ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-৭+৮

0
2806

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

মধুর ভয় লাগছে।জিগ্যেস করবে বাগানে কেউ আছে কি না!নাকি জানালা বন্ধ করে দিবে।যদি চোর ডাকাত হয়!এমনিতেও বাসায় কেউ নেই।শুধু শুধু খাল কেটে কুমির আনার দরকার নেই।তাই মধু জানালা বন্ধ করে দিলো।

কালকে রাতের মতো আজকেও কাটবে ভয়ে ভয়ে এমনিতেই ঝড়বৃষ্টি তার ওপর মধুর আলগা ভয়তো আছেই।খাওয়া দাওয়া করে মধু দোয়া দুরুদ পড়ে শুয়ে পড়লো।
—————–
আজও খুব সকালেই ঘুম ভাঙলো মধুর কাল রাতেও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো।নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে গেলো।আজকে আর বের হতে ইচ্ছে করছে না।নাস্তা বানাতে বানাতে সাতটা বেজে গেছে।মধু নাস্তা খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো।হঠাৎ কলিং বেল বাজায় মধু নাস্তার প্লেট টেবিলের ওপর রেখে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো ওর মা আর বোন এসেছে।ওদের দেখে মধু দ্রুত টিভি বন্ধ করে নাস্তার প্লেট নিজের রুমে রেখে এসে দরজা খুল দিলো।আইরিন রহমান ঘরে ঢুকে বললেন”এতো সময় লাগলো কেনো দরজা খুলতে?”

“খাচ্ছিলাম আমি।”

“নাস্তা বানিয়েছিস?”

“হ্যাঁ।” মধু দায়সারা জবাব দিলো।

“কলেজে যাবি?”

“হুম।যেতে হবে।আমি রেডি হয়ে আসছি।” এটা বলে মধু নিজের ঘরে গিয়ে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নিলো।তারপর ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় রান্নাঘরে একবার উঁকি দিয়ে জিগ্যেস করলো”নানি কেমন আছে?”

“এখন ভালোই আছে।”

“আচ্ছা।”
বলেই মধু কলেজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়ে হাঁটতে লাগলো।একটু হাঁটতেই দেখলো ইয়াদ একটা মেয়ের সাথে হাসতে হাসতে কথা বলছে।মেয়েটাও হাসছে।কেনো জানি ব্যাপারটা একদম ভালো লাগছে না মধুর।কেনো ভালো লাগছে না মধু নিজেও জানে না।তাই মধু আর ওইদিকে তাকালো না কিন্তু তবুও চোখ হারামি বারবার ওইদিকে চলে যায়।ওদের ক্রস করার পর ঘাড়টাও বেইমানি করছে।না চাইতেও ঘাড় ঘুরিয়ে মধু ওদের দেখছে।ওরা চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত মধু কতোবার যে ঘাড় বাঁকা করে ওদের দিকে তাকিয়েছে সেটা ও নিজেও জানে না।কলেজে পৌঁছানোর পরই আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো মধু আরিয়া মধুর উদাস মুখের দিকে তাকিয়ে বলল”কি রে কি হইছে?চেহারা এমন করে রাখছিস কেনো?”

“আরে একটা ছেলের ওপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছি।”

“তো সমস্যা কই!গিয়া লাইন মার।ছেলে কই থাকে?”

“আমাদের বাসার তিনতলায়!”

আরিয়া লাফিয়ে উঠে বলল”বাহ!তাইলে আর লাগে কি!সকালে বিকেল ক্রাশের সাথে দেখা হবে।তাই লাইন মারা শুরু কর।”

“এতো সহজ না বইন।পুরোটা শুনে তারপর কথা বল।ওর এক্স পাঁচ তলায় থাকে।”

মধুর কথা শোনার পর যতোটা উচ্ছ্বাস আরিয়ার মুখে ছিলো সব ফুস হয়ে গেছে।তবুও আরিয়া বলল”এক্স হইছে তো কি হইছে।ওর সাথে তো এখন সম্পর্ক নাই।”

“না থাকলেও ওর এক্স সহ্য করতে পারে না আমি ওর সাথে কথা বললে।”

“মানে কি?কি বলে?” আরিয়া ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো।

মধু এই দুই তিনদিনে নিশি যা যা বলেছে,করেছে সব আরিয়া কে বলল।আরিয়া সব শুনে বলল”আচ্ছা বুঝলাম।আচ্ছা তোর ক্রাশ মানে ইয়াদের দিকে থেকে কোনো সাড়া আছে?”

“আমি বুঝতে পারছি না।স্বাভাবিক আচরণই করে।আর সবার সাথে যেভাবে কথা বলে আমার সাথেও সেভাবেই বলে।”

“এখনই কিছু বলা যাবে না।আরো কয়েকদিন দেখ।তারপর তুই নিজেই বুঝবি।”

মধু আরিয়ার কথার উত্তরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্যার চলে এলো।তাই মধু আর কথা বলতে পারলো না।ক্লাস শেষে কোচিংএ গেলো।আজকে দুটো ব্যাচই পড়তে হবে।তিনচার দিন ধরে প্রচুর খামখেয়ালী করেছে আর করলে হবে না।
দুটো ব্যাচ ছুটি হয়েছে সন্ধ্যার সময়।আরিয়া আর মধু একসাথেই ওই রাস্তাটা দিয়ে হাটতে লাগলো।আচমকাই মনে হলো কেউ একজন ওদের পেছনে পেছনে আসছে!এটা শুধু মধুর না আরিয়ারও মনে হলো।কে আসবে!আরিয়া আর মধু দুজনই কয়েকবার পেছনে তাকালো কিন্তু না সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেলো না।আবার হাঁটতে শুরু করলো ওরা এবারও সেম কাহিনী।মধু ভয়ে আরিয়ার হাত চেপে ধরে বলল”দোস্ত আমার মনে হয় ভূত আমাদের পিছনে পড়েছে।তাড়াতাড়ি হাট।”

“আরে ভূত-টুত কিছু না।হয়তো কেউ ফাইজলামি করতেছে।শালারে পাইলে চটকাইতাম।”

আরিয়া বিরক্তিমুখে হাটছে আর মধু ভয়ে ভয়ে।ওই রাস্তাটা পার হয়ে একটু হাটলেই মধুর বাড়ি।আরিয়া মধুর বাড়ির সামনে এসে ওকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো।মধু ঘরের সামনে আসতেই দেখতে পেলো নতুন কয়েকজোড়া জুতা।মধু ভেবে পেলো না।ঘরে আবার কোন মেহমান আসলো।কৌতূহলী হয়ে দরজায় নক করলো সে।আইরিন রহমান দরজা খুলে হাসিমুখে মধুকে ঘরে নিয়ে এলো।আইরিন রহমানের আচরণ ঠিকঠাক লাগছে না মধুর কাছে।হঠাৎ এতো আদিক্ষ্যেতা কেনো!আইরিন রহমান যখন মধুকে বসার ঘরে নিয়ে গেলো।তখন মধু বুঝতে পারলো কাহিনী কি!ওকে দেখতে এসেছে।একটা আন্টি টাইপের মহিলা আর একটা ছেলে।মনেহয় মহিলারই ছেলে।বয়স আন্দাজে ৩২ হবে হয়তো।মধুর অনুসন্ধানের মাঝে আইরিন রহমান বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন”এইতো আমার মেয়ে।ও রেডি হয়ে আসুক।আপনারা একটু বসুন।”

এটা বলে আইরিন রহমান মধুকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল”তাড়াতাড়ি বিছানার ওপর রাখা শাড়িটা পড়ে একটু সেজেগুজে নে।আর মুখ পেঁচা মতো না করে মুখে একটু হাসি রাখবি।”

এটা বলেই উনি চলে যেতে নিলেই মধু বলল”আমাকে একবার জিগ্যেস করতেও পারতে!”

“তোকে জিগ্যেস করার কি আছে।বড়ো হয়েছিস বিয়ে হবে না নাকি!কতোদিন আর আমার ঘাড়ে বসে থাকবি?”

“বললাম তো আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরো।আমি চলে যাবো।তোমার ঘাড়ে বসে খাবো না।তবুও এই বিয়েশাদিতে আমাকে জড়িয়ো না।”

“না,,কোনো কথা হবে।চটপট রেডি হয়ে আয়।আর ওদের সামনে উল্টাপাল্টা কিছু করলে একদম মেরে ফেলবো।”

বলে আইরিন রহমান চলে গেলেন।মধু বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে শাড়ি পড়লো।তারপর চুল ছেড়ে ওদের সামনে আসলো।আইরিন রহমান ওকে সবার সামনে বসিয়ে দিলেন।মধু মাথাটা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে।ছেলের মা হঠাৎ বলে উঠলো”এইদিকে তাকাও।”

মধু মুখতুলে তাকালো।মহিলাটা পাশের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল”পছন্দ হয়েছে বাবু?”

ছেলে বলল”তোমার পছন্দ হলেই হলো।”

ছেলের মা বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে বলল”মেয়ে মাশাল্লাহ!আমাদের পছন্দ হয়েছে।তো মামনি তুমি রাঁধতে পারো?”

“না আন্টি।”

মধু জবাব শুনে মধুর মা ওকে চোখ গরম করে ইশারায় বলল হ্যাঁ বলতে।কিন্তু মধু বলল না।মহিলাটা আবার বলল”শিখে নিবে।আর শোনো বিয়ের পর কিন্তু পড়ালেখা চলবে না।”

“কেনো?” মধু অবাক হয়ে বলল।

“কারণ আমার ছেলেই তো বিসিএস ক্যাডার।তোমাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবে।তাই এতো পড়াশোনার দরকার নেই।”

মধুর মেজাজ তেতে উঠলো।মস্তিষ্কে সুপ্ত প্রতিবাদী ভাব জাগ্রত হলো।মুখের লাগাম খুলে গেলো।মধু উত্তপ্ত কন্ঠে বলল”আপনি মেয়ে তবুও এগুলো কিভাবে বলতে পারলেন?আমি কেনো আরেকজনের গলায় ঝুলে পড়বো?কেনো আরেকজনের দাসত্ব করবো যেখানে আমিও মানুষ সেও মানুষ।নাকি আপনারা এখনো জাহিলিয়ার যুগে পড়ে আছেন।মেয়েদের মানুষ বলে মনে করেন না।মেয়েদের কি আত্মসম্মান বোধ নেই!আপনারা তো আমাদের বোঝা মনে করেন।কখন কার ঘাড় থেকে কে নামাবে।এই তো আমার মা তার ঘাড় থেকে নামানোর জন্য আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আর আপনি আপনার বিসিএস ক্যাডার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য লেগেছেন।ছিঃ”

এতুটুকু বলতেই আইরিন রহমান আর সহ্য করতে পারলেন না।মধুর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলেন।তারপর পাত্রপক্ষের সামনে এসে পাত্রের মাকে বললেন”ক্ষমা করবেন আপা।”

পাত্রের মা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল”এমন বেয়াদব মেয়ে এখনো বাচিয়ে রেখেছেন কেনো?এই মেয়েকে জীবনেও বিয়ে দিতে পারবেন না।”

এটা বলে মহিলা আর তার ছেলে চলে গেলো।রাগে আইরিন রহমানের মাথা ফেটে যাচ্ছে।কতো কষ্ট করে এমন একটা সমন্ধ জোগাড় করেছিলো!সব শেষ।

আইরিন রহমান মধুর ঘরে ঢুকে ইচ্ছামতো মারলেন ওকে।গায়ে দাগ বসে গেছে।অনেক মারার পর ক্লান্ত হয়ে সে চলে গেলো।আর মধু রুম অন্ধকার করে হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলো।আজ খুব করে বাবাকে মনে পড়ছে মধুর।যখন মধুর বয়স চার বছর ছিলো তখন ওরা ফুলপুর থাকতো।প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিস শেষে বাবা আসলে মধু ওর বাবার গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকতো।তখন দিনগুলে কতো সুন্দর ছিলো।হঠাৎ এক্সিডেন্টে বাবা মারা যাওয়ার পর সব উল্টে গেলো।মা কেমন যেনো হয়ে গেলো।মামাদের কর্তিত্ব চলে এলো সংসারে।মাকে আবার বিয়ে দেওয়া হলো।মা ওখানে সংসার করতো।আর মধু মামার বাড়ি থাকতো।ওই বয়সেও কতো কিছুর স্বীকার হয়েছে মধুর ভাবতেই কান্না পায়।তারপর ছয়বছর বয়সে মা ফিরে আসে ওখানে নাকি ডিবোর্স হয়ে গেছে।ওখান থেকে একটা দেড় বছর বয়সই মেয়েও নিয়ে আসে।তারপর থেকে আবার মায়ের সাথেই থাকা।কিন্তু তখন থেকেই মনে হচ্ছিলো একই চেহারা হলেই মানুষটি ওর মা না।মধু এইসব স্মৃতি ভাবতেই ঢুকরে কেঁদে ওঠে।মনের ক্ষত আর শরীরের ব্যাথা মিলিয়ে চোখদ্বয় ক্রমেই বুঁজে আসতে শুরু করলো।মধু মনেমনে বলল”এইটা যেনো আমার শেষ ঘুম হয়।”

চলবে….

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat

সকালের কোমল হওয়া আধখোলা জানালার গ্রিল ভেদ করে মধুর ঘুমন্ত শরীরে আছড়ে পড়ছে।ওর চুলগুলো অবাধ্য হাওয়ার তালেতালে উড়ছে।মধুর এখনো ঘুম ভাঙে নি।এদিকে একজোড়া চোখ তাকে কাঁচের জানালার গ্রিলের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।এতো সুন্দর মানবী সে আগে কখনো দেখেনি তাই নিজের ফোনে এই ঘুমন্ত মায়াময়ী মানবীর একটা ছবি তুলে নিলো।কিন্তু হাতের কালশিটে দাগ তার চেহারায় উদ্বীগ্নতা ফুটিয়ে তুললো।সে আর বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না।রুমে কাউকে আসতে দেখে সে সরে পড়লো।
———————
মিলি এসে মধুর মাথায় হাত দিয়ে দেখলো অনেক জ্বর শরীরে।মিলি আলতো ধাক্কা দিয়ে ডাকলো”আপু,এই আপু ওঠ।”

কয়েকবার ডাকার পর মধু আস্তে আস্তে চোখ খুললো।সারা শরীর প্রচন্ড ব্যাথা করছে,মাথা ঘুরছে।মধু একহাত দিয়ে মাথা ধরে উঠে দাড়ালো।কালকের সন্ধ্যায় পরিহিত শাড়ি এখনো মধুর পরনে।আস্তে আস্তে খাটে বসে মধু নিজের মাথাটা চেপে ধরলো।তারপর মিলিকে বলল”নাস্তা হলে আমাকে একটু হালকা নাস্তা দে।”

মিলি গিয়ে নাস্তা এনে মধুর সামনে রাখলো।মধু একটু নাস্তা খেয়ে নিজের কাছে থাকা জ্বরের ঔষধ খেয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।উঠে দাড়ানোর মতো শক্তি পাচ্ছে না মধু।আজ কলেজেও যাওয়া হবে না।
————–
দ্বিতীয় বার মধুর ঘুম ভেঙেছে সকাল এগারোটায়।এখন একটু ঠিকঠাক লাগছে।জ্বর টাও ছেড়েছে।কিন্তু সারা শীররের ব্যাথা কমেনি।মধু ওয়াশরুমে গিয়ে গোসলটা সেরে এসে মিলিকে দিয়ে মায়ের ফোনটা আনলো।তারপর আরিয়াকে ফোন দিলো।আরিয়া ফোন ধরতেই মধু বলল”আজকে বিকেলে বাসায় আসিস কথা আছে।”

“আচ্ছা,কলেজে আসিস নি কেনো?”

“বিকেলে আসলেই জানতে পারবি।”

“আচ্ছা আসবো।”

মধু ফোনটা আবার মিলিকে দিয়ে রেখে আসলো।তারপর আবার শুয়ে পড়লো।

কলেজ শেষে একটা ব্যাচ পড়েই আরিয়া মধুর বাসায় চলে আসলো।মধু তখনো শুয়ে ছিলো।আরিয়াকে দেখে উঠে বসলো।তারপর বলল”ব্যাচ করে আসলি?”

“হ্যাঁ,এবার বল কি বলবি?আর কলেজে যাস নি কেনো?”

“আমি আর কোচিং করবো না রে।তুই স্যারদের কে বলে দিস।”

“কিন্তু কেনো?”

“মন চায় না।”

“মন চায় না নাকি আন্টি কিছু বলছে?”

“জানিসই তো তাইলে আর জিগ্যেস করিস কেন?”

“কিন্তু…. ” এতটুকু বলেই আরিয়া থেমে গেলো মধুর হাত পায়ের কালশীটে দাগ দেখে উত্তেজিত কন্ঠে বলল”তোর হাতে পায়ে এমন দাগ কেনো?”

মধু মলিন একটা হাসি দিয়ে সন্ধ্যার ঘটনাটা আরিয়াকে বলল।আরিয়া সবটা শুনে কান্না করে বলল “এইজন্যই তুই ব্যাচ পড়বি না।”

“হুম।পারলে আমার জন্য কয়েকটা টিউশনি খুঁজে দিস।”

“আচ্ছা।আমি দেখবো।”

“আর শোন ব্যাচের পড়াগুলো তুই আমাকে একটু কলেজে এসে বুঝিয়ে দিস।”

আরিয়া মধুকে জড়িয়ে ধরে বলল”চুপচাপ সব সহ্য করে যা।আল্লাহ সব দেখছেন।তোর কষ্ট শেষ হবেই।”

মধু ম্লান হেসে মনে মনে বলল”আমিও সেই আশাতেই আছি।”
আরিয়া চলে যাওয়ার পর মধু ওজু করে নামাজ পড়ে তিনতলায় নামলো ওর পদার্থবিজ্ঞান নোট খাতার জন্য।দরজায় নক দিতেই ইরিন দরজা খুললো।মধুকে দেখে একগাল হেঁসে বললো”ভেতরে আসো।”

মধু ভেতরে গিয়ে দেখে বসার ঘরে ইরিনের আম্মু,আব্বু,ইয়াদ আরেকটা ছেলে বসে আছে।এই ছেলেটাকে মধু এর আগে দেখে নি।ইরিন মধুকে নিয়ে নিজের রুমে আসলো।তারপর মধুকে বসতে বলে বলল”চা চলবে নাকি কফি?”

“চা চলবে।”

ইরিন একটু হেসে বলল”দ্যাটস গ্রেট আমি আর ইয়াদ ভাইয়া চা খোর।ইফাজ ভাই আবার কফি খোর।তুমি একটু ওয়েট করো আমি আসছি।”

ইরিন চলে যেতে নিলেই মধু বলল”ইরিন শোনো,সোফায় বসা নতুন ছেলেটা কে?”

ইরিন দাঁত বের করে হেঁসে দরজার কাছে থেকে ফিরে এসে মধুর হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল”চলো।”

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল”কোথায়?”

“আহা!চলো না!” এটা বলে ইরিন হাত ধরে টেনে ড্রইং রুমে নিয়ে আসলো মধুকে তারপর ইরিন সবার মনযোগ আকর্ষণের জন্য বলল”এই যে আমার শ্রদ্ধেও পিতা,মাতা ও ভাইদ্বয় আমার কথাগুলো যদি একটু কৃপা করে শুনতেন তাহলে আমি কৃতার্থ হবো।”

ইরিনের এই লম্বা বক্তব্য শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো।সবার এটেনশন পাওয়ার পর ইরিন মধুর হাত ধরে বলল”এই যে কিউট মিষ্টির দোকানের মতো মেয়েটা আমার বান্ধবী।তো আমার বান্ধবী জানতে চেয়েছে ইয়াদ ভাইয়ের সাথে বসা নতুন ছেলেটা কে?কি তার পরিচয়?কেনো সে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে?”

ইরিনের কথা শুনে সবাই হো হো করে একদফা হেঁসে উঠলো।আর মধুও লজ্জায় লাল,নীল হচ্ছে।তারপর ইরিন হাতের ইশারায় বলল”এই নতুন ছেলে উঠে দাড়াও।তোমার পরিচয় দাও।”

ইরিন এই কথা শুনেও সবাই হেসে দিলো।ইয়াদের পাশের ছেলেটা উঠে দাড়িয়ে হাসিমুখে বলল”আমি আরহাম খান ইফাজ।সদ্য ডাক্তারী পাশ করে আজকেই দেশে ফিরলাম।আমি ইয়াদ, ইরিনের বড়ো ভাই।আর ইয়াফ খান ও সাইদা খানের বড় পুত্র।এছাড়া আর কোনো পরিচয় নেই আমার।”

ইফাজের কথা শেষ হতেই ইরিন বলল”মধু এবার এই নতুন ছেলেটার পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহ আছে?”

মধু লজ্জায় লাল হয়ে কিছু না বলেই ইরিনের রুমের দিকে দৌড় দিলো।মধুর কান্ডে সবাই আরেকদফা হাসলো।ইরিনও হাসতে হাসতে কিচেনে গিয়ে দু’কাপ চা নিয়ে ঘরে আসলো।মধু ইরিনকে দেখে মুখ ফুলিয়ে বলল”এভাবে লজ্জা না দিলে কি হতো না?”

“কোথায় লজ্জা দিলাম।আমিতো আমার বড়ো ভাইয়ের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিলাম।”

“এভাবে সবার সামনে!”

“ও তাহলে চিপায় গিয়ে পরিচিত হতে চাও?”

মধু ইরিনের হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল”অসভ্য তুমি।”

ইরিন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল”এই কমপ্লিমেন্ট টা ভাল্লাগছে।”

চা শেষ করে ইরিন একটা চকলেটের বক্স মধুর হাতে দিয়ে বলল”এটা ওই নতুন ছেলেটা এনেছে।নাও”

“আমিতো চকলেট খাই না।”

“তাহলে তোমার বোনকে দিও।তবুও নিতে হবে।”

ইরিনের জোরাজোরিতে মধুর নিতেই হলো।

তারপর মধু আর ইরিন পাঁচ দশমিনিট কথাবার্তা বলে মধু ওর নোট খাতাটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আর যাওয়ার আগে ইয়াদের দিকে একপলক তাকালো।মহাশয় বত্রিশ দাঁত বের করে কেলাচ্ছে।
—————-
মধু ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়িতে আসতেই নিশির দেখা পেলো।নিশি গম্ভীর কণ্ঠে বলল”ইয়াদ দের বাসায় গেছো কেনো?”

“তোমার এক্সকে চুম্মা দিতে।”

“মানে!” নিশি ভ্রু কুঁচকে বলল।

“দেখছো হাতে খাতা।তারপরেও জিগ্যেস করছো কেনো?”

“তোমাকে না বলছি ওকে আর ওর বোনকে এড়িয়ে চলতে।”

“তুমি বললেই আমি শুনবো কেনো!”

“তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমি কি করতে পারি।”

“যা করার করো তুমি।তবে তুমিও মনে রেখো।তোমার মায়ের কানে বিষ ঢালার মতো বিষও আমার কাছে আছে।অতএব যা করবে ভেবে চিন্তে করবে।”

“তুমি আমার মা’কে কি বলবে?”

“কিচ্ছু না শুধু তিনতলার ইয়াদ নামক একটা ছেলে তোমার এক্স এটাই বলবো।”

মধু এতটুকু বলে একটা বাঁকা হেসে ওপরে চলে গেলো।
আর নিশি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
—————-
বাসায় গিয়ে মধু দরজা বন্ধ করে পড়তে বসলো।পড়ায় মন বসছে না,সবকিছুতে বিতৃষ্ণা চলে এসেছে।জীবন ভালো লাগে না।মধু মাথায় হাত দিয়ে বসে হেড ডাউন করে রাখলো।জ্বর বোধহয় আবার আসছে।ক্ষুধাও লাগছে।সকালে নাস্তা খাবার পর আর খাওয়া হয় নি।মধু দরজা খুলে রান্না ঘরে গিয়ে খাবার খেয়ে আসার সময় আইরিন রহমানের ঘরে সামনে একটু কান খাড়া করতেই শুনতে পেলো।আইরিন রহমান কাকে যেনো বলছে”আপনারা কাল এসে দেখে যান।তাহলেই হবে।”

এতটুকু শুনেই মধু বুঝতে পারলো কোন বিষয়ে কথা হচ্ছে।মধু নিঃশব্দে সেখান থেকে নিজের ঘরে চলে গেলো।

চলবে……

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে