ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১+২

0
4820

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০১
#Arshi_Ayat

মধুর পিরিয়ড হয়েছে কলেজ থেকে আসার পথে।কিন্তু পথে কোনো ফার্মেসী না পাওয়ায় নিজের হিজাবটা খুলে কোমরে বেধে নিলো।তবুও রক্তের দাগটা দেখা যাচ্ছে।পেছন থেকে একটা ছেলে বলল”দেখ,পিছনে সীল মারা।লাল সীল!”
এটা বলেই হাসা শুরু করলো।ওর সাথে আরো দুইটা ছেলেও হাসা শুরু করলো।মধু এগুলো শুনে জোরে জোরে হাটা শুরু করলো।এবার ওই ছেলেটা উঠে এসে মধুর পেছনে হাটতে লাগলো।মধু ভয় পেয়ে হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।ছেলেটাও মধুর পাশাপাশি এসে পড়লো।তারপর বিচ্ছিরি হেসে বলল”ইউ আর লুকিং সো হট!”

মধু কিছু না বলে মাথা নিচের দিকে নামিয়ে হাটতে লাগলো।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।আশেপাশে অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে।মধু যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরে রাস্তাটা একটু জঙ্গলের মতো।সন্ধ্যার সময়টা ভূতূড়ে ভূতুড়ে লাগে।প্রতিদিন ওর বান্ধবী আরিয়া থাকায় ভয় লাগে না কিন্তু আজ আরিয়া আসে নি আর আজই পিরিয়ড হতে হলো।পরিয়ডের ডেটও আজ ছিলো না আরও তিনদিন পর ছিলো কিন্তু আজই কেনো হলো!তার ওপর আবার এই ছেলেটা কতো জঘন্য জঘন্য কথা বলছে।কথাগুলো শুনলেই গা ঘিনঘিন করে।এই রাস্তা থেকে একটা দৌড়ে বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এই অবস্থায় মুখ বুঁজে থাকতে হবে।যতো তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে পারলেই হয়।অনেক্ক্ষণ ধরে ছেলেটা বিশ্রী বিশ্রী কথা বলছিলো মধু কিছু না বলে চুপচাপ হাটছিলো এবার হঠাৎ করে ছেলেটা মধুর হাত চেপে ধরলো।মধু আতংকিত চোখে ছেলেটার দিকে চেয়ে বলল”হাত ছাড়ুন প্লিজ।”

“হাত তো ছাড়ার জন্য ধরি নি।আজকে বাসায় যাওয়া লাগবে না।আমার সাথে চল।”

“হাত ছাড়ুন ভাইয়া প্লিজ!বাসায় যেতে হবে আমাকে।” মধু কাদো কাদো গলায় বলল।

“বাসায় কালকে যাবি।আজকে আমার সাথে চল।”

মধু কাঁদতে কাঁদতে হাত মুচড়ানো শুরু করলো।কিন্তু ছেলেটা নির্দয়ের মতো ওকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো।মধুর মাথায় কোনো বুদ্ধি আসছে না।হঠাৎ মধুর যেনো কি হলো সজোরে ছেলেটা হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।ছেলেটা তৎক্ষনাৎ মধুর হাত ছেড়ে দিলো।মধু হাত ছাড়া পেয়েই দৌড় লাগালো।ছেলেটাও পেছনে দৌড়াচ্ছে।মধু সামনে তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছে না অন্ধকার নেমে যাওয়ায়।হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই কেউ একজন ধরে ফেললো।মধু অবছা আবছা আলোয় বুঝতে পারলো কোনো মানুষ হয়তো!মধুকে দাড় করিয়ে সামনের জন পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট বের করলো।ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় মধুর ভীত আর কান্নারত চেহারা দেখে বিচলিত হয়ে ইয়াদ বলল”রিল্যাক্স,কি হয়েছে।এভাবে দৌড়াচ্ছিলেন কেনো?”

মধু কাঁদতে কাঁদতে বলল”প..পিছছনে এ..একককটা ছছছেলে….”এতটুকু বলতে না বলতেই ছেলেটা মধুর কাছাকাছি এসে দাড়ালো।ফ্ল্যাশলাইটেট আলোয় ইয়াদ ছেলেটার দিকে তাকালো।তারপর মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”আপনি একটু প্লিজ ফোন টা ধরুন। যাতে আমি ওকে দেখতে পাই।বাকিটা আমি দেখছি।”

মধু কাপাকাপা হাতে ফোনটা ধরলে।ইয়াদ ছেলেটার সামনে গিয়ে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল”কি ভাই,ওনাকে বিরক্ত করছেন কেনো?”

“তোর সমস্যা কি?”

“অনেক সমস্যা।আমি এগুলো সহ্য করতে পারি না।আমার হাত নিশপিশ করে।” এটা বলে কষে দুটো ঘুষি দিয়ে কলারটা চেপে ধরে মধুর সামনে নিয়ে এসে বলল”সরি বল।”

ছেলেটা মধুর দিকে তাকিয়ে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সরি বলল।তারপর ইয়াদ আরো দুটো থাপ্পড় দিয়ে ছেলেটা ছেড়ে দিলো।ছাড়া পেয়ে ছেলেটা দৌড়ে পালালো।ছেলেটা চলে যাওয়ার পর ইয়াদ নিজের জ্যাকেট টা খুলে মধুর কোমরে বেঁধে দিলো।মধু একটা টু শব্দও করে নি।শুধু ফ্ল্যাশলাইটের উজ্জ্বল আলোতে একটা সরল মুখশ্রীর একটা ছেলেকে দেখতে লাগলো।ছেলেটার মুখে একটা আশ্চর্য হাসি আছে।যেটা সবাইকে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট।সাথে চাপ দাড়ি আর মোচ ফুল প্যাকেজ।সব মিলিয়ে এতো সুন্দর লাগছিলো মধুর!যে এক মুহুর্তের জন্য ও সবকিছু ভুলে গেছিলো।ইয়াদের ডাকে মধুর হুশ এলো।ইয়াদ বলল”আপনার বাসা কোথায়?”

“আরাগনগরের ২ নম্বর গলি।মহসিন ভিলা।”

“ওহ!তাই।কতো তলায়?”

“চারতলায়।”

“ওহ,আচ্ছা।আমি তিনতলায়।আজই আসলাম ওই বাসায়।চলুন আপনাকে দিয়ে আসি।”

ইয়াদ পিছনে আর মধু সামনে হাটতে লাগলো।বাসার সামনে আসতেই ইয়াদ বলল”এবার আপনি চলে যান।”

ইয়াদ এটা বলে চলে যেতে নিলেই মধু পেছন থেকে ডেকে বলল”ধন্যবাদ।”

“এসব ধন্যবাদের কিছু নেই।আমরা প্রতিবেশী।তাই প্রতিবেশীই প্রতিবেশীর সাহায্য করবে স্বাভাবিক।আপনার বয়সই আমার বোনও আছে তাই এটা আমার কর্তব্য।এখন বাসায় যান।”

মধু সৌজন্যমূলক হেসে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে মধু জ্যাকেট টা কোমর থেকে খুলে ব্যাগে ভরে নিলো।কারণ এটা বাসার কেউ দেখলে অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে।এমনিতেই কৈফিয়ত দেওয়াটা মধু পছন্দ করে না।জ্যাকেট টা ব্যাগে ঢুকিয়ে মধু দরজায় নক করলো।দুই মিনিট পর মধুর ছোটো বোন মিলি দরজা খুললো।মধু ভেতরে ঢুকতেই মিলি বলল”আপু তোর পেছনে তো অবস্থা খারাপ।রাস্তা দিয়ে এসেছিস কিভাবে?”

“হেঁটে আসছি।এখন চুপ কর।আম্মু কই?”

“নিচের তলায় গেছে।নতুন ভাড়াটিয়া আসছে ওদের সাথে দেখা করতে।”

“ও,,আচ্ছা।দরজা আটকে দে।আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি।আম্মু আসলে খুলে দিস।”

“আচ্ছা।”

মধু ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে ব্যাগ থেকে জ্যাকেট টা বের করে ওয়াশরুমে গিয়ে রাখলো।আর নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
.
.
জামা কাপড়গুলো ধুয়ে মধু গোসল করে নিলো।ওরা ওগুলো বারান্দায় শুকাতে দিলো।মধুর মা এসে ওর দরজায় নক করা শুরু করলো।মধু চুল ঝারতে ঝারতে দরজা খুললো।আইরিন রহমান বললেন”কি রে কলেজ থেকে এসে এভাবে ঘরে বসে আছিস কেনো?খাওয়া লাগবে না?”

“হ্যাঁ আসছি।মাত্রই গোসল করলাম।”

“তাড়াতাড়ি আয়।”

মধু চুল গুলো তোয়ালে পেচিয়ে বেধে খেতে চলে গেলো।খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে এসাইনমেন্ট করতে বসলো।হঠাৎ মনে হলো জনালায় কিছু একটা শব্দ করছে।মধু টেবিল থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দেখলো একটা বাস্কেটে পায়েস আর একটা চিরকুট।মধু ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলো।আচ্ছা আমাকে এগুলে পাঠাবে কে?ওপরের তলায় তো কোনো ছেলে থাকে না।নিশি আপুরা থাকে।আপুর তো ভাইও নাই তাহলে এগুলো পাঠাবে কে?মধু বাস্কেট টা হাতে নিয়ে ঘরে নিয়ে আসলো।তারপর বস্কেট থেকে পায়েসের বাটিটা তুলে নিয়ে চিরকুট টা খুললো।
চিরকুটে লিখা ছিলো

“ইয়াদ”
আমি খুশী হয়েছি তুমি এই বাসায় শিফট হয়ে আসছো।এবার আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো।তোমার জন্য পায়েস রান্না করছি।খেয়ে জানাবা কেমন হইছে।”

তোমার “নিশি”

পুরো চিটকুট টা পড়ে মধু বুঝতে পারলো কাহিনি কোথায়।নিচতলায় নিশি আপুর বফরা আসছে।এইজন্য নিশি আপু এট পাঠাইছে কিন্তু এটা এসে মধুর জানালায় ফেঁসে গেছে।মধু পায়েসের বাটিটা তুলে খাওয়া শুরু করলো।ওহ!কি টেস্টি।খাওয়া শেষ করে বাটিটা বাস্কেটে রেখে একটা কাগজে লিখলো

“নিশি”

আই লাভ ইউ,অনেক মজা হইছে।এতো ভালো রান্না করো তুমি!আরেকটু পাঠাও প্লিজ!”

তোমার”ইয়াদ”

এটা লিখে পায়েশের বাটি আর চিরকুট টা বাস্কেটে ভরে আবার রশিতে ঝুলিয়ে দিয়ে এলো।হাসতে হাসতে মধুর পেট ব্যাথা করছে।কিন্তু ইয়াদ টা কে?মধু মনে মনে বলল”যে হওয়ার হোক।খালি আমার ক্রাশবয় না হলেই হয়।”

কিন্তু মধু তখনও জানে না তার ক্রাশ বয় এর নামই ইয়াদ।

একটু পর আবার বাস্কেট এসে মধুর জানালায় ফাঁসলো।মধু দাত কেলিয়ে আবার জনালার পাশে গেলো।যখনই বাস্কেট টা হাতে নিতে যাবে তখন এটা নিচে নামা শুরু করলো মধু তড়িঘড়ি করে নিতে যেয়েও পারলো না এটা নিচে চলে গেলো।মধু রশিটা ধরে টান ছে কিন্তু আসছে না।নিচ থেকে কেউ যেনো ওটা ধরে রেখেছে।

চলবে….

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

অনেক টানাটানি করেও মধু পায়েসের বাটিটা ওপরে তুলতে পারলো না।তারপর দড়িটা ছেড়ে আফসোসের স্বরে বলল”ইশ,আরেকটু তাড়াতাড়ি ধরলে পায়েসটা খেতে পারতাম।কি ইয়াম্মি ছিলো!থাক বেশি লোভ করা ভালো না।”মধু নিজেকে এসব স্বান্তনা দিয়ে পড়তে বসলো।

আধঘন্টা পড়ার পর মিলি এসে বলল”আপু,আম্মু তোকে ডাকছে।”

“কেনো?”

“আমি জানি না।তোকে যেতে বলছে।”

মধু টেবিল থেকে উঠে মায়ের কাছে গেলো।আইরিন রহমান খাটে বসে আছেন।মধু গিয়ে ওনার সামনে দাড়ালো।আইরিন রহমান বললেন”তোর নাকি আজকে অর্ধবার্ষিকীর রেজাল্ট দিয়েছে।মার্কশীট কই?”

মধুর পিলে চমকে উঠলো।একটা বড় ঢোক গিলে ঠোঁট কামড়াতে লাগলো।আইরিন বেগম ধমক দিয়ে বললেন”যা তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়।”

মধু মায়ের রুম থেকে নিজের রুমে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো এখন কি করবে?যদি মা একবার মার্কশীট দেখে তাহলে ‘মধু তু তো গেয়া’
মধু ভেবে কুল পাচ্ছে না কি করবে।ম্যাথ,পদার্থ,রসায়ন,জীববিজ্ঞান সবগুলোতে ফেল করেছে কিন্তু বাংলা তে টেনেটুনে পাশ উঠেছে।মধু নিজের রুম থেকে মার্কশীট টা এনে কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের হাতে দিলো।আইরিম রহমান মার্কশীট দেখে পাঁচ মিনিট চুপ ছিলেন।তারপর বললেন”পিঠে বস্তা বেধে আয়।আজকে তোকে মেরে আমি বেত ভাঙবো।”

মধু ভয়ে কেঁদেই ফেলল।মধুর কান্না দেখে আইরিন রহমান আর বেত নিলেন না কিন্তু কড়া গলায় বললেন”এইগুলো কি করেছিস?দুইটা কোচিংএ পড়িস তবুও রেজাল্টের এই অবস্থা কেনো?সবগুলো সাবজেক্ট ফেল করেছিস।”

এবার মিলি আইরিন রহমানের কথায় বাম হাত ঢুকিয়ে বলল”আম্মু সব সাবজেক্টে না বাংলায় তো পাশ করেছে।”

মিলির কথায় আইরিন রহমান ঘর কাপিয়ে ধমক দিয়ে বলল”এগুলো পাশে ছিরি?ওমন পাশ না পড়েও করা যায়।বাংলা খাতায় ক,খ লিখলেই পাশ মার্ক তোলা যায়।”
আইরিন রহমান ইচ্ছামতো বকছে আর মধু মাথা নিচু করে চুপচাপ শুনছে।একঘন্টার বয়ানের পর আইরিন রহমান বললেন”এখন ঘরে যা।আর মনে রাখিস ইন্টারে যদি খারাপ করিস তাহলে সোজা ধরে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।”
মধু মার্কশীট টা নিয়ে রুমে চলে এলো।তারপর আবার পড়তে বসলো।এবার যে করেই হোক ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।তা নাহলে মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।
————————
সূর্যের আলো বরাবর হয়ে মধুর চোখেমুখে লাগছে।মধু চোখমুখ কুঁচকে ফেললো তারপর আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে উঠে বসলো।তারপর উঠে গিয়ে ব্রাশ মুখে দিয়ে কিচেনে গেলো।আইরিন রহমান মধুকে দেখে বলল”পরীক্ষায় ফেল করেও লজ্জা হয় না সাতটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকিস।”তারপর বিশটাকার নোট হাতে দিয়ে বলল”ডিম শেষ হয়ে গেছে।দুটো ডিম নিয়ে আয়।তাড়াতাড়ি যা মিলি স্কুলে যাবে।”

মধু ঘরে এসে ওড়না টা মাথায় দিয়ে ব্রাশটা মুখে ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লো।বাসার নিচে একটা মুদি দোকান আছে।কিছু লাগলেই ওইখান থেকে নেওয়া যায়।মধু দোকানের সামনে এসে বলল”আনোয়ার চাচা দুইটা ডিম দেন।”

দোকানদার মধুকে দুইটা ডিম দিলো আর মধু টাকা দিয়ে সামনে ঘুরতেই কালকে সন্ধ্যায় যে ছেলেটা ওকে বাঁচিয়েছিলো তাকে দেখতে পেলো।জগিং স্যুট পরা,কানে হেডফোন,কপাল দিয়ে দরদরিয়ে ঘান পরছে।ওহ!দেখতে কি কিউট লাগছে।মধু ভেবেছিলো গিয়ে কথা বলবে কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বলল’ছিঃএভাবে গেলে ছেলেটা তো তোর দিকে তাকাবেই না মধু।একদম ফকিন্নি লাগছে তোকে।থাক কথা বলার দরকার নেই কেটে পড়।”
ইয়াদ দূরে থাকা অবস্থায়ই মধু সুন্দর করে কেটে পড়লো।অথচ দূর থেকে ইয়াদ হাত নাড়িয়ে দাড়াতে বলল কিন্তু মধু সেটা দেখতে পেলো না এমম আচরণে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল”মেয়েটা আমাকে ইগনোর করলো কেনো?”নাকি অন্যকোনো কারণ!ইয়াদ অতো না ভেবে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।নাস্তা করে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
———————
মধু নাস্তা করে বেরিয়ে যেতে নিলেই ওর মা বলল”মধু,এই নে ক্ষীর আর পায়েসটা তিনতলায় নতুন ভাড়াটিয়াদের দিয়ে আয়।”

“কেনো?”

“নতুন কেউ আসলে দিতে হয়।তাছাড়া আমরা প্রতিবেশী।তাই ভালোমন্দ রান্না করলে দেওয়া উচিত।”

মধু মায়ের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।তিনতলায় এসে কলিং বেল চাপলো।একটু পর কেউ একজন দরজা খুললো।মধু সামনে তাকাতেই দেখলো তার ক্রাশ বয় দাড়িয়ে আছে।মধু উত্তেজনার চোটে কিছু বলতেও পারছে না।তবুও কষ্ট করে বলল”মা পাঠিয়েছে।”

ইয়াদ মধুর হাত থেকে বাটিটা নিতে গিয়ে ওর হাত মধুর হাতে টাচ লাগলে ইয়াদ দ্রুত সরিয়ে বাটিটা নিয়ে ঘরে দিয়ে আসলো।আর এদিকে মধু লজ্জায় লাল,নীল,বেগুনী,হলুদ হতে লাগলো।আর ইয়াদ আসার আগেই চলে গেলো।কারণ আরো কতক্ষণ দাড়ালে বোধহয় মধু একবারে মাটিতে মিশেই যাবে।
ইয়াদ বাটিটা ফিরিয়ে দিতে আসলো কিন্তু দরজায় কেউ নেই।ওমা!গেলো কোথায়!ইয়াদ বাটিটা আবার ঘরে রেখে এসে নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
——————-
আজও আরিয়া নেই।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মধু কোচিং থেকে বেরিয়ে ভাবতে লাগলো কি করা যায়!আজও যদি কালকের মতো কিছু হয়!মধু হাটতে হাটতে ওই রাস্তাটায় পৌঁছে গেলো।কিন্তু আজ কোনো ছেলে নেই আশেপাশে।মধু আল্লাহর নাম নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।আর মনেমনে বলল আরিয়া যতোদিন না আসে ততদিনে সে কোচিং এ যাবে না।
মোটামুটি জোরে হাটার ফলে তাড়াতাড়ি চলে আসলো মধু আর আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যাও হয় নি!
বাসায় এসে প্রতিদিনের মতো ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো।কিন্তু পড়ায় মন বসছে না কালকের মতো আজও যদি কিছু খাবার পাওয়া যায়!ইশ!সেইজন্য মধু জানালার কাছে এসে বসলো।এমনিতে বাসায় মা পায়েস,ক্ষীর রান্না করেছে কিন্তু এভাবে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।অপেক্ষা করতে করতে সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টা চলে এসেছে।মধু খেয়াল করলো একটা ঝুড়ি আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামছে।মধু খপ করে ধরে ফেললো।তারপর ঝুড়িটা ঘরে নিয়ে এলো।আজকে পিঠা!তাও পুলি পিঠা!মধু জিহ্বা দিয়া ঠোঁট চেটে বলল”এখন থেকে এই খাবার আমার।”মধু চিরকুট টা নিয়ে খুললো চিরকুটে লিখা ছিলো

“ইয়াদ”
আমি তোমার সাথে রাগ করেছি।তুমি আমার একটা ফোনও ধরো নাই।কিন্তু তবুও অনেক কষ্ট করে তোমার জন্য বানাইছি।বইলো কেমন হইছে।”

তোমার”নিশি”

মধু চিরকুট টা পড়ে আরেকটা কাগজে লিখলো

“নিশি”

আ’ম সরি সোনা।আসলে অনেক বিজি ছিলাম তো তাই।রাগ করে না পাখি।আর পিঠাগুলো অনেক মজা হইছে।আরো কয়েকটা দিও।”

তোমার”ইয়াদ”

চিরকুটটা ভাজ করে পিঠাগুলো খেয়ে প্লেট আর চিরকুট ঝুড়িতে রেখে আবার দড়িতে ঝুলিয়ে দিয়ে আসলো।
হঠাৎ মনে পড়লো বারান্দায় ছেলেটার জ্যাকেট টা শুকাতে দিয়েছিলো।সেটা আছে কি না!নাকি মা দেখে ফেলেছে।মধু দৌড় চলে গেলো বারান্দায়।গিয়ে দেখে জ্যাকেট টা ওখানেই আছে।মধু জ্যাকেট টা হাতে নিয়ে ঘরে চলে আসলো।আর জ্যাকেট টা একটা শপিং ব্যাগে ভরে রাখলো।তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বলল”আম্মু,পায়েসের আর ক্ষীরের বাটিটা নিয়ে আসি?”

“কাল সকালে গিয়ে নিয়ে আসিস।এখন ওপরে গিয়ে নিশির মা’কে বল আমি ডাকছি।”

“আচ্ছা।”
এটা বলে মধু শপিং ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।নিশিদের বাসায় গিয়ে নিশির আম্মুকে ডেকে তারপর এই জ্যাকেট টা তিনতলায় গিয়ে ছেলেটাকে দিয়ে আসবে।মধু নিশিদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দরজা নক করলো।দরজা খুললো নিশি।নিশিকে দেখে মধু বলল”আপু,আন্টিকে একটু ডাকবে?আম্মু আন্টিকে ডাকছে।”

“আচ্ছা তুমি ঘরে আসো।”নিশির কথায় মধু ঘরে গেলো।নিশির মা নিচে গেলো আর মধুকে নিশি নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।টেবিলের ওপর তার লেখা দুটি চিরকুট পড়ে আছে।মধু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল” আপু,এগুলে কি?”

নিশি চিরকুট টা গুলো লুকিয়ে বলল”আরে এগুলো আমার বান্ধবীর!”

“ও” মখে কিছু না বললেও মধু মনেমনে হাসলো।তারপর নিশির সাথে হালকা কথা বলে তিনতলায় চলে গেলো।যখনই দরজা নক করতে যাবে তখনই মনে হলো কেউ একজন আছে মধু ঘুরতেই দেখলো ওর ক্রাশবয় দাঁড়িয়ে আছে।মধু আমতা আমতা করতে করতে বলল”আপনার কাছেই এসেছিলাম।”

“কেনো?”

মধু শপিং ব্যাগটা ইয়াদের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।ইয়াদ নিজের জ্যাকেট টা দেখে আবার মধুর হাতে দিয়ে বলল

“আমি যে জিনিস একবার দিয়ে দেই সেটা আর ফেরত নেই না।আর যদি কারো থেকে কিছু নেই সেটাও ফেরত দেই না।”

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে