ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-৫৫ এবং শেষ পর্ব

5
3676

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ৫৫এবং শেষ
#Arshi_Ayat

রাত প্রায় একটা দশ…
ঢাকায় রাত আর দিন নেই সবসময়ই রাস্তায় গাড়ি থাকে।তবে দিনের তুলনায় রাতে জ্যাম কমই থাকে।আবার আজকে একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে।এখনো গুড়িগুড়ি পড়ছে।রাস্তাঘাট অন্যদিনের তুলনায় ফাঁকা।ইয়াদের গাড়ি মসৃণ গতিতে চলছে।ওর কাঁধে মাথা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে মধু।গাড়ির ভেতরে মিডিয়াম ভলিউমে রবীন্দ্রনাথ সঙ্গীত চলছে।এই গানটা দু’জনারই ভীষণ প্রিয়।

ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো– তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো– তোমার
চরণমঞ্জীরে॥
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি– তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥
মনে ক’রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী– তোমার
কনককঙ্কণে॥

গানের তালে তালে মধুও গুনগুন করছে।

অনেকদিন ধরেই অভি ইয়াদকে বারবার করে বলছিলো ওদের রেডিও স্টেশনে আসতে আর ওদের ভালোবাসার গল্প বলতে কিন্তু সারাদিনের ব্যাস্ততার পর আর যেতে ইচ্ছে করে না কারোই।আজ বৃহস্পতিবার ছিলো।আর শুক্রবারের অপর নাম বন্ধের দিন।বন্ধের দিন মানে সকালে অনেক্ক্ষণ ঘুমানো যাবে।তাই আজকে আর বন্ধু অভির আবদারটা ফেলতে পারলো না ইয়াদ।মধুকে নিয়ে রেডিও তে চলেই এলো তাদের গল্প বলতে।গল্প বলতে বলতে অন ইয়ারেই ওরা অনেক সময় হেসেছে,কেদেছে অবশেষে হাসিমুখে শেষ করেছে তাদের ভালোবাসার গল্প।অনুষ্ঠান শেষ করে রাত সাড়ে বারোটায় বাসার উদ্দেশ্যে ওরা রওনা দেয়।

ইয়াদ আদুরে গলায় বলল,’ঘুম পাচ্ছে মধু?’

‘না গো।প্রথম থেকে সবকিছু আজ যেনো আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে!দেখতে দেখতে সাতটা বছর কিভাবে তোমার সাথে পার করলাম টেরই পেলাম না।মনে হচ্ছে এই তো সেদিনই দেখা হলো আমাদের।’

ইয়াদ মধুর কথায় একটু হাসলো।তারপর বলল,’ভালোবাসা কখনো পুরোনো হয় না মধু।আমরা যখন বার্ধ্যকে উপনীত হবো তখনও মনে হবে আমরা নব যৌবনা প্রেমিক-প্রেমিকা।ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা কমে না বরং সময়ের সাথে সাথে বাড়ে তবে সেটা শুদ্ধ হতে হবে!’

মধু ঠোঁট প্রশস্ত করে একটুখানি হাসলো।

ওরা দেড়টায় বাসায় পৌঁছে গেলো।রুমে এসে মধু বলল,’তুমি ফ্রেশ হও।আমি আরিয়ানকে নিয়ে আসছি।’

এটা বলে মধু বের হতে নিলেই ইয়াদ হেঁচকা টানে মধুকে ঘুরিয়ে তার বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ করলো।মধু একটু লাজুক হাসলো।হাসি ধরে রেখেই বলল,’কি করছো?ছাড়ো না!আরিয়ান কে আনবো।’

ইয়াদ ফিসফিসিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,’থাক না আরিয়ান ওর দাদা দাদির কাছেই ঘুমাক।তুমি বরং আমার বুকেই থেকে যাও।’

মধু আপত্তি করলো না।আপত্তি করার ইচ্ছেও নেই।এটাই তো সুখের নীড়!এই নীড় ছেড়ে যাওয়ার কোনো স্পর্ধাই নেই মধুর।
———–
‘আপ্পা,আপ্পা,আপ্পা..’
ইয়াদের পিঠের ওপর কখনো শুয়ে অথবা কখনো বসে আধো আধো বুলিতে বাবাকে ডাকছে।আর ওর বাবা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।কিন্তু আরিয়ানের থামা থামি নেই।সে নিরলসভাবে বাবাকে ডাকছেই।

মধু রান্নাঘর থেকে ঘরে এসে বেডের সামনে দাড়িয়ে ইয়াদকে ডেকে বলল,’কেমন নিষ্ঠুর বাবা গো তুমি!ছেলেটা এতক্ষণ ধরে তোমাকে ডাকছে আর তুমি মরার মতো ঘুমাচ্ছে।এবার তো ওঠো।দশটা বাজে।’

মধুর ঝাঁঝালো গলা পেয়ে ইয়াদ চোখ খুললো।তারপর ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,’কয়টা বাজে বললে?’

‘দশটা বাজে মহাশয়।’

ইয়াদ আরিয়ানকে নিজের পিঠের ওপর থেকে নামিয়ে ওর নরম গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,’আমার বাবাটা।’

ছোট্টো আরিয়ান ওর ছোট্টো ছোট্টো দাত গুলো বের করে খিলখিলিয়ে হেসে বাবার গালেও চুমু দিলো।মধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে এই দৃশ্যটা প্রাণ ভরে দেখলো।প্রতিদিন সকালেই এরা এমন করে।আর প্রতিদিনই মধু এটা উপভোগ করে।এর চেয়ে স্নিগ্ধ আর কিছু হতে পারে না।

এবার বাপ ছেলেকে তাড়া দিয়ে মধু বলল,’বাপ,পোলা দুইটাই বান্দর।নামো এখন বিছানা থেকে।বিছানা ঝারতে হবে।’

আরিয়ানকে কোলে নিয়ে ইয়াদ বিছানা থেকে নামতে নামতে ন্যাকা স্বরে বলল,’দেখ,আরিয়ান তোর মা আমাদের বান্দর বলেছে।’

আরিয়ান কি বুঝলো কে জানে!তবে তার হাসা বন্ধ নেই।বাপের কথা শুনে আবার ও খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।ইয়াদ কৃত্রিম রাগের ভান করে বলল,’ধূর বেকুব তুই হাসছিস কেনো?’
বাপকে রাগতে দেখে আরিয়ান হাসি থামিয়ে ইয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে আবার চুমু দিলো।ইদানীং আরিয়ান এমনই করে যখনই ওর মনে হয় বাবা অথবা মা কারো মন খারাপ তখন তাদের গালে চুমু দেয়।ফলে যদি ওদের মন খারাপও থাকে তবুও অটোমেটিক মন ভালো হয়ে যায়।

আজকে শ্বাশুড়ি বউমা মিলে রান্না করছে।অনেক পদের আইটেম আছে আজ।অবশ্য এর একটা বিশেষ কারণও আছে আর তা হলো ইরিন ওর মেয়ে আর ওর জামাই আসবে।

রান্না শেষ হওয়ার আগ মুহুর্তে সাইদা খান মধুকে বলল,’তুই যা।গিয়ে গোসল করে নে।বাকিটা আমি দেখছি।’

‘না মা।তুমি যাও।গোসল করে নাও।আর অল্পই তো বাকি।আবার ওরাও চলে আসবে।’

‘আরে তোকে যেতে বলছি না!তুই যা না!আজ শুক্রবার ইয়াদ নামাজে যাবে।ওকে একটু ঠিকঠাক করে আতর দিয়ে দে।’

মধু মাংসটা নাড়তে নাড়তে বলল,’এহ!তোমার ছেলে মনে হয় ছোটো মানুষ।নিজেরটা নিজেই করতে পারবে।’

সাইদা খান হাসতে হাসতে বলল,’বিয়ের আগে ছেলেরা যা করতো সেগুলো সব ভুলে যায়।তোর শ্বশুরও তো…’

সাইদা খান কথা শেষ করতে না করতেই ইয়াফ খান গলা হাঁকিয়ে ডাক দিলেন।সাইদা খান স্বামীর গলা পেয়ে মধুকে একটু দেখতে বলে চলে গেলেন।শ্বাশুড়ি মা যাওয়ার পর মধুও মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো।সাইদা খানের সাথে মধুর সম্পর্কটা এখন মা মেয়ের চেয়ে কম না।তবে এসব একদিনেই হয় নি।মধু শ্বাশুড়ির মন একটু একটু করে জয় করে নিয়েছে।এখন সবকিছুতেই শ্বাশুড়ি ছোটো বউকে খোঁজে।এইদিনগুলো যেনো স্বপ্নের মতো!

সাইদা খান কিছুক্ষণের মাঝেই আবার চলে এলো।এবার উনি আসতে না আসতেই মধুর ডাক পড়লো।ওপরের ঘর থেকে ইয়াদ ডাকছে।এমন অবস্থায় বউ শ্বাশুড়ি দুজনেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।তারপর মধু চলে গেলো।

ইয়াদ,ইয়াফ খান নামাজে গেলো।আরিয়ানও যেতো কিন্তু সে একটু আগেই ঘুমিয়েছে।যদি সজাগ থাকতো তাহলে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যেতো।ওরা নামাজে যাওয়ার পর বউ শ্বাশুড়ি রান্নার কাজ শেষ করে গোসল গেলো।
——————
খাওয়ার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।ফাঁকে ফাকে মধু আর সাইদা খান সবাইকে সার্ভ করছে।আর ইরিন ওর মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে।আরিয়ান এখনো ঘুম থেকেই ওঠে নি।আর এখন ঘুম থেকে উঠালে ও কেঁদে কেটে বাড়ি মাথা তুলবে।এটা ওর জন্মগত স্বভাব!তাই ও ঘুমালে কেউ ওকে ডাকে না।

খাওয়া শেষে ইরিন ওর মেয়ে আর স্বামী ওদের ঘরে গেলো বিশ্রাম নিতে। মধু আর সাইদা খান সবকিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।ঘরে এসে দেখলো আরিয়ান আর ইয়াদ খেলছে।মধু গিয়ে হাত বাড়াতেই খেলা ছেড়ে মায়ের কোলে চলে এলো।ইয়াদ আরিয়ানের গাল টেনে বলল,’যাও বাবা খেয়ে আসো।তারপর আবার খেলবো।’

মধু আরিয়ানকে খাওয়াতে নিয়ে গেলো।আরিয়ানকে খাইয়ে আবার ঘরে আসলো।তারপর ওকে ইয়াদের কোলে দিয়ে বলল,’তোমরা থাকো আমি একটু বনানী যাবো।’

‘আমরা আসি!’ইয়াদ অনুরোধ করলো।

‘আসবে?আচ্ছা আসো।’
মধু,ইয়াদ আর আরিয়ান বেরিয়ে গেলো।বনানী গোরস্তানের সামনে ইয়াদ গাড়ি থামালো।মধু আরিয়ানকে ইয়াদের কোলে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেট দিয়ে গোরস্তানের ভেতরে প্রবেশ করলো।পেছনে পেছনে ইয়াদ আর আরিয়ানও আসছে।মধু পেছনের সারির কোণার একটা কবরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।কবরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।কবর কথা বলে না!প্রতিবারের মতো এবার মধু তার কান্না ধরে রাখতে অপারগ হলো।ঠোঁট কামড়ে ধরেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো।কান্না জড়ানো কন্ঠে অনেক কিছুই বলতে লাগলো।কিন্তু সেগুলো বোঝা যাচ্ছে না।ওর থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে ইয়াদ।ওর চোখেও পানি।কিন্তু সেটা চোখের কোটরেই সীমাবদ্ধ!মধুর মতো কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে না।ছোট্ট আরিয়ান একবার বাবার দিকে একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।তার মা বাবা কাদছে কেনো?

তবে কেউ না বুঝলেও ইয়াদ বোঝে মধুর কান্না মিশ্রিত শব্দ।মাঝেমধ্যে মনে হলেই ও ছুটে আসে এখানে।ইচ্ছেমতো কাঁদে এখন যেমন কাদছে!

ইয়াদের মনে পড়ে যায় দেড় বছর আগের এক রাতের কথা।ওইদিন রাত ১১ টার সময় ইয়াদ আর মধু দুজনেই শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।হঠাৎ মধুর ফোনে কল আসে।কলটা ছিলো আরিয়ার বরের।মধু চিন্তিত মুখে রিসিভ করতেই আরিয়ার বর কাপা কাপা গলায় বলল,’আপু আরিয়া হাসপাতালে।আপনি একটু আসবেন?ও বারবার আপনার নাম নিচ্ছে।’

মধু ঘাবড়ে গিয়ে জিগ্যেস করলো,’কি হয়েছে ভাইয়া?’

‘ওর আজকে ডেলিভারি।’

‘ওর ডেলিভারি ডেট তো আরো পরে ছিলো।’

‘হ্যাঁ আপু কিন্তু আজকেই লেবার পেইন ওঠে।আর আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।ডাক্তার বলেছেন এখনি সিজার করতে হবে।আপনি একটু আসুন না।’

‘আচ্ছা,আচ্ছা ভাইয়া আমি আসছি।আপনি সাহস রাখুন।ওর পাশে থাকুন।’

মধু ফোন রেখে ইয়াদকে সবটা বলল।ওরা আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো।

অনার্স শেষ করেই আরিয়া বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করে ফেলে আর বিয়ের পরেই কন্সিভ করে।এই বাচ্চাটা নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস ছিলো আরিয়ার ও বারবার মধুকে বলতো।আমার প্রথম বাচ্চাটা আমি তোকে দিয়ে দেবো।মধুও হাসতো।

হাসপাতালে পৌঁছুতেই জানতে পারে ওকে ওটি তে নেওয়া হয়েছে।সবাই বাইরে বসে চিন্তিত মুখে অপেক্ষা করছে।আরিয়ার স্বামী শ্রাবণ চিন্তায় ছটফট করছিলো ইয়াদ ওকে ভরসা দিচ্ছিলো।অপারেশন শেষ হতেই ডাক্তার বেরিয়ে এলেন।সবাই মিলে তাকে ঘিরে ধরলো।ডাক্তার বললেন,’রোগীর কন্ডিশন ভালো না।আপনারা দেখা করে আসুন।আর বাচ্চা ভালো আছে।’

নার্স বাচ্চাকে শ্রাবণের হাতে তুলে দিলো।মধুর সেদিকে কোনো খেয়াল সে দ্রুত আরিয়ার কাছে চলে গেলো।আরিয়া ক্লান্ত চোখে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,’আমার প্রথম বাচ্চা তোকে দিবো বলেছিলাম মনে আছে?আমার বাচ্চাটা তোকে দিয়ে যাচ্ছি।ওর নাম আরিয়ান রাখবি!আজ থেকে ওর মা তুই।ওকে আগলে রাখিস।’

মধু আরিয়ার মুখে হাত দিয়ে বলল,’আর কিছু বলিস না।চুপ কর।’

আরিয়ার মধুর হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,’ আমায় বলতে দে বোন।আজই তো শেষবারের মতো কথা বলবো।’

মধু কাঁদতে কাঁদতে বলল,’তোর কিচ্ছু হবে না।শান্ত হ!’

আরিয়া কিছু বলতে নিলেই ওর শ্বাসকষ্ট উঠে যায়।পালস নিচে নামতে থাকে।এই অবস্থা দেখে মধু জোরে জোরে ইয়াদকে ডাকতে থাকে।মধুর গলা পেয়ে ইয়াদ,শ্রাবণ,আরিয়ার বাবা মা,শ্বশুর শ্বাশুড়ি সবাই এসেছেন।শ্রাবণ আরিয়ার কাছে যেতে আরিয়া ওর হাত শক্ত করে ধরলো।কিন্তু কিছু বলতে চেয়েও পারলো।প্রাণপাখি খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।পরিবেশটা কান্না মুখর হয়ে গেলো।মধু ইয়াদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।শ্রাবণ কাঁদছে আরিয়ার গলা জড়িয়ে। সেই একটা রাত অনেক কিছু পাল্টে দেয়।কিছু পূর্ণতা অপূর্ণতার হিসেব লেখে।কিছু দিয়ে যায় কিছু নিয়ে যায়।তারপর আরিয়াকে বনানী কবর দেওয়া হয়।আর ওর কথা মতো ওর বাচ্চাটাকে শ্রাবণ মধুকে দিয়ে দেয় তবে ও এখনো বিয়ে করে নি।ছেলেটা বড্ড ভালোবাসে আরিয়াকে কিন্তু বাবা মায়ের জোরে একটা বিয়ে করতেই হবে।কয়দিন বাদেই ওর বিয়ে।বিয়েতে মধু ইয়াদও নিমন্ত্রণ পেয়েছে।

মাগরীবের আজানের পর মধু নিজের মায়ের সাথে কথা বলছে।আইরিন রহমান এখন নিজের বাবার বাড়ি আছে।কখনো মধুর কাছে থাকে আবার কখনো ভাইদের কাছে চলে যায়।আর মিলি স্কলারশিপ পেয়ে ডাক্তারি পড়াশোনার জন্য আমেরিকা চলে গেছে।
————–
কিছুদিন পরের কথা…
দিনকাল সবারই বেশ ভালোই যাচ্ছে।ইয়াদের সাথেও ইফাজের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে।ওরা কালই দেশে ফিরবে।তবে বেশিদিন থাকবে না।ওরা বছরে দুইবার আসে দেশে।
ওদের আসা নিয়ে বাড়ির সবার মধ্যেই উচ্ছ্বাস!ওদেরকে এয়ারপোর্টে নিতে যাবে ইয়াদ।

নির্দিষ্টি টাইমে ইয়াদ অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।একটু পরেই ওদের দেখা গেলো।কাছাকাছি এসেই দুইভাই কোলাকুলি করলো।তারপর কুশল বিনিময় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতেই ইফাজ দেখলো এয়ারপোর্টের বাইরে সারিবদ্ধ ভিক্ষুকদের দিকে।সারির মাঝে একজনকে চেনাচেনা লাগছে।ভালো করে তাকাতেই ইফাজ চিনে ফেললো।একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ওদের এগিয়ে যেতে বলে ওই ভিক্ষুকটার মুখোমুখি এসে বসলো।ভিক্ষুকটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।পরনে একটা ছেড়া লুঙ্গি।গায়ে কাপড় নেই।সারা শরীর রোদে পোড়া আর মুখটা এসিডে!ইফাজ ওর কানে কানে বলল,’কেমন আছিস নিখিল?’

এই কথাটা কানে যেতেই নিখিল ছুটফট করে উঠলো।আবারও সেদিন রাতের মতো কাকুতি মিনতি করতে লাগলো।ইফাজ হাসলো।তারপর আবারও কানে কানে বলল,’না নিখিল তোর পাপের প্রায়শ্চিত্ত এখনো হয় নি।তোর গোটা জীবন দিয়ে তুই ভুগবি।কেউ আসবে না তোর কাছে! কেউ না!

এটা বলেই উঠে যেতে নিলেই কাটা হাত দিয়ে নিখিল ইফাজের পা চেপে ধরতে চাইলে কিন্তু পারলো না।ইফাজ চলে গেলো।আর নিখিল তার জায়গায় বসে মৃত্যু প্রার্থনা করতে লাগলো।

বাসায় আসার পর সর্বপ্রথম না চাইতেও মধুর দিকেই চোখ চলে গেলো ইফাজের।শুধু এক পলক দেখেই চোখ নামিয়ে ফেললো।আর মুচকি হেসে মনে মনে বলল

‘ডুবে ডুবে ভালোবাসি,তুমি না বাসলেও আমি বাসি।’

সমাপ্ত.

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

লেখকের কিছু কথাঃ এই গল্পটা আমার প্রিয় গল্পটার মধ্যে একটি।এটার জন্য আমি অনেকের সাথে পরিচিত হয়েছে। অনেক পাঠকের ভালোবাসা পেয়েছি।আবার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীনও হয়েছি।অনেকবার গল্পটা কপি হয়েছে।আমি বারবার বারণ করার পরও।যাক সেসব কথা।এবার পাঠকদের প্রশ্নের কিছু উত্তর দেই।#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি গল্পটার নাম মূলত ইফাজের জন্যই দেওয়া হয়েছে।সে মধুকে একতরফা ভালোবাসে।আর এক তরফা ভালোবাসার কোনো পরিণতি নেই।এটা প্রকাশও পায় না।সেই জন্য যারা বলছেন ইফাজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে তাদের বলছি যদি প্রকাশ করারই হতো তবে গল্পের নাম ডুবে ডুবে ভালোবাসি হতো না।তারপর আসি নিহার কাছে।অনেকে বলছেন ইফাজ নিহাকে ঠকিয়েছে তাদের বলছি গল্পটা আরেকবার পড়বেন ইফাজ কিন্তু নিহাকে বিয়ে বাড়িতে রেখে আসতে চেয়েছিলো ইভেন বিয়ের পরেও বলেছিলো চাইলে ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতে পারে কিন্তু নিহা যায় নি।সে সেচ্ছায় থেকেছে।তাহলে ইফাজকেও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না।তবে সে স্বামীর দায়িত্ব পুরোপুরি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে।তারপর আরেকটা প্রশ্ন হলো নিখিল বোধহয় কিছু বলতে চেয়েছিলো।না ভাই ও কোনো রহস্যের কথা বলার জন্য সেদিন ছটফট করে নি।ওকে ইফাজ ওই অবস্থায় রেখে আসছিলো বলে ও যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো এবং বলতে চাইছিলো ওকে যেনো মাফ করে দেয় সাথে করে নিয়ে যায়।বুঝলেন?
আরেকটা কথা কেউ এই গল্পের সিজন ০২ চাইবেন না।প্লিজ!)

5 মন্তব্য

  1. Seriously api onek valo likhecho.golpo ta je ifaj ke niye seta Ami bujhte perechi. Asole true love amoni hoy. Kintu Ami Allah r kache pray kori jeno amon ak torofa valo keu jeno kauke na base. Sobai jeno sobar moner moto manus peye jay. r sobai jeno valo thake. Thank you so much for the story.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে