জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
1740

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- শেষ পর্ব (পূর্ণমিলনি হ্যাপি ইন্ডিং)
©শাহরিয়ার

— ইকরা, সোহানের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে। দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে রইলো একদৃষ্টিতে।

ইকরা:- এই উঠো খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে আর আমার খুব খিদে লেগেছে।

সোহান:- রাগী রাগী চোখে ইকরার দিকে তাকিয়ে দিলিতো মুডটা নষ্ট করে, বলেই উঠে দাঁড়ালো।

ইকরা:- বিছানা ছেড়ে উঠে সোহানের শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে এই নাও তোমার মুড ঠিক করে দিলাম। এখন আসো খেতে বসবে।

— সোহান আর ইকরা এক সাথে খেতে বসলো, খেতে খেতে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো বাড়ির সবাই কি খেয়েছে নাকি না খেয়েই আছে কে জানে।

সোহান:- কেন বাড়ির সকলের কি পেট নাই নাকি? তাদের কি তোর মত খুদা লাগে না? শুধু তোর একাই খিদে লাগে।

ইকরা:- এমনটা না তবুও সবার জন্য মন সটফট করছে, আমরা কি ভুল করেছি বাড়ি ছেড়ে?

সোহান:- ইকরার একটা হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে দেখ যদি বাড়ি ছেড়ে না আসতাম তবে তোকে সারা জীবনের জন্য হারাতে হতো। আজ যেভাবে আমার সাথে গল্প করছিস তা আর কোন দিনও করতে পারতি না। আর সব চেয়ে বড় কথা আমরা না হয় ভুল করেছি। কই বাবা মা, চাচা তারাতো আমাদের আটকে রাখলো না। তারা বললো না ঠিক আছে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে না। আমরা আগে তোদের ফুপুর সাথে কথা বলবো তারপর তোদের নিয়ে বসবো। যা ভালো হবে আমরা তাই করবো।

ইকরা:- তারপরেও হয়তো আমি ভুল করেছি আমার একটা ছোট বোন ছিলো আমি তার কথা না ভেবেই চলে এসেছি। এখন মানুষজন আমার বোনটাকে নানান কথা বলবে। তার মনে আমার জন্য খারাপ অনুভুতি সৃষ্টি হবে।

সোহান:- তেমন কিছুই হবে না, তুই চিন্তা করিস না। মিলু সব জানে সব বুঝে ও তোর মত এতোটা বোকা না বুঝলি। আর বাবা মা চাচা চাচী হয়তো এখন আমাদের উপর রেগে আছে কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আমিতো আমার মা বাবাকে চিনি তাই না।

ইকরা:- চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তাই যেন হয়। না হলে যে এতো ভালোবাসার মাঝেও আমার কাছে সব কেমন জানি অপূর্ণ অপূর্ণ লাগছে, আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।

সোহান:- ইকরার গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার কি কম খারাপ লাগে? এখন কেঁদে কেঁদে কি চোখের নিচের কাজল গুলো মুছে ফেলবি নাকি? আর কান্না কাটি না করে খেয়ে নে।

— ইকরা ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে সোহানের দিকে তাকিয়ে তুমিও খেয়ে নাও। কথা বলতে বলতে দু’জন খেতে শুরু করলো।

— সোহানের বাবা দুপুরের খাবার খেয়ে ডাইনিং এ বসে আছে, সোহানের মা রান্না ঘর থেকে চায়ের মগ নিয়ে এসে তার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে ছেলে মেয়ে দু’টো কি খাচ্ছে না খাচ্ছে সে দিকে কারো কোন খেয়াল নেই। তোমাদের দুই ভাইয়ের তো জিদ টাই বড়।

বাবা:- আমি কি করবো বলো, আমি যে রাসেলের মাকে কথা দিয়েছি।

মা:- তুমিতো নিজের সন্তানকেও কথা দিয়েছিলে।

বাবা:- আমাকে আর পরীক্ষায় ফেলো না।

মা:- এটা পরীক্ষা নয়, আমাদের সন্তানের সারা জীবনের ব্যপার। তাদের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে সব ভু্লে ওদের বাসায় নিয়ে আসেন।

ইকরা:- এই আর কত ঘুমাবে উঠো সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

— বৃষ্টি তখনো হচ্ছে।

সোহান:- আধ খোলা চোখেই বললো কি করবো ঘুম থেকে উঠে?

ইকরা:- এই যে তোমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছি। উঠে ফ্রেস হয়ে নাও।

সোহান:- বিছানায় উঠে বসে আহ এক পশলা বৃষ্টি তুমি আর আমি। সাথে এক কাপ ধোয়া উঠা গরম চা, ভালোবাসার পূর্ণতা।

ইকরা:- ইস কি ঢং মনে হয় কোন দিন আমার হাতের চা খাওনি।

সোহান:- হুম অনেক খেয়েছি তখনতো তুই আর আমার স্ত্রী ছিলি না।

ইকরা:- ওহ তাই বুঝি?

সোহান:- হ্যাঁ তাইতো, এজন্যই আজকের চা অনেক স্পেশ্যাল এখন তুই বস আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।

— সোহান উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ইকরা চায়ের মগ নিয়ে ব্যালকনিতে যেতে যেতে সোহানকে বললো সেখানে আসার জন্য। সোহান ফ্রেস হয়ে ব্যালকনিতে যেয়ে ইকরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

ইকরা:- কি মশাই আপনার মনে কি চলছে?

সোহান:- কি চলছে মানে তেমস কিছু না দু’জন পাশাপাশি বসে এক কাপ চা ভাগ করে খাবো এটাই আপাতত ইচ্ছে।

ইকরা:- তাহলে পেছন থেকে সামনে এসে চেয়ারে বসো। পেছনে দাঁড়ালে কি আর মুখোমুখি হওয়া যায়?

সোহান:- ইকরাকে ছেড়ে দিয়ে পাশাপাশি রাখা চেয়ারে বসতে বসতে তোকে খুব সুন্দর লাগছে কেন রে?

ইকরা:- এই আমি বরাবরই সুন্দর বুঝলে, আমার জন্য কত ছেলে পাগল।

সোহান:- কি?

ইকরা:- না মানে বলছিলাম আমার জন্য কত ছেলে পাগল ছিলো, কিন্তু আমিতো তোমাতে পাগল ছিলাম আছি আর সারা জীবন তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।

সোহান:- পাগলী একটা।

ইকরা:- হুম এটা তুমি ঠিক বলছো, তবে শুধু তোমার জন্যই পাগলি।

— দু’জন ব্যালকনিতে বসে গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে এই সারা রাত কি এখানেই বসে থাকবে নাকি?

সোহান:- ইহু বলেই ইকরাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। ইকরা দু’হাতে সোহানের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

— রাতের খাবার বেড়ে দিতে দিতে ইকরার মায়ের চোখ গলিয়ে পানি পড়ছে। দেখে ইকরার বাবা বললো কাঁদছো কেন?

মা:- কিছু না তুমি বুঝবে না।

বাবা:- একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, সোহানের বাবার দিকে তাকিয়ে ভাইজান আমরা কি আমাদের সন্তানদের কষ্ট দিয়ে ফেলছি না?

সোহানের বাবা:- হুম তুই ঠিকই বলছিস আমরা আমাদের জিদ পূর্ণ করার জন্য ওদের কষ্ট দিয়ে ফেলছি।

— সোহানের বাবা হাত ধুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের বোনকে কল দিলো। ফোনটা রিসিভ করতেই বলতে শুরু করলো তোকে আমার কিছু বলার আছে। সোহানের বাবা তার বোনকে সব কিছু বুঝিয়ে বললো। এবং বোনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো। কথা শেষ করে ফোন রেখে দিলো।

মিলু:- গভীর আগ্রহ নিয়ে বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ফুপু কি বললো বড় আব্বু?

বাবা:- তেমন কিছু না বললো এতো কিছু করার কিছুই ছিলো না সোহান আর ইকরা কি তার সন্তানের মত না? তারা যদি বিয়ে করে সুখি হয় এতেই সকলের সুখ। ও রাসেল কে বলে সব মানিয়ে নিবে, সোহান আর ইকরাকে বাসায় নিয়ে আসতে বললো।

মিলু:- ইয়ে বলে চিৎকার করে উঠে বললো আমি এখুনি আপুকে ফোন করে বলছি।

বাবা:- না এখন কিছু বলার দরকার নেই।

— সবাই খুশি মনে খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠে নিজেদের রুমে চলে আসলো।

— সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা বানাতে বসেছে ইকরা, তখনো বিছানায় শুয়ে আছে সোহান। এমন সময় ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলে ইকরা সোহানকে বললো দেখো কে এসেছে, সোহান হয়তো কোন বন্ধু এসেছে। বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো মিলুকে। মিলু ঘরে ঢুকে সোহানকে জড়িয়ে ধরে। সোহান মিলুকে জড়িয়ে ধরে ইকরা দেখো কে এসেছে।

ইকরা:- রান্না ঘর থেকে ছুটে আসে ছোট বোনকে দেখে বুকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।

মিলু:- আরে কান্না করছো কেন?

ইকরা:- তুই এ বাসার ঠিকানা কোথায় পেলি?

মিলু:- ভাইয়ার বন্ধুর কাছ থেকে যোগার করেছি, দেখতো বাহিরে আর কে কে আছে।

— সোহান আর ইকরা এক সাথে বাহিরে উকি মারতেই থমকে যায় বাড়ির সকলকে এক সাথে দেখে। ইকরা কান্না করে দেয়। বাবা এসে বুকে জড়িয়ে কান্না করছিস কেন? আজতো তোর কান্না করার দিন না।

ইকরা:- এসো সবাই ঘরের ভিতর ঢুকো।

— সবাই ঘরে ঢুকে বসে। ইকরা বলে সবাই বসো আমি নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসছি।

বাবা:- মেয়ে কত বড় হয়ে গেছে সবার জন্য নাস্তা বানাতে যাচ্ছে।

— ইকরা হেসে মিলুকে সঙ্গে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটে।

সোহানের বাবা:- আমরা না হয় একটু রাগ করেছিলাম তার জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হবে?

— সোহান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো, কিছুকক্ষ পর মাথা তুলে ভুল করেছি বাবা ক্ষমা করে দাও।

বাবা:- তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নে বাড়িতে যাবি। তোদের বাড়ি তোদের সংসার আর তোরাই যদি সে বাড়িতে না থাকিস তবে কেমন শূন্য হয়ে রয় বাড়িটা।

— ইকরা আর মিলু সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসে। নাস্তা খেয়ে সবাই নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সোহান আর ইকরা পাশাপাশি সিটে বসে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।

— পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজিয়েছে মিলু। রাতে সোহানের রুমে বিয়ের শাড়ি পরে বসে আছে ইকরা, একটু পর মিলু ঠেলে সোহানকে রুমে ঢুকিয়ে দিলো। ইকরা যেয়ে সোহানের পাশে বসে বললো কি ঘুমটা খুলবি না সারা রাত এমনি বসে রইবি?

ইকরা:- ঘুমটা সরিয়ে শাড়ির ভাজে রাখা খাতা এগিয়ে দিয়ে নাও।

সোহান:- এটা কি?

ইকরা:- কি মানে খাতা জ্যামিতি শিখাবে না?

সোহান:- মাথার চুল টেনে ধরে, মিলু এই মিলু বলতে যাবে অমনি ইকরা সোহানের মুখ চেঁপে ধরে। একদম চুপ মিলুর কি কাজ এই ঘরে?

সোহান:- তোকে জ্যামিতি শিখাবে আর আমি ঘুমাবো।

ইকরা:- কি রাতে ও আমার ঘরে এসে জ্যামিতি শিখাবে। বলেই সোহানের বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করলো।

— সোহান ইকরাকে জড়িয়ে ধরে, আজ তোকে ভালোবাসার জ্যামিকি শিখাবো। ইকরা এই কি করছো ছাড়ো বলছি, সোহান উহু আজ জ্যামিতি শিখাবো। বলেই ইকরার ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ইকরা দু’চোখ বন্ধ করে নিলো। সোহান রুমের লাইটের সুইচ অফ করে দিলো।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে