#ঠিক_যেনো_love_story
#10(অন্তিম পর্ব)
#Esrat_jahan_Esha
১৯.
ডাক্তার সুনীল রিমলিকে ফোনে না পেয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যায়। আসলে সামনে কি হতে চলেছে কিভাবে আটকাবো এই বিয়ে? মেয়েটার মান সম্মান সব জড়িত বিয়ে ভাংগাও তো সম্ভব না।
কতক্ষণ পর রিশাত আবারো ডাক্তার সুনীল কে ফোন দেয়।
কিরে দোস্ত কোনো খবর পেয়েছিস?
— নাহ রিমলির ফোন অফ।
— দেখ দোস্ত এমন করিস না আমার মেয়েটার অবস্থা ভালো না। আচ্ছা রিমলির ঠিকানা আছে তোর কাছে? আমি এখনি রওনা করব রিমলির সাথে মেয়েটার দেখা করাতে পারলেই হবে।
রিশাত রুহামার জন্য একসময় কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে প্লিজ সুনীল রিমলির সাথে একবারের জন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা কর দরকার হয় ওর শশুর বাড়ি রুহামাকে নিয়ে যাবো। আমার মনে হয় রুহামাকে রিমলি বুঝালে ও ঠিক বুঝবে।
সুনীল কি বলবে মাথায় কাজ করছে না। এমন একটা সময় মাথায় কিছু আসছে না। আচ্ছা আমাকে একটু একা ভাবতে দে।
ডাক্তার সুনীল অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে রেবা কে ফোন দেয়।
— রেবা আমি ডাক্তার সুনীল বলছি।
— জ্বী স্যার বলুন। আপনাকে কেমন যেনো আপসেট মনে হচ্ছে?
— আচ্ছা রেবা রিমলির বাসা তুমি চেনো?
— জ্বী স্যার।
— ওকে তাহলে তুমি ঠিকানা আমাকে একটু টেক্সট করে পাঠাও।
— ওকে স্যার।
ডাক্তার সুনীল রেডি হয়ে রিশাতের বাসায় যায়।
— দোস্ত কোনো ব্যবস্থা করতে পেরেছিস?
— জানিনা তবে চেষ্টা করছি তুই রেডি হ।রিমলির বাড়িতে যাবো।
ডাক্তার সুনীল লক্ষ্য করে রুহামার মুখ শুকিয়ে আছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। ডাক্তার সুনীল রুহামাকে কাছে টেনে এনে বলে মা রুহামা তুমি ২ দিন ধরে নাকি কিছু খাওনি?
— চাচ্চু আমি মামুনির কাছে যাবো মামুনি না খাইয়ে দিলে আমি খাবো না। তুমি মামুনিকে আমার কাছে এনেছিলে না চাচ্চু? কোথায় আমার মামুনি আমার মামুনিকে আমার কাছে নিয়ে আসো চাচ্চু। সুনীল কে জড়িয়ে ধরে আবারো কান্না শুরু করে রুহামা।
মা রুহামা চলো আমি তোমাকে তোমার মামুনির কাছে নিয়ে যাবো। তার আগে তোমাকে এই খাবার টা খেতে হবে।
— যদি খাই তাহলে নিয়ে যাবে?
— হ্যা প্রমিজ।
,,,,
রিমনকে নিয়ে সাফওয়ান ওর মামা বাড়িতে আসে। ওর মামাতো ভাই সজিব কে দিয়ে রোহানের ঠিকানা বেড় করে সেইখানে গিয়ে রোহানের সাথে দেখা করে।
দেখা করে এসে সাফওয়ান রিমনকে বলে এবার দেখবি খেলা কি হয় সেটাই দেখতে থাক।
— মানে কি করত চাইছো তুমি।
— রিমলির হবু হাসবেন্ড কে যা বলে এসেছি তাতে বিয়েটা কোনো ভাবেই হবে না। তবে পুলিশ তো একটু যাচাই-বাছাই করবে। করলে করুক তাতে আমার কিছু না যা সত্যি সেটাই বলেছি। বিয়েটা সময়ের এক মিনিট আগে হলেও ভেংগে যাবে।
— তবে ভাইয়া এখানে রিমলির মান সম্মানের দিকটা জড়িয়ে আছে। যা করছো সেটা পরে তোমার দিকে অপবাদ আসবে।
— শোন পরেরটা পরে ভাবা যাবে আগে বিয়েটা ভেংগে যাক। রিমলি নিজে অনুরোধ করবে আমাকে ওকে বিয়ে করে ওর সম্মান বাঁচানোর জন্য।কিন্তু তার আগে তুই ওর সাথে গিয়ে দেখা করে আয় দেখ ও শেষ বারের মতো রাজি হয় কিনা।
—আচ্ছা দেখছি।
,,,,,
রিমলি নিজের রুমে আনমনে রুহামার কথা ভাবছে জানিনা মেয়েটা কি অবস্থায় আছে। কি করছে মেয়েটা আচ্ছা রুহামা কি আমাকে মনে করছে? আচ্ছা স্যার কি মনে করেছে একবারো? মনে হয়না মনে করার কি আছে যাই হোক কাল বিয়ে এতো ভেবে চিন্তে লাভ নেই কয়দিনের মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই হয়না। তবে যাই যা হোক রুহামাকে খুব মিস করছি ওর জন্য একটু হলেও মা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।
এর মধ্যে রিমন এসে রিমলিকে ডাক দেয়।
রিমলি রিমনকে দেখে রাগে জিজ্ঞেস করে তুই এখানে কেনো এসেছিস? মতলব কি তোর?
— রিমলি আপু ঠান্ডা মাথায় একটা কথা শুনুন সাফওয়ান ভাইয়া আপনার জন্য এখানে এসেছে প্লিজ বিয়েটা ভেংগে দিয়ে ভাইয়াকে মেনে নেন।
— তোর মাথা খারাপ তোদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিয়েটা করছি অতীত কে বর্তমানে টানতে চাই না। আর তোকে যেনো এই বাড়ির আশে পাশে না দেখি মনে রাখিস এটা তোর বাপের, নানা, দাদা কারো এলাকা না। এটা আমার এলাকা কোনো ঝামেলা চাই না চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা।
রিমন রিমলির কথার ধরন দেখে ভয় পেয়ে যায় তাই কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।
রিমন সাফওয়ান কে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়ে বলে ভাইয়া রিমলি আপু সে বলেছে তুমি তার বা পােয়র গোরালী সমান অতীত কে বর্তমানে টানবে না। কখনো তোমাকে বিয়ে করবে না দরকার হয় নিজেকে শেষ করে দিবে।
রিমনের কথা শুনে সাফওয়ান প্রচুর রেগে যায় এতো সাহস হয়েছে এর শেষ দেখে ছারব আমাকে বিয়ে করার জন্য ও পা ধরবে।
এদিকে রেবার দেওয়া ঠিকানা নিয়ে ডাক্তার সুনীল রিশাত আর রুহামাকে নিয়ে রিমলিদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
২০.
সকাল সকাল রিমলির সৎ মা চিৎকার দিয়ে রিমলিকে চরিত্রহীনা বলে গালী দেওয়া শুরু করে। রিমলি ব্যপারটা বুঝতে পারছে না আজ এমন একটা দিনে মা কি শুরু করেছে?
— আপনি এভাবে মেহমান ভরা মানুষের সামনে আমাকে গালাগালি করছেন কেনো?
— চুপ অপয়া এতো দিন তুই কার বাসায় ছিলি? একটা অবিবাহিত মেয়ে হয়ে একটা বিবাহিত ছেলের বাসায় থাকতে লজ্জা করে না? ধর্মের কল বাতাসে নরে সত্যি কখনো চাপা থাকে না। ছেলে পক্ষ বিয়ে ভেংগে দিয়েছে কোনো ভাবেই এই বিয়ে করতে পারবে না।
মান সম্মান একদম ধুলোতে মিশিয়ে দিয়েছিস। কিছু রাখলো না একদম মায়ের মতো হয়েছিস তোর মা তোকে মানুষ করতে পারেনি।
রিমলি ওর মায়ের কথা শুনার সাথে সাথে ওর সৎ মায়ের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
অনেক বলেছেন আর একটা কথাও যেনো আপনার মুখ থেকে বের হতে না দেখি এতক্ষণ আমাকে নিয়ে যত বাজে কথা বলার বলেছেন কিন্তু আমার মরা মাকে নিয়ে একটা কথাও সহ্য করব না।
আপনি আমাকে এতো কথা বলার কে? আমি যেখানে খুশি সেখানে থাকব তাতে আপনার কি?
কে বলেছে আপনাকে আমার জন্য ছেলে দেখতে আমি আপনাকে বলেছিলাম আমার জন্য ছেলে দেখেন? খুব মায়ের দায়িত্ব পালন করতে আসছেন বিয়ে দিয়ে। শুনুন আপনি এই আপনি একটা ডাইনী মহিলা আপনাকে বাবা বিয়ে করেছিলো আমাকে দেখাশুনা করার জন্য কিন্তু আপনি কি করেছেন আমার সাথে? মনে আছে আপনার আমাকে ২ দিনে ভাত দেননি আমি শুকিয়ে কাট হয়ে গিয়েছিলাম আমার খালা তিনি দয়া করে আমাকে তার কাছে আশ্রয় দিয়ে এতোদূর নিয়ে এসেছে। যদি কিছু বলতে হয় উনি বলবে আপনি বলার কেউ না। আর আমি এখন নিজের পায়ে দাড়িয়েছি নিজেরটা নিজে ইনকাম করে খেতে পারব। আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।
— পাপ করে আবার গলা উঁচু করে কথা বলো? দেখ তোর বাবার সম্মান কোথায় গিয়ে ঠেকছে। সবাই ছি ছি করছে৷
— শুনুন আমি জানি আমি কোনো পাপ করিনি। কে কি ভাবল তাতেও আমার কিছু যায় আসে না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
গ্রামের লোকেরা সবাই ছি ছি করছে কে বিয়ে করবে ওকে? এতো বড় জঘন্য কাজ করতে পারে আল্লাহ মাফ করুন এই মেয়ের বিয়ে দিতে অনেক ঠ্যালা আছে। কেউ বিয়ে করবে না।
রিমলির বাসায় বড় রকমের একটা জটলা তৈরি হয়েছে গ্রামের লোকেরা যে যা পারছে মন মতো নিজের মতো আন্দাজ করে বলে যাচ্ছে।
সজিব, রিমনকে সাথে নিয়ে সাফওয়ান রিমলির বাড়িতে এসে রিমলিকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব রাখে। রিমলি এবার সরাসরি সাফওয়ানের মুখোমুখি হয়।
— তুই আমার নামে দুর্নাম ছড়িয়ে দিয়েছিস বিয়েটা তুই ভেংগেছিস তাইনা? তোর মতো নর্দমা এর থেকে বেশি আর কি বা করতে পারবে।
— শোনো রিমলি সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
— হা হা হা ভালোবাসি বলতে লজ্জা করে না তোর? শোন আমার মা এতো আশা করেও যেখানে আমার সুখের মুখ দেখে যেতে পারেনি তোর জন্য মাকে হারিছি তোর জন্য বাবার চাকরি চলে গেছে আর তোকে কিনা আমি বিয়ে করব। কখনো না যা আমার মা দেখে যায়নি তা আমারো দরকার নেই। মরে যাবো তাও তোর মত শয়তান কে কখনো স্থান দিবো না। তুই বের হ বাড়ি থেকে নাহলে কিন্তু,,,
সাফওয়ান কোনো ভাবেই রিমলিকে বুঝাতে পারেনি। রিমলি ওর সামনে থেকে দ্রুত রুমে এসে দরজা আটকে দেয়। বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে আর কতো? কি হচ্ছে এগুলো আমার সাথে? আমি আর নিতে পারছি না।কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি?
রিমলির বাড়ি একদম নিরাবতা বিরাজ করছে কারো মুখে টু টা শব্দ নেই। রিমলি সেই সকালে রুমে যাওয়ার পর আর বেড় হয়নি। মাগরিবের আজান হবে হবে এমন সময় একটা গাড়ি রিমলিদের বাড়ির সামনের রাস্তায় থামে। গাড়ি থেকে রুহামা বেড় হয়েই মামুনি মামুনি বলে চিৎকার দিয়ে রিমলিদের ঘরে উঠেছে এদিকে রিমলির সৎ মা নিরব দর্শকের মতো চেয়ে আছে কি বলবে কাকে বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
তবুও কিছু না বললেও তো হয়না।
তাই রুহামার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে এই মেয়ে কাকে চাও?
রুহামা একটু ভয় পেয়ে ঢোক গিলে উত্তর দেয় মামুনির কাছে যাবো।
— কে তোমার মামুনি?
ডাক্তার সুনীল পিছন থেকে বলে রিমলি ওর মামুনি। ওর বিয়ে হয়েছে কোথায়? ওর শশুর বাড়ির ঠিকানা দিন আমরা ওর সাথে ইমার্জেন্সি দেখা করতে চাই।
রিমলির মা একটু মুখ বাকা করে বলে অপয়া চরিত্রহীনার আবার বিয়ে? বিয়ে হয়নি ভেংগে গেছে।
রিশাত কথাটা শুনেই মনে হয় যেনো মনে আশার আলো খুঁজে পেয়েছে।
রুহামা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠে মামুনি তুমি কোথায় মামুনি?
রিমলি বাইরে সবার কথার আওয়াজ শুনে মনে মনে ভাবে আবার কি হলো। হটাৎ কানে আসে রুহামা মামুনি মামুনি বলে চিৎকার করছে। রিমলি আঁতকে উঠল রুহামা? রুহামা এখানে কিভাবে আসবে?
রিমলির সৎ মা বলে রিমলি ঐ ঘরে আছে ওখানে গিয়ে ডাকো কান ঝালাপালা করে দিলা। রুহামা দৌড়ে রিমলির দরজায় গিয়ে মামুনি বলে ডাক দেয় রিমলি দ্রুত দরজা খুললে রুহামা রিমলিকে জরিয়ে ধরে মামুনি তুমি আমাকে ছেড়ে কেনো এসেছো? আমি কি অন্যায় করেছি আমাকে একটু বলেও আসলে না? লুকিয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে আসলে? আমার কথা কি তোমার একটি বারের জন্য মনে হয়নি? তুমি এতো পাষান মামুনি।
— আমার কোনো উপায় ছিলো না মা। এই যে দেখো আমি কোথাও যায়নি আমি তোমার মামুনি তোমার আছি।
এবার ডাক্তার সুনীল রিমলির কাছে গিয়ে বিনয়ের সাথে বলে রিমলি এতোদিন আমি তোমাকে জোর পূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ দিয়েছি। তবে আজকে জোর করে নয় তোমার কাছেই জানতে চাচ্ছি তুমি কি রুহামার মা হবে? এই এতিম মা মরা মেয়েটাকে মায়ের আদর দিবে? নিজের সন্তানের মতো মানুষ করবে?
রিমলি কতক্ষণ চুপ থেকে বলে স্যার সেটা কিভাবে সম্ভব? আর আমি টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করতে পারব না।
ডাক্তার সুনীল একটু হেসে বলে রিশাত কে বিয়ে করবে?
রিমলি একটু লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মাথা নিচে করে রুহামার হাত ধরে বলে স্যার ঐ যে আমার বাবা আছে আপনি তার সাথে আলোচনা করেন। আমি রুহামাকে নিয়ে ভিতরে যাই।
রিমলি রুহামাকে নিয়ে ভিতরে যাবে তখন রিশাত পিছন থেকে রিমলিকে ডাক দিলো। রিমলি একটা কথা ছিলো।
— জি স্যার?
— আসলে তুমি আসার পর থেকে রুহামা কিছু খায়নি পারলে ওকে কিছু খাইয়ে দিও।
— আচ্ছা স্যার।
,,,,,,
ঐ দিন রাতেই রিমলির সাথে রিশাতের বিয়ে হয়।
—রিমলি তোমার সাথে আমার বিয়েটা অস্বাভাবিক ভাবে হলো তাই না আমি কখনো ভাবতে পারিনি এমনটা হবে।
— স্যার এখানে সবচেয়ে বড় ভুমিকা আমার প্রাক্তনের সারাজিবন কাঁদিয়ে শেষ সময় একটা ভালো কাজ করেছে আমার বিয়েটা ভেংগে। দোয়া করি ও শান্তিতে থাকুক।
— এটাই কপাল। শেষ বয়সে একটা লাভ স্টোরি হয়ে গেলো।
— মানে?
— এই যে রুহামা মামুনি কে মা হিসাবে পায়।আমি নার্সকে বউ হিসাবে পেলাম।
রিমলি চোখ বন্ধ করে বলে আমিও মা না হয়েও মেয়ে পেলাম এতেই খুশি।
রিশাত বিয়ের কয়েক দিন পড়েই রুহামাকে আর রিমলিকে রেখে আমেরিকা চলে যায়।
.
.
.
বছর খানিক পড়ে রিশাত আমেরিকা থেকে দেশে এসে দেশেই বিজনেস শুরু করে রিমলি নিজের মেয়ের মতই রুহামাকে নিজের কাছে আগলে রাখে। রিশাতও রিমলিকে অনেক ভালোবাসে কেউ কখনো বুঝতে পারবে না রুহামার মা ভিন্ন।
(সমাপ্তি)