ঝুমুর
শেখ নুরইসলাম
প্রায় ৫ বছর পর জার্মানি থেকে বাড়িতে এসেছি। সারাদিন আপনজনদের সঙ্গে গল্প করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। রাত ১১টা বাজতেই সকল জনসমাগম উপেক্ষা করে ঘুমানোর জন্য রুমে গেলাম। দুই ভাগনে বায়না ধরেছে রাতে আমার কাছে ঘুমাবে কিন্তু যেহেতু ক্লান্ত আমি সেজন্য একা নিরিবিলি থাকার সিন্ধান্ত নিলাম।
চোখে ঘুম ঘুম ভাব, এমন সময় ছোট কারো গলার আওয়াজ পাচ্ছি। ডাকতেছে, মামা ও মামা ওঠনা তোমার সাথে গল্প করব। ভেতর থেকে দরজা দেওয়া তবে বিছানার পাশে ডাকাডাকি করতেছে। তাহলে লক কি ভালোকরে আটকানো হয়নি। চোখে ঘুম ঘুম নিয়ে লাইটা অন করলাম। দেখতে পেলাম অপরিচিত ৬ বছরের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম লক করা আছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
– আম্মু! কে তুমি, আর তুমি এখানে কি করো? ভেতরে কিভাবে প্রবেশ করলে?
– আমি তো এই ঘরেই ছিলাম।
– মানে? দেখলাম যে তোমাকে?
– সকলে চক্ষুর আড়াল থেকে এখানে এসেছিলাম।
– কি চাও তুমি?
– তোমার সাথে গল্প করতে।
– তোমাদের বাড়ি কোনটা?
– ওই রশিদ মিয়ার ছোট মেয়ে।
– দেখতে তো খুব সুন্দর হয়েছ, আমি যখন দেশে ছিলাম তখন শুনেছিলাম তুমি জন্মেছ কিন্তু দেখা করতে পারি নেই। তা কিভাবে চিনলে আমাকে?
– ওই চিনেছি।
– নাম কী তোমার?
– ঝুমুর।
– খুব সুন্দর নাম তোমার, স্কুলে যাও কী?
– না, যাই না।
– এত বড় হয়ে গেছো, স্কুলে না গেলে মানুষের মতো মানুষ হবা কিভাবে? তোমার বাবাকে বলে স্কুলে ভর্তি করার সকল ব্যবস্থা করব আমি।
– আচ্ছা।
– আমাদের বাড়িতে আগে কখনো কি এসেছ তুমি?
– হ্যা, গত মাসে একবার এসেছিলাম।
– আমি আজকে আসব তুমি জানতে?
– শুনেছিলাম।
– তোমার বাবা- মা কী জানে তুমি এখানে এসেছ?
– না, লুকিয়ে এসেছি।
– তারা খোজ করবে না?
– করবে করুক।
– না, এমন করতে নেই মামনি। আমি তোমাকে বাড়িতে৷ পৌছে দিয়ে আসতেছি। আর তোমাকে আমি পড়াশোনার সকল ব্যবস্থা করে দিবো। তুমি কি চাও আমার কাছে সেটা বলো, চেষ্টা করবো দেওয়ার।
– কিছু চাইনা, চলেন আমাকে একটু এই বাগান পর্যন্ত পৌছে দিলে আমি চলে যেতে পারব।
– কেন, তোমার বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিলে কোনো সমস্যা?
– ওই বাগানের পাশেই আমার বাড়ি, বাগান পর্যন্ত দিলেই আমি যেতে পারব।
– আচ্ছা তা হলে চলো।
– আমার বাবা-মা কিন্তু বলবেন না, আমি আপনার কাছে রাতে এসেছিলাম তাহলে কিন্তু আমনকে তারা বকবে।
– আচ্ছা বলব না।
– থাক এখন আসতে হবে না আমি যেতে পারব।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে মাকে ডাক দিলাম।
– মা ও মা!
– খাবার দিবো টেবিলে?
– না, এদিকে শুনে যাও।
– কি?
– আচ্ছা, রশিদ চাচার মেয়ে ঝুমুর কত বড় হয়ে গেছে স্কুলে পাঠায় না কেন?
– কি হয়েছে? আর ঝুমুর!
– রাতে কোনো এক ফাকে সবার চোখের আড়াল থেকে আমার রুমে এসেছিলো কতক্ষণ গল্প করলাম। জানতে পারলাম ও স্কুলে যায় না।
– ঝুমুরকে তুই চিনলি কিভাবে? আর ও এখন কোথায়?
– ওকে তো রাতে বাড়িতে পৌছে দিয়ে এসেছি।
– মানে? তোর কী মাথা ঠিক আছে?
– কেন, মা কি হয়েছে?
– ঝুমুর নিখোঁজ আজ প্রায় মাস হতে চলল, আর রাতে তোর রুমে আসল কিভাবে?
– বলো কী মা, আমি যে ওরে রবিদের বাগান পর্যন্ত পৌছে দিয়ে এসেছি।
– তুই ঠিক বলতেছিস কি?
– হ্যা মা।
– আরে গাধা, ওদের বাড়ি তো দক্ষিণ দিকের রাস্তায়। রবিগো বাড়ি তো পশ্চিম দিকে।
– তাহলে? ও যে বলল ওখানে ওর বাড়ি।
– চলদেখি কোন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসেছিলি তুই।
– মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করতেছে। মা পুলিশকে ফোন করে এবং ঝুমুরের পরিবারকে খবর দেয়।
৩ ঘন্টা পর এই বাগান থেকে ঝুমুরের কঙ্কাল মাটির নিচ থেকে পুলিশ বের করে। আমার হৃদপিন্ড থেমে যাওয়ার অবস্থা। মনে হচ্ছে মাথাটা কাজ করতেছেনন । কিছুই আর ভাবতে পারছি না, মাকে বলে বাড়িতে চলে আসলাম এবং রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
পুলিশ চেষ্টা করতেছে খুনিদের শনাক্ত করতে।
চলবে।