#ঠিক_যেনো_love_story
#06
#Esrat_jahan_Esha
১১.
রিমলি তুমি কি কোথাও বের হচ্ছো?
— জ্বী স্যার একটু বাইরে যাব কিছু জিনিস পত্রের দরকার।
— রুহামা?
— ঐ যে স্যার দেখুন।
— একই অবস্থা এ তো দেখি একদম তোমার মতো মাথায় হিজাব বোরকা পড়ছে।
— কি করব স্যার আপনার মেয়েকে নিয়ে তো আমি পারি না সে সব কিছু তে আমাকে কপি করে। এমন কি রান্নাও শান্তিতে করতে পারছি না। তাই ভাবছি আপনার মেয়েকে আলাদা সংসার করে দিবো ওর জন্য টুকিটাকি কিনব।
রিশাত মেয়ের কান্ড আর রিমলির কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ৷ আচ্ছা তাহলে যাও আর এই নেও টাকা যা যা লাগে কিনে নিয়ে এসো৷
— ওকে স্যার।
,,,,
রিশাত ডাক্তার সুনীলকে ফোন দেয়।
— কি বন্ধু কেমন আছো?
— আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। তোর কি অবস্থা।
— আমিও ভালো আছি। তা রিমলি কি ওর কাজ ঠিকঠাক করছে?
— করছে মানে একদম ঘরণী হয়ে গেছে আর রুহামা ওর সাথে মিশে গেছে ভাবছি ও চলে গেলে রুহামা আবার একা হয়ে যাবে আর রুহামার এই হাসি এই খুশি নষ্ট হয়ে যাবে।
—তা হাসি খুশি নষ্ট করার দরকার রেখে দিলেই পারো।
— মানে?
— নাহ কচি বাচ্চা কিছু বুঝো না। রিমলিকে বিয়ে করে নে তাহলে রুহামা নতুন মা পেলো তোর জীবন সঙ্গী হলো।
— সুনীল সব কিছু নিয়ে মজা করবি না। আমি বিয়ে করব না এটাই আমার শেষ কথা। বিয়ে নিয়ে আমাকে আর কিছু বলবি না।
রিশাত সুনীলের উপর একটু রাগ নিয়ে ফোন কেটে দেয়।
,,,,
রিমলি দুপুরে রান্না করছে পাশে রুহামা সেও রিমলিকে দেখে রান্না করছে। রিমলি দোকানে গিয়ে ছোট ছোট হাড়ি পাতিল কিনে এনেছে। রিশাতের রান্নাঘরে চোখ পড়তেই রুহামার দিকে চোখ পড়ে রুহামা ছোট ছোট হাড়িপাতিল নিয়ে রান্নাবাড়ি খেলছে।
রিশাত মুচকি মুচকি হাসছে আর বলছে মেয়েটা আমার, রিমলির সাথে একদম মিশে গেছে। আজ পরী বেঁচে থাকলে হয়ত এমনি হতো। পরীর কথা মনে পড়তেই রিশাতের চোখ ছলছল করে উঠে।
স্যার আপনি কাঁদছেন?
— কই না তো।
— আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আপনি কাঁদছেন।
— কিছু না পরীর কথা মনে হলো তাই আরকি।
— পরীকে স্যার?
— পরী আমার স্ত্রী রুহামার আম্মু।
— আচ্ছা স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করব যদি কিছু মনে না করেন?
— পরীর বিষয় জানতে চাইছো তাই তো?
— হ্যা স্যার। রুহামার মা কিভাবে মারা গেলো?
আচ্ছা বলছি তুমি ভিতর থেকে আমার জন্য একটা চেয়ার নিয়ে আসো আর এক কাপ কফি দাও।
— স্যার এখন কফি?
— হুমম।
রিমলি রিশাতের কথা মত একটা চেয়ার টেনে দেয় কতক্ষণ পর হাতে কফির কাপ দিয়ে বলে
— নিন স্যার আপনার কফি।
তুমি অনেক ফাস্ট কাজ করো রিমলি। রিশাত এবার চোখ বন্ধ করে কফিতে চুমুক দেয় আর বলতে শুরু করে,,,,
একদিন হটাৎ আমার মা এসে আমাকে বলে তোর জন্য মেয়ে দেখে এসেছি কালই তোর বিয়ে। আমি আমার বিয়ের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাগা খেয়ে যাই। এখনো পড়ালেখা শেষ হলো না জব নেইনি আর আম্মা বলা নেই কওয়া নেই এতো হটাৎ বিয়ে? আম্মাকে ভ্যাংচি কেটে বলে কেনো বাপ বউ আসলে কি তোর ভাগের খাবার খাবে? তার যেটা প্রাপ্য সেটা খাবে আর আমার একটা মেয়ে থাকলে তো,,,,,,
কথা শেষ না করেই আম্মা চলে যায়।
আমারো তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু মায়ের সাথে কথা বলার কোনো সাহস পাচ্ছি না। সাহস পাচ্ছি না বলতে আমাকে এরিয়ে চলছেন৷
খালার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে খালা উত্তর দেয় কেনো তোর কোনো পছন্দ আছে যে বিয়ের কথা শুনে এমন মুখ ভার করে আছো?
নাহ সেটা না পছন্দের কেউ থাকলে তো বলতাম কিন্তু আমার বিয়ে আর আমার মেয়ের সম্পর্কে জানার কোনো অধিকার নাই?
পরে জেনে নিস এখন নিজেকে প্রস্তুত কর বিয়ের জন্য।
ভালোই ভালো বিয়েটা হয়ে গেলো বাসর রাতে বউ দেখে আমি অবাক।ঘুমটা তুলো জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি?
পরী একটু রাগ নিয়ে বলল বারে বিয়ে করেছেন নামটাই জানেন না?
— আসলে আমার বিয়ে সেটাই আমি জানতাম না। আম্মার পছন্দ সবই।
— ওহহ আচ্ছা তো এখন কি আমাকে পছন্দ হয়েছে?
— নামটা তো বলবে?
— পরী।
— মাশাআল্লাহ! তুমি পরীর মতই সুন্দর।
আমার আর পরীর সংসার ভালোই চলতে ছিলো। কিন্তু পরীর একটা সমস্যা ছিল প্রতি মাসে রক্ত চেঞ্জ করতে হতো। প্রথম ৬মাস ও আমাকে জানায়নি কোনো না কোনো ভাবে বাবার বাড়িতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতো। ছয়মাস পরে আমি জানতে পারি ওর থ্যালেসেমিয়া রোগ আছে।
ওকে আমি প্রচন্ড পরিমান ভালোবাসতাম তাই আমার সাথে ওকেও আমেরিকায় নিয়ে যাই ভেবেছি ঐখানে ওর ভালো চিকিৎসা করাব।
আমেরিকায় যাওয়ার পর ঐখানেই ট্রিটমেন্ট করাই। বছরখানিক যেতেই সুখবর পাই আমি বাবা হতে যাচ্ছি। আমাদের ঘর আলো করে রুহামা আসে। একটা মিস্টি সংসার ছিলো আমার কিন্তু সেটা বেশিদিন স্থায়ী হলো না।
রুহামার যখন ৩বছর তখন পরীর থ্যালেসেমিয়া রোগ সাথে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথমবার যখন ক্যামো দেওয়া হয় তখনি ও মারা যারা যায় ছেড়ে চলে যায়। আমাকে আর আমার মেয়েটাকে একা রেখে স্বার্থপরের মতো সবাইকে ছেড়ে চলে যায়।
রিমলি তরকারি নাড়ছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে। এমন সময় রুহামা রিমলিকে জরিয়ে ধরে বলে উঠে মামুনি আমাকে চকলেট দাও রান্না করতে করতে আমি ক্লান্ত।
রিমলি চোখের পানি মুছে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে কি রান্না করেছো যে এতো ক্লান্ত? আসো আমার সাথে দিচ্ছি।
রিশাত চুপচাপ রুমে গিয়ে পরীর একটা ছবি বের করে ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। আর চোখের পানি ফেলছে।
রিমলি রুহামাকে চকলেট বেড় করে দিয়ে রিশাতের রুমে উকি দিতেই দেখে রিশাত কি যেনো দেখছে রিমলি মনে মনে ভাবে হয়ত পরী ম্যাডামের ছবি দেখছে।
রিমলি একটু কাশি দিয়ে বলে স্যার আপনার হাতে কি ম্যাডামের ছবি?
রিশাত চমকে উঠে বলে হু।
— আমাকে একটু দেখাবেন?
— সবই তো জানো দেখলে সমস্যা কি?
রিমলি পরীর ছবিটা হাতে নিয়ে বলে মাশাআল্লাহ স্যার ম্যাডাম তো অনেক সুন্দরী ছিলেন। আসলেই পরী পরীর মতই সুন্দর।
রিশাত আর পরীর স্টোরি শুনে রিমলি খুব মন মরা হয়ে থাকে বেলকনিতে গিয়ে একা একা ভাবে। নিয়তি মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। আল্লাহ জানে কার কপালে কি আছে। যে একদিন আমাকে আমি তার যোগ্য না বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলো সে আজ খোঁড়া হয়ে বিছানায় যে ছেলেটা বলেছিল আমাকে নাকি তুই তুকারি ছাড়া বলা যায় না সেই ছেলাটাও আপু সম্মোধন করে। আজ সাফওয়ান কেনো আমার সাথে যোগাযোগ করতে চায় ওর কি এখনো অনুতাপ হয়না? ও আমার কত ক্ষতি করেছে? আমার মাকে নিয়েছে আমার বাবার চাকরিটা খেয়ে ফেলেছে। আজ বাবার চাকরিটা থাকলে হয়ত সচ্ছল জিবন যাপন করতে পারতাম।
রিশাত স্যারের জীবনের গল্পটা আরো বেদনার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছে মেয়েটা কতো অল্প বয়সে মা হারা হয়েছে।
আসলে আমরা মানুষকে যেমনি দেখিনা কেনো তার যত যাই থাক কিন্তু কোনো একজায়গায় কোনো এক শুন্যতা সব সময় কুড়ে কুড়ে খায়।
ভাবতে ভাবতেই রিমলির নজরে পড়ে রিমনকে। রিমন কে দেখে রিমলির গলা শুকিয়ে আসে উফফ আল্লাহ মাফ করো এই শয়তানের হাত থেকে বাচাও কি চায় ওরা কি চায়? এখানের খোজ পেয়ে গেছে।
রিমলি দ্রুত বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে রুহামার পাশে শুয়ে পড়ে।
১২.
কিরে কোনো খোঁজ পেয়েছিস?
— হ্যা আজকে গিয়ে বাড়িটা দেখে এসেছি। তোমার পাখি ঐখানেই আছে।
— কে কে থাকে বাসায়?
— একটা ছেলে আর ছোট বাচ্চা আর তাদের দেখাশোনা করে রিমলি।
— তুই এক কাজ কর ওর বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস কর কতো টাকা দিলে আমার এখানে আসবে।
— ভাইয়া এটা বেশি হয়ে যায় না?
— কি বেশি হবে ও একা একটা মেয়ে এইভাবে দিনের পর দিন একটা ছেলের বাসায় পড়ে থাকে এটা কেমন দেখায়? ও আমার কাছে আসুক ওকে ডাবল টাকা দিবো।
— এই নে টাকা নিয়ে ওর মুখে ছুড়ে মারবি আর বলবি কথ টাকা দিলে ও আমার কাছে আসবে। মাথায় আমার রক্ত উঠে গেছে আর কয়টাদিন তারপর ওকে কি অবস্থা করি ও কল্পনাও করতে পারবে না।
রিমন সাফওয়ানের কথা মতো রিশাতের বাসায় গিয়ে নক দিতেই রিশাত এসে দরজা খুলে দেয় রিশাতকে দেখে চমকে উঠে ( এই ছেলেটাকেই তো ঐদিন হসপিটালে দেখেছিলাম তাহলে কি রিমলির পরিচিত কেউ)
কাকে চাই?
— ভালোই তো ঘরের মধ্যে মেয়ে নিয়ে এসে ফুর্তি করছেন।
— এসব কি বলছ মুখ সামলে কথা বলেন।
— ঘরে একটা যুবতী মেয়ে রেখে বলছেন মুখ সামলে কথা বলতে।
এর মধ্যে রিমলি এসে উপস্থিত হয়ে রিমনকে ঠাস করে একটা চর দিয়ে বলে উঠে।
এই শয়তান তোদের সমস্যা কি? আমার মাকে তোদের জন্য হারিয়েছি আমার বাবাকে চাকরি হারা করেছিস। আমাকে এমন একটা সময় তোর ভাই ফেলে গিয়েছিল ভাবিনাই জীবনের এতো দিন বেচে থাকব। হয়ত এই জন্যই বেঁচে আছি তোদের মত ইবলিস শয়তানের সাথে আবার দেখা হবে।
রিমন খুব ঠান্ডা মাথায় বলে শুনেন আপু মানুষ ভুল করে ভাইয়াও ভুল করেছে। তাই সব ভুলে মাফ করে দেন চলুন আমার সাথে।
রিমলি রিমন আবার একটা চর মেরে বলে দেয় শোন মরে যাবো তাও তোদের মতো জঘন্য কারো সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নাই। আর তোর ভাইকে বলিস অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আর ভুলেও যেনো আমার পিছনে না পরে। তাহলে তোর ভাইয়ের যে পা টা অবশিষ্ট আছে সেটাও ভেংগে দিবো।
রিমন দরজা থেকে বের হয়ে যায় আর বলতে থাকে দেখে নিবো ২ টা চরের প্রতিশোধ নিবোই।
চলবে,,,,,