জীবন সঙ্গী ৫ম পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy
নিলয় তাসপিয়ার পিছু পিছু রুমে এসে দেখল তাসপিয়া অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।তখন তাসপিয়াকে দেখতে আরও বেশি সুন্দরী লাগছিল।
নিলয় এসে তাসপিয়ার হাতে ধরে বলল—– কি হল,চলো ছাঁদে যাবে না।জোৎনা বিলাস করবে না?
তাসপিয়া অভিমানী কন্ঠে বলল—— না যাব না,আমি এখন ঘুমাব, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
নিলয় হেসে বলল—– যাবে না বললে তো হবে না ম্যাডাম,আমার কাছে যখন একটা আবদার করছেন তখন আমি আবদারটা পুরন করবই,বলেই নিলয় আচমকা তাসপিয়াকে পাজকোলে তুলে নিল।
তাসপিয়া নিলয়ের কোল থেকে নামার জন্য চেষ্টা করছিল,কিন্তু নিলয়ের শক্তির সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠছিল না সে।আগত্য তাকেও বাধ্য হয়ে নিলয়ের গলা জড়িয়ে ধরে রাখতে হল।
তাসপিয়াকে কোলে নেওয়ার সাথে সাথেই যেন তাসপিয়ার সমস্ত রাগ অভিমান ধুলোয় মিশে গিয়ে মনের মধ্যে ভালবাসার অনুভূতি সৃষ্টি হল।
নিলয় কোলে নিয়ে আছে তাসপিয়াকে আর তাসপিয়া নিলয়ের গলা জরিয়ে ধরে আছে।দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় ভালবাসা বিনিময় করছে,এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
,
,
ছাঁদে আসলে নিলয় তাসপিয়াকে নামিয়ে দিলে তাসপিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষন নিরবতা।
নিলয় তাসপিয়াকে টেনে একটি দুলনায় বসিয়ে দিল আর নিজেও তাসপিয়ার কোলে তাসপিয়ার উরুর উপর মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে রইল।
তাসপিয়াও নিলয়ের মনোভাব বুঝতে পেরে নিলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
মাঝে মাঝে দুজন চোখে চোখে ভালবাসার কথা বলে মুচকি হাসছে।
——- আচ্ছা তাসপিয়া তুমি তো কোরানের হাফেজা,আর মাদ্রাসার শিক্ষিকা তাই না।
—— হুম কেন?
—— না মানে,তুমি মাদ্রাসার মেয়েদের যেভাবে কুরান শিক্ষা দেও সেভাবে কি আমাকে শিখাবে?আমার অনেক ইচ্ছা, ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানব,শিখব,ইসলামিক নিয়ম মোতাবেক আমরা আমাদের জীবন সাজাবো,তুমি কি আমাকে এগুলা করতে, শেখাতে সাহায্য করবে।
তাসপিয়া হেসে বলল—— কেন নয়,অবশ্যই শিখাব,,আমরা দুজন বিবাহ বন্ধনের মাঝে এক হয়েছি,এখন আমাদের হতে হবে দুই দেহের মাঝে এক আত্না,,তুমি শুধু তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছা,স্বপ্নগুলা আমাকে বলো,আমি ইনশাল্লাহ আমার সাধ্য মতন তা পূরন করার চেষ্টা করব।
——- ইনশাল্লাহ, আর…………যে স্বামী তার স্ত্রী কে কুরানের একটি এলেম শিখাবে এবং নিজেও শিখবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে,আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর ঐ স্বামী স্ত্রী কে জান্নাত দান করবেন।
তাই আমিও চাই তুমি যা জান তা আমাকে শেখাও আর আমি যা জানি তা আমি তোমাকে শিখাব।এতে করে সওয়াবও হলো আর আমরাও একে অপরকে ভালবাসার মাধ্যমে ভাল কিছু শিক্ষা দিতে পারলাম।
তাসপিয়া কিছু না বলে হেসে মাথা নাড়াল।
——- এখন কি কিছু শিখাবে, বলবে কিছু!
——- হুম, আপনাকে কোরানের আয়াত শুনাই?
নিলয় হেসে বলল—– যা হুকুম মহারানী।
তাসপিয়া ধীর কন্ঠে বলতে লাগল—— আলিফ লাম মিম…………………………………………
এভাবে কিছুক্ষন কতগুলা আয়াত পরে শুনাল নিলয়কে।
তাসপিয়ার এমন কুরান তেলাওয়াত শুনে নিলয়ের যেন একপ্রকার নেশা ধরে গেল।
এত সুন্দর করে মিষ্টি কন্ঠে কিভাবে তেলাওয়াত করতে পারল তাসপিয়া।
মনে মনে অনেক খুশি হল।
তাসপিয়াকে ইশারা করল নিলয়,তাতে তাসপিয়া মাথা নিচু করতেই নিলয় তাসপিয়ার কপালে অনেকগুলা চুমু খেল।
তাসপিয়া লজ্জায় আর তাকাতে পারল না নিলয়ের দিকে।তা বুঝতে পেরে নিলয় বলল—– এই যে লজ্জাবতী আমার,আমার কাছে এত লজ্জা পেতে হবে না তোমার।আমিই একমাত্র পুরুষ যে কিনা এখন তোমার জন্য বৈধ,তাই আমি তোমাকে চুমু দিলাম তুমিও আমাকে দেও।
তাসপিয়া এবার লজ্জায় পরে গেল।তাতে তাসপিয়ার মায়াবী ফর্সা মুখটা লালচে হয়ে গেল।
তাসপিয়া লজ্জা স্বরে আস্তে করে বলল—-না আমি পাড়ব না,আমার লজ্জা করে!
নিলয় হেসে বলল—— আরে বোকা মেয়ে,
আমাদের মা ফাতিমা(রাঃ)বলেছ
েন………একজন নারীর সর্বশ্রেষ্ঠ গহনা হলো তার লজ্জা।
কিন্তু আফসোস বর্তমানে বেশিরভাগ মেয়েদেরই লজ্জা নেই।
আমি কিন্তু এখন তোমার স্বামী তাই আমার কাছে তোমার তেমন বিষয়ে লজ্জা না থাকাটাই বেটার।
তাই আমি যে কয়টা চুমু দিয়েছি তোমাকে আমাকেও সেই কয়টা চুমু ব্যাক দেও।
——- কিহ!এতগুলা চুমু দিব আমি,লজ্জায় তো আমি মরে …………বলার আগেই নিলয় তার আঙুল তাসপিয়ার ঠোটে ছোঁয়াল।
আর বলল—– এমন কথা আর কখনোই বলবে না।আল্লাহ যখন চাইবে তখন সবাইকেই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।কারন,মানুষের জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে এই তিনই আল্লাহর ইচ্ছায়।তাই আর কখনোই এমন বলবে না, এই আমি বলে দিলাম।
এখন কথা না বলে অনেকগুলা চুমু দেও।কারন………………যে স্বামী তার স্ত্রী কে একবার চুমু দিবে এবং যে স্ত্রী তার স্বামী কে একবার চুমু দিবে,স্বামী স্ত্রীর প্রতিটা চুমু দেওয়ার বিনময়ে তাদের আমলনামায় ১০০ টি করে নেকী লিখা হয়(মুসনাদে আহমদ,স্বামী স্ত্রী)
নিলয়ের কথা শুনে আর অমত করতে পারল না তাসপিয়া তাই সেও নিলয়ের গালে কপালে অনেকগুলা চুমু খেল।
,
এভাবেই ছাদের মাঝে চাদের আলোতে চলছে তাসপিয়া আর নিলয়ের খুনসুটি ভালবাসা আর প্রেমময় গল্পকথা।
,
রাত প্রায় চারটার কাছাকাছি তখনি দুজন রুমে চলে এসে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে নেয়।
তারপর কিছুক্ষন দুজন গল্প করার পরপরই ফজরের আজান দিয়ে দেয়।
নিলয় তাসপিয়ার কপালে চুমু দিয়ে তারপর তাসপিয়াকে একবার জড়িয়ে ধরে মসজিদের দিকে রওনা দেয় নামাজ পরার জন্য।
তাসপিয়াও প্রস্তুত হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।
,
,
নামাজ শেষ করে এসে নিলয় যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন সকাল প্রায় ৯টা বাজে।
তাসপিয়া নামাজের পরপরই কুরান তেলাওয়াত করে মায়ের রান্নার কাজে সাহায্য করতে রান্না ঘরে চলে গেছে,আর নিলয় নামাজ পরে এসেই ঘুম দিয়েছে।
,
সবাই যখন খাবার টেবিলে বসে আছে খাবার খাওয়ার জন্য, তখন নিলয়কে না দেখে তাসপিয়ার মা তাসপিয়াকে বললেন নিলয়কে ডেকে আনতে তারপর সবাই এক সাথে নাস্তা করবে।।
,
তাসপিয়া নিজের রুমে এসে দেখে নিলয় এখনো গভীর ঘুমে মগ্ন।
তাসপিয়া নিলয়ের কাছে এসে কয়েকবার ডাকলে নিলয়ের কোন সারা শব্দ মিলেনি।
তাসপিয়া যখন নিলয়ের ঘুম ভাঙাতে নিলয়কে ধাক্কা দিল ঠিক তখনি নিলয় তাসপিয়া কে জড়িয়ে ধরে বিছানায় ফেলে দেয়।
তাসপিয়া অবাক হয়ে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে—— কিহ,তারমানে তুমি এতক্ষন জেগে থাকা সত্তেও আমার ডাকে সারা দাওনি তাই না।
নিলয় হেসে বলল– তখন যদি তোমার ডাকে সারা দিতাম, তাহতে এই যে তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি এই রোমান্টিক মুহুর্তটা তো আর পেতাম না তাই না।তাই ইচ্ছে করেই আমি তোমার ডাকে সারা দেইনি।
তাসপিয়া তা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল নিলয়ের দিকে,এমন সময়ই নিলয় তাসপিয়ার দুগালে চুমু বসিয়ে দিল।
তাসপিয়া নিস্তেজ হয়ে নিলয়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরল।
—–এই তুমি এত রোমান্টিক কেন?
নিলয় হেঁসে বলল—– কি যে বল না তুমি!এইটা তোমার কাছে রোমান্টিক মনে হল,এইটা তো জাস্ট নমুনা মাত্র।শ্বশুর বাড়ি আছি বলে কিছু বলছিনা।নিজের বাড়িতে যখন তোমাকে নিয়ে থাকব তখন বুঝিয়ে দিব রোমান্টিকতা কত প্রকার আর কি কি!
তাসপিয়া নিলয়ের বুকে কিল দিয়ে বলল– যাও তো এখন ছাড়।মা তোমাকে খাবার খেতে ডাকতে পাঠাল আর আমিও কিনা তা না করে তোমার ভালবাসার কাছে হার মেনে গেলাম।এখন উঠো, উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেও,নিচে তোমার জন্য সবাই খাবার রেখে অপেক্ষা করছে।
—— হুম ঊঠব,আগে আমার পারিশ্রমিক দেও!
তাসপিয়া অবাক হয়ে বলল—– কিসের পারিশ্রমিক দিব?
——- এই যে কতগুলা চুমু দিলাম,এতে আমাদের সওয়াব হল,,এখন তুমিও আমাকে চুমু দেও তাহলে আরও বেশি সওয়াব হবে।
রাতে বাসর করতে দেওনি কিন্তু তাই চুমু তোমাকে দিতেই হবে।
তাসপিয়াও আর অমত না করে নিলয়কে চুমু দিল।
নিলয় উঠে বাথরুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য আর তাসপিয়া বিছানা গুছাতে গুছাতে আল্লাহ শুক্রিয়া আদায় করল,নিলয়ের মতন এমন একজন কে জীবনসঙ্গী হিসেবে দেওয়ার জন্য।
নিলয়ের আচরন দেখে মনে হচ্ছে আমরা কত দিনের চেনা পরিচিত। কিভাবে এক রাতেই আমাকে এত আপন করে নিল।
শুনেছি বিয়ের পর অনেকদিন মেয়েরা তাদের স্বামীর প্রতি ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে না।কিন্তু নিলয়ের ভালবাসা আর এত শুদ্ধ আচরনের কাছে আমার মনে থেকে যেন সেই ভয়টাই চলে গেছে।
আমিও যেন নিলয়ের ভালবাসায় সারাদিয়ে তাকে এক রাতেই কত আপন করে নিয়েছি।মনে হচ্ছে কত জনমের চেনা পরিচিত সে।
শুনেছি বিয়ের প্রথম রাতেই স্বামীরা তাদের স্ত্রীর মনোভাব না বুঝেই তাদের উপর ঝাপিয়ে পরে স্ত্রীর হক আদায় করতে।কিন্তু নিলয় তো আমাকে তেমন কিছু তো দুরের কথা আমার স্বপ্ন পুরন করতে আমার সাথে চাদের আলোতে জোৎনা বিলাস করেছে।
হয়তো নিলয় আমার মনের খবর বুঝতে পেরেছিল তাই আমাকে নিয়ে গল্প করতে করতেই অর্ধেক রাত কাটিয়ে দিল।
এসব ভাবছে তাসপিয়া এমন সময় নিলয়ের ডাকে ধ্যান ভাঙল তাসপিয়ার।
—–কিভাবছিলে এতক্ষন আনমনা হয়ে?
তাসপিয়া হেসে বলল—- না তেমন কিছুই না।চলতো সেই কখন থেকে সবাই আমাদের জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতেছে।
—— হুম চলো……………………
,
খাবার টেবিলে গিয়ে সালাম দিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করল নিলয়।
তারপর সবাই খাওয়া শুরু করল।
খাবার টেবিলেও নিলয় আড়চোখে তাকিয়ে ছিল তাসপিয়ার দিকে।তাসপিয়া তার পাশেই বসেছিল তখন।
,
খাওয়াদাওয়া শেষ হলে নিলয় সবার সাথে কথা বলে বিদায় নেওয়ার পালা।
নিলয় কিছুক্ষন পর চলে যাবে শুনে তাসপিয়ার বুকের ভেতরটা কেমন মুচর দিয়ে উঠল।
নিজের রুমে বসেই কিসব ভাবছে আর এক হাতে চোখের পানি মুছতেছিল তাসপিয়া। এমন সময় রুমে নিলয়ের আগমন……………………………
……………………………………………………!!!
চলবে ইনশাল্লাহ ……………………………………???