ডিভোর্সের পরে পর্ব-২২+২৩

0
921

#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃ২২
#লেখকঃরিয়াজ

আয়ান নিচে নেমে সোজা নাইমার কাছে গেলো।আর তাকে গিয়ে বল্লো আপনি এখনো যান নি?

নাইমাঃআমি আপনার বন্ধুত্ব না পাওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবো না।

আয়ানঃহঠাৎ করেই কি কেউ কারো বন্ধু হয়ে যেতে পারে আপনি ই বলেন না?

নাইমাঃতা পারে না।তবে আমি এতোকিছু জানিনা।আমি শুধু জানি আমি আপনার বন্ধু হতে চাই বেস।

আয়ানঃআমি বুঝতেছি না।হঠাৎ করে আপনি আমার বন্ধু হতে চাচ্ছেন কেনো এতে আপনার লাভ কি?

নাইমাঃআমার লাভ নেই।আমাকে বন্ধু বানালে লাভ হবে আপনার। কারণ আমিই পারি আপনার একাকীত্ব ধুর করতে।

আয়ানঃআমার একাকীত্ব ধুর করার জন্য আমার বাবা মা আছে তারাই আমার জন্য যথেষ্ট। অন্য কাউকে আমার লাইফে লাগবে না।

নাইমাঃঠিক আছে যদি না লাগে তাহলে আর কি করার। তবে আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত মুখ দিয়ে স্বীকার না করবেন যে আপনি আমাকে আপনার বন্ধু বানিয়েছেন তার আগ পর্যন্ত আমি এখান থেকে নড়বো এই আমি বলে দিলাম।আর আপনি হয়তো জানেন না আমি মুখ দিয়ে একবার যা বলি তাই করি।

এই কথা শুনে আয়ান ও অনেক রেগে গেলো।একটি মেয়ে যা বলে তাই করে।বাহ বাহ থাক এই মেয়ে এই মেয়ের মতো থাক আমি আমার কাজে চলে যাই।এরপর আয়ান আর কিছু না বলে সেখান থেকে সোজা অফিসে চলে গেলো।

ওদিকে নাইমা সেখানেই বসে রইলো।
নাইমা অনেক রাগী একটি মেয়ে।ছোট বেলায় থেকেই ও যেটা করতে চায় সেটাই করে।নাইমা এখনো তার ব্যাতিক্রম নয়।আয়ান আজকে তার অফিসে টাইম শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সেখানে বসে রইলো এটা দেখার জন্য যে নিচে থাকা মেয়েটি চলে যায় নাকি তার জন্য অপেক্ষা করে।দেখতে দেখতে রাত প্রায় ১০ টা বেজে গেলো।

কিন্তু নাইমা না খেয়ে না বসে সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো।আয়ান অনেক ভেবে চিনতে নিঁচে নামলো।এখন আয়ানের মন একটু নরম হয়েছে। কারণ সে খেয়াল করেছে মেয়েটি সারাদিন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো।সারাদিনে এক গ্লাস পানিও খায়নি।

এরপর আয়ান অফিস থেকে নিচে নেমে প্রথমে নাইমার দিকে তার বোতলে থাকা পানি বাড়িয়ে দেয়।আর বলে হুম আমি বুঝে গেছি আমি তোমার রাগের সাথে পারবো না।তাই এতক্ষণ ইচ্ছে করে অফিসে বসে ছিলাম।যখন দেখলাম না।আমার বন্ধুত্ব পাওয়ার জন্য কোনো মেয়ে যেহেতু এতো কিছু করছে তাকে না হয় বন্ধু বানিয়েই ফেলি।তবে শুনো তোমার নাম যেনো কি?

নাইমাঃজ্বি আমার নাম নাইমা।

আয়ানঃহ্যাঁ নাইমা শুনো আমাদের সম্পর্কটি যাতে এই বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ থাকে।এরবেশি ভাবা বা করার চেষ্টা কখনোই করিও না।তাহলে আমাদের এই বন্ধুত্ব কিন্তু কখনোই থাকবে না।

আমি যেদিন বুঝতে পারবো তুমি বন্ধুত্বের সম্পর্ক অন্য দিকে নিতে চাচ্ছো সেদিন থেকে তোমার আমার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে।

নাইমা মনে মনে ভাবছে ধুর সে যা বলছে বলুক।আমি আমার মতো আগে আমার বন্ধু হয়ে নেক।এরপর আঁঠার মতো এমন ভাবে পিছে লেগে থাকবো যে সে আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না।তখন সে নিজেই আমার কাছে এসে বন্ধুত্বের সম্পর্ক শেষ করে অন্য সম্পর্ক শুরু করতে চাইবে।

নাইমা এইবার আয়ান কে বল্লো আচ্ছা তুমি আমাকে তোমার বন্ধু বানালেই হবে।আর আমি বন্ধুকে তুমি বলত্বলেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি।তাই তুমি করে বলছি দেখে আবার কিছু মনে করিও না।

আয়ানঃআচ্ছা সমস্যা নেই।বন্ধু যেহেতু হয়েছো এখন তুমি বলতেই পারো।যদিও তুমি আমার বয়েসে অনেক ছোট তবুও বন্ধুত্বে কোনো ছোট বড় নেই।আচ্ছা চলো আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।তোমার বাসা কোথায়?এইতো সামনেই রিকশায় ২০-২৫ মিনিট লাগবে।এরপর আয়ান নাইমাকে নিয়ে একটি রিকশায় উঠে।

রিকশায় যেতে যেতে নাইমা আয়ানের ফোন নাম্বার আর ফেসবুক আইডি নিয়ে নেয়।এখান থেকে নাইমা আর আয়ানের বন্ধুত্ব শুরু হয়।তবে নাইমা যে উদ্দেশ্য নিয়ে আয়ানের সাথে বন্ধুত্ব করেছে আয়ান এ সম্পর্কে কিছুই জানতো না।যাই হোক এরপর আয়ান নাইমা কি বাসায় নামিয়ে দিয়ে আয়ান তার বাসায় চলে যায়।

আর অন্যদিকে নীলয় আর মিম এখন অনেক কাছাকাছি। এরমাঝে মিমের অনেক উন্নতি হয়।রেস্টুরেন্ট বেশ ভালোই জমে উঠেছে। আর সাথে যেহেতু নীলয় আছে তাই মিমের কোনো সমস্যাই হচ্ছে না।তবে নীলয় তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে এখনো মিম কে ওর ভালোবাসার কথা বলতে পারেনা।তবে নীলয় অনেক বার চেষ্টা করেছে মিম কে তার ভালোলাগার কথা বলতে।কিন্তু প্রতিবারই সে বলতে গিয়ে আঁটকে গিয়েছে।

একদিকে নাইমা আর আয়ানের বন্ধুত্বের সম্পর্ক চলছে অন্যদিকে মিম আর নীলয় যতোই কাছাকাছি হচ্ছে কিন্তু নীলয় কিছুতেই মিম কে তার ভালোলাগার কথা বলতে পারছে না।মিম ই যে নীলয়ের সেই স্কুল লাইফের ভালোবাসা সেটা নীলয় কোনো ভাবেই মিমের কাছে প্রকাশ করতে পারছে না।

এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় ৬ মাস কেঁটে গেলো।৬ মাসে আয়ানের সাথে নাইমার আর নীলয়ের সাথে মিমের সম্পর্কের কোনো উন্নতি না হলেও তাদের অবস্থার বেশ পরিবর্তন হয়েছে। মিমের লোনের প্রায় সব টাকা শোধ করে আবার নতুন একটি লোন নিয়ে নেয়।(এখানে বলে রাখা ভালো যারা রেস্টুরেন্টের ব্যাবসা করে শুধু তারাই জানে এ ব্যাবসায় কি পরিমাণ প্রফিট হয়।

সেদিক থেকে মিম তার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি প্রফিট পেয়েছে। অন্যদিকে আয়ান ও ধীরে ধীরে তার কাজে মন দিচ্ছে।মিম কে বলতে গেলে সে ভুলার পথে।এক নাইমা আয়ানের জীবনে এসে আয়ানের পুরো জীবনটাই বদলে দিচ্ছে।কারণ নাইমা সারাক্ষণ আয়ানকে তার সঙ্গ দিচ্ছে।এতে আয়ান ও অনেক ভালো ফিল করছে।

নাইমার সঙ্গ আয়ানেত ভালোই লাগছে।একদিন নাইমা আয়ান কে একটি পার্কে ডাকে।বলে আয়ানের সাথে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।আয়ান ও সরলমনে সেই পার্কে আসে।আয়ান সেখানে আসার পর নাইমা আয়ান কে বলে আয়ান আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছি শুধু মাত্র তোমার মন পাওয়ার জন্য।

আমি তোমার অতীত বর্তমান এই সব কিছুই জানি।আর আমি সেই প্রথমদিন তোমাকে যখন দেখেছিলাম তখন থেকেই তোমাকে ভালোবেসে আসছি।আমি জানিনা তুমি আমার কথা গুলো কীভাবে নিবে।অনেকদিন তোমার সাথে বন্ধু হয়ে থেকেছিলাম।কিন্তু এখন আর আমি পারছি না।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।

আয়ান নিশ্চুপ হয়ে আছে।আয়ান কি উত্তর দিবে খুঁজে পাচ্ছে না।কারণ আয়ান নাইমার সাথে যতোই ক্লোজ হোক না কেনো আয়ান সব সময় নাইমা কে বন্ধু হিসেবেই দেখতো।

*আগামী পর্বে অনেক বড় চমক আছে।আমি লেখক আমার কাছে এটি একটি চমক হলেও পাঠক পাঠিকারা হয়তো এটা চমক হিসেবে মেনে নিবে না।(গল্প যত ভালোই হোক না কেনো গল্প যতো বড় হয় মানুষের আগ্রহ তত কমে যায়।তাই খুব দ্রুতই গল্পটি শেষ করে দিবো।)

চলবে??

#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃ২৩
#লেখকঃরিয়াজ

নাইমার এমন ব্যাবহারে আয়ান অনেক লজ্জিত হলো ।আয়ান কখনো ভাবেওনি যে নাইমা এমন একটি কাজ করবে।আয়ান অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর আয়ান নাইমা কে উত্তর দিলো নাইমা আমি তোমাকে সেই বন্ধুত্বের শুরুতেই বলেছি তুমি আমাকে কখনো বন্ধুত্বের বাহিরে কোনো সম্পর্কের কথা বলতে পারবে না।

তবে তুমি কি করলে?মাত্র ৬ মাস ও না যেতে তুমি আমাকে ভালোবাসার অফার দিচ্ছো?ছিহ নাইমা ছিহ আমি তোমার কাছ থেকে এমন ব্যাবহার কখনো আশা করিনি।তুমি আমার অতীত জানো তারপরেও এমন কাজটি করতে পারলে?

আজকে এখানেই আমার সাথে তোমার শেষ কথা।এরপর আয়ান চলে যাবে ঠিক তার আগ মূহর্তে আয়ান নাইমার দিকে ফিরে আবার তাকে বল্লো আমি আয়ান জীবনের শুরুতে যাকে ভালোবেসেছি তাকে আমি মূত্যুর আগ পর্যন্ত কখনোই ভুলতে পারবো না।

আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় মিমের জন্য যে জায়গাটি আছে সে জায়গা আমি অন্য কাউকে কখনো স্থান দিতে পারবো না।নাইমা শুধু তুমি না আমি আর কখনোই অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।কোনো মেয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক করবোনা। তুমি অনেক ভালো একটি মেয়ে।তুমি আমার চেয়ে হাজার গুন ভালো একটি ছেলে পাবে।কি দরকার আমার মতো বিবাহিত একটি ছেলের পিছে পরে থাকার?

অন্য মানুষের কথা আমি জানিনা।তবে আমি আয়ান যাকে একবার মন থেকে ভালোবেসেছি তাকে কোনোদিনও ভুলতে পারবো না।তুমি প্লিজ আমার চিন্তা মাঁথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলে দিয়ে ভালো একটি ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও।নাইমা মুখ দিয়ে আর একটি কথাও বের না করে সেখান থেকে চলে যায়।আমি নাইমা চরিত্র কে সামনে আনার প্রথম থেকেই কিন্তু বলে আসছি নাইমা অনেক রাগী একটি মেয়ে।

একবার নাইমা যেটি বায়না ধরে সেটা সে নিয়েই ছাড়ে।তবে সব কিছু জোর করে পাওয়া গেলেও ভালোবাসা যে জোর করে পাওয়া যায় না।নাইমা এবার এটা ভালো করেই বুঝেছে।তবে নাইমা এবার যা করেছি তা শুনলে পাঠক পাঠিকারা স্থীর থাকতে পারবেন না।কারণ ওইদিন আয়ানের সাথে কথা বলে নাইমা বাসায় যেয়ে দরজা যে লাগিয়েছে আর দরজাই খুলছে না।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত তারপরেও নাইমার দরজা খুলছে না।

নাইমার আব্বু আম্মু অনেকবার দরজায় নক করেছে কিন্তু নাইমা কোনো সাড়া দেয়নি।অন্যদিকে নাইমার ভাই নীলয় ছিলো রেস্টুরেন্টে তাই সেও এ ব্যাপারে কিছু জানেনা।নীলয় রাতে অনেক দেরি করে বাড়িতে ফিরে তাই সে আর নাইমার কোনো খোঁজ নিতে পারেনি।

ভেবেছে নাইমা ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর নাইমা কে সে ঘুম থেকে জাগায় ও না।দরজাও নক করে না।পরদিন সকালে নীলয় রেস্টুরেন্টে যাবে তবে সে নাইমা কে কোথাও দেখছে না।পরে সে তার আব্বু আম্মুর কাছে জিজ্ঞাসা করলো নাইমা কোথায় তার আম্মু বল্লো বাবা কালকে বিকালে নাইমা বাসায় এসে যে দরজা লাগিয়েছে এখন পর্যন্ত দরজা খুলেনি।

এই কথা শুনে নীলয় প্রচন্ড রেগে যায়।আর নাইমার রুমের সামনে যেয়ে দরজা নক করতে থাকে।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছিলো না।এখন নীলয় ও টেনশনে পড়ে গিয়েছে তাই নীলয় ধৈর্য হারা হয়ে অনেক কষ্টে হাতুড়ি দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ডুকে যায়।তবে ভিতরে ডুকার পর নীলয় যে দৃশ্য দেখে সেই দূশ্য দেখে নীলয় জায়গায় স্থীর থাকতে পারলো না।

সোজা দাঁড়ানো থেকে বসে গেলো।আর সাথে সাথে পুরো বাসায় কান্নার রোল পড়ে গেলো।কারণ নীলয় ভিতরে ডুকে দেখে রুমের মধ্যে নাইমার দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।নাইমা গলায় ওড়ানা পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্বহত্বা করেছে।(যদিও আমি আত্বহত্বা কে কখনো সমর্থন করিনা।তবে এটি একটি নিছক গল্প মাত্র।)তবে এটাও সত্য যারা আত্বহত্বা করে মারা যাওয়ার সাহস পায় না।তারা এই পৃথিবীতে যতোদিন বেঁচে থাকে জীবন্ত লাশ হয়েই কিন্তু বেঁচে থাকে।

নাইমার ভাই নীলয় আর নাইমার বাবা মিলে ফ্যান থেকে নাইমার ঝুলানো দেহ নামিয়ে নিচে আনে।নীলয় দ্রুত ডাক্তার কে কল দিয়ে বাসায় ডাকে।ডাক্তার বাসায় এসে জানায় উনি আরও প্রায় ৮-৯ ঘন্টা আগেই মারা গিয়েছে। নীলয় ভেবে পাচ্ছে না তার ফুলের মতো বোন কি জন্য আত্বহত্বা করলো।নীলয় পুরো রুমে খূঁজতে লাগলো নাইমা কোনো নোট লিখে গিয়েছে কিনা।কিছুক্ষণ পরেই নীলয় নাইমার ডাইরি তে একটি নোট পায়।সেখানে লিখা ছিলোঃ

ভাইয়া আব্বু আম্মু আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।আমি জানি তোমরা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো তোমরা কিছুতেই আমার এই মূত্যু মেনে নিতে পারবে না।তবে তোমরা জানো আমি সেই ছোট বেলা থেকেই অনেক রাগী একটি মেয়ে।আমি যেটা চাই সেটা না পাওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হয় না।তবে এইবার আমি যেটি চেয়েছিলাম সেটা পাইনি।আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম তাকে পাইনি।আর তাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।তাই আমি আত্বহত্বার পথ বেঁছে নিয়েছি।তবে তার কোনো দোষ নেই।তার মনে সেই শুরু থেকে অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা ছিলো আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে পেয়ে তার আগের মানুষের কথা ভুলে যাবে।কিন্তু সেটি হয়নি।সে তার আগের মানুষ কে কখনোই ভুলতে পারবে না।আমাকে সোজাসাপটা জানিয়ে দিয়েছে। আর আমি যাকে ভালোবেসেছি তাকে ছাড়া আমিও যে থাকতে পারবো না সেটা আমি আমার জীবন দিয়ে বুজিয়ে দিয়ে গেলাম।
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।

_____নাইমা।

নীলয় কি বলবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।শুধু চিৎকার দিয়ে তার একমাত্র ছোট বোনের জন্য কান্না কর‍তে থাকে।এরমাঝে মিম যখন জানতে পারে এমন ঘটনা হয়েছে মিমের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আয়ানের সাথেই নাইমার কিছু হয়েছে। তাই মিম প্রথমে নীলয়দের বাড়িতে না যেয়ে সে আয়ান দের বাড়িতে যায়।

আর চিৎকার দিয়ে আয়ান কে ডাকতে থাকে।আয়ান মিমের কন্ঠ শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।হঠাৎ মিম এখানে কেনো আসবে?পরে আয়ান রুম থেকে বের হয়।আয়ান মিম কে বলে তুমি হঠাৎ এখানে কি মনে করে কি হয়েছে?

মিমঃকি হয়েছে তুমি জানোনা কিছু?

আয়ানঃনা আমি কি করে জানবো কি হয়েছে?

মিমঃনাইমা কে তো এতোদিনে নিশ্চয়ই তোমার চেনা হয়ে গিয়েছে। আর নাইমা নামে সেই মেয়েটি গতকাল রাতে আত্বহত্বা করে মারা গিয়েছে। আজকে সকালে তার রুম থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।এরমাঝে নীলয় ফোন দিয়ে মিমের কাছে সব ঘটনা খুলে বলে।

এরপর আয়ান মিম কে বলে নাইমা কেনো আত্বহত্বা করতে যাবে?নাইমা আমাকে তার বন্ধু বানিয়েছিলো আমি তাকে বন্ধুত্বের শুরুতেই বলে দিয়েছি যাতে সে বন্ধুত্বের বাহিরে আমার সাথে অন্য কোনো সম্পর্কের কথা না বলে।

কিন্তু তারপরেও গতকাল সে আমাকে সে নাকি আমাকে ভালোবাসে তার কাছ থেকে এমন আচরণ আমি কখনোই আশা করিনি।আমি তাকে গতকালকেই বলে দিয়েছি জীবনের শুরুতে আমি যাকে ভালোবেসেছি সারাজীবন তাকেই ভালোবাসবো। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি আমার হৃদয়ে স্থান দিতে পারবো না।

মিমঃআয়ান তুমি কাজটা মোটেও ভালো করোনি।তোমার একটি পুতুলের মতো মেয়ে আত্বহত্বা করে মারা গিয়েছে। তুমি চাইলেও আমাকে ভুলে তাকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করে সারাজীবন কাঁটিয়ে দিতে পারতা।নাইমা মৃত্যুর জন্য তুমিই দায়ী।তুমি থাকো আমি নাইমাদের বাড়িতে গেলাম।

আয়ানঃআমিও যাবো?

মিমঃএখন তুমি সেখানে গেলে সন্দেহের তীর টা কিন্তু তোমার দিকেই আসবে।নাইমা সেখানে তার ভালোবাসার মানুষের নাম উল্লেখ করেনি।তাই বেঁচে গিয়েছো।নাহলে এখন চৌদ্দশিকের মধ্যে থাকতে হতো তোমাকে।

এই কথা গুলো বলেই মিম সেখান থেকে চলে যায়।আর এই সব কথা কিন্তু আয়ানের বাবা মাও শুনে।

আয়ান কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে এখানে তার দোষ টা ঠিক কোথায়।সে কি করলো?জোর করে কি কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় নাকি।আজ কোনো দোষ না করেও আয়ান দোষী।

অন্যদিকে মিম চলে যায় নাইমাদের বাসায় ততক্ষণে বাসায় পুলিশ চলে আসে।পুলিশ এসে সকল ইনবিস্টিগেশন শেষে বুঝতে পারে এটি একটি আত্বহত্বা। তাই সেখানে থাকা এস আই শোকের মধ্যে আর শোক না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়।আর এস আই ছিলো নীলয়ের পরিচিত তাই সে বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।নীলয়ের মাঁথায় কিছুতেই আসছে না ছেলেটা আসলে কে।

অনেক ভেবে চিনতেও সে খুঁজে বের করতো পারলো না ছেলেটা কে।কিন্তু মিম ঠিকই জানে যে ছেলেটা কে।তবে মিম এখানে কিন্থ আয়ান কে বাঁচাচ্ছে।যতো যাই হোক একসময় তো দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতো।

আর মিম খুব ভালো করেই জানে এখানে আয়ানের কোনো দোষ নেই।যদি আয়ানের নাম বলে দেয়া হয় তাহলে অকারণেই তাকে নানান ঝামেলায় পড়তে হবে।কান্না দুঃখ বেদনা সব এক করে নীলয় তার বোনকে দাফন করে।শেষবারের মতো আয়ান নাইমার মুখ না দেখলেও সে নাইমার জানাজার নামাজে কিন্তু ঠিকই হাজির হয়েছিলো।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে