ডুমুরের ফুল ১২.

0
2680
ডুমুরের ফুল ১২.

ডুমুরের ফুল ১২.

হেমলতার ঘোর ঘোর লাগছে। জাদিদ সত্যিই ওকে ভালোবাসে? নাকি মজা করছে? জাদিদের সাথে ওর একটুও যায়না। জাদিদের চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়ছে। হেমলতার হাত দুটো ওর হাতের মধ্যে নিয়ে বসে আছে। ঝাকড়া চুলের ছেলেটা তাকে এভাবে আয়ত্তে নিয়ে নিবে ভাবতেও অবাক লাগছে। জাদিদের গার্লফ্রেন্ড হেমলতা – বিষয়টা ওদের ব্যাচের কেউ জানতে পারলে কী হতে পারে? মিম্মা জানলে কী হবে?
জাদিদ ভাবছে কীভাবে ওকে আরো চমকে দেয়া যায়? দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে হেমলতার কপালে চুমু দিয়ে বললো
– এতো কী ভাবছেন হেম?
হেমলতা ভ্রু কুঁচকে বললো
– এ কী জাদিদ?
জাদিদ মিষ্টি স্বরে বললো
– আদর দিলাম। আমার হেম খুব অসুস্থ তাই তাকে একটু আদর করলাম।
– না করবা না।
– করবো।
হেম রেগে গিয়ে বললো
– তোমার সাথে কথা নাই, যাও।
– আচ্ছা, ঠিকাছে। আগামীকাল তো চলে যাবো তখন বুঝবা কীরকম লাগে। এই ফেসও দেখতে পারবানা।
– আমার দেখতেও হবেনা।
জাদিদ অভিমানের সুরে বললো
– আমাকে ভালো লাগেনা তোমার? সত্যি করে বলবা। আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে পছন্দ করোনা।
– তা না কিন্তু এভাবে স্পর্শ করাটা আমার পছন্দ না।
– কিন্তু সম্পর্কে জড়ালে এটা তো স্বাভাবিক।
– জাদিদ, প্লিজ এভাবে না…..

ইমরান মোল্লা বেশ ভালো মেজাজেই আছেন। মনোজ সাহেব চিন্তিত বিষয়টা না বোঝার কিছুই নেই। আলাপ জমানোর জন্য ইমরান মোল্লা বললেন
– মনোজ ভাই চলুন এক কাপ র’চা খেয়ে আসা যাক।
মনোজ সাহেব চিন্তিত স্বরে বললেন
– মেয়েটাকে রেখে যেতে ইচ্ছা করছেনা।
– হেমলতা সুস্থ আছে এখন। আমরা একটু ঘুরেফিরে আসি। আর ওতো একা নাই, জাদিদ আছে।
মনোজ সাহেবকে মোটামুটি জোর করেই চা খেতে নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য একটাই মানুষটার মাথা থেকে কিছুক্ষণের জন্য চিন্তাটাকে ঝেড়ে ফেলানো।
ডায়বেটিক হাসপাতালের সামনে স্ট্রিট ফুডের অভাব নেই। ছোটো বড় খাবার হোটেল, স্টেসনারি শপ থেকে শুরু করে একটু দূরে গেলে রেস্টুরেন্টও পাওয়া যায়।
মনোজ সাহেবকে নিয়ে মাঝারি ধরনের হোটেলে ঢুকলেন। হোটেলের তন্দুরি রুটিটা তার বেশ ভালো লাগে। ছোটো ছোটো আকারের রুটি, গরম গরম রুটিতে কামড় দিলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায় ইমরান মোল্লার।
হোটেলের ক্যাশিয়ার তাকে খুব ভালোভাবেই চিনেন। ইমরান মোল্লাকে দেখেই ক্যাশিয়ার বিপুল হাত উঁচু করে সালাম দিয়ে বললেন
– আজকে কয়টা রুটি খাবেন?
ইমরান মোল্লা চওড়া হাসি দিয়ে বললেন
– আজকে আমি একা নই। আমার আরেক ফ্রেন্ডকে নিয়ে এসেছি। পরিচয় করে দেয়ার পর দুই চেয়ারের মিনি টেবিলে গিয়ে দুজনে বসলেন। মনোজ সাহেব চিন্তিত হয়ে বললেন
– তন্দুরি রুটি খাওয়ার ইচ্ছা নাই।
– আরে একটা তো খাবেন।

জাদিদ হাসতে হাসতে বললো
– কীভাবে হেমলতা?
– আমার আসলে ঠিকই হয়নি মনের কথা গুলো বলে দেয়া।
– না বললেও আমি কিছুই বুঝতাম না। কারণ ছেলেরা এসব বুঝে না বা কম বোঝে। পুরোপুরিভাবে বুঝতে না পারার কারণে আমি দোটানায় পড়ে যেতাম। প্রথম কয়েকদিন খুব চেষ্টা করতাম তোমার মনের খবর জানার জন্য। তারপর ব্যর্থ হয়ে একসময় ঢাকায় ললনা খুঁজে নিতাম। ব্যস আবার শুরু….! তখন স্পর্শ আমি সেই ললনাকে করতাম, আদর তাকে করতাম, প্রেমালাপ চলতো ললনার সাথে। সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে শুরু হতো আমার প্রেমের গল্পটা। হয়তোবা হঠাৎ তোমার কথা মনে পড়তো। তখন ভাবতাম মেয়েটা আমাকে পাত্তাই দিলো না।
জাদিদ খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা গুলো বললো।
হেমলতার চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে। বর্ষার নদীর মতো জলে টইটম্বুর করছে হেমলতার চোখ।
জাদিদ, হেমলতার দিকে না তাকিয়েই বললো
– তখন কেঁদেও লাভ হতোনা। কারণ আমি অন্য পথে এগিয়ে গেছি অনেকটা পথ। হেম জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা। আমরা ঠিকই বাঁচতে শিখে যাই।
হেমলতা হুট করে জাদিদকে জড়িয়ে ধরে বললো
– পঁচা পঁচা কথা বলো শুধু। আমার খারাপ লাগেনা বুঝি? আমি তো তোমাকে তেমন কিছুই বলিনি। তুমি হুটহাট করে চুমু দিয়ে বসো তখন আমার কেমন যেন লাগে! খুব লজ্জা করে আমার জাদিদ।
জাদিদ হেমলতাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলো যেন কেউ ওদের মধ্যে আসতে না পারে।
– আমি পঁচা পঁচা কথা বলিনা। সত্যি কথাগুলো বলেছি। আমরা এখন প্রেম করছি। আর প্রেম করলে এসব তিতা সত্য জেনে নিতে হয়। আর একটা কথা, আমি চাচ্ছি আমাদের সম্পর্কটা গোপন থাকুক। মিম্মাকে জানাতে পারো কিন্তু অন্য কাউকে না। আমিও কাউকে জানাবো না একজনকে বাদে।
– কে সে?
– আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড।
হেমলতার কানের কাছে ফিসফিস করে জাদিদ বললো
– হেমলতা জানো আমি একজনের সাথে প্রেম করছি। তার নামটাও না হেমলতা। অদ্ভুত সুন্দর না?
হেমলতা জাদিদকে ছেড়ে দিয়ে বললো
– তুমি এতোটা ফাজিল কেউই বিশ্বাস করবেনা। মানে তোমার এই ফেস দেখে তো ভাবতেই পারবেনা তুমি এমন।
– আমি ফাজিল বুঝলাম। এই ফাজিলটার জন্যই তো কেউ একজন ইমোশনাল হয়ে গেলো।
– আচ্ছা তুমি তো আগামীকাল চলে যাচ্ছো?
হেমলতার ইচ্ছে করছে, আর একটা দিন পরে জাদিদ ঢাকায় যাক কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছেনা।
– হ্যাঁ। আগামীকাল ক্লাস একদিন আগে গেলে সুবিধা হয়। তুমি তো এখানে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলেও তো পারো। আর আমি তো আছি।
– নানী অনেক অসুস্থ। আমাকে ফরিদপুরের বাহিরে অন্য কোথাও পড়তে যেতে দিবেনা।
– নানী তো সারাজীবন অসুস্থ থাকবেন না। সুস্থ তো হবেনই।
– হ্যাঁ তা ঠিক। তাহলে নানীকে বলে দেখবো।
– নিজ থেকে কি একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারোনা?
হেমলতা বোকার মতো জাদিদের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ অবদি তার নিজের জীবনের কোনো সিদ্ধান্তই তার নেয়া না। নানী অথবা বাবা নিয়েছেন। একমাত্র জাদিদের বিষয়টা বাদে।
– আচ্ছা হেমলতা এভাবে বোকার মতো তাকিয়ে থাকো কেনো? আমার আনইজি লাগে খুব। প্রেমিকারা কখনো প্রেমিকদের দিকে এভাবে তাকায় না। লাজুক দৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকায় থাকে।
হেমলতার ইচ্ছা করছিলো দৌঁড়ে জাদিদের সামনে থেকে পালিয়ে যেতে।সে কি বেহায়া হয়ে যাচ্ছে দিন দিন?
সম্পর্ক এখনো ঠিক ভাবে শুরু হয়নি কিনতি সে জাদিদকে জড়িয়ে ধরেছে, চুমু দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। এটা কি বেশি হয়ে গেলো না?
হেমলতা জাদিদের থেকে দূরে সরে গিয়ে বললো
– স্যরি।
জাদিদ মোবাইল হাতে নিয়ে বললো
– যাও পারমিশন দিলাম আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার। তুমি না হলে কেঁদে কেটে নাকের পানি চোখের পানি এক করবে।
– মোটেও না।
– মোটেও না।
জাদিদ মোবাইলের ক্যামেরা ওপেন করে হেমলতার দিকে ধরে বললো
– এখন আমার স্বর্ণলতা একটু মুচকি হাসি দিবে আর আমি তার ছবি তুলবো।
হেমলতা দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো
– না প্লিজ।
– এই মেয়ে হাত সরাও। তোমার ন্যাচারাল ছবি আমার দরকার। হুটহাট মনে পড়বে তখন তোমার ন্যাচারাল ছবি আমার মনকে শান্ত করবে।
– অন্যসময় আমি তুলে পাঠাবো কিন্তু এখন না।
জাদিদ গম্ভীরমুখে বললো
– আজকের দিনের একটা স্মৃতি আমার দরকার। আমাদের দুজনের প্রথম প্রেমের শুরু, প্রথম স্পর্শ, প্রথম অনুভূতি সবকিছুই প্র‍থম। তাই প্রথমের স্মৃতি আমি রাখতে চাই।
হেমলতা হাত সরিয়ে মুচকি হাসার চেষ্টা করলো…..

চলবে……

© Maria Kabir

” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir – মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে