন? আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।
আপনি ভাবলেন কি করে ঐ বেইমান টাকে হাত ধরে এ বাড়িতে নিয়ে আসবো। হ্যা মানছি আমি ওকে এখনো ভুলতে পারিনি। ভালোবাসি এখনো। তার মানে এই না আমি আবার ঐ বেইমান কে সুযোগ দেবো।
রেহান আঁচলের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। কি ভাবছিলো সে আর কি হয়ে গেলো। আঁচলকে ভুল বুঝেছে ওর গায়ে হাতও তুলেছে। এটা মোটেও ঠিক হয়নি।
রেহান – আঁচল আসলে আমি….
আঁচল হাত তুলে রেহান কে থামিয়ে দেয়।
আঁচল – থাক। আপনার নিচু মনমানসিকতা পাল্টান রেহান। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রেহানের বোকামির জন্য তার নিজের উপরই মারাত্মক রাগ হচ্ছে। এভাবে আঁচলকে কষ্ট দিয়ে দিন দিন দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
আঁচল অন্য একটা রুমে দরজা লাগিয়ে কান্না করতে থাকে।
বার বার এই লোকটা জিসানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে কেনো? যতোই চাইছি জিসান কে মন থেকে মুছে ফেলবো ততোই ওর কথা বলে মনে করিয়ে দেয়।
এদিকে আদি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে আঁচলকে দেখতে পারছে না আর। আদিও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। রেহান যেভাবে রেগে আঁচলকে নিয়ে গেলো! কি জানি কি হয়েছে।
রিমি রেহানের রুমে আসে।
রিমি – ভাইয়া কি হয়েছে রে? তুই ঐ সময় ভাবিকে রেগে নিয়ে আসলি কেনো?
রেহান রিমিকে সব টা বলে।
রিমি – ও মা ভাবির বয়ফ্রেন্ড ছিলো! জানতাম না তো। যাই হোক ঐটা ভাবির অতীত। তুই কেনো ভাবিকে ওর অতীত নিয়ে সন্দেহ করলি? তোর কি মনে হয় নিজের স্বামীর বাসায় কেউ তার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে আসে!
তোর কোনো দিন আর বুদ্ধি হবেনা।
রেহান চুপ করে বসে আছে।
রিমি গিয়ে আদিকে সব বলতেই আদি হেসে দেয়।
আদি – বাবাহ রেহান আমার বোন টাকে এতো ভালোবাসে! সত্যি আমি অনেক খুশি হয়েছি আমার বোন টা এমন একটা বর পেয়েছে যে কিনা ওকে চোখে হারায়।
আচ্ছা আমি বরং আসি। আঁচল তো আজ বাড়ি যাবেই তখন না হয় ওর সাথে আড্ডা দিতে পারবো। এখন রেহান কে বলুন আমার বোনের অভিমান খানা ভাঙ্গতে। বলেই আদি চলে যায়।
এদিকে রেহান আঁচলকে খুজতে থাকে। রিমি কে জিগ্যেস করতেই বলে….
রিমি – বাহিরে তো যায় নি। তুই দেখ হয়তো কোনো রুমেই দরজা আটকে বসে আছে। যা গিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গা। বলেই রিমি চলে যায়।
রেহান রিমির পাশের রুমটায় দেখে দরজা লাগানো। ঘরের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে। রেহানের বুঝতে বাকি রইলো না আঁচল এই রুমেই আছে।
রেহান – আঁচল….., দরজা খুলো
চলবে…