#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat
ইয়াদের কথা শুনে মধু মনে মনে বলল’এহ!কি এটিটিউড।এটিটিউডে পা মাটিতে পড়ে না।’মনে মনে এটা বললেও মুখে কিছু বলতে পারলো না।চুপচাপ চলে যেতে নিয়েই মনে পড়লো পায়েসের বাটির কথা।পায়েসের বাটিও কি দিবে না?মধু পিছনে ফিরে ইয়াদকে ডাক দিলো
“শুনুন।”
ইয়াদ দাড়াতেই মধু সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বলল”আচ্ছা আমাদের বাটগুলোও কি দিবেন না?ওগুলো দিয়ে দিন প্লিজ।ওগুলো কিন্তু আমার না ওগুলো আম্মুর।আমার আম্মু অনেক রাগী।”
ইয়াদ কিছু না বলে দরজা খুলে ভেতরে চলে গেলো।মধু বেকুব হয়ে ওখানেই দাড়িয়ে রইলো।যেনো ও কোনো মানুষই না।কেমন পাত্তা না দিয়েই চলে গেলো।মধু বুঝতে পারছে না চলে যাবে নাকি থাকবে!মধু পা বাড়িয়েছে সিড়ির দিকে যাওয়ার জন্য।তখনই ইয়াদ আসলো।হাতে দুটো বাটি।মধুর হাতে দিয়ে বলল”এই বাটিগুলো আপনি আমাকে দেন নি।এগুলো আপনার আম্মু আমার আম্মুকে দিয়েছে।তাই এগুলো আমি রাখতে পারবো না।আর এই জ্যাকেট টা আমি নেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনাকে দেই নি।আপনাকে সাহায্য করার জন্য দিয়েছি।বুঝেছেন?”
“জ্বি,” এটা বলে মধু ওপরের দিকে চলে গেলো আর মনে মনে বলতে লাগলো”কি অদ্ভুত ছেলে।”
তারপর বাসায় এসে নিজের রুমে এসে দেখলো জানালায় আবার ঝুড়িটা আটকে রয়েছে।মধু গিয়ে দেখলো আবারো পিঠা দিয়েছে নিশি।মধু ঝুড়িটা নিয়ে পিঠাগুলো খেয়ে চিরকুট টা খুললো।
“ইয়াদ”
সোনা,জানু। আরো দিবো?
এতটুকুই লিখা ছিলো।মধু আরেকটা কাগজে লিখলো
“নিশি”
না জানু আজকে আর না।আই লাভ ইউ বেবি।
এটা লিখে ঝুড়িতে রেখে রশিতে ঝুলিয়ে খাটে বসে হাসতে হাসতে বলল”নিশি আপু জানেও না সে কার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।যাক কারো বয়ফ্রেন্ড হয়ে এতো ভালো খাবার পাবো ভাবতেও পারি নাই।”
মধু দশটা পর্যন্ত পড়লো।এরপর আর পড়তে ইচ্ছে করছে না।তাই টিভির রুমে গেলো।গিয়ে দেখে ওর মা সোফায় বসে মুভি দেখছে।মধুও মায়ের পাশে বসে পড়লো।আইরিন রহমান টিভির থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন”কি করিস এখানে?পড়া শেষ?”
“না মা কিন্তু এখন পড়তে ইচ্ছে করছে না।”
“না করলে গিয়ে শুয়ে পড়।সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে বসবি।”
“আচ্ছা একটু বসি।আধঘন্টা পরে যাই।”
“তোরে আমি চিনি না!তুই টিভির সামনে বসলে দুনিয়াদারী ভূলে যাবি।তাড়াতাড়ি যা মার না খেতে চাইলে।”
কি আর করার অগত্যা চলে যেতে হলে মধুর।ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।যেহেতু আর পড়তে ইচ্ছে করছে না সেহেতু শুয়ে পড়াই উত্তম।
——————
শুক্রবারে অন্যান্য দিনের চেয়ে আরো বেশি ব্যাস্ত থাকে মধু।যেমন আজকে!প্রতি শুক্রবারের মতো এই শুক্রবারেও নিজের জামাকাপড়গুলো নিজের ধূয়ে শুকোতে দিতে হয়।তাই তো মধু জামা কাপড়গুলো ধূয়ে ছাঁদে নিয়ে চললো।কিন্তু ছাদের এক কোণাও খালি নেই।সবগুলো দড়িতে জামা কাপড় ঝুলানো।মধু জামাগুলেকে কিছুটা কুঁচকে কুঁচকে মেলে দিলো।মোটামুটি অনেক কষ্টে জামাগুলো শুকাতে দিলো।কিন্তু একটা ওড়না কোথাও দিয়ে পারছে না তাই এটা একটা শার্টের ওপর মেলে দিলো।মধু জানে না শার্ট টা কার।যদি জানতো শার্ট টা ইয়াদের তাহলে জীবনেও দিতো না।
জামাকাপড় শুকাতে দিয়ে মধু নিচে নেমে এলো।চারতলা দিয়ে নামার সময়ই বুঝতে পারলো নিশিদের ঘরে আজকে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে।মধু মনে মনে বলল”আজকে তাহলে আমারও বিরিয়ানি খাওয়া হচ্ছে।”এটা বলে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।বাসায় আসতেই দেখলো একটা মেয়ে সোফায় বসে ওর মায়ের সাথে বকবক করছে।মেয়েটা কে?মধু মেয়েটাকে চেনে না।মধু ঘরে ঢুকতেই ওর মা বলল”মধু,এখানে বস।”
মধু মায়ের পাশে বসে পড়লো।মধুর মা মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল”ও আমার বড় মেয়ে মধু।তোমার সাথেই পড়ে।ও এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।”
মেয়েটা মৃদু হেসে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”হাই,আমি ইরিন।তিনতলায় নতুন আসছি।”
“ওহ!”
“তুমি কোন কলেজে পড়ো?”
“আরাগনগর ডিগ্রি কলেজ।তুমি?”
“তোমাদের পাশেই আরাগনগর মহিলা কলেজ।”
“ওহ!তুমি কি তিনতলায় থাকো।” মধু প্রশ্নটা করেছে এইজন্য যাতে শিউর হতে পারে মেয়েটা ওই ছেলেটার বোন।
“হ্যাঁ আমরা তিনতলায় নতুন আসছি।আসার পর শুনলাম আমার বয়সই আরেকজন আছে তাই দেখা করতে এলাম।”
এরপর মধু আরকিছু বলল না।মধুর মা বলল”তুমি বসো।তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।”
“আরে না আন্টি।আমি নাস্তা করে এসেছি।”
“আরে বসো।নাস্তা করেছো তো কি হয়েছে।আবার করবে।”
আইরিন রহমান কিচেনে চলে গেলো।আইরিন রহমান যেতেই মধু বলল”তোমরা কয় ভাইবোন?”
“তিনভাই বোন।দুইটা বড় ভাই আছে আর আমি ওদের একমাত্র বোন।”
“ও…”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর আইরিন রহমান আসলেন চা নাস্তা নিয়ে অগত্যা ইরিনের খেতেই হলো।তারপর তিনজনে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ইরিন চলে গেলো।
——————–
দুপুরের খাবার মধু খায় নি জানালা দিয়ে বিরিয়ানি পাবার আশায়।কিন্তু নাহ!তিনটে বেজে গেছে বিরিয়ানি নাম গন্ধও নেই।এদিকে মধুর পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।একবার ভাবছে খেয়ে নেবে আবার ভাবছে খাওয়ার পর যদি বিরিয়ানি আসে!এই চিন্তায় মধু কি করবে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ ভেবে খেতে চলে গেলো।আর যাইহোক না খেয়ে থাকা অসম্ভব।মধু খাওয়া শেষ করে এসেই দেখে বিরিয়ানির বাটি জানালায় ঝুলছে।এই অবস্থায় মধুর প্রচুর কান্না পাচ্ছে।এতো লোভনীয় বিরিয়ানি অথচ পেটে এক ফোটা জায়গাও নেই।এখন কি করবে!ফ্রিজে রাখলে মা জিগ্যেস করবে এগুলো কোথা থেকে এসেছে!তখন আরো জ্বালা।না গিলতে পারছে না ফেলতে পারছে।মধু অতি দুঃখে বিরিয়ানির বাটি টা নিলো।তারপর ওটা খাটের নিচে রেখে দিলো।আর চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুললো।চিরকুটে লিখা ছিলো।
“ইয়াদ”
তুমি এতো পাষাণ কেনো?আমার ফোন ধরো না।মেসেজের রিপ্লাই দাও না।কেনো এমন করছো?উত্তর দাও।”
তোমার ‘নিশি’
মধু মনেমনে বলল”ভালো কিছু একটা লিখতে হবে।উল্টাপাল্টা কিছু লিখলে আর কিছু পাঠাবে না।তাই মধু লিখলো
“নিশি”
বাবু শোনো।আমি অনেক ব্যাস্ত।সামনপ পরীক্ষা বোঝোইতো!তুমি এমন রাগ করলে হবে?আচ্ছা পরীক্ষা শেষ হলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।”
তোমার”ইয়াদ”
এটা বলে ঝুড়িতে চিরকুট টা রেখে রশিতে ঝুলিয়ে দিলো।কিন্তু মধু এটা ভেবে পাচ্ছে না এই বিরিয়ানিগুলে কি করবে।হঠাৎ কে যেনো ওর রুমের দরজায় নক করলেন।মধু দ্রুত বিরিয়ানির প্লেট টা খাটের নিচে রেখে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই দেখে আরিয়া দাড়িয়ে আছে।আরিয়াকে দেখে মধু বলল”কি রে।কি হইছে তোর।দু’দিন ধরে কলেজে আসিস না কেন?”
“ভেতরে চল।সব বলতেছি।”
মধু আরিয়াকে ভেতরে নিয়ে এলো।আরিয়া ওর খাটের ওপর বসে বলল”জানিস,আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে গেছিলো।ওনাকে নিয়াই দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কলেজে আসতে পারি নাই।”
“তো ফোন দিলি না কেন?”
“আরে মনে ছিলো না।”
“ও আচ্ছা।এখন কি তুই টায়ার্ড?বিরিয়ানি খাবি?”
“হুম খাবো।তুই রান্না করছিস?”
“ধূর,আমি রান্না করতে পারলে তো!”
“তাহলে আন্টি রান্না করছে?”
মধু জবাব দেওয়ার আগে দরজাটা সাবধানে আটকে দিলো।তারপর বলল”আরে না।এটা জাদু।”
“তোর মাথা!সত্যি করে বলতো তো কাহিনি কি?”
এবার মধু নিশির কথা সব বললো কিন্তু সেদিন রাস্তায় কি হয়েছিলো সেট বললো না।সব শুনে আরিয়া হাসতে হাসতে শেষ।পেটে হাত রেখেই বলল”দোস্ত এমন কোনো বাড়ি পেলে বলিস তো! আমারও কারো বয়ফ্রেন্ড সেজে খেতে ইচ্ছে করছে।”
“আপাতত এই বিরিয়ানি খা।” মধু হাসতে হাসতে বলল।
——————-
আরিয়া সন্ধ্যার সময় চলে গেছে।ওর ভাই এসে নিয়ে গেছে।আরিয়া যাওয়ার পর মধু মায়ের৷ বকুনিতে পড়তে বসলো।কিন্তু মধুর কপাল মনে হয় ভালো ছিলো বেশিক্ষণ পড়তে হয় নি কারেন্ট চলে গেছে।জেনারেটরের চার্জ নেই।আইরিন রহমান বললেন”যা তো নিচে গিয়ে দুটো মোম বাতি কিনে নিয়ে আয়।”
মধু ঘর থেকে তিনতলায় আসতেই টর্চ বন্ধ হয়ে গেলো।চার্জ নেই।এখন সামনে সব অন্ধকার!মধু হাতড়ে হাতড়ে নামতে লাগলো কিন্তু হঠাৎ কেউ একজন আল্লাহ গো!মরে গেলাম বলে চিল্লিয়ে উঠলো!
চলবে……
#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat
চিল্লানোর আওয়াজে মধু থমকে দাড়ালো।অন্ধকারে তো কিছু দেখাও যাচ্ছে না।হঠাৎ কারেন্ট চলে আসায় মধু সিড়িতে তাকিয়ে দেখলো নিশির হাতে পাড়া দিয়ে দাড়িয়ে আছে মধু।তৎক্ষনাৎ মধু পা টা সরিয়ে নিলো।তারপর নিশির পাশে বসে বলল”সরি আপু।আসলে অন্ধকার ছিলো তাই খেয়াল করি নাই।তুমি এখানে বসে আছো কেনো?”
“ইয়া…..কিছু না এমনিই।কারেন্ট চলে গিয়েছিলো তো তাই আর কি।”
“ও আচ্ছা চলো তাহলে বাসায় যাও।আমিও যাই।”
“আচ্ছা তুমি যাও।আমি এখনই চলে আসবো।”
মধু আবার ফেরত গেলো ওর ফ্ল্যাটের দিকে হঠাৎ মনে হলো তিনতলায় কেউ কান্না করছে।মধু দেখার জন্য সিড়িতে এসে তিনতলায় ঝুঁকতেই দেখলো নিশি ওর ক্রাশবয়ের কলার চেপে ধরে বলছে”ইয়াদ,কেনো এমন করছো বলতো?একটা ভুলের জন্য এতোবড়ো শাস্তি কেনো দিচ্ছো?আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?”
ইয়াদ নিশির হাতটা নিজের কলার থেকে ধাক্কামেরে সরিয়ে দিয়ে বলল”তুমি যেটা করেছিলে সেটা ভূল না অপরাধ।আর কেউ ক্ষমা করলেও আমি পারবো না।আমি এতো উদার না।আর প্লিজ দয়া করে আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।অসহ্য লাগে আমার।”
নিশি কাঁদতে কাঁদতে বলল”তাহলে এইবাড়িতে কেনো এসেছো?”
“আমি জানতামও না তুমি এখানে থাকো।জানলে আসতামই না।”
নিশি চোখের পানি মুছে বলল”তাহলে সন্ধ্যার সময় যে খাবার পাঠাতাম ওগুলো নিতে কেনো?চিরকুটে কেনো লিখতে আই লাভ ইউ?কেনো?”
ইয়াদ মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো নিশির কথা শুনে।কি যাতা বলছে!ইয়াদ তো কখনো কোনো খাবার পায় নি জানালা দিয়ে।ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল”ও হ্যালো,কি বলছো এগুলো।আমি কখনো কোনো কিছু পাই নাই।আর তুমি যা করছো তারপর থেকে তোমার মুখও তো দেখতে মন চায় না চিরকুট লেখাতো দূরের কথা।”
“মিথ্যা বলবা না ইয়াদ।চিরকুটগুলো এখনো আছে আমার কাছে।”
এতক্ষণ ধরে মধু সবকিছু দেখে স্থির থাকলেও নিশির এ কথা শোনার পর আর স্থির থাকতে পারলো না।তোলপাড় চলছে ভেতরে।নিশি যদি চিরকুটগুলো দেখিয়ে দেয় আর ইয়াদ যদি জানতে পারে তাহলে কি ভাববে!নির্ঘাত পেটুক ভাববে।মধু এগুলো ভাবতে ভাবতেই দেখলো নিশা চিরকুটগুলো ইয়াদের হাতে দিয়ে বলল”এগুলো তুমি লেখো নি?”
ইয়াদ চিরকুটগুলো হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল”নাটক করো আমার সাথে?এগুলো তো আমার লেখাই না।কার না কার চিরকুট এনে আমার নামে চালাচ্ছো।লজ্জা হওয়া উচিত”
“লজ্জা তো তোমার হওয়া উচিত।খেয়ে আবার চাইতে।ছ্যাঁচড়া কোথাকার।”
এটা বলে নিশি ওপরের দিকে আসতে নিলে মধু একদৌড়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে গেলো।ঘরে আসার পর আইরিন রহমান বললেন”কি রে মধু।এতক্ষণ কই ছিলি?কারেন্ট তো তুই যাওয়ার পাঁচ সেকেন্ড পরেই চলে আসছে।”
“আরে আম্মু নিচে ইরিনের সাথে দেখা হয়ে গেছিলো।তো ওর সাথে কথা বলতেই দেরি হয়ে গেছে।”
“ও,,আচ্ছা।কিছু না পারলে ওকে বলিস।মেয়েটা অনেক মেধাবী।তোর মতো ফেল্টু না।”
মধু মনে মনে বলল’আপনা টাইম আয়ে গা।”এটা মুখটা বাঁকা করে নিজের ঘরে চলে গেলো।নিজের ঘরে গিয়ে বসে নিচের কাহিনী মেলাতে লাগলো’তারমানে ইয়াদ এই ছেলের নাম আর এই ছেলের সাথে নিশি আপুর রিলেশন ছিলো।কোনো কারণে এটা ভেঙে গেছে আর নিশি আপু চাইছে এটা ঠিক করতে কিন্তু ছেলেটা চাইছে না।ইশ!ব্রেকাপটা আরো কয়েকদিন পর করলে ভালো হতো!এখন তো আর জানালা দিয়ে কোনো খাবারও দিবে না।এটা ভেবেই মধু মন খারাপ করে ফেললো।তবুও একটু শান্তি পাওয়া গেলো ওরা বুঝতে পারে নি এটা যে মধুর কাজ।ইয়াদ ভাবছে নিশি মিথ্যা নাটক করছে।আর নিশি ভাবছে ইয়াদ মিথ্যা বলছে।খেয়ে আবার ছ্যাচড়ামি করছে।
.
.
আর মধু আপসেট মুডে পড়তে বসলো।
——————
আইরিন রহমান এসে মধুর মুখে পানির ছিটা দিয়ে বললেন”তাড়াতাড়ি ওঠ মধু।সাতটা বেজে গেছে।এতো ঘুমালে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবি?সংসার করে খেতে পারবি না।”
মধু চোখ মুখ কচলে উঠে বসলো।তারপর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল”আমার প্রয়োজন নেই সংসার করার এমনিতেই অনেক ভালে আছি।আর তোমাকে না আমি বারবার বলেছি সংসার নামক এসব ফালতু জিনিসের নাম আমার সামনে বলবে না।”
“তাহলে তোকে কি সারাজীবনই বসিয়ে খাওয়াবো নাকি?”
“সারাজীবন লাগবে না।আরো কয়েকটা মাস কষ্ট করো।অনার্সে ভর্তি হয়েই জবে ঢুকবো।”
“হুম।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে উঠেই তুমি চাকরী পেয়ে যাবে।চাকরী মনে হয় হাতের মোয়া।”
“চাকরী না পেলে মাটি কাটবো,ইট ভাঙবো,চৌরাস্তার মোড়ে ভিক্ষা করবো তবুও তুমি চুপ করো।তোমার থেকে আর খাবো না।এবার যাও।”
আইরিন রহমান মুখ বাকিয়ে চলে গেলেন।আর মধু বিরক্তমুখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সকাল সকাল মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।মধু ফ্রেশ হয়ে কলেজের ইউনিফর্ম পরে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে পড়লো।পেছন থেকে আইরিন রহমান ডাকলেও শুনলাম না।রাগটা যেনো মাথায় চেপে বসেছে।রাস্তা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছিলো মধু।আসলে নিচের দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলো বললে ভূল হবে কাঁদছিলো।হঠাৎ কেউ একজন ওর সামনে এসে দাড়ালো।মধু চোখ মুছে মুখ তুলে তাকালো।তার সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে আছি।ইয়াদ মুধর কান্নারত ইষৎ লাল হওয়া আধবেজা মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো কারণ এই মুখটা আরো একবার দেখেছে ইয়াদ।যেদিন মেয়েটা বিপদে পড়েছিলো সেদিনও এভাবে কাঁদতে কাঁদতে এসে সাহায্য চেয়েছিলো।কিন্তু আজ কেনো কাঁদছে।ইয়াদ মধুকে কিছু জিগ্যেস করার আগে আশেপাশে তাকালো কেউ কি ওকে বিরক্ত করছে কি না!নাহ!তেমন কেউ তো নেই।তাহলে কাদছে কেনো?ইয়াদ বলল”কাঁদছো কেনো?”
“এমনিতেই মন চাইছে।”
ইয়াদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।কি বলে মেয়েটা।কান্না কি কেউ এমনিতে করতে পারে নাকি!কান্না করার জন্য একটা কারণ প্রয়োজন।ইয়াদ বলল”এমনিতেই কান্না করে না।তুমি যদি না বলো আমি সাহায্য করবো কি করে?কেউ কি রাস্তায় কিছু বলছে?”
“না,,,একটা ব্যাক্তিগত বিষয়ে মন খারাপ।”
“ওও,,” তারপর ইয়াদ আর কিছু বলতে পারলো না মধু পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।মধুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইয়াদ মনে মনে বলল’এইটুকু মেয়ের আবার ব্যাক্তিগত ব্যাপার!নিশ্চিত বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে।তাই শেয়ার করতে চাইছে না।”ইয়াদ মনে মনে এগুলো ভেবে হাঁটতে লাগলো
——————-
কলেজে পৌঁছে মধু আরিয়ার পাশে এসে বসলো।আরিয়া হোমওয়ার্ক করছিলো।মধুকে দেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল”কি রে মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?কান্না করছিস নাকি?”
“না তেমন কিছু না।”
“লুকিয়ে লাভ নাই।আমি সবই জানি।আজকেও কি আন্টির সাথে রাগ করছিস?”
মধু রাগে কাঁদতে কাঁদতে বলল”আমার মা এমন কেনো রে?খাওয়ায় খোঁটাও দেয়।আমি খোঁটা সহ্য করতে পারি না।আমি হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছি বাবা না থাকলে কি হয়।”
আরিয়া মধুর চোখ থেকে পানি মুছে দিয়ে বলল”কান্না করিস না।শান্ত হ,দেখ আন্টি রাগের মাথায় বলেছে।উনি তোকে কষ্ট দেবার জন্য বলে নি।আর তুই একটা জিনিস চিন্তা কর।তার জায়গায় তুই থাকলে কি করতি?সেও তো মানুষ!তারও কষ্ট আছে।তবুও সে কিন্তু তোদের দু’বোন কে মানুষ করছে।তাই প্লিজ আন্টিকে দোষ দেওয়া বন্ধ করে ধৈর্য ধর আল্লাহ তো আছেনই।”
মধু চোখ মুছে বলল”হুম।তুই বস আমি আসছি মুখ ধুয়ে।”
“আয়।”
মধু মুখ ধুয়ে এসে আরিয়ার পাশে বসলো।আর তখনই স্যার এসে ক্লাসে ঢুকলো।আর ক্লাস শুরু হলো।
—————
কলেজ ছুটি হয়েছে দুপুর দুপুর ১.০০ টায়।আর এখন চারটা বাজে।এতক্ষণ একটা কোচিং করে আর ভালো লাগছে না।দুজনই ঠিক করলো বাসায় চলে যাবে।তারপর দুজনই বাসায় চলে আসলো পরের কোচিংটা না করেই।বাসায় এসে মধু জামা কাপড় ছেড়ে শাওয়ার নিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।আইরিন রহমান ওকে ছাদে যেতে দেখে আটকালেন না।এমনকি কোনো কথাই বললেন না।মধু ছাঁদে এসে দাড়িয়ে ছিলো রেলিঙের দিকে মুখ করে।পেছন থেকে কেউ একজন বলল”আজকে এতো তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে ফিরলে যে!তা মন কি এখনো খারাপ?”
“কোচিং না করে এসেছি।হ্যাঁ এখনো খারাপ।”
“বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিটআপ করে ঝামেলা মিটিয়ে নিলেই তো পারো।”
মধু ভ্রু কুঁচকে বলল”জ্বি,কি বললেন?বয়ফ্রেন্ড আসবে কোথা থেকে আমার!”
“তাহলে মন খারাপ কেনো?”
মধু এবার প্রচন্ড রেগে গেলো।মন খারাপের কি আর কোনো কারণ হতে পারে না?না কি এটাই একমাত্র কারণ।মধু দাঁতে দাঁত চেপে বলল”কারো সম্পর্কে না জেনে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করা বন্ধ করুন।মন খারাপ হলেই যে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে হবে এমন ভাবেন কেনো?আমাদের কি নিজস্ব জীবন নেই!নাকি বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডই সব।সে ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না।”
এটা বলে মধু চলে যেতে নিলেই ইয়াদ মধুর হাত ধরে ফেলে।আর এটা নিশি ছাদের দরজার আড়াল থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করে।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)