#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ১৭ তম পর্ব (ফুলশয্যা স্পেশ্যাল)
©শাহরিয়ার
— মা মেয়ে দু’জন ফোনের দু’প্রান্তে কান্না করতে করতে এক সময় মা জিজ্ঞাসা করলো কেমন আছিস?
ইকরা:- হুম মা ভালো তোমরা কেমন আছো? বাবা কেমন আছে?
— কথা বলতে বলতে ইকরা আরও জানালো যে সোহানের সাথে ওর বিয়েটা হয়ে গিয়েছে কোর্টে যেয়ে। মা বললেন, যখন যা প্রয়োজন হয় তাকে জানানোর জন্য। ইকরা বললো ঠিক আছে এভাবেই অনেকটা সময় ধরে মা আর বোনের সাথে কথা বললো ইকরা। তারপর ফোন রেখে দিয়ে কিছুটা সময় নিরবে চোখের পানি ফেললো।
ইকরা মনে মনে বলছে ভালোবাসাকে জিতাতে বাবা মাকে ছেড়েছি, জানি না আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছেন। এদিকে সোহানও বাড়িতে নেই বাহিরে গিয়েছেন বন্ধুর সাথে। বাসায় শুধু ইকরা আর বন্ধুর সেই বোনটা। বিকেল প্রায় শেষের দিকে একা একা বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত লেগে এলো। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠতেই ইকরা যেয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই সোহান আর ওর বন্ধুরা ঘরের ভিতর ঢুকলো সকলের হাতে ব্যাগ। সোহান হাতের। একটা ব্যাগ ইকরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো এটা পরে আসো, আমরা নতুন বাসায় যাবো।
ইকরা:- কি আছে এর ভিতর?
সোহান:- ভিতরে নিয়ে যেয়ে দেখ কি আছে।
— ইকরা আর কথা না বলে ব্যাগটা হাতে চলে আসলো ওয়াশ রুমের ভিতর। ব্যাগটা খুলতেই একটা লাল শাড়ি বের হয়ে আসলো। ইকরা শাড়িটা বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। কিছুক্ষণের ভিতর শাড়িটা পরে বের হলো। ততক্ষণে সব বন্ধুরা এ বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। সোহান ইকরার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রয়েছে।
ইকরা:- এমন করে কি দেখো?
সোহান:- তোকে কেমন লাগছে তাই দেখছি।
ইকরা:- ইস আমার বুঝি লজ্জা লাগে না?
সোহান:- উহু তোকে নতুন বউ বউ লাগে।
— সোহানের কথা শুনে ইকরা হেসে দিয়ে বললো নতুন বউকেতো নতুন বউয়ের মতই লাগবে।
সোহান:- হুম তাইতো এখন চল নতুন বাসায় যাবো।
— দু’জন বন্ধুর বোনকে বলে সে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে তাদের নতুন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রিক্সায় বসে অপলক সোহান ইকরার দিকে চেয়ে রইলো,আজ যেন ইকরার দিক থেকে নিজের চোখ সরাতেই পারছিলো না। ইকরা লজ্জায় মুখ তুলতে পারছিলো না। অল্প সময়ের ভিতর রিক্সা নতুন বাসার সামনে চলে আসলো। দু’জন রিক্সা থেকে নেমে ঘরের দরজা খুলতেই বন্ধুরা সবাই ওদের দু’জনের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিঁটিয়ে দিতে থাকলো। ইকরার কাছে সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হতে থাকলো। সব বন্ধুরা নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিলো। সেই সাথে ওদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলো দেখিয়ে দিলো।
— সবাই চলে যাবার পর ইকরা যেয়ে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার এক কোনায় উঠে বসলো। ফুল গুলো স্পর্শ করে করে দেখছে। সোহান যেয়ে পাশে বসে কি হলো কি দেখছিস?
ইকরা:- প্রতিটা মেয়েরই এমন ইচ্ছে থাকে সুন্দর একটা বাসর ঘরের। ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সেই ঘরে থাকার। আজ আমার সে ইচ্ছে পূর্ণতা পেয়েছে। কথা গুলো বলতে বলতে ইকরার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে শুরু করলো।
সোহান:- অবাক হয়ে ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো তুই কান্না করছিস কেন? বলেই হাত বাড়িয়ে ইকরার চোখের পানি মুছে দেবার চেষ্টা করলো।
ইকরা:- আরও জোরে কান্না শুরু করে দিলো। বললো সব পূর্ণতার পরেও বাবা মা নেই আমাদের এই আনন্দের সাথে এটা ভেবেই হৃদয়টা পুড়ে যাচ্ছে।
সোহান:- চোখের পানি মুছতে মুছতে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবা মাও আমাদের খুব শিগ্রই মেনে নিবে। বলেই ইকরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যায়।
ইকরা:- ধাক্কা মেরে সোহানকে দূরে সরিয়ে দিয়ে খবরদার একদম সুযোগ নিবে না। বলে খাট থেকে উঠে দাঁড়ায়।
সোহান:- আরে আরে কি করছিস?
ইকরা:- ব্যাগ খুলে খাতা কলম বের করতে করতে আজ সারা রাত তুমি আমাকে জ্যামিতি শিখাবে। যতদিন পর্যন্ত না আমাকে জ্যামিতি শিখাতে পারবে ততদিন পর্যন্ত আমাকে ধরতে আসবে না।
— সোহান মাথার চুল টানতে টানতে কাকে বিয়ে করলাম আমি? বিয়ের রাতে স্বামী স্ত্রী সুখ দুঃখের গল্প করে তারপর রোমান্স করে আর এই মেয়ে আমাকে বলছে জ্যামিতি শিখাতে। জীবনডা মনে হয় এখানেই শেষ।
ইকরা:- হাসতে হাসেত শেষ না শেষ না মাত্রই শুরু হলো তোমার আমার নতুন জীবন। আর আমাদের শুরুটা হবে সবার চেয়ে আলাদা। কাল সকাল থেকে আমাকে রান্না করা শিখাবে, সবাই বাসায় এসে রেডিমেড রান্না খায় আর তুমি রান্না করে খাবে। উফ খাবারের কথা বলতেই মনে হলো রাতের খাবারটা খাওয়া হয়নি তোমার বন্ধুরা খাবার রেখে গেছে চলো খেয়ে নেই।
সোহান:- বিছানা থেকে উঠতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তাহলে আর কি বাবুর্চির চাকরি হলো আমার।
ইকরা:- হাসতে হাসতে খাবার গুলো প্লেটে সাজিয়ে বসলো। দু’জন মিলে এক সাথে খেতে বসলো। ইকরা প্লেট থেকে খাবার তুলে সোহানের মুখের দিকে এগিয়ে দিলো। সোহান খাবার মুখে নিতেই ইকরা বললো এক প্লেটে খাবার খেলে ভালোবাসা বেড়ে যায় বুঝলা আমরা এখন থেকে এক প্লেটে দু’জন খাবো। সোহান মাথা নেড়ে শুধু বললো হুম। ইকরা সোহানের নাক টেনে দিয়ে ওরে আমার গুলুমুলু লক্ষী বরটা। কথা বলতে বলতে দু’জন খেয়ে উঠলো।
— খাবার শেষ করে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো ইস এখনো অনেক রাত বাকি ভোর হতে শোন এখন আমরা বাড়ির বাহিরে যাবো, দু’জন নিরিবিলি অনেকটা সময় হাঁটবো তারপর বাসায় ফিরে আসবো। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে এটা মাঝে মাঝে আমার বরকে সঙ্গে নিয়ে ব্যস্ত শহরের রাস্তায় হলুদ ল্যাম্পপোষ্টের নিচ দিয়ে হাঁটবো। গল্প করবো তারপর যখন ক্লান্ত হয়ে যাবো তখন বাড়িতে ফিরে আসবো। যেহেতু আজ আমাদের ফুলশয্যা রাত এই রাতটাই সব চেয়ে উত্তম হবে। সারা জীবন সরণীয় হয়ে থাকবে দু’জনের জন্য। তুমি এখন বসো আমি শাড়িটা চেঞ্জ করে আসি শাড়ি পরে হাঁটতে কিছুটা অসুবিদা হবে শাড়িটার অনেক ওজন। ইকরা উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো সোহান ফ্যালফ্যাল করি তাকিয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো কার পালায় পরলাম আমি পালিয়ে যাবারও আর কোন পথ খুলা নেই। আগে অর্ধেক পাগল ছিলো এখন দেখি পুরো পাগল হয়ে গেছে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ইকরা জামা চেঞ্জ করে ফিরে আসলো।
ইকরা:- সোহানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে কি হলো তুমি এখনো এখানেই বসে আছো চলো বের হবে।
সোহান আর দেরী না করে উঠে দাঁড়িয়ে ইকরার সাথে হাঁটা শুরু করলো, নির্জন রাস্তায় হঠাৎ হঠাৎ দু’একটা গাড়ি ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সোহান হাঁটছে আর মনে মনে বলছে আজ বুঝতে পারছি নচিকেতা কেন বলেছে তার গানে পুরুষ মানুষ দু’প্রকার জীবিত বিবাহিত। তার গানটা সত্যি সত্যি তিন সত্যি। এসব ভাবনায় ছেঁদ পরলো যখন ইকরা সোহানের হাত চেঁপে ধরে কাঁধের উপর মাথা রাখলো। হালকা বাতাসে ইকরার এলো মেলো চুল গুলো উড়ছে। সব ভাবনা গুলো নিমেষেই হারিয়ে ইকরার খোলা চুলে এসে জমা পড়লো।
ইকরা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর না সারা দিন গাড়ির শব্দ কালো ধোয়া আর এই রাতের আধারে সব কিছু কেমন নিস্তব্ধ।
সোহান:- ইকরার চুলে হাত বুলিয়ে হুম খুব সুন্দর।
ইকরা:- এই আমি কি তোমাকে আমার চুলের কথা বলছি? আমার চুল সুন্দর তা আমি খুব ভালো করেই জানি।
— কথা গুলো বলতে বলতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো। সোহান ইকরার হাত চেঁপে ধরে বললো তাড়াতাড়ি চল জোরে বৃষ্টি শুরু হবার আগেই। না হলে ভিজে যেতে হবে।
ইকরা:- ভিজলে কি হবে?
সোহান:- এতো রাতে ভিজলে নিশ্চিৎ জ্বর আসবে।
— দু’জন কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলো।
ইকরা মন খারাপ করে চুল মুছতে থাকলো ততক্ষণে অনেক জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে সোহান ব্যালকনি থেকে ইকরাকে ডাক দিলো। ইকরা চুল গুলো মুছতে মুছতে সেদিকে এগিয়ে গেলো। সাঁড়ি সাঁড়ি গাছ লাগানো ব্যালকনির সামনে গাছের পাতা বেয়ে টিনের চালের উপর পানি পরছে। টপটপ করে শব্দ হচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে দু’জন সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে। সোহান রুমের ভিতর ঢুকে দু’টো চেয়ার নিয়ে আসলো একটা চেয়ার ইকরার দিকে বাড়িয়ে দিলো আর একটা চেয়ারে নিজে বসলো। দু’জন মুখোমুখি বসে গল্প করছে আর বৃষ্টির শব্দ শুনছে। কত দিনের স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে, খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে সোহান মাঝে মাঝে তা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে ইকরা তা দেখে ভুবণ ভুলানো হাসি দিচ্ছে সেই হাসিতে বারং বার মুগ্ধ হচ্ছে সোহান। শত কষ্ট বুকে চাঁপা দিয়েও সে হাসিতে সব ভুলে যায় সোহান। প্রকৃতিও ওদের মনের কথা বুঝতে পেরে আজ আর বৃষ্টি থামছে না বরং সময়ের সাথে সাথে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। হঠাৎ করে প্রচণ্ড জোরে বজ্রপাতের শব্দে ইকরা চমকে সোহানকে জড়িয়ে ধরে। সোহানও বুঝতে পারে অন্যমনস্ক ইকরা ভয় পেয়েছে। সেও নিজের দু’হাত দিয়ে ইকরাকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে।
চলবে…
#জ্যামিতিক_ভালোবাসা – ১৮ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— ইকরা সোহানের বুকে নিজের মুখ ঘষা দিতে দিতে খবরদার একদম সুযোগ নেবার চেষ্টা করবে না। সোহান মুখে হাসি ফুটিয়ে ইকরার পিঠের উপর থেকে একটি হাত নিয়ে এসে ইকরার চিবুক স্পর্শ করতেই। ইকরা উপরের দিকে তাকালো। দু’জনের চোখাচোখি হতেই ইকরা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। টিনের চালায় টপটপ করে বৃষ্টির পানি পরছে, সোহানের বুকে ইকরা মাথা রেখে দু’চোখ বন্ধ করে আছে। সকাল হতে এখনো অনেকটা রাত বাকি। মাঝে মাঝেই দূরে কোথাও বজ্রপাতের শব্দে ইকরা কেঁপে উঠে সোহানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। সোহানের কাছে মনে হয়না এর চেয়ে রোমান্টিক সময় হতে পরে। যে সময় ভালোবাসার মানুষটি ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে সেই সময়টা সত্যিই অসাধারণ। কথা গুলো ভেবে একা একাই মনে মনে হেসে চলেছে সোহান। মাঝে মাঝে উড়ে আসা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।
— সকাল নয়টা বেজে পনের মিনিট ইকরা ফ্রেস হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলো সোহান নাস্তা নিয়ে বিছানায় বসে আছে।
ইকরা:- এই সকাল সকাল তোমাকে ভিজে কেন বাহিরে যেতে হবে?
সোহান:- তো কি না খেয়ে থাকবি? খিদেতো তোর একদম সহ্য হয়না।
ইকরা:- তাতে কি হয়েছে? সময়ের সাথে সাথে মানুষের অনেক অভ্যাস পরিবর্তন করতে হয়।
সোহান:- হয়েছে এতো কথা না বলে খেতে বস আর তোয়ালেটা আমাকে দে।
— ইকরা একটা মুচকি হাসি দিয়ে সোহানের দিকে তোয়ালেটা এগিয়ে দিলো। সোহান হাত মুখ মুছে নিলে দু’জন এক সাথে নাস্তা খেতে বসলো। নাস্তা খেতে খেতে সোহান বললো দুপুরের জন্য কি বাজার করবো?
ইকরা:- তোমার যা ইচ্ছে হয় নিয়ে এসো, আর বেশী খরচ করবে না, এখন থেকে হিসেব করে চলবে , না তোমার জব হয়েছে কোন আর না এখানে আমার কোন টিউশনি আছে।
সোহান:- হাসতে হাসতে ঐ সব তোর চিন্তা করতে হবে না। একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিকই হবে।
— দু’জন গল্প করতে করতে খেয়ে নিলো, বৃষ্টি কমার পর সোহান বাড়ি থেকে বের হলো উদ্দেশ্যে চাকরি খোঁজা, যদি কোথাও একটা চাকরি মিলে যায়। শহরের অলি গলি ঘুরে বেরাচ্ছে সোহান। এই বন্ধু সেই বন্ধুর কাছে ফোন দিয়েই চলেছে যদি কারো কোথাও যদি পরিচিত থাকে সেই আশাতে। আজ যেন একটা চাকরি সোহানের কাছে সত্যিই সোনার হরিণ। এতোদিন না বুঝলেও সোহান আজ ঠিকই বুঝতে পারছে একটা চাকরির কত প্রয়োজন।
— সোহান চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই ইকরার ফোনটা বেজে উঠে, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে মায়ের নাম্বার, ফোন রিসিভ করতেই মা প্রশ্ন করে কেমন আছিস?
ইকরা:- জানায় ভালো আছে বাড়ির সকলে কেমন আছে, বাবা, বড় আব্বা, মিলু সবাই কেমন আছে, মা বলে সবাই ভালোই আছে কিন্তু কারোই মন ভালো নেই। বাড়ির সন্তানরা বাড়িতে না থাকলে যা হয় আরকি। সোহান কোথায় জানতে চাইলে, ইকরা জানায় সোহান বাহিরে গেছে চাকরির ইন্টারভিউ দেবার জন্য।
মা:- ইকরাকে বলে তোদের কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবি, কোন রকম সংশয় রাখবি না মনের ভিতর। তোদের বাবারা আজ রেগে আছে দেখবি অল্প দিনের ভিতর সব রাগ পানি হয়ে যাবে।
— ইকরা মাকে বলে চিন্তা না করার জন্য আর ওদের নতুন সংসারের জন্য দোয়া করার জন্য। অনেকটা সময় দু’জন কথা বলে, তারপর ফোন রেখে দেয়। দুপুরের আগে আগে সোহান বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। ফ্রেস হয়ে আসার পর ইকরা জানায় মা ফোন করেছিলো। কি কি কথা হলো ইকরা সোহানকে সব জানালো। গল্প করতে করতে দু’জন মিলে রান্না ঘরে ঢুকে পরলো, সোহান ইকরাকে রান্না করতে সাহায্য করছে। দু’জন মিলে রান্না করে নিলো।
সোহান:- রান্নার ঘ্রাণটা কিন্তু দারুণ হয়েছে তুই একদম পাকা রাঁধুনি হয়ে যাবি অল্প কিছু দিনের ভিতর।
ইকরা:- ইস যাওতো কি সব বলো তুমি, আমার লজ্জা লাগে।
সোহান:- হাসতে হাসতে কই দেখি কোথায় তোর লজ্জা লাগে বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো ইকরার চিবুকের দিকে।
— ইকরা দু’চোখ বন্ধ করে আছে সোহান বলে উঠলো ইস সত্যিই একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেছিস।
ইকরা:- চোখ মেলে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তুমি দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছো। বলেই সেখান থেকে বের হয়ে গেলো।
— সোহান ও ইকরার পিছু পিছু রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। দু’জনে রুমের ভিতর আসার পর ইকরা সোহানকে বললো গোসল করে নিতে। সে খাবার বেড়ে দিচ্ছে খেয়ে নেবার জন্য। সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো তুই আগে গোসল করে নে, আমারতো বেশী সময় লাগবে না, তোর হলে আমি করবো, তারপর দু’জন এক সাথে লাঞ্চ করবো।
— ইকরা আর দেরি না করে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো, দরজা লাগাতে লাগাতে সোহানকে উদ্দেশ্য করে বললো ঘুমিয়ে পরো না যেন আবার। তাহলে কিন্তু পানি নিয়ে এসে মাথায় ঢেলে দিবো। সোহান ইকরার কথা শুনে অনেকটা সময় একা একা হাসলো। ইকরা গোসল করছে এদিকে সত্যি সত্যিই ঘুমে সোহানের দুচোখ এক হয়ে গিয়েছে, ইকরার গোসল শেষ হলে ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় সোহান খাটে ঘুমিয়ে আছে, ইকরার মনে দুষ্টমি বুদ্ধি আসে, ইকরা খুব আস্তে আস্তে সোহানের মাথার কাছে যায়, তারপর ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পরা পানি গুলো সব সোহানের চোখে দেবার জন্য সে চুল গুলো সোহানের মুখের উপর ধরে। কয়েক ফোটা পানি সোহানের চোখে মুখে পরতেই সোহান লাফিয়ে উঠে। আর অমনি ইকরা সেখান থেকে সরে যেয়ে হাসতে শুরু করে।
— সোহান মুগ্ধ হয়ে ইকরার দিকে তাকিয়ে রয়, আর মনে মনে বলে মাশাআল্লাহ।
ইকরা:- কি হলো তাড়াতাড়ি যাও,
সোহান:- বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে আকাশ কেমন কালো হয়ে গেছে মনে হয় বৃষ্টি নামবে।
ইকরা:- তো কি হইছে তাতে? এখনকার দিনে যখন তখন বৃষ্টি হতেই পারে।
— সোহান হুম বলে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হতেই ইকরা ব্যালকনির দিকে হাঁটা শুরু করলো শত বাঁধা দেবার পরেও মন আটকে থাকে না, ব্যালকনির গ্রীলের ফাঁকা গুলো দিয়ে বিহিরে তাকাতেই নানান রকম গাছ চোখে পরে, ইকরা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে আর গাছের পাতা থেকে টিনের চালে পরা বৃষ্টির পানির ফোটা গুলো দেখছে। টপটপ করে পানির ফোটা পরছে মুহুর্তে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। নিজের অজান্তেই ইকরা একটা হাত বাড়িয়ে দিলো জানালার গ্রীলের বাহিরে। হাতের উপর বৃষ্টির পানি পরছে ইকরা গুনগুনিয়ে গান গাইছে। সোহান গোসল শেষ করে কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেদিকে ইকরার খেয়াল নেই। হঠাৎ করে সোহান যখন ইকরার ঘাঢ়ের উপর হাত রাখলো ইকরা চমকে কেঁপে ঘুরে তাকালো। গান বন্ধ করে ও তুমি কখন এলে গোসল শেষ?
সোহান:- একটা হাত দিয়ে ইকরাকে গ্রীলের সাথে হালকা চেঁপে ধরে, অনেক সময় হয়েছে এসেছে তোর দ্যান কোথায়?
ইকরা:- কোথাও না বৃষ্টি দেখছিলাম তাই খেয়াল করিনি।
সোহান:- ইকরাকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে, তোর খেয়াল থাকে কোথায়?
ইকরা:- লজ্জা মাখা মুখে জানি নাতো কোথায় থাকে।
সোহান:- একটা হাত ইকরার মুখের দিকে এগিয়ে নিতেই ইকরা চোখ বন্ধ করে নেয়। ইকরার মুখের উপর চলে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে। তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
ইকরা:- মুহুর্তে চোখ খুলে হালকা ধাক্কা দেবার চেষ্টা করে আমি সব সময় সুন্দর শুধু তোমার দেখার চোখ নেই বুঝলে।
সোহান:- ওহ তাই আমার চোখ নেই না,
ইকরা:- উহু নাইতো, এখন চলো খাবে।
সোহান:- এই দাঁড়া না আরও একটু সময় তোকে একটু দেখি ভালো করে।
ইকরা:- এই যাওতো ঢং কইরো না, খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
সোহান:- তো কি হয়েছে? খাবার একটু পরে খেলে কিছুই হবে না।
ইকরা:- ইস যদি গোসল না করতাম তাহলে ভালো হতো খুব।
সোহান:- কেন কেন?
ইকরা:- আরে বুদ্ধু তাহলে এখন বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম। ইস কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না। খুব মিস করছি সেই সব দিন গুলো। ছোট বেলাতেই ভালো ছিলাম।
সোহান:- তোকে ভিজতে মানা করছে কে শুনি?
ইকরা:- কেউ মানা করেনি, কিন্তু এখনতো বড় হয়েছি, আর তাছাড়া বিয়েও হয়ে গেছে এখন কি আর সে সব স্বাদ আললাদ মনের ভিতর পুষে লাভ আছে?
সোহান:- বাহিরে হাত বাড়িয়ে মুঠো ভর্তি বৃষ্টির পানি নিয়ে এসে ইকরার মাথায় দিতে দিতে কেন নেই? তোর বরটা আন রোমান্টিক বলে?
— কথাটা বলতেই ইকরা আর সোহান একে অপরের দিকে তাকালো। সোহান ইকরাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। ইকরা এই কি করছো পরে যাবো তো। ছাড়ো বলছি, সোহান হাসতে হাসতে এই এতোটা মোটাও তুই হসনি যে তোকে নিয়ে আমি হাঁটতে পারবো না। বলতে বলতে ইকরাকে নিয়ে এসে খাঁটের উপর শুয়িয়ে দিয়ে, ইকরার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলো সোহান।
ইকরা:- অমন করে কি দেখছো?
— সোহান কোন কথা না বলে নিজের মুখটা ইকরার মুখের কাছে নামিয়ে নিয়ে এসে “ভালোবাসি”
চলবে…