#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-৭ম পর্ব
©শাহরিয়ার
সোহান:- তাড়াতাড়ি হাঁটতো রাত হয়ে এলো।
ইকরা:- রাত হলে সমস্যা কি?
সোহান:- কোন সমস্যা নাই সারা রাত বাহিরে বৃষ্টিতে ভিজবো।
ইকরা:- আমার কোন আপত্তি নেই।
সোহান:- উফ এই মেয়েতো দেখি ভীষণ কথা বলে।
ইকরা:- কথা বলবো না তো কি করবো?
সোহান:- কিছু করতে হবে না শুধু তাড়াতাড়ি পা দু’টো চালালেই চলবে আপাতত।
ইকরা:- কখনো কি শাড়ি পরেছো? পরলে বুঝতে হাঁটতে কত কষ্ট।
সোহান:- তোকে শাড়ি পরতে কে বলছিলো?
ইকরা:- কেউ বলতে হবে নাকি? শাড়িতেই নারী তুমি কি বুঝবা, তোমার কি আর বোঝার মত মন আছে নাকি।
— ইকরার কথায় সোহান কিছুটা থমকে ইকরার দিকে তাকালো। চোখের কাজল পানিতে লেপ্টে মুখে লেগে কালো দাগ হয়ে যাচ্ছে।
সোহান:- একটু দাঁড়াতো।
ইকরা:- কেন?
সোহান:- দাঁড়াতে বলছি দাঁড়া।
— ইকরা সোহানের মুখোমুখি দাঁড়াতেই সোহান দু’হাত বাড়িয়ে দিলো ইকরার গালের দিকে। ইকরা সোহানের হাতের স্পর্শে চোখ বন্ধ করে নিলো। সোহান গালে লেগে থাকা কাজলের কালো দাগ গুলো দু’হাতে মুছে দিতে দিতে বললো তোর কাজল মুছে গেছে।
ইকরা:- চোখ মেলে তাকিয়ে দেখার মত কে আছে আমার মুছলেই কি আর থাকলেই কি?
সোহান:- তুই কি জানিস তোকে সাজলে অসম্ভব সুন্দরি লাগে?
ইকরা:- হাঁটতে হাঁটতে আগেতো কেউ বলেনি তাই জানতাম না আজই প্রথম জানলাম।
সোহান:- আচ্ছা তাই বুঝি? তা আর কি কি জানিস না তুই?
ইকরা:- জ্যামিতি বুঝি না ঐটা বুঝিয়ে দিও।
সোহান:- আচ্ছা দিবো।
ইকরা:- একটা কথা বলবো?
সোহান:- হুম বল।
ইকরা:- তুমি এখন আমার সাথে ঝগড়া করোনা কেন?
সোহান:- এখনতো তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস, তোর সাথে ঝগড়া করলে লোকে কি বলবে?
ইকরা:- আমি বড় হইছি কবে?
সোহান:- তো কি এখনো ছোট আছিস বিয়ে করিয়ে দিলে তো সংসার করার সাথে সাথে ডজন খানিক সন্তানের জননী হয়ে যাবি।
ইকরা:- এসব উল্টা পাল্টা কথা বলবা না একদম।
সোহান:- হাসতে হাসতে তোকে একটা কথা বলবো?
ইকরা:- হুম বলো।
সোহান:- না থাক অন্য আরেক দিন বলবো।
— সোহানের এমন কথায় ইকরা বড় বড় চোখ করে সোহানের দিকে তাকালো আর মনে মনে বললো ইস ভালোবাসি কথাটা বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে যখন বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। তখর রাত প্রায় আটটা বাজে। বাড়ির ভিতর ঢুকতেই সকলে ওদের দেখে হো হো করে হেসে দিলো। সোহান পকেট থেকে পলিথিনে প্যাঁচানো টিকিট গুলো ইকরার হাতে দিয়ে বললো ভালো করে রেখে দিস।
বাবা:- কোথাকার টিকেট কাটলি দেখি।
ইকরা:- না এখন দেখানো যাবে না সারপ্রাইজ তো সারপ্রাইজ থাকবে।
— সবাই আরেক বার এক সাথে হেসে দিলো। সোহান আর ইকরা যার যার রুমে চলে আসলো ফ্রেশ হবার জন্য। ফ্রেস হয়ে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে দু’জনেই আবার ফিরে আসলো রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। সবাই মিলে রাতের খাবার শেষ করে গল্প করতে শুরু করলো। গল্পের এক পর্যায় ইকরার বাবা বললো সোহান চাকরিতো হচ্ছে না এক কাজ কর আমাদের ব্যবসাটাই বু্ঝে না। আমার আর ভাইয়ার বয়স হয়েছে। এখনতো ব্যবসা তোর বুঝে নেয়া উচিৎ। আমি বলছি না এখুনি তোকে বুঝে নিতে হবে। ঘুরে আসি তারপর না হয় বুঝে নিস।
সোহান:- আমি ঐ ব্যবসার কিছু বুঝিনা।
বাবা:- তোকে বুঝতে হবে না আমরা দু’জন বুঝিয়ে দিয়ে তবেই অবসরে যাবো। তাছাড়া তোর বয়স ও হয়ে যাচ্ছে বিয়েতো দিতে হবে।
— বাবার মুখে এমন কথা শুনে সোহান কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো। বাবা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো তোর কাউকে পছন্দ থাকলে বলতে পারিস।
সোহান:- বাবা এখন এসব কথা থাকনা। সামনে অনেক সময় আছে তাছাড়া বাড়িতে দুটো মেয়েও আছে তাদেরও বিয়ের বয়স হয়েছে।
বাবা:- এসব তোকে ভাবতে হবে না, আমরা সব কিছু ভেবে রেখেছি।
— দীর্ঘ সময় নানান বিষয়ে কথা হচ্ছে ইকরা মনে মনে ইচ্ছে মত সোহানকে বকা দিচ্ছে ফাজিল একটা আমি তোকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। আর তোকেও অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে দিবো না। নানান রকম কথা মনে মনে ভাবছে ইকরা। কথা বলতে বলতে রাত প্রায় এগাড়োটা বেজে গেলো সবাই নিজেদের রুমে চলে আসলো।
সোহান বিছানায় শুয়ে ভাবছে কি করে ইকরাকে মনের কথা বলা যায় ওকে মনের কথা না বলতে পারলে বাবা অন্য জায়গায় যদি বিয়ে ঠিক করে ফেলে তখন সব শেষ হয়ে যাবে।
— ইকরা দক্ষিণা বাতাসে ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে মনে মনে মেজাজটা কি পরিমাণ গরম হয় এই ছেলেটার উপর আমি এতো ভালোবাসি কেন বুঝে না? মেয়ে মানুষ হয়ে আমি কি করে বলি ওকে কতটা ভালোবাসি। ওর জন্য কষ্ট করে সাজি, শাড়ি পরি বৃষ্টিতে ভিজি তা কি ও বুঝে না। ওর প্রতিটা কথা প্রতিটা স্পর্শে আমি ভালোবাসা খুঁজি তা কি ওর চোখে পরে না। যেভাবেই হোক ওর মুখ থেকে ভালোবাসার কথা বলাতেই হবে।
— সকালে নাস্তার টেবিলে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো আমাকে আজ ভার্সিটিতে দিয়ে আসবে আমার ক্লাশ আছে।
সোহান:- কেন তুইতো আগে একা একাই ভার্সিটিতে যাতায়াত করতি।
ইকরা:- এখন কি আমি বড় হই নাই?
সোহান:- তো কি হইছে?
ইকরা:- রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় ছেলেরা যেন কেমন করে তাকায়।
সোহান:- বোরকা পরে যাবি।
ইকরা:- বোরকা পরে গেলে কি ছেলেরা তাকায় না?
— সোহান কিছু বলতে যাবে এমন সময় বাবা বলে উঠলো আহা তোর সমস্যা কোথায় দিয়ে আসলে তোরতো আর ক্লাশ নেই। কিংবা কোন চাকরিও নেই বলেই পকেট থেকে পাঁচশত টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে এখন থেকে যতদিন তুই ব্যবসা বুঝে না নিস ততদিন এটাই তোর চাকরি এই নে অগ্রীম বেতন।
সোহান:- বড় বড় চোখ করে ইকরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কত বড় হয়েছিস দেখবোতো আমি।
ইকরা:- কিছু বললে?
সোহান:- কই নাতো।
ইকরার মা:- তোরা দু’জন সব সময় টম আর জেরির মত লেগে থাকিস কেন?
ইকরা:- তুমি বুঝবা না টম আর জেরির মাঝে অনেক ভালোবাসা তাইতো দু’জন শত ঝগড়ার পরেও একজন আরেক জনকে ছেড়ে যায় না।
মা:- তোকে বিয়ে দিয়ে দু’জনকে আলাদা করে দিবো।
— চাচীর মুখে এমন কথা শুনে যেন সোহানের হৃদয়টা কেঁপে উঠলো। চোখ দু’টো মুহুর্তেই পানিতে ছলছল করতে লাগলো নিজের চোখের পানি লুকানোর জন্য সোহান তাড়াতাড়ি নাস্তার টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসলো। ইকরা সোহানের এমন ব্যবহারের সাথে মোটেও পরিচিত না। সবাই যখন ইকরাকে বকা দেয় তখন সোহানও তাদের সাথে তাল মিলায় আজ হঠাৎ কি হলো যে এভাবে উঠে যেতে হবে? ভাবতে ভাবতে নিজেও খাবার টেবিল থেকে উঠে কিচেন থেকে চায়ের মগ নিয়ে সোহানের রুমের দরজায় যেয়ে নক করলো।
সোহান:- দরজা খোলা আছে।
ইকরা:- দরজা ঠেঁলে ভিতরে ঢুকে সোহানের দিকে চায়ের মগ এগিয়ে দিতে দিতে তুমি এভাবে চলে আসলে কেন?
সোহান:- তো কি করবো কাল থেকে শুধু বিয়া আর বিয়া এই নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না। আর সব চেয়ে বড় কথা এখনো না আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি আর না তোর লেখাপড়া শেষ হয়েছে। এখুনি কেন তাদের বিয়ে নিয়ে এতো ব্যস্ততা থাকবে?
ইকরা:- শোন ছেলে মেয়ে বড় হলে বাবা মায়ের দায়িত্বই হলো তাদের বিয়ে দেয়া।
সোহান:- এই সকাল থেকে বড় হয়েছিস বড় হয়েছিস লাগিয়ে রাখছিস কেন? কত বড় হয়েছিস শুনি? বিয়ে দিলে সংসার করতে পারবি? কি কি রান্না করতে পারিস শুনি?
ইকরা:- কিছুই পারিনা শ্বাশুরিকে বলবো তার ছেলের যা যা খাবার পছন্দ আমাকে রান্না করতে শিখিয়ে দিতে।
সোহান:- রেগে একটা থাপ্পর মারবো যা বা এখান থেকে। খুব সখ জেগেছে বিয়ে করার।
— সোহানের এমন ব্যবহারে ইকরার প্রচণ্ড কষ্ট লাগলো। নিজেরর চোখের পানি সামলে নিয়ে কোন রকমে উঠে দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে সোহানের রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সোহান মনে মনে এই যা এটা আমি কি করলাম অযথাই ওকে বকা দিলাম ওর কি দোষ আমি নিজেইতো ওকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারিনা। পাগলিটাকে কি করে এখন সামলাই।
— সকাল এগাড়োটার দিকে সোহান ইকরার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো।
ইকরা:- ভিতর থেকে দরজা খোলা আছে।
সোহান:- রুমে ঢুকে দেখতে পেলো ইকরা কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হলো। মাথা নিচু করে সরি ভুল হয়েছে আর কখনো এমন হবে না।
ইকরা:- তুমি সরি বলছো কেন? আমি সরি। আসলে ভুলতো আমারি আমিই বা তোমাকে কেন বলতে যাবো আমার সাথে ভার্সিটিতে যাবার কথা।
— বলেই ইকরা ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় সোহান ইকরার হাত টেনে ধরে।
ইকরা:- ছেড়ে দাও।
সোহান:- হাত টান দিতেই ইকরা সোহানের মুখোমুখি চলে আসে। ইকরার ঠোঁট দু’টো কাঁপতে থাকে। তোকে ছেড়ে দেবার জন্যতো ধরিনি।
ইকরা:- সোহানের বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে।
— এমন ঘটনায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় সোহান, এই কি করছিস কেউ চলে আসলে কি মনে করবে?
ইকরা:- কে কি মনে করলো তাতে আমার কি?
সোহান ইকরার দিকে অপলক চেয়ে থাকতে থাকতে কখন জানি নিজের ঠোঁট দুটো ইকরার ঠোঁটকে স্পর্শ করে ফেলে, ঠিক এমন সময় বাহির থেকে কারো আসার শব্দে দু’জন দুদিকে সরে দাঁড়ায়।
চলবে..