ডিভোর্সের পরে পর্ব-২৪

0
984

#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃ২৪
#লেখকঃরিয়াজ

একদিকে নাইমার শোকে নীলয়দের পরিবার পুরো শান্ত হয়ে গিয়েছিলো।অন্যদিকে আয়ান ও যেনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলো না।যদিও এখানে আয়ানের কোনো দোষ নেই।তারপরেও সে মনে মনে ভাবছে আমি যদি মেয়েটিকে ভালো করে বুঝাতাম তাকে আর একটু সময় দিতাম তাহলে হয়তো মেয়েটি আজ জীবিত থাকতো।

তবে নীলয় কিন্তু স্থীর নেই।সে হন্ন হয়ে খুঁজতে থাকে কে সেই ছেলে যে নাইমার ভালোবাসা রিজেক্ট করেছে যার এতো অল্পবয়সের একটি মেয়ে আত্মহত্যার করেছে।কিন্তু এখানে নীলয় চাইলেই সেই ছেলেকে দোষ দিতে পারবে না।মানে আয়ান কে দোষ দিতে পারবে না আর কি।

কারণ নাইমা তার লিখে যাওয়া নোটে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছে যে সে জানতো যাকে সে ভালোবেসেছিলো সে ছিলো অন্য কারো প্রতি আসক্ত।কিন্তু মাঝখানে নাইমা এসে সেই ভালোবাসা নিতে চেয়েছিলো।

এখানে বলা যায় নাইমা একটু বেশি ওভাররিয়েক্ট ই করে ফেলেছে।কারণ কোনো একটি ছেলের জন্য আত্মহত্যা করবে এটা আমি আপনি কেউ ই মেনে নিবে না।কিন্তু যে ভালোবাসে সেই জানে ভালোবাসার কি কষ্ট।ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার কি কষ্ট সেটা শুধু সেই অনুভব করতে পারে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে।

এভাবে ৩ দিন কেঁটে যায়।৩ দিন কেঁটে গেলেও নাইমার পরিবার যেনো নাইমার মৃত্যুর শোক কিছুতেই কাঁটিয়ে উঠতে পারছে না।নীলয় তো সারাদিন মন মরা হয়েই বাসায় বসে থাকে। তার একমাত্র আদরের ছোট বোন।এভাবে আত্মহত্যা করে মারা এটা মোটকথা নীলয় কিছুতেই মানতে পারছিলো না।

৩ দিন মিম নীলয়দের বাসায় যায়।মিমের যাওয়ার সাথে সাথে সেখানে আবার নতুন করে কান্নার রোল পড়ে যায়।মিম কে দেখে সবাই নতুন করে আবার কান্না করতে থাকে।আসলে পরিবারের একটি মাত্র মেয়ে যদি আত্মহত্যা করে মারা যায় এটা কি কোনো পরিবার খুব সহজে ভুলে যেতে পারবে?

মিম নীলয়দের বাসায় এসে নীলয়ের বাবা মা নীলয় সবাইকে শান্তনা দিতে থাকে।যতোই শান্তনা দিক না কেনো একমাত্র মেয়ে হারানোর কষ্ট কি তারা একেবারে ভুলতে পারবে?এভাবে কয়েকদিন কেঁটে যায়।ধীরে ধীরে সবাই নাইমার কথা ভুলে যেতে থাকে।

নীলয় ও আবার রেস্টুরেন্টে যায় যায় রেস্টুরেন্টের ব্যাবসা ও খুব ভালো চলছিলো এক কথায় মিম পিছনের সকল ক্লান্তি ভুলে এখন নতুন করে নতুন ভাবে জীবন পার করছে।অন্যদিকে আয়ান ও অনেক হতাশা নিয়ে হলেও সুন্দর ভাবেই জীবন পার করছে। তবে আয়ান মনে হয় না মিম ব্যাতিত অন্য কাউকে তার জীবনের সাথে জড়াবে।অন্যদিকে নীলয়ের বাসায় নীলয়ের বাবা মা তাকে পেশার দিতে শুরু করে।

নীলয় তার বাবা মায়ের কাছে বলে আব্বু তোমরা আমাকে আরও কিছুদিন সময় দাও?

নীলয়ের বাবাঃদেখ বাবা নীলয় আগে আমাদের বাসায় তোর বোন ছিলো বাসায় সারাদিন থাকলেও আমাদের বিরক্ত লাগতো না।কিন্তু এখন তুই কাজে যাওয়ার পর বাসায় আমাদের একা একা লাগে।আর কয়দিন ই বা বাঁচবো বাবা যদি নাতি নাতকুরের মুখ দেখে যেতে না পারি তাহলে কি করে হয়.তুই বাবা আর সময় নিস না দয়া করে এইবার বিয়ে টা করে ফেল।

নীলয়ঃআচ্ছা বাবা আমাকে আর মাত্র কয়েকদিন সময় দিন আমি দেখি এরমাঝে যদি হয় তাহলে আমি আপনাদের বলবো বিয়ের কথা।

নীলয় এখন চিন্তায় পড়ে গেলো সে কি করবে।কারণ এখন তার হাতে আর কোনো অপশন নেই।কেনোনা তার বোন মারা যাওয়াতে নীলয়ের উপর এখন সব পেশার পড়েছে।তাছাড়া নীলয়ের বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে যাওয়াতে নীলয়ের মা ঠিক মতো রান্নাও করতে পারছে না।

নীলয় কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।এদিকে মিম তার বিয়ে সাধী সংসার এই সব কিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে সে তার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে।তবে এখানে মিম কেও তার বাবা মা ভাই সবাই বিয়ের জন্য পেশার দিতে থাকে।বিশেষ করে মিমের মা মিম কে বলে মা এভাবে তোকে দেখতে আমাদের আর ভালো লাগছে না।

যতো যাই হোক তুই তো আমাদের সন্তান আর কোনো বাবা মাই সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারে না।।মিম তার বাবা মা কে একটা কথাই বলে বাবা আমি সারাজীবন তোমাদের সাথেই থাকবো।কারণ আমি ভালোবেসে একবার যাকে বিয়ে করেছি তার সাথে যেহেতু আমি সংসার করতে পারিনি তাই আমি আর কখনো অন্য কারো সাথে সংসার করতে পারবো না।

আমার এই মনে আমি আয়ান ব্যাতিত অন্য কাউকে স্থান দিতে পারবো না সে যেই হোক।আর আমাকে নিয়ে যদি তোমাদের কোনো সমস্যা হয় তাহলে বলে দাও আমি ধুরে কোথাও চলে যাই।যেখানে গেলে কেউ আর কখনো আমাকে খুঁজে পাবে না।মিমের এই কথা শুনে মিমের বাবা আর তাকে কিছু বলে না।

আমাদের সমাজে আশাপাশে খুঁজলেই এমন অনেক মানুষ পাবেন যারা একজন ভালোবেসে যেমন এক নারীতে আসক্ত হয়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে এক পুরুষে আসক্ত হয়ে তাকে ভালোবেসেই সারাজীবন পার করে দেয়।

মিম ও ঠিক তেমন টাই চাইছিলো যাকে সে মন থেকে ভালোবেসেছে তার এই মন থেকে সে সেই নামটি কখনোই সরাতে পারবে না।অন্যদিকে নীলয় এইবার কি করবে সে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।কারণ তার হাতে এখন আর কোনো অপশন ই নেই।

তবে এইবার নীলয় মনে মনে ভাবলো যেহেতু আমার হাতে আর অপশন নেই তাই আমার এখন উচিত সকল সংকোচ ভুলে মিমের কাছে যেয়ে সব ঘটনা খুলে বলা।আমি যদি মিম কে নাই বলে যে আমার স্কুলের ভালোবাসার মানুষটি আসলে অন্য কেউ নয়।সে আসলে মিম ই ছিলো যার জন্য আমি এতো বছর অপেক্ষা করেছি যার জন্য আমি এখনো বিয়ে করিনি সেই মানুষটি অন্য আর কেউ নয় সেই মানুষটিই হলো মিম।

কিন্তু মিম কে এটা মেনে নিতে পারবে?আমি তার বন্ধু হয়ে যদি তাকে ভালোবাসার বিয়ের অফার করি এটা কি সে মেনে নিবে?নীলয় একসাথে সব কথাই ভাবছে তবে এখন নীলয়ের হাতে আর কোনো অপশন নেই।তাই এখন না চাইলেও নীলয় কে তার ভালোবাসার কথা মিম কে জানাতে হবে।

পরদিন নীলয় মনের মধ্যে অনেক সাহস নিয়ে মিমের কাছে বল্লো আজকে কি সেই পার্কে একটু যেতে পারবা?যেখানে আয়ান আর তুমি বসে অনেক গল্প করতা অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে যেই পার্কের মিম বল্লো হ্যাঁ যাওয়া যায় তো সমস্যা নেই।আজকে বিকেলে যাবো তাহলে। এরপর রেস্টুরেন্টে সকল কাজ শেষ করে নীলয় আর মিম সেই পার্কে যায়।পার্কে যেয়ে তারা একটি ব্যাঞ্চে বসে।

পরে নীলয় ই বলতে শুরু করে আসলে মিম আমি তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছি। এই কথা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিম হ্যাঁ বলো আমি শুনছি।
নীলয় ভয়ে ভয়ে বলতে লাগলো আমি এতোদিন তোমাকে যার কথা বলেছি যেই মানুষটিকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি যার জন্য আমি এখনো অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করিনি সেই মেয়েটি আর কেউ নয়।

আমার সেই স্কুল ভালোবাসার মানুষটি হলে তুমি।আর আমি এখনো তোমার জন্যেই অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করিনি। তোমার একটি বিয়ে হয়েছে তার সাথে ডিভোর্স হয়েছে এই সব জেনেও আমি এখনো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার লাইফে আমি অন্য কোনো মেয়েকে আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে ভাবতেই পারিনা।

****আমি আগে যতো গল্প লিখেছি তার ভিতর এই গল্পটাই ছিলো সবচেয়ে বড় গল্প।আর আগামীকালকেই এই গল্পের শেষ পার্ট পোস্ট করবো।
তবে একটি কথা একটি গল্প কিন্তু কখনোই সবার মন মতো হবে না।কারো কাছে গল্পটি খারাপ লাগবে কারো কাছে ভালো লাগবে।আর এই ভালো খারাপ নিয়েই কিন্তু আমাদের এই জীবন। ****

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে