#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat
হাতে টান পড়ায় মধু ঘুরে দাড়ালো।ইয়াদ মধুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”সরি,আসলে আমি ভেবেছিলাম…… যাইহোক বাদ দাও।তোমার ভবিষ্যৎ লক্ষ কি?মানে কি হতে চাও?”
“অনেক অনেক অনেক টাকা উপার্জন করতে চাই।”
“কেনো?এতো টাকার প্রয়োজন কেনো?”
“কি বলেন!টাকা থাকলে সবকিছু আপনার।টাকা থাকলে মানুষের ব্যাবহার বদলায় মোটকথা মানুষটাই বদলায়।প্রিয়মানুষ গুলোকে হারানোর ভয় থাকে না।সবার প্রিয় হওয়া যায়।কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না।”
মধুর কথা শুনে ইয়াদ মধুর চোখের দিকে তাকালো।ওর চোখজোড়ায় কষ্ট স্পষ্ট।কিন্তু এতো ছোটো বয়সে এতো কষ্ট কিসের!ইয়াদের কৌতুহল হলো।কিন্তু এখন কিছু জিগ্যেস করলে মেয়েটা কিছুই বলবে না।আগে ফ্রী হই তারপর হয়তো বলতে পারে।তাই ইয়াদ বলল”তোমার নামটা জানা হলো না।”
“তয়ত্রি রহমান মধু।” মধু সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।
“ওহ!নামটা ইউনিক!”
মধু দুই ঠোঁট মিলিয়ে হেসে বলল”ধন্যবাদ।আপনার নামতো ইয়াদ!তাই না?”
“আবরাহাম খান ইয়াদ।”
ইয়াদ কথা শেষ করতেই ইরিনা চলে এলো।ইরিনা এসে মধুর পাশে দাড়িয়ে বলল”হেই মধু,আমার ভাইয়ের সাথে কি কথা বলছো?”
“তোর জানতে হবে না।তুই নিচে যা।” ইয়াদ বিরক্ত কন্ঠে বলল।
“হ্যাঁ যাবো তো।মধুও যাবে আমার সাথে।চলো তো মধু।”
“কেনো ও যাবে কেন?তোর মতো পেত্নীর সাথে ও যাবে না।”
ইয়াদের কথা শুনে ইরিন বলল”আচ্ছা,ওকে মধুই বলুক ও কি এখানে থাকবে নাকি আমার সাথে যাবে।”
মধু দাঁত বের করে হেসে বলল”ইরিনা আমার বান্ধবী তাই আমি ওর সাথেই যাবো।”
“কিন্তু আমি তো তোমার বান্ধবীর ভাই।” ইয়াদ অসহায় মুখ করে বলল।
ইরিন বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলল”তুমি চুপ করো।ও আমার সাথেই যাবে।”এটা বলে মুখ বাঁকা করে মধুর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।ইয়াদ ওদের সাথে ঘরে গেলো।ইরিন মধুকে নিজের ঘরে বসিয়ে খাবার নিয়ে এলো।খাবার দেখে মধু বলল”এগুলো আনলে কেনো?আমিতো খেয়ে এসেছি।”
“খেলে আবার খাবে।কোনো কথা চলবে না।”
মধু আর কি করবে।ইরিনের জোরাজোরিতে খেতে বাধ্য আর পেটে খুদাও ছিলো।খাওয়া শেষ করে ইরিন আর মধু বকবক করছিলো।ইয়াদ পাশের রুমে বসে ওদের হাসির শব্দ শুনছিলো।একটু আগে উঁকি দিয়ে দেখেও এসেছিলো।মেয়েটাকে কিছুক্ষণ আগে কি গম্ভীর দেখাচ্ছিলো কিন্তু এখন হাসছে।মেয়েটাকে হাসিতেই মানায়।হাসলে খুব নিখুঁত ভাবে দুটো গালে টোল পড়ে।ইয়াদের মন চায় গাল দুটো টেনে দিতে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মধু বিদায় নিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে এলো।এতটুকু সময়ে মোটামুটি দুজনই দুজনের সাথে সহজ হয়েছে।ইরিন একটু বেশিই কথা বলে।তাই পুরোটা সময় মুখ এক সেকেন্ডও বন্ধ ছিলো না।যাইহোক মন খারাপটা কিছুটা হলেও কমেছে।কিন্তু ঘরে গিয়ে আবার মুখ ভার করে আইরিন রহমানের সামনে দিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।
রাত আট’টা।মধু সেই যে দরজা বন্ধ করেছে এখনো খোলে নি।দরজা বন্ধ করে পড়ছে।হঠাৎ দরজায় কেউ নক করলো।মধু দরজা খুলতেই দেখলো নিশি দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখ করে।নিশিকে দেখে মধু মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলল”আরে নিশি আপু!আসো ভেতরে এসে বসো।”
নিশি এসে মধুর খাটে বসলো।মধু বলল”তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা আনছি।”
নিশি মধুর হাত ধরে আটকে দিয়ে বলল”চা লাগবে না।তুমি আমার পাশে একটু বসো।তোমার সাথে কথা আছে।আর দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আসো।”
মধু মনে কৌতুহল রেখে দরজা চাপিয়ে নিশির পাশে গিয়ে বসলো।নিশি মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”তিনতলায় নতুন আসছে যে একটা ছেলে ইয়াদ নাম ওকে চেনো?”
“হ্যাঁ।কথা হয়েছে হালকা।”
“ওহ!শোনো ওর আর ওর বোনের সাথে কথা বলবে না।ওদের দেখলে এড়িয়ে চলবে।”
“কেনো আপু?”
“কৈফিয়ত দিবো না আমি তোমাকে।যেটা বললাম সেটা করবা।আর যদি না করো তোমার আম্মুকে তো চিনো তাই না?আন্টিকে একবার বললে সে তোমার কি করবে জানো তো!নাকি মনে করিয়ে দিবো।”
মধু নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ কালো করে রইলো।কারণ মধু জানে ওর মা জানলে বাড়ি থেকেই বের করে দিবে।গত রোজায় একটা ঘটনা এখনো মনে পড়ে মধুর।সারাদিন রোজা রেখে মাথাটা ঘুরাচ্ছিলো।ওর ক্লাসমেট রাদিত আর রিহা ওকে দিয়ে গিয়েছিলো।মধু ওদের বাসায় এনে বসায়।তখন ওদের সামনে আইরিন রহমান কিছু না বললেও ইফতারির পর মধুকে অনেক মেরেছিলো শরীরে দাগ বসে গেছিলো।ওই মারের চোটে মধুর তিনদিন ভয়ানক জ্বর আসে।তিনদিন রোজাও রাখতে পারে নি।তারপর মধুর মা কড়া করে বলে দিয়েছিলো যেনো কোনো ছেলে বন্ধু না থাকে।আর যদি কখনো কোনো সম্পর্কে জড়ায় তাহলে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।মধু ওই ঘটনার পর থেকে ছেলেদের সাথে কম কথা বলে।আর বাসায় আনা তো দূরের কথা।আর এখন যদি নিশি ওর মায়ের কাছে ইয়াদকে নিয়ে কিছু বলে তাহলে মনে হয় এখানে আর থাকাই হবে না।
মধু কিছু বলছে না দেখে নিশি বলল
“কি ভাবছো!শোনো কিছু ভেবে লাভ নাই।পস্তাবে।”
এটা বলে নিশি উঠে দাড়ালো।দরজার কাছে গিয়ে বলল”মনে থাকে যেনো আমার কথা।নাহলে…..
এটা বলে নিশি আর না দাড়িয়ে চলে গেলো।মধুর আবার মন খারাপ হলো।চারদিকে শুধু দুঃখ আর দুঃখ।মধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পড়তে বসলো।রাত দশটার দিকে মিলি খাবার দিয়ে গেলো ঘরে।মধু চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
——————
শরতের নীল আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।চারপাশে হালকা বাতাশ।রোদের তাপও আছে।তবুও বাতাসটা শরীরে শিহরণ জাগায়।মধু বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।আজ কলেজে যাবে না।একটু আগে মিলি আর আইরিন রহমান মুন্সিগঞ্জ চলে গেছেন।নানী নাকি অসুস্থ।আই মধুকে বাসায় রেখে গেছে।মধুও তাই চেয়েছিলো।নানীর সাথে সম্পর্ক খারাপ না হলেও ওই বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে না মধুর।তার অবশ্য একটা কারণও আছে।ওই বাড়িতে গেলে কয়েকটা মহিলা সব সময় মধুর বিয়ের কথা বলে নানারকম কথা বলে মায়ের মাথা ভরিয়ে ফেলে।মধুর প্রচন্ড বিরক্ত লাগে।এদের কি খেয়েদেয়ে কাহ নেই!কারো বিয়ে নাহলে কি এরা মরে যাবে?নাকি নিজের জামাই দিয়ে দিবে।যত্তসব!সেইজন্যই মধু নানীর বাড়ি যায় না।
বারান্দা থেকে ভেতরে এসে বসলো মধু।দুই তিনদিন কলেজে যাওয়া লাগবে না।ভেবেই শান্তি লাগছে।দুপুরের জন্য আইরিন রহমান রান্না করে গেছেন।আর রাতে নিজের রান্না করতে হবে।খুব বেশি ভালো রাঁধতে না পারলেও খাওয়া যায় এতটুকু মধু রাঁধতে পারে তাই তেমন কোনো চিন্তা নাই।মধু সোফায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে টিভি ছাড়তেই সামনে একটা মুভি পড়লে ‘গোলমাল’।মধু বসে গেলো মুভিটা দেখতে।মুভি শেষ হলো বারোটায়।মুভিটা দেখে অনেক হেসেছে মধু।এখন টিভি বন্ধ করে জামা কাপড় নিতে গেলো।গোসল করতে হবে।কিন্তু এই জামাটর ওড়না পাওয়া যাচ্ছে না।হঠাৎ মনে পড়লো দুদিন আগে এই জামা টাই ধুয়ে ছাঁদে দিয়েছিলো।কিন্তু ওড়না মেলার জায়গা ছিলো না তাই মধু একটা শার্টের ওপর মেলেছিলো।কিন্তু জামা কাপড়গুলো তো সেদিন ও আনে নি।ওর মা এনেছিলো।ওড়নাটা কি এনেছিলো!মধু চিন্তায় পড়ে গেলো।তন্ন তন্ন করে পুরে ওয়ারড্রব খুঁজলো কিন্তু না ওড়না তো দূর থাকে ওড়নার সুতাও খুঁজে পেলো না।তারমানে ওড়নাটা আনা হয় নি।এখন ওড়না ছাড়া কিভাবে পরবে এটা!আর ওড়নাটা নিয়েছে কে!কেউ যদি চুরিও করতো তাহলে জামা কাপড় বাদ দিয়ে ওড়না নিলো কেনো?হয়তো কারো কাপড়ের সাথে চলে গেছে।কি আর করার।ওই জামাটার সাথে অন্য একটা ওড়না নিলো মধু।
.
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে জব্বর ঘুম দিলো মধু।বিকেলে উঠে চা-বিস্কুট খেয়ে বাইরে বের হলো ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না।সামনে একটা পুকুর আছে।মধু ওই পুকুরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।
“মধু….” হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ ডাকতেই মধু পিছনে তাকালো।ইয়াদ আসছে।মধুর মুখে মৃদু একটা হাসির ঝলক দেখা গেলো।কিন্তু ইয়াদের পিছনে নিশিকে দেখে হাসিটা মিলিয়ে গেলো।মধু ওইখান থেকে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো।মধুর এমন কান্ডে ইয়াদ বিস্মিত!আর নিশির মুখে বাঁকা হাসি!
ইয়াদ মধুর পিছনে পিছনে হাঁটতে হাঁটতে ওকে বারবার ডাকছে।আর মধু পিছনে না তাকিয়ে জোরেজোরে হাটছে।ইয়াদ কিছুক্ষণের মধ্যে মধুর পাশাপাশি চলে এলো।যখনই মধুর হাত ধরতে যাবে তখনই নিশি এসে মধুর হাত ধরে বলল”আরে মধু হাঁটতে বের হলে নাকি!”
ইয়াদ আর মধু দুজনেই চমকে গেলো।মধু নিজেকে সামলে বলল”জ্বি আপু।”
“ওহ!চলো আমরা একসাথে হাটি।”
“চলো।”
মধু আর নিশি একসাথে অন্যদিকে হাঁটতে লাগলো।
চলবে…..
#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat
ইয়াদের কাছ থেকে যখন অনেকটা দূরে চলে আসলো নিশি আর মধু তখন নিশি মধুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”শোনো ও যদি তোমার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে ওর সাথে মিসবিহেভ করবা।এমন ভাব করবা ওকে তোমার সহ্য হয় না।”
মধু নিশির কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়ালো।নিশি আবার বলল”এবার ঘরে যাও।”
মধু সোজা বাড়ির দিকে রওনা দিলো।আর মনে মনে বলল’এমন ছ্যাচড়ামি করার মানে হয়!এমন ভাব করছে মনে হয় ওর বয়ফ্রেন্ডকে আমি চুরি করে নিয়ে যাবো।শুধু আম্মুর জন্য ওকে আমি কিছুই করতে পারবো না।তা নাহলে আমার ওপর হুকুম ফলানো বের করতাম।মধু রাগে গজগহ করতে করতে হাঁটতে লাগলো।
—————
মধুকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিশি ইয়াদের কাছে যেতে লাগলো।ইয়াদ নিশিকে নিজের দিকে আসতে দেখে অন্যদিকে হাটা শুরু করলো।নিশি দ্রুত হেটে ইয়াদের পাশাপাশি এসে বলল”দাড়াও,কথা আছে।”
“আমার তোমার কথা শোনার সময় নেই।”
“শুনতে হবে তোমাকে।” এটা বলে নিশি ইয়াদের হাত ধরে ফেললো।ইয়াদ নিশির হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দিলো।তারপর রেগে দাঁত কটমট করে বলল”আমার হাত ধরার সাহস কোথাও পাও তুমি?তোমাকে না বললাম আমাকে বিরক্ত করতে না।”
“আচ্ছা আমাকে আরেকবার মাফ করা যায় না?”
“না,তোমাকে এবার মাফ করলে নিজেকেই নিজে মাফ করতে পারবো না।এর আগেও দু’বার মাফ করেছি তোমাকে।আর না।”
নিশি দুইমিনিট চুপ করে রইলো।তারপর বলল”মধুকে পছন্দ করো?”
“আমি তোমার মতো না যাকে দেখবো তাকেই লাগবে।এতো সহজে কাউকে ভালোবাসাও যায় না আবার ভোলাও যায় না।”
এটা বলে ইয়াদ চলে গেলো।নিশি ইয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
——————
দিনের বেলা বাসায় একা থকা যায় কিন্তু রাত হলে সব আজব আজব জিনিস মনে পড়ে।মনে হয় বাসায় আরো কেউ আছে।তেমনই অবস্থা মধুরও।সারাদিন খুব সুন্দর করে কাটালেও সন্ধ্যা থেকে ভয় করছে।তাই দরজা জানালা সব বন্ধ করে বসে আছে মধু।হঠাৎ দরজায় নক করলো কেউ একজন মধু লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো ইরিন দাঁড়িয়ে আছে।মধু দরজা খুলতেই ইরিন বলল”কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ তুমি?”
“ভালো আছি।তুমি মনে হয় বাসায় একা তাই না?”
“হুম,আম্মু নানু বাসায় গেছেন।”
“ওহ!”
ইরিন হাতে থাকা ওড়নাটা মধুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল”এটা তোমার না?”
মধু ওড়নাটার দিকে এক পলক চেয়ে বলল”হ্যাঁ এটা আমার।”
ইরিন মধুর হাতে ওড়নাটা দিয়ে বলল”এই ওড়নাটা নিয়ে বাসায় যুদ্ধ হইছে জানো!ইয়াদ ভাইয়া গোসল করতে যাওয়ার সময় শার্ট বের করতেই ওড়নার সুতা শার্টের বোতামে আটকে ছিলো।ভাইয়া তো রাগ ওড়না দেখে তারপর আমাকে ডেকে জিগ্যেস করলো এটা আমার কি না!আমি দেখেই বললাম এটা আমার না।এটা আম্মুরও না।এবার আমি আর আম্মু ভাইয়ার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালাম।পরে ভাইয়া অসহায় মুখ করে আম্মুকে বলল”’আম্মু বিশ্বাস করো আমার সাথে কারো সম্পর্ক নেই।এটা কিভাবে আমি জানি না।”‘
ইরিন হাসতে হাসতে আবার বলল”তখন ভাইয়ার চেহারাটা দেখারা মতো ছিলো!!
ইরিনের কথায় মধুও হাসলো।তারপর আরো দু একটা কথা বলে ইরিন চলে গেলো।মধুও দরজা বন্ধ করে দিলো।
—————–
রাত বারোটা।মধুর এক চিলতে ঘুমও আসছে না।প্রতিদিন দশটা বাজলেই ঘুমে চোখ ঢুলতো কিন্তু আজকে ঘুমের বালাইও নেই।সেটার কারণও আছে।মধু নিজের ঘরের লাইট বন্ধ করে নি।লাইট বন্ধ করলেই মনে হয় কেউ ওর পাশে শুয়ে আছে।এই ওভার থিংকিং এর জন্য একটুও ঘুম আসছে না মধুর।
দীর্ঘসময় এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় মধুর ঘুম চলে এলো।
——————-
সূর্য এখনো ওঠে নি কিন্তু অন্ধকার সরে গিয়ে আকাশ পরিস্কার হয়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য উঠবে।আজ মধুর অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে।দেরিতে ঘুমিয়েও তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে দেখে মধু নামাজ পড়ে হিজাব পরে বেরিয়ে পড়লো।সকালে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে মধুর কিন্তু ইদানীং ঘুম থেকে উঠতে পারে না বলে যেতেও পারে না তবে আগে প্রতিদিন নিয়ম করে যেতো।
মধু হাঁটতে হাটতে পুকুর পাড়ে চলে এলো।জায়গা সুন্দর!পুকুরটা চারদিকে বাঁধাই করা।আশেপাশে গাছাপালা পরিবেশটা মোহনীয় করে তুলেছে।পুকুরপাড়ের রাস্তাটা ঢালাই করা।প্রতিদিন সকালে বিকেলে অনেকেই এখানে হাটেন।মধু বাঁধাই করা ঘাটে গিয়ে বসলো।তারপর সেলোয়ারটা হালকা উঠিয়ে পা ডুবালো।শীতল পনির শিহরণ যেনো মধুর সারা শরীরের ছড়িয়ে পড়ছে।একটুপর কেউ একজন পিছন থেকে ডাকলো মনে হলো।মধু বসা থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে জগিং স্যুট পরে।ইয়াদকে দেখে মধু কিছু না বলে আবার সামনের দিকে ঘুরলো।ইয়াদ মধুর একটু কাছে এসে বলল”উঠে আসো।কথা আছে।”
মধু উঠলো না।ইয়াদের বিরক্ত লাগছে।ইয়াদ আবার বলল”ওঠো বলছি!না আসলে কিন্তু ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিবো।”
ইয়াদের কথায় এবার মধুর টনক নড়ে।পা দুটো উঠিয়ে ঘাট থেকে উপরে চলে আসে।তারপর বলে”কি বলবেন বলুন।”
“সমস্যা কি তোমার।এমন করছো কেনো?কালকে ডাকলাম উত্তর দিলে না।এড়িয়ে চলে গেলে।এখনও তাই করলে!এনি থিং রং?
” আপনার সাথে কথা বললে আমার ঘরে অশান্তি লাগবে।”মধু সরাসরি বলে দিলো।এতো নাটক ভালো লাগে না।
“মানে!কি অশান্তি?”
“আপনার এক্স নিশি আপু আমাকে বলেছে আপনার সাথে কথা বলতে না।বললে আমার আম্মুকে বলে দিবে।আর আম্মুকে বললে আমি মার খাবো।তার চেয়ে কথা না বলাই ভালো।”
“ওও….আচ্ছা এইজন্যই কাল নিশি ওমন করলো।আচ্ছা তোমাকে একটা বুদ্ধি দেই তাহলে ও কিছু করতে পারবে না।”
“কি বুদ্ধি?”
“তুমি এরপর আমার সাথে কথা বলবে ওর সামনেই পরে ও কিছু বললে বলবে আমিও তোমার নামে অনেক কিছু জানি।তোমার আম্মুকে বললে সেটা কেমন লাগবে।”
“ওর নামে তো আমি কিছুই জানি না।” মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।
“জানা লাগবে না।শুধু এতটুকু বললেই হবে।”
“আচ্ছা ভাইয়া।” এটা বলার পর মধু খেয়াল হলো ‘ভাইয়া’ মনের ভূলে ডেকে ফেলেছে।ক্রাশকে কেউ ভাইয়া ডাকে না কি!আর এদিকে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল”তুমি ভাইয়া বললে কেনো?”
“তো কি বলবো?”
“কিছু বলা লাগবে না তবু ভাইয়া বলবে না।”
“কেনো?”
“সুন্দরী মেয়েরা ভাইয়া বললে কষ্ট লাগে।”
ইয়াদের কথা শুনে মধু মিটমিটিয়ে হাসলো।ইয়াদ নিজেও মুচকি হেসে বলল”বাসায় যাবে নাকি আমার সাথে দৌড়াবে?”
“নাহ!আপনিই দৌড়ান।আমি এমনিতেই চিকনা দৌড়ালেতো বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।”
ইয়াদ হেসে বলল”আচ্ছা যাও।”
মধু বাসার দিকে রওনা দিলো।আর ইয়াদ দৌড় শুরু করলো।
——————
সারাদিন পড়াশোনা ঘরের কাজ আর রান্নাবান্না করেই সময় শেষ মধুর বাইরে যাওয়ার সময়ই পায় নি।দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।বিকেলে উঠতেই দেখলো আকাশ কালে হয়ে আছে বাইরে প্রচুর বাতাস!মধু তাড়াতাড়ি দরজা জানালা বন্ধ করে ছাঁদে গেলো।কয়েকটা কাপড় শুকোতে দিয়েছিলো।আল্লাহই জানে আছে কি না!নাকি সব উড়িয়ে নিয়ে গেছে।ছাঁদে গিয়ে দেখলো না আছে কিন্তু বাতাসে কাপড়গুলো পতাকার মতো উড়ছে।মধু কাপড়গুলো নিয়ে চলে আসতে নিলেই হঠাৎ বালুর মতো কিছু একটা চোখের মধ্যে পড়তেই মধু চোখ বন্ধ করে ফেললো।চোখে অনেক জ্বালা করছে।চোখ খুলতেই পারছে না।এদিকে ইয়াদ ছাঁদে উঠতেই দেখলো বাতাসের মধ্যে মধু দাড়িয়ে আছে চোখে হাত দিয়ে।ইয়াদ ওর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল”এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
“চোখে কিছু একটা পড়েছে।চোখ জ্বালা করছে,কচকচ করছে।”
ইয়াদ মধুর হাতটা সরিয়ে চোখটা আলতো করে খুলে দেখতে লাগলো কিছু পড়েছে কি না!কিন্তু নাহ!কিছুই দেখতে পারছে না।ইয়াদ মধুর চোখে কয়েকবার ফু দিয়ে বলল”এখনও কি খারাপ লাগছে?”
মেহের বলল”না এখন ঠিক আছি তবে হালকা কচকচ করছে।”
“বাসায় গিয়ে মুখে পানি দিয়ে দিও।”
“আচ্ছা।”
মধু আর ইয়াদ দুজনেই নিচে নেমে এলো।মধু নিজের ঘরে চলে গেলো আর ইয়াদ নিচে নেমে গেলো।
—————–
বাইরে ভয়ংকর ঝড় হচ্ছে।বাসায় কারেন্ট নেই।পুরো অন্ধকারের মধ্যে জড়সড় হয়ে বসে আছে মধু।হঠাৎ দরজায় কেউ ধাক্কা দিলো।একবার ধাক্কা দিয়েই থেমে গেলো।মধু ভয়ে আরো সিটিয়ে গেলো।কারণ ও শুনেছে একবার দরজায় নক করে নাকি ভূতেরা।তারপর আবার তিন/চার বার নক করতেই মধু গুটিগুটি পায়ে দরজা খুললো।খুলতেই দেখলো ইরিন দাড়িয়ে আছে।ওর হাতে মোম।হাতের মোমটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল”একি অন্ধকারে বসে আছো কেনো?নাও এটা ধরো।আর আমাকে তোমার পদার্থবিজ্ঞান নোট খাতাটা দাও।কালকে আমার ক্লাস টেস্ট।”
মধু মোমবাতি দিয়ে খুঁজে ওর নোট খাতাটা বের করে ইরিনকে দিলো।খাতাটা নিয়ে ইরিন চলে যেতে নিলেই মধু বলল”বাতিটা নিবে না?”
“না ওটা তোমার কাছেই থাক।অন্ধকারে থাকা ভালো না।”
এটা বলে ইরিন চলে গেলো।মধু মোম নিয়ে ঘরে এলো।যাক অন্ধকারে তো আর থাকা লাগবে না।মোমটা টেবিলের ওপর রেখে মধু খাটে বসলো।
ঝড়বৃষ্টি কিছুক্ষণ পর থেমে যাওয়ায় কারেন্টও চলে এলো।মধু বৃষ্টি হচ্ছে কি না এটা দেখার জন্য জনালা খুলে হাত বাড়িয়ে দেখলো।নাহ!বৃষ্টি হচ্ছে না।তবে ঠান্ডা বাতাস বইছে।হঠাৎ মধুর বাগানে চোখ গেলো।এই বাড়িটা পেছনে একটা বাগান আছে।যেখানে কেউ ঢুকতে পারে না তবে মধুর জানালা দিয়ে বাগানটা পরিস্কার দেখা যায়।মধু সরু চোখে দেখলো কেউ একজন বাগানের বেঞ্চিতে বসে আছে।কে সে!
চলবে……