ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৬
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
সকাল বেলা বেলীর ঘুম ভেঙে যায় ইরফানের আগেই । কেন জানি বেলীর কানে ফজর নামাজের আযান পৌঁছে যায় প্রায় প্রতিদিনই । আর আযান কানে যাওয়া মাত্র সে আর ঘুমাতে পারে না , না পারে শুয়ে থাকতে । তখন তাকে উঠতেই হবে আর নামাজও পড়তেই হবে ।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে গতকাল রাতে ইরফান তাকে যেইভাবে শুইয়ে দিয়েছিল সেইভাবেই ঘুমিয়েছিল সে । ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকায় বেলী । তখন দেখে ইরফানও তার দিকে ফিরেই কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে । ইরফানের মাথাটা তার হাতের উপর , বালিশেও নেই মাথাটা আর ডান হাতটা বেলীর পেটে দেয়া । বেলীকে বাচ্চাদের মত আগলে ধরে ঘুমিয়ে আছে সে । ওর যতটুকু মনে আছে গতকাল রাতে লাষ্ট যখন ওদের কথা হয় তখন বেলীর মন বলছিল ,
” সময়টা থেমে থাক , মুহুর্তটা থমকে যাক । আমার আর তার মাঝে ভালোবাসার বাঁধনটা এভাবেই আটকে থাক ”
হয়তো ওই ভাবনার মাঝেই বেলীর চোখ লেগে যায় । বেলী তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে । অনেকটা ছোট মানুষের মত লাগছিল তার বরটাকে । হয়তো তার ঘুমিয়ে যাওয়াটা খুব ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছে । আর তার ঘুমিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে সেও হয়তো ঘুমিয়ে গেছে ওইভাবেই । বেলীর নিজের শরীরকে অনেকটা হালকা লাগছিল । তারমানে ইরফান এমন কিছুই করে নি যা সে ভাবছে । একটা হালকা নিঃশ্বাস ফেলে আবারও ইরফানের দিকে তাকায় সে । নিজের হাতটা ইরফানের মাথার কাছে নেয় বেলী । অনেকটা সংকোচ নিয়েই হাতটা এগিয়ে নেয় সে তার বরের মাথার দিকে । গতকাল রাতে তার কপালে একে দেরা ইরফানের ভালোবাসার পরশগুলো বার বার সিউরে দিচ্ছিলো বেলীর শরীরটাকে । বেলী হয়তো এত ভালোবাসা এই প্রথম পেলো ইরফানের কাছ থেকে ।
ইরফানকে এখন অচেনা লাগে তার , একদম অচেনা লাগে । হয়তো মেয়েরা এইরকম স্বামীই আশা করে । যে এইভাবে শরীরকে নয় মনকে ভালোবাসে । ইরফানের মাথার চুলগুলো বেশ ভারী অনেকটা তার মত । নিজের হাতটা দিয়ে হালকা করে আলতোভাবে ছুইয়ে দেয় ইরফানের চুলগুলো । তারপর কি যেনো ভেবে হালকা মুচকি হাসি দেয় ইরফানের দিকে তাকায় বেলী । ইরফানের হাতটা নিজের পেটের উপর থেকে সরিয়ে নেয় বেলী । তারপর আস্তে করে উঠে যায় বেলী ।
ওযু করে নামাজ শেষ করে কতক্ষণ জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে সে । আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটে উঠছে চারদিকে । কয়েক জোড়া পাখি আকাশে ডানা ঝাপটা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে । প্রকৃতি কত সুন্দর করে তার সু-নিপূন হাতে একটা দৃশ্য একে দিয়েছে । আজকে শরীরটা তার অনেক হালকা লাগছে । কিসের জন্য এমন লাগছে সে বলতে পারছে না । তবে ভার নেই শরীরে । জানালার দিক থেকে ঘাড় ফিরিয়ে ইরফানের দিকে নজর দেয় বেলী । ইরফান তখনও ঠিক সেই ভাবেই ঘুমাচ্ছিল ।
– ঘুমন্ত মানুষটাকে খুব একটা খারাপ লাগে না । আবার জাগ্রত মানুষটার মাঝে হুশ থাকে না । উনিই জানি কেমন ধরনের পুরুষ ।
ইদানিং বেলীর চিন্তা চেতনায় তার মনের মানুষটার পদচারনা রীতিমতো অনেকটা বেড়ে গেছে । জানালার পাশ থেকে সরে গিয়ে খাটে শুয়ে যায় সে । মুখ তার ইরফানের দিকে ।
– মানুষটা কেন জানি আমায় তার আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে ধিরে ধিরে । তার উঠা বসা আগের থেকেই এমন কিন্তু তার চোখে তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক পরিবর্তন । যা আমায় শেষ করে দিতে বাধ্য ।
বিছানায় শুয়ে বেলী ইরাফানের দিকে তাকিয়ে এইসব চিন্তা করতে করতে তার চোখে ঘুমের ঢল নামতে শুরু করে । আজ শুক্রবার তারও অফডে । তাই রান্নার বাড়তি এত চাপ নেই । মিনুটাও হয়তো এখনও ঘুমাচ্ছে । তাই বেলীও এই সুযোগে একটু ঘুমিয়ে নিলে পারে । সব কিছু ভেবেই ঘুমিয়ে যায় সে ।
দুপুরের দিকে খাওয়া দাওয়ার পর পরই ইরফান বেলীর কাছে আসে । আজ দুইদিন যাবত বেলীর রুমেই থাকে ইরফান । বেলী তখন নিজের একটা জামা গোছাচ্ছিল । ইরফান তখনই আসে রুমে ।
গতকাল রাতের পর ইরফানের সামনে থাকাটা বেলীর কাছে রীতিমত যুদ্ধের মত মনে হয় । মুহুর্তগুলো বার বার বেলীর মনকে নাড়িয়ে দেয় । বেলীর শরীরে লাগা ইরফানের এক একটা ছোয়া বেলীর অন্তরকে শীতল করে দেয় । সেই শীতলতার মাঝে বেলীর স্নিগ্ধ অঙ্গ দহনের ন্যায় জ্বলে ওঠে অবিরত । ইরফানকে আড় চোখে দেখে বেলী । ইরফান তখন বেলীর একটু কাছে এসে বেলীকে বলে ,
– বেলী,,,,,,,,,,,,,,,?
– জ্বি ,
– আমরা আরেকটু পরেই বের হবো , কেমন ?
– কিন্তু যাবো কোথায় ?
– আমি যেখানে নিয়ে যাবো , সেখানেই যাবে ।
– আচ্ছা ,
– বোরখা পরবে না , শাড়িটা পরো । আর আজ হিজাব পরো না খোঁপা করো ।
– কিন্তু এইভাবে আমি বের হওয়াটা পছন্দ করি না ।
– একটা দিন , এরপর আর বলবো না ।
– আচ্ছা পরবো ।
– আমি বের হচ্ছি একটু , তুমি আস্তে আস্তে রেডি হও কেমন ।
– হু ,
ইরফান ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে যায় । বেলী এইদিক দিয়ে সব গুছিয়ে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে হালকা ফ্রেশ হয়ে নেয় । ড্রয়ার থেকে ইরফানের দেয়া শাড়ির প্যাকেটটা বের করে সে । প্যাকেট থেকে শাড়িটা বের করে বেলী । শাড়িটা বের করে বেলী অনেক্ষন তাকিয়ে থাকে শাড়িটার দিকে । শাড়িটা একদম সাদা । পুরো সাদা , সাদা শাড়ির জমিনে সাদা সুতোর হালকা কাজ করা । এত সুন্দর শাড়ি এর আগে বেলী দেখে নি । হ্যাঁ লাষ্ট বার দেখেছিল ওদের কলেজে ।
– অর্নাসের আপুদের নবীনবরণের সময় একটা আপুকে এমন একটা শাড়ি পরে আসতে দেখছিলাম । কিন্তু এখন আমার শাড়িটা তার শাড়ির থেকেও অনেক সুন্দর । অনেক বেশিই সুন্দর । কত শখ ছিল এমন একটা শাড়ির ।
তার মনে মনে খুব শখ ছিল এমন একটা শাড়ি পরবে সে । আজ মনের আশাটাও পূরণ হলো । খুব খুশি সে আজ । কিন্তু সমস্যা ছিল সে শাড়ি ততটা ভালো মত পরতে পারে না আর মিনুও পারে না শাড়ি পরাতে । তাই নিজে নিজেই চেষ্টা করবে শাড়ি পরার । ইরফান বাসায় নেই এই সুযোগে জামা পালটে ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে নেয় সে । শাড়ি সাদা বলে ব্লাউজ কালো রঙের পরে বেলী । কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর অতি কষ্টে শাড়িতে প্রথম পেচ দেয় বেলী । তারপর আঁচল বের করে । এইবার পালা কুচির , মিনুকে কয়েকবার ডাকার পরেও মিনুর সাড়া পায়নি বেলী । ভেবেছে হয়তো মিনু খেয়ে দেয়ে ঘুম দিয়েছে । বেলী নিজে নিজে চেষ্টা করে কুচি ধরার , ধরেও ফেলে কিন্তু শাড়ির নিচের দিকের কুচিটা ধরবে কে ?
এরই মাঝে ইরফানও চলে আসে । বেলীকে সাদা শাড়িতে মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছিল । বেলী কিন্তু ততটা সুন্দর না আবার ততটা দেখতেও খারাপ না । সুন্দর না বলতে বেলী একদম ফর্সা নয় তবে বেলীর মনটা অনেক ফর্সা । ইরফান দেখছিল বেলী শাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিচের কুচি ঠিক করছে । নিচু হয়ে ঝুকে একবার ঠিক হলে বারবার বিগড়ে যাচ্ছে তার শাড়ি । তাই ইরফান সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বেলীর ।
– আমি ধরি ?
– আপনি কি পারেন ধরতে ?
– তুমি তো কতই পারলা , পারতে পারতে উল্টে দিছো । দেখলাম তো ৫ মিনিট যাবত ।
ইরফানের এমন কথায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেলী । তারপর ইরফান নিচে বসে বেলীর শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দেয় । প্রায় ১০ মিনিট পর বেলী শাড়িটাকে ঠিকঠাক মত পরে । তখন ইরফান বেলীর হাতে আরেকটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয় ।
– এটা নেও ,
– কি এটা ?
– তোমার বেলীফুলের মালা ।
– আনছেন ?
– হু ,
প্যাকেট খুলে আগে বেলী বেলীফুলের ঘ্রাণ নেয় । বেলীফুলের ঘ্রাণটা বেলীকে অনেকটা মাতাল করে দিচ্ছিল । কারণ তার সব ফুলের মাঝে সব থেকে বেশী এই বেলীফুলকেই বেশি ভালো লাগে । নাকের কাছে নিয়ে বার বার ঘ্রাণ নিতে থাকে বেলী । দুচোখ বন্ধ করে বেলীফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিল বেলী আর ঠিক তখনই ইরফান বলে ওঠে ,
– নাকের কাছে নিয়ে এইভাবে ঘ্রাণ নিতে থাকলে ফুল শুকিয়ে যাবে ।
– হ্যাঁ , আপনারে তো বলছে ।
– খোঁপায় দেয়ার জন্যে দুই লেয়ার করে মালা এনেছি । গোল করে পরো
বেলী প্যাকেটে আরও কিছু জিনিস দেখতে পায় । সেখানে ৪ ডজন সাদা চুড়ি আছে । বেলী চুড়িগুলো দেখে আরও অবাক হয়ে যায় । তবে এমনিতেও বেলীর চুড়ি খুব পছন্দের । বিশেষ করে কাচের রেশমি চুড়ি । আর আজ ইরফান তার জন্যে চুড়িও নিয়ে এসেছে । ইরফান বেলীর মুখ দেখেই বুঝে গেছে বেলী খুব খুশি হয়েছে ।
– পছন্দ হয়েছে ?
– হু , অনেক সুন্দর ।
– আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো , বের হতে হবে তো ।
বেলী তখন চুলগুলোকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়ে খোঁপা করে নেয় । খোঁপার উপর বেলীফুলের মালাটা টাইট করে বেঁধে দেয় বেলী । তারপর হাতে চুড়ি গুলোও পরে নেয় । বেলী তেমন আহামরি সাজগোজ করে না । সাজ বলতে সে বুঝে হালকা স্নো পাউডার আর চোখে কালো কাজল দেয়া এবং ঠোঁটে হালকা লিপষ্টিক । ব্যাস এতেই তার সাজ সম্পন্ন হয়ে আর এই সাজেই সে থাকতে বেশী পছন্দ করে ।
বেলী আয়নায় নিজের দেখছে । বেলীর পুরো সাজ যেন আরও অধিক সুন্দর লাগছিল তার খোঁপার জন্যে । আর খোঁপায় থাকা ওই সাদা পবিত্র বেলীফুলের মালাটা যেন তার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে তুলেছে । অন্যদিকে ইরফান খাটে বসে থেকে বেলীকে আয়নায় দেখছিল । শাড়িটা একদম তার শরীরের সাথে লেগে আছে । আর সব মিলিয়ে বেলীকে যেন সদ্য কুড়ি থেকে ফোঁটা এক স্বচ্ছ সাদা বেলীফুল লাগছিল ।
ইরাফকেও আজ অনেক ভালো লাগছিল দেখতে । কালো জিন্স সাদা শার্ট তাও ইন করে পরেছে সে । অনেকটা বেলীর সাথে মেচিং করে । বেলী মুগ্ধ নয়নে ইরফানকে দেখতে থাকে । ইরফানও রেডি , ইরফানকে দেখতেও সেই রকম হ্যান্ডসাম লাগছিল ফুল হাতা শার্ট কিন্তু হাতা ফোল্ড করা । ইরফান বরাবরই এইভাবে শার্ট পরে । রেডি হতে হতে প্রায় ৪ টা ২০ বেজে গেছে ।
– বেলী এখন না বের হলে কিন্তু দেরি হয়ে যাবে ।
– আমি তো রেডি ।
– তাহলে চলো ,
– মিনুকে বলে যাবো না ?
– জাগাও তাকে ।
বেলী মিনুর কাছে গিয়ে মিনুকে ডেকে উঠায় । মিনু চোখ ডলতে ডলতে বেলীর দিকে তাকিয়ে থাকে । বেলীকে এইভাবে দেখে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় ।
– কি গো আইজ্জা এমন শাড়ি ফরছেন কিত্তে ।
– উঠো একটু ,
– খাড়ান , মাতার ভিত্রে কি দিছেন , ও মাগো ফুল লাগাইছেন মনে অয় ।
– হু ,
– ভাইয়ে আনছে ?
– হু ,
– তা এইরাম কইরা সাইজা গুইজা যাইতাছেন কই ?
– একটু ওনার সাথে বের হবো , তুমি উঠো দরজা লাগাও ।
– হ হ , এহন তো সময় । বেক্কেই ঘুত্তে যায় ,
– তুমিও যেতে চাও ? তাহলে চলো ।
– থাউক থাউক আমার এমন খুশিতে ঠেলায় ঘোত্তে মন ছায় না ।
– কিসব যে বলো তুমি , তুমি জানো আর তোমার আল্লাহ জানে । আসো দরজা লাগাও ।
– হ চলেন ,
ইরফান আর বেলীকে বিদায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় মিনু ।
– আল্লাহ পাক বহুত কষ্ট দিছেন আপনে ভাবীরে । সেতির মত মাইয়া খুব কমই আছে আল্লাহ পাক । তারে আর কষ্ট দিয়েন না । তার ভাগের সবখান সুখ তারে দেন আল্লাহ পাক ।
বেলীকে নিয়ে রিক্সায় উঠে ইরফান । বেলীর রিক্সায় চড়ে নাকি ঘুরতে অনেক ভালো লাগে । সেইদিন মিনুকে বলছিল আর পিছন থেকে ইরফান শুনে নেয় । হঠাৎ করেই রুবির কথা মনে পড়ে যায় তার । রুবি যতবারই তার সাথে বের হয়েছিল ততবারই তাকে কথা শুনাতো । রুবি রিক্সায় চড়তে পারে না । তার ভালো লাগে না । ইরফান কেন গাড়ি কিনে না । এইসব বলে বলে ইরফানকে ছোট করতো সব সময় সে । কিন্তু এখানে পরিস্থিতি বিপরীত ।
– ওই এক নারী আর এই আরেক নারী । কত পার্থক্য এদের মাঝে ।
ইরফানের মন তখন এই কথাটাই বলছিল । তারপর সে বেলীকে জিজ্ঞেস করে ,
– কোথায় যেতে চাও বেলী ?
– আমি তো এইখানের কিছুই চিনি না ।
– এখানে অনেক বড় বড় শপিং সেন্টার আছে , মুভি হল আছে । ভালো ভালো অর্নামেন্টের দোকান আছে । বলো কোথায় যেতে চাও ?
– এখানে কোথাও নিরিবিলি জায়গা নেই যেখানে বসে শান্ত মনে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় ।
ইরফান ইচ্ছে করেই ওইসব জায়গার নাম বলেছে বেলীকে কারণ সে দেখতে চেয়েছিল বেলী কি বলে । কারণ এর আগে যখনই রুবিকে নিয়ে বের হতো তখনই রুবি হয় যমুনা ফিউচার পার্ক নয়তো বসুন্ধরা সিটিতেই যেতো । দামী দামী গয়নার দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট না হলে ওর চলতো না । কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ উল্টো , এখানে বেলীর যাওয়ার জায়গাটা একদম অন্যরকম । ইরফান রিক্সায় বসা অবস্থাতেও বেলীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । তখন বেলী বলে ,
– আছে এমন জায়গা , সেখানে দু’দন্ড বসলে মনে শান্তি আসবে ।
– যেতে চাও সেখানে ?
– হ্যাঁ ,
ইরফান বেলীর কথায় রিক্সাওয়ালাকে একটা জায়গার নাম বলে দেয় । আর রিক্সাওয়ালাও ইরফানের বলা সেই গন্তব্যের দিকে চলে যায় । প্রায় ২০ মিনিট পর ইরফান বেলীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছায় । বেলী চারপাশের পরিবেশটা দেখছে । দেখে মনে হচ্ছে একটা পার্ক । এক পাশে একটা ঝিল আছে । জায়গায় জায়গায় বসার বেঞ্চ রাখা হয়েছে । ইরফান বেলীকে নিয়ে ঝিলের পাশে একটা বেঞ্চের কাছে যায়।
– বসো এখানে ,
– হু ,
– জায়গাটা অনেকটা শান্ত আর নিরিবিলি জায়গা ।
– হু ,
– অনেক ভালো লাগে আমার কাছে এই জায়গাটা ।
– ওহ ,
– লাষ্ট কবে এসেছিলাম মনে নেই , আর আজ তোমায় নিয়ে এলাম ।
– ওহ ,
– মন খারাপ ?
– নাহ তো ,
– তাহলে ওহ ওহ তে উত্তর দিচ্ছ যে ,
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বেলী সামনে থাকা ঝিলের দিকে তাকিয়ে এক মনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছিল । ইরফান সেই থেকে বেলীর দিকে তাকিয়ে আছে । বেলীর খোঁপা থেকে বেলীফুলের ঘ্রাণ আসছিল । ইরফান তখন বেলীর ডান হাতটায় আলতো করে হাত রাখে । আচমকা ধরায় একটু নড়ে উঠে বেলী ।
– কিছু বলবেন ?
– কি খাবা ?
– কিছু না ,
– বুট খাবা ? নাকি বাদাম
– আশেপাশে আছে ?
– ওইযে দেখা যাচ্ছে ,
– তাহলে বুট খাই ।
– আচ্ছা ,
ইরফান বেলীকে বসিয়ে রেখে বুট আনতে যায় । ইরফানের হাটার ঢংটা অনেক সুন্দর । সচরাচর সব পুরুষরা এইভাবে হাটে না । ইরফানই যেন কিভাবে হাটে । ইরফান বুট নিয়ে চলেও আসে । বেলীর হাতে বুটের ঠোঙাটা দেয় ইরফান । তারপর আবার সেই নিরবতা । নিরবতা ভেঙে ইরফান বলে ওঠে ,
– গান পারো তুমি ?
– একটু আধটু ,
– রবীন্দ্র সংগীত পারো ।
– আমারও পরাণ যাহা চায় ,
– শুনাবা আমায় ?
– এখানে না ,
– আচ্ছা বাসায় গিয়ে শুনাবে , কেমন ?
– হুম ।
– আর কোন গান পারো ?
– তুই ফেলে এসেছিস কারে মন , মন রে আমার ।
– পারো এটা ?
– হু ,
– এটাও শুনাবা আমায় ,
– আচ্ছা ।
বেলী আবার চুপচাপ হয়ে যায় । ইরফান আবারও বলে ,
– কিছু বলো ,
– কি বলবো ,
– যা মনে আছে ,
– মনের কিছু কথা মনেই থাক , মনের ঘরে আজকাল তাকাই না ।
– তাই ?
-,,,,,,,,,,,,,,,
– আচ্ছা ভালো কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে যাবো কেমন ?
– নাহ , বাসায় মিনুটা একা । আমরা খেয়ে যাবো , ও বেচারি কি দোষ করেছে আর তাছাড়া ও-কে ছেড়ে আমার খাওয়া গলা দিয়ে নামবে না । তার চেয়ে বরং বাসায় গিয়েই খাবো ।
বেলীর কথায় অত্যন্ত অবাক ইরফান । মিনুর জন্যে এত টান তার ।
– মিনুর জন্যে এত টান তোমার ?
– মেয়েটা অনেক ভালো ।
– হ্যাঁ ,
– হোক না সে কাজের মেয়ে , কিন্তু ওর সব থেকে বড় পরিচয় ও মানুষ ।
বেলীর চিন্তাভাবনা দেখে ইরফান সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যায় । একটা মানুষ যে কিনা বাসার কাজের মেয়ের জন্যে এইরকম চিন্তাভাবনা নিজের মাঝে রাখে সে কোন সাধারণ মানুষ না । তখন ইরফান বেলীর হাতে হালকা চাপ দিয়ে বলে ,
– বেলী তুমি সত্যিই অসাধারণ ,
– আমি অতি সাধারণ , সাধারণের মাঝে একটুকু সুখ আঁকড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে আশা করা এক অতি সাধারণ নারী ।
.
.
চলবে…………………………