ডুমুরের ফুল ২০.
জাদিদ চায়ের মগ ফ্লোরে রেখে দিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বলতে শুরু করলো
– হেম
– বলো
– অভিকর্ষজ ত্বরণের সূত্রটা মনে আছে?
হেমলতা কিছুক্ষণ মনে করার চেষ্টা করলো। হেমলতার মনে পড়ার সাথে সাথে বললো হ্যাঁ মনে আছে।
জাদিদ বললো
– মনে না পড়লে বলো। আমার কাছে আবার লজ্জা কীসের?
হেমলতা বিরক্ত হয়ে বললো
– জাদিদ, আমি এতো গাধা না।
– আমি কখন বললাম, তুমি গাধা?
– তোমার কথায় তাই মনে হচ্ছে।
– হেম, ফিজিক্স এর সূত্র ভুলে যেতেও পারো। কারণ বেশ কয়েকদিন সেটা তোমার প্রাক্টিসে নাই।
– হুম।
– রাগ করলা?
– না।
– তাহলে শুরু করি?
– হুম করো।
– অভিকর্ষজ ত্বরণের সমীকরণ থেকে বোঝা যায় এর ডান পাশে বস্তুর ভর (m) অনুপস্থিত। তাই বলা যায় অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভরশীল নয়। যেহেতু, G এবং M ধ্রুবক, তাই, g এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর মধ্যবর্তী দুরত্বের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, বলা যায়, অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বস্তু নিরপেক্ষ হলেও স্থান নিরপেক্ষ নয়। এখন চাঁদের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান জানতে হবে। মনে আছে তোমার?
– হ্যাঁ, পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের এক ভাগের ছয়ভাগ।
– ইয়েস। চাঁদে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পৃথিবীর তুলনায় কম। পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের আদর্শ মান ধরা হয় ৯.৮। এর ১/৬ ভাগ সমান কতো বলোতো হেম?
– ক্যালকুলেটর লাগবে কিন্তু এখন আমি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবোনা।
– হেম সামান্য একটা ভাগ, ক্লাস থ্রির বাচ্চারাও পারে হাতে করতে।
– আমিও পারবো কিন্তু খাতা কলম টেবিলে।
– আচ্ছা থাক তোমার বলতে হবেনা। আমি বলছি। ১.৬৩৩৩৩…… অর্থাৎ পৌনপুনিক আসে। যেহেতু বস্তুর ভরের উপর ডিপেন্ড না তাই ভর যাইহোক না কেনো ত্বরণের মানের চেঞ্জ আসবেনা। চাঁদে হাঁটার সময় তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে অভিকর্ষ ত্বরণের মান কম। তাই তুমি পৃথিবীতে যেভাবে হাঁটো ওভাবে হাঁটতে গেলে পেছন দিকে উল্টো হয়ে ডিগবাজি খাবে। সামনের দিকে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কারণ ত্বরণের মান কম তাই বল যেটা ফিরে আসবে সেটাও কম।
বলের সূত্র থেকে আরো ক্লিয়ার হয়।
বল, F = ma, এখানে m ধ্রুবক তাহলে হয়
F সমানুপাতিক a.
বল যতো বেশি প্রয়োগ করবা তত বেশি ত্বরণ হবে।
তাই চাঁদে মানুষকে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হয়। ঠিক জোরে লাফ দেয়া না মানে ছোটো বাচ্চারা পছন্দের জায়গায় যাওয়ার পথে অতি আনন্দে হালকা লাফিয়ে হাঁটে তেমন।
আর ইউটিউবে তো চাঁদে মানুষের অভিযান নিয়ে অনেক ভিডিও আছে।
– হ্যাঁ আছে কিন্তু আমার স্মার্টফোন বাবার কাছে।
– তোমার নানীর টা?
– নোকিয়া মোবাইল তবে ক্যামেরা আছে।
– তোমার বোরিং লাগছে তাই না হেম?
– ফিজিক্স আমার বোরিং লাগে।
জাদিদ দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
– এখন ঘুমাও।
– তুমি কী করবে?
– ঘুম থেকেই তো উঠলাম। ঘুম আর হবেনা। দীর্ঘ লেকচারের পর আমার খুদা লেগে গেছে।
– খাবার আছে?
– বাবা পুরো সংসার সাজিয়ে রেখেছেন এখানে। ফ্রিজ থেকে শুরু করে চামচ পর্যন্ত আছে। মধ্যবয়সী একজন মহিলা খাবার দিয়ে গেছেন।
– অনেক গরম পড়েছে, খাবার নষ্ট হয়ে যাবার কথা। তুমি ফ্রিজে রেখেছো তো?
– হ্যাঁ। আমার খিদে পেয়েছে এখন রাখছি।
ফোন কেটে দিয়ে জাদিদ ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে রান্নাঘরে গেলো।
ফ্রিজের খাবার ঠান্ডা। যতই গরম পড়ুক ঠান্ডা খাবার খাওয়া ঠিক হবেনা।
কোনোভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে পড়াশোনা চুলোয় যাবে। আর তাকে দেখার মতো এখানে কেউ নেই।
টিফিনের বাটি খুলে খাবার দেখে জাদিদ বেশ অবাক হলো।
বাটিতে তার পছন্দের খাবার। চিংড়ি মাছের ভর্তা, ভাজা ইলিশ মাছ, আলুভাজি আর সাদা ভাত। তার পছন্দের খাবারের খোঁজ বাবার জানার কথা তো না। বাবা থাকেনই তো অল্পসময়। কীভাবে জানলো?
প্রশ্নের উত্তর বাবার মুখ থেকেই শোনা যাবে। প্রশ্নটাকে আপাতত আটকে রেখে খাবার গরম করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো জাদিদ।
হেমলতা লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লো। আহ, কী শান্তি! কিন্তু রাত প্রায় শেষ হবে এখন ঘুমিয়েও বা লাভ কী? নানী এসে তো ভোরেই ডেকে তুলবেন।
এদিকে কথা না বললে জাদিদের মন খারাপ ঠিক হতোনা। প্রেম করার কী জ্বালা!
মনোজ সাহেব বারান্দায় শীতল পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছেন। হালকা ঠান্ডা বাতাস আসছে যদিও যে গরম তাতে কিছুই হয়না। মশার উপদ্রব খুব বেশি তাই মশার কয়েল জ্বালিয়ে নিয়েছেন।
বারান্দায় আরামে ঘুম হবে। রেবেকার সাথে এক বিছানায় ঘুমানোর ইচ্ছা তার এখন নেই। ঝগড়া লাগানোর জন্য মুখিয়ে আছে। পান থেকে চুন খসলে লাগিয়ে দিবেন ঝগড়া। কী দরকার এতো রাতে ঝগড়ার।
টেবিলের কাচ ভেঙেছে পারলে সে আরেকটা কিনে আনবে বা কিনবে না কিন্তু এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা সে বলবেনা। কথা বললেই রেবেকা অমনি ফোঁস করে উঠবে।
তার দূর সম্পর্কের এক খালা এই বিয়ে ঠিক করেছিলেন। আর তার মাও রেবেকাকে দেখে পাগল হয়ে গেলেন। এই মেয়েকে তার বউ হিসেবে চাই।
বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করতে হলো।
রেবেকা দেখতে সুন্দরী কিন্তু স্বভাব এতো খারাপ।
হেমলতাকে দু চোখে দেখতেই পারেনা।
মেয়েটা দুই একবার ঈদের দিন এসেছিলো কিন্তু রেবেকের ব্যবহারের জন্য আর আসেনি। এখন তো ভুলেও এই বাড়িতে আসার নাম নেয়না।
ইমরান মোল্লা খন্দকার হোটেলে বেশ আয়েশ করেই রাতের খাবার খেলেন। বিল দিয়ে পদ্মা আবাসিক হোটেলের দিকে এগিয়ে গেলেন।
হোটেলের নিচের দোকান থেকে ৫০০ মিলি সেভেনাপ কিনলেন। রাতের খাবার বেশি খেয়ে ফেলেছেন। হাঁটতে একটু কষ্ট হচ্ছে। এখন যদি পাশে জাদিদের মা থাকতো তাহলে হয়তোবা তার এক হাত ধরে বলতো
– আমি তোমাকে ধরেছি তুমি টেনশন ফ্রী হয়ে হাঁটো।
চলবে…..!
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ।
© Maria Kabir