#ঠিক_যেনো_love_story
#09
#Esrat_jahan_Esha
১৭.
স্যার কি যে বলেন না অনেক শান্তিতে আছি। এই আপদ জীবন থেকে বিদায় নিলে বাঁচি। আরো একটা দিক দিয়ে ভালো হয়েছে।
ভ্রু কুঁচকে রিশাত জিজ্ঞেস করে কি ভালো হয়েছে?
রিমলি একটু মুখ বাঁকা করে বলে উঠে এই যে প্রতিদিন আপনার কন্যা ফুল গুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে রুম নষ্ট করত আর আমার পরিষ্কার করতে হতো এখন আর সেটা লাগছে না। তবে ফুল না আশায় রুহামা ভিষন চিন্তিত।
— হা হা তা বেশ বলেছো রুহামার খেলার জন্য ফুল গুলো বেষ্ট ছিলো। তোমার বিয়ের কতো দূর ছেলে দেখেছো?
–না দেখেনি তবে শুনেছি দেখতে মাশাআল্লাহ ভালো তবে একটা টেনশন রয়ে গেছে।
— কি?
— চেহারা মাশাআল্লাহ হলে কি হবে চরিত্র যদি অস্তাগফিরুল্লাহ হয়।
— বুঝলাম না।
—মানে একটু খোঁজ নিতে পারতাম ছেলের সম্পর্কে কিন্তু তা তো হচ্ছে না আমার মা আমাকে ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে দিবেন না ঠিকানাও দিবেন না যদি বিয়ে ভেংগে দেই সেই ভয়ে।
— ওহহ! আসলেই দুঃখ জনক। তা কি করবে ভেবেছ কিছু?
— কি ভাবব ভাগ্যে যা আছে তাই তো হবে। তাই ভাবছি বিয়ের আগে কয়দিন ইস্তেখারার নামাজ আদায় করব।
— ইস্তেখারার নামাজ সেটা কি? এটা পড়লে কি হবে?
—কোনো কাজের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছি। দোদুল্যমানতা ও দোটানায় আটকে থাকি মন অস্থির হয়ে পেন্ডুলামের মতো একবার এই দিক করি মনে করেন এই নামজটা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত পাওয়া বা সিন্ধান্ত নেওয়ার নামাজ।
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার (রহ.) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, ইস্তেখারা করা মানে কোনো বিষয় বাছাই ও নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় বাছাই করে নিতে হবে, সে যেন উত্তমটি বাছাই করে নিতে পারে, সে প্রার্থনা করা।
ইবনে আবু জামরা (রহ.) বলেন, ইস্তেখারার গণ্ডি শুধু ‘মুবাহ’ (করলে অসুবিধা নেই এমন) বিষয়ের ক্ষেত্রে এবং এমন মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, যে মুস্তাহাব অপর একটি মুস্তাহাবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক; সুতরাং দুটির কোনটি আগে পালন করবে কিংবা কোনটি বাদ দিয়ে কোনটি পালন করবে— সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবশ্য ইস্তেখারা বড়-ছোট সব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ অনেক ছোটখাটো বিষয়ের ওপর অনেক বড় বিষয়ও নির্ভর করে থাকে।
ইবনে আবু জামরা (রহ.) আরও বলেন, ইস্তেখারার দোয়ার আগে নামাজ পড়ার রহস্য হলো, ইস্তেখারার উদ্দেশ্য হচ্ছে, একসঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করা। আর এটি পেতে হলে মহান আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়া প্রয়োজন। আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার স্তুতি জ্ঞাপন ও তার কাছে ধরনা দেওয়ার ক্ষেত্রে নামাজের চেয়ে কার্যকর ও সফল আর কিছু নেই। মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহকে বলা আপনি আমার জন্য সেটা সহজ করে দেন।
মোট কথা, যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আল্লাহর সাহায্য পেতে এবং কল্যাণকর কাজ নির্বাচন করতে ইস্তেখারার নামাজ পড়তে হয়। এ নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে উল্লিখিত দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও কাজ যেন সহজসাধ্য হয় সে প্রার্থনা করা।
জাবের বিন আবদুল্লাহর আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করে বলেন, রাসুল (সা.) তার সাহাবিদের সব বিষয়ে ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন; যেভাবে তিনি তাদের কোরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন।
তিনি বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজের উদ্যোগ নেয়, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। অতঃপর দোয়া করবে। জানেন স্যার আরবি দোয়াটার অর্থটা খুব সুন্দর আমার কাছে দোয়ার অর্থটা এতো ভালো লাগে।
— বলো তো।
—হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা, আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত।
হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করবে অথবা মনে মনে স্মরণ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর হলে, আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন।
হে আল্লাহ! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’
(বুখারি, হাদিস : ৬৩৮২-৬৮৪১; তিরমিজি, হাদিস : ৬৪৮)
— ওহহ আচ্ছা তাহলে দেখো কি হয়। আল্লাহ ভরসা তোমার জন্য সব সময় দোয়া করি তিনি যেনো তোমাকে তোমার জন্য উত্তম জিনিসটাই দান করেন।
—- আমিন। আচ্ছা স্যার হাত ভালো হয়ে গেলেই কি আপনি বিদেশে চলে যাবেন?
— হুমম এইতো মাস খানিক থাকব তারপর চলে যাবো।
— ওহহ। মনে পড়বে আমার কথা?
— অবশ্যই কেনো মনে পড়বে না? তুমি আমার যে উপকার করেছো। আমার মেয়েটাকে কয়েক দিনে আপন করে নিয়েছো ও একদম তোমার সাথে মিশে গেছে। শুধু একটা কথাই ভাবছি তুমি চলে গেলে ও ঠিক কি করবে তুমি যেমন ওকে আপন করে নিয়েছো।
এর মধ্যে রুহামা রিশাতের মুখের কথা টেনে নিয়ে বলে উঠে কে চলে যাবে বাবাই? তুমি গেলে যাও আমি মামুনির কাছে থাকব মামুনিকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।
রিশাত, রিমলি রুহামার কথা শুনে একদম চুপ হয়ে যায়। রিমলি মুখে হাসি টেনে রুহামা কে জড়িয়ে ধরে বলে তোমার মামুনি কোথাও যাবে না তোমার মামুনি তোমার কাছে থাকবে সব সময়। আসো এখন পড়তে বসবে।
— ইয়ে,,,, মামুনি সব সময় আমার সাথে থাকবে। শোনো বাবাই তুমি যেখানে খুশি সেখানে যাও মামুনি কোথাও যাবে না।
রিমলি রুহামাকে রুমে নিয়ে পড়তে বসায়। এদিকে রিশাত মন খারাপ করে বসে আছে সামনে আসলে কি হতে চলেছে রিমলি চলে গেলে রুহামাকে কি বুঝ দিবো? বাচ্চা মানুষ ও কি বুঝতে চাইবে?
রিমলি রুহামার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আহারে মা মরা মেয়েটা আমাকে কতো আপন করে নিয়েছে ও যখন মামুনি ডাকে তখন কেমন যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করে। কেনো যে এমন টা হলো আল্লাহ ভালো জানেন কখনো তো মা হতে পারব না।নিজের অজান্তে কয়েক দিনের জন্য মায়ের মতো একটা স্বাদ পেয়েও আবার সেই স্বাদ টা হারিয়ে ফেলব।
— মামুনি তুমি কাঁদছ?
— না মা একটু চোখ জ্বলছে।
— তোমার চোখের পানি দেখে আমার কান্না আসে আমি চোখের পানি মুছে দিচ্ছি আর কাঁদবে না।
রিমলি মুখে হাসি এনে রুহামাকে জরিয়ে ধরে বলে পাগলি মেয়ে আমার।
১৮.
সাফওয়ান রিমলির খোঁজের জন্য রিমন কে রিশাতের বাসায় আবার পাঠালো। কিন্তু রিমন কোনো খোঁজ আনতে পারল না রিমলি নাকি গতকাল বাড়িতে চলে গেছে।
সাফওয়ান শুনে মনে মনে ভাবে তা তো ভালোই হয়েছে বাড়িতে গিয়ে ওকে বুঝাবো। কিন্তু রিমনের কাছে রিমলির বিয়ের কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়।
— কি বলছিস মাথা খারাপ হয়েছে?
— ঠিকিই বলছি আমি, রিমলি যার বাসায় ছিলো তার কাছে শুনেছি রিমলি গতকাল বাড়িতে চলে গেছে। পরে তোমার মামাতো ভাই সজিবকে দিয়ে খোঁজ নিলাম ও বলল আট তারিখ নাকি বিয়ে।
— নাহ এটা কখনো হতে দিবো না। রিমলিকে আমি বিয়ে করব।
— কিভাবে করবে হাতে সময় নেই আজ পাঁচ তারিখ। কিভাবে কি করবে?বিয়ে হয়ে গেলে করবে?
— তারাতারি সব গুছিয়ে নে আজই মামা বাড়িতে যাবো আর রিমলির কোথায় বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
— ভাইয়া তুমি অসুস্থ আর কয়দিন রেষ্ট নিতে হবে।
— লাগবে না রেষ্ট নেওয়া। তারাতারি সব ঘুছিয়ে নে আর কোথায় বিয়ে ঠিক হয়েছে কুইক বের কর।
—কি করতে চাইছ তুমি?
— এতো বুঝে কাজ নেই সময় হলে সব বলব। এখন যা বলছি তাই কর।
— ওকে।
,,,,,
রিশাত এখন পুরোপুরি সুস্থ, কিন্তু মনের দিক থেকে কেমন যেনো একটা অশান্তি লাগছে ঘরে একটুও ভালো লাগছে না রিমলি চলে যাওয়ার পর থেকে একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। রিশাত ব্যপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে হয়ত অনেক দিন ছিলো তাই একটু মায়া হয়ে গেছে। তবে নিজেকে বুঝানো গেলেও রুহামাকে বুঝানো কঠিন রুহামা রিমলি কে না দেখতে পেয়ে খাওয়া দাওয়া সব অফ।
শুধু একটাই কথা আমাকে মামুনির কাছে নিয়ে যাও প্লিজ বাবাই আমি মামুনির কাছে যাবো।
মামুনি কোথায় গিয়েছে মামুনি আমাকে কথা দিয়েছে আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তাও আমার থেকে লুকিয়ে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে রুহামার অবস্থা খারাপ চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে গিয়েছে।
রিশাত খুব চেষ্টা করছে রুহামাকে বুঝানোর কিন্তু রুহামা কিছু বুঝতে চাইছে না মামুনির কাছে ওকে এখনি নিয়ে যেতে হবে।
রিশাত কোনো উপায় না পেয়ে ডাক্তার সুনীল কে ফোন দেয়।
— দোস্ত কি করব রুহামার অবস্থা ভালো না। রিমলি চলে যাওয়ার পর কিছু মুখে তুলতে পারিনি। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাচ্ছে আবার উঠে কান্না শুরু করছে৷
— আমি কি করতে পারি বল? তোর প্রয়োজন ছিল তাই রিমলিকে পাশে রেখে ছিলি। রুহামা ছোট মানুষ ও কি বুঝে? ও কয়েক দিনের জন্য মায়ের মতো ভালোবাসা পেয়েছে তোর কি মনে হয় তুই মায়ের অভাব পুরন করতে পারো। তুই বাবা পারবি বাবার অভাব পুরন করতে কিন্তু মায়ের অভাব পুরন করতে একজন মমতাময়ী নারীর দরকার যেই মমতা রিমলির মধ্যে ছিলো। শোন আমি মানুষ চিনতে ভুল করি না তোকে বলেছিলাম রিমলিকে বিয়ে করার জন্য কিন্তু না সে কথাও তুই শুনলি না।
রিশাত ডাক্তার সুনীলের কথায় কতক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে সেটা আর সম্ভব না।
— কেনো সম্ভব না?
— রিমলির আট তারিখ বিয়ে।
— কি?
— তুই এটা আমাকে এখন জানাস আগে কেনো জানাসনি?
— প্লিজ দোস্ত যা হওয়ার হয়েছে তুই আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা কর। আমার মেয়ের জন্য আমি সব করতে পারব আমি বুঝতে পারিনি রিমলি চলে যাওয়ায় ওর অবস্থা এতো খারাপ হবে।
— আচ্ছা দেখছি কি করা যায়।
ডাক্তার সুনীল রিশাতের ফোন কেটে দিয়ে রিমলিকে ফোন দেয় কিন্তু রিমলির ফোন বার বার সুইচ অফ বলছে।
চলবে,,,,,,,,,