জীবন সঙ্গী ৪র্থ পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy
নিলয় কোন রকম তাসপিয়াকে রেখে দরজা আটকে দিতেই তাসপিয়া আবার নিলয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
নিলয় কিছু বুঝতে না পেরে তাসপিয়াকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইল।
কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর নিলয় তাসপিয়াকে জিজ্ঞেস করল——- কি হইছে আপনি কান্না করছেন কেন?
তাসপিয়া নিশ্চুপ হয়ে নিলয়কে জরিয়ে ধরে আছে।
নিলয় লক্ষ্য করল তাসপিয়ার কান্নার মাত্রা এখন প্রায় কমে গেছে,তবুও চোখে ভেজা ভেজা পানি দেখা যাচ্ছে।
নিলয় হাত দিয়ে সেই পানি মুছে দিতে চাইলেও পপরক্ষনেই নিজের দো ঠোট দিয়ে তাসপিয়ার দুচোখের পানি শুষে নিল।
তাসপিয়া এবার কান্না বন্ধ করে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলয়কে ছেড়ে দিল।
নিলয় তা বুঝতে পেরে তাসপিয়াকে টেনে নিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিল।
তারপর তাসপিয়ার দুগালে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে নিলয় বলল—— কি হয়েছিল এভাবে কান্না করছিলেন যে?
তাসপিয়া এবারও নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে রইল।
নিলয় তাসপিয়ার এমন নিশ্চুপ ভাব দেখে গম্ভীর স্বরে বলল——- শুনুন,এভাবে নিশ্চুপ হয়ে থাকলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যি বাসায় চলে যাব।
তাসপিয়া নিলয়ের হাত ধরে বিনয়ের সাথে বলল——- প্লিজ আপনি যাবেন না,এই দেখুন আমি আর কান্না করছি না,আর নিশ্চুপ হয়েও থাকছি না।তবুও আপনি যাবেন না প্লিজ।
—— আচ্ছা যাব না।এবার তো একটু হাসুন প্লিজ!
নিলয়ের কথায় তাসপিয়া এবার মাথা নিচু করে মুচকি হাসল।
——- আচ্ছা আপনি এভাবে কান্না করছিলেন কেন!আমিকি কোন ভুল কিছু করে ফেলেছি!
——- হুম অনেক বড় ভুলটাই করেছেন।আমাকে এভাবে একা রেখে আপনি চলে যেতে চাইছিলেন কেন?
নিলয় হেঁসে বলল—— আরে আমিতো মজা করেই বলেছিলাম যে আমি আজ চলে যাব।তাই বলে এত কান্না করা লাগে আমিতো ভাবছিলাম আপনি খুশি হবেন!
তাসপিয়া ভেংচি মেরে বলল—– মোটেও খুশি হতাম না।
——- কেন,মনে ভালবাসা জেগেছে বুঝি?
——-সেটা অনেক আগেই জেগেছে!
নিলয় অবাক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করল—— কখন জেগেছে শুনি?
——- যেদিন আপনি আমাকে দেখতে এসেছিলেন সেদিনই।
সেদিন সারারাত শুধু আপনার বলা কথাগুলাই উপলন্ধি করার চেষ্টা করেছি।
আপনার কথাগুলা ভাল করে বুঝে সিদ্ধান্ত নিলাম যে,আপনাকেই বিয়ে করব।
আপনি আমার ভুলটা ভেঙে দিয়েছেন।
আসলে আমিও অন্য সবার মতই হুজুর টাইপের ছেলে পছন্দ করতাম।
কিন্তু আপনার কথাগুলা বুঝে বুঝলাম যে,জীবনে সুখী হতে গেলে একজন ভাল মনের জীবনসঙ্গী লাগবে।সেটা হুজুর ছেলে হোক আর অন্য কেও হোক,,একজন ধার্মিক,আর ভালো মনের মানুষের সাথেই নিশ্চিন্তে আজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।সেটা আমি আপনার মাঝে,আপনার কথায় বুঝেছি।তাই সব কিছু ভেবে চিন্তেই সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আপনাকেই বিয়ে করব।
আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যে আপনি যদি আমার জন্য আমার ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর হন তাহলে যেন আল্লাহ আপনাকেই আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে দান করেন।
আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন,আর আমরা একে অপরের জন্য ইহকাল ও পরকালে কল্যাণকর বলেই আল্লাহর ইচ্ছায় আজ আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের জন্য হালাল হয়েছি,একে অপরের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।
সেদিন থেকেই কেন জানি সারাক্ষন আপনার কথা মনে হত,আপনার কথাগুলা সব সমই মনের ভেতর উপলন্ধি হত,,অন্যরকম এক ভাললাগার সৃষ্টি হয়েছিল আর তা থেকেই ভালবাসার শুরু।তাইতো যথা শিঘ্রই আপনাকে বিয়ের কথা বলতে বলেছিলাম,যাতে কোন অবৈধ ভালবাসায় জরিয়ে পাপাচারে লিপ্ত না হই।
নিলয় এতক্ষন চুপ থেকে শুধু তাসপিয়ার কথা শুনল।
——তা এতই যখন ভালবাসেন তাহলে এতক্ষন কান্না করছিলেন কেন আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছলেন কেন?
—— ভালবাসি বলেই তো আপনি চলে যাবেন শুনে কেন যানি খুব কষ্ট অনুভব করলাম।
আপনি একটিবারও আমার মনের কথা বুঝার চেষ্টা না করে আমাকে রেখে চলে যেতে চাইছিলেন,মনে মনে খুব করে বকা দিছি আপনাকে।
——- তা এতক্ষন আমাকে বকা দিছেন,একন একটু করেন, বলেই হেসে দিল নিলয়।
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল তাসপিয়া।
কিছুক্ষন নিরবতার মধ্যেই রইল দুজন…………………………
নিরবতা ভেঙে তাসপিয়া বলল—— আমার খুব ক্ষুধা লাগছে,আপনি কি খাবেন তাহলে এখানে নিয়ে আসতাম খাবারগুলা!
—— আপনি যদি আমাকে নিজ হাতে তুলে খাইয়ে দেন তাহলে আমি খাব!
তাসপিয়া অবাক হয়ে বলল—- আমি!কেন আপনি নিজ হাতে খেতে পারেন না!আমি খাইয়ে দিব কেন?
——- আগে খাবার নিয়ে আসুন তারপর বলছি কেন দিবেন!
——- আচ্ছা, কিন্তু আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলতে হবে!
নিলয় মাথা নিচু করে বলল—— কিন্তু আপনি তো আমার চেয়ে বড়,আপনি করেই বলি না, সমস্যা কি?
_——— অনেক সমস্যা,এখানে বড় ছোটর কোন প্রশ্ন আসেনি।এখন আমরা স্বামী স্ত্রী তাই এখানে কে বড় আর কে ছোট তা দেখার বিষয় নয়,,এখন আপনি আমার স্বামী আর আমি আপনার স্ত্রী, তাই আমাকে এখন থেকে তুমি বলেই ডাকবেন!
——– যদি আপনিও আমাকে তুমি বলে ডাকেন তাহলে আমিও ডাকব!
—— কিহ!আমি তুমি বলে ডাকব কেন!.
——- আমি আপনার স্বামী, আমি তুমি বলে ডাকতে বলছি সো তুমি বলে ডাকবেন,ওকে!
——আচ্ছা,তাহলে আমি যাই খাবার নিয়ে আসি,আপনি একটু বসুন।
নিলয় এবার রাগি লুকিং এ তাসপিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল—– আবার আপনি!!!”
তাসপিয়া হেসে বলল—— ওহ, সরি,তুমি হবে।আমি এখন যাই খাবারগুলা নিয়ে আসি,বলেই তাসপিয়া রুম থেকে বেড়িয়ে গেল খাবার আনার জন্য!
,
,
কিছুক্ষন পর তাসপিয়া একটা ট্রে তে করে খাবার নিয়ে আসল।
তাসপিয়া একটি খাবার বেরে যখন অন্য একটি প্লেটে খাবার বাড়তে যাবে, ঠিক তখনই নিলয় বলল—— এই এই কি করছ কি তুমি!.
তাসপিয়া অবাক হয়ে বলল—— কি করছি মানে,খাবার বাড়ছি দেখছেন না বলেই জিভ কামড় দিল,মাথা নিচু করে বলল,খাবার বাড়ছি দেখছ না?
——- হুম দেখছি তো।কিন্তু দুই প্লেটে কেন?এক প্লেটেই খাবার খাব আমরা!
তাসপিয়া অবাক হয়ে বলল—– এক প্লেটে খাবার খাব কেন?
–
——- কেন মানে, তুমি যান না……………যে ঘরে স্বামী স্ত্রী একই প্লেটে খাবার খাবে,যতক্ষণ পর্যন্ত খাবার খাবে,ততক্ষণ পর্যন্ত স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় নেকী লিখা হয়(তিরমিযী)
তাসপিয়া নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল—— কই এগুলা তো আগে জানতাম না,আজই প্রথম জানলাম!
নিলয় হেসে বলল—– সবাই তো আর সব কিছু জানে না।তুমি যা যান হয়তো আমি তা জানি না,আবার আমি যা জানি হয়তো তুমি তা জান না।
তাসপিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল—— আপনিতো স্কুল কলেজে পড়ালেখা করে ইসলাম সম্পর্কে ভালই জানেন।
—— আলহামদুলিল্লাহ, খুঁটিনাটি কিছু জানি আর কি,,স্কুল কলেজের বইয়ের পাশাপাশি আমি ইসলামিক বিভিন্ন বই পরেছি এখনো পরি,সেখানে থেকেই এগুলা জানা।
যাইহোক এখন খাইয়ে দেও তো,এতদিন একা ছিলাম বলে অনেক সওয়াব মিস করেছি,কিন্তু এখন তুমি আছ তাই আর এখন আর তেমন কোন সওয়াব মিস হবে না ইনশাল্লাহ।
তাসপিয়া হেসে বলল—– ইনশাল্লাহ, কিন্তু বললেন না তো আমি আপনাকে কেন খাইয়ে দিব?
নিলয় হেসে বলল—— তুমি একা কেন, আমিও তোমায় খাইয়ে দিব,যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।কারন……………যে স্বামী তার স্ত্রী কে এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিবে,আল্লাহতায়ালা ঐ স্বামীর ছাগীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন।আর যে স্ত্রী তার স্বামী কে এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিবে,আল্লাহ ঐ
স্ত্রীর ছাগীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং প্রতি লোকমা ভাতের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় ১০০০ নেকী দান করবেন(মুসলিম শরীফ)
তাসপিয়া হেঁসে বলল—– আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের একে অপরের ভালবাসার বিনিময়ে কত সওয়াব দান করছেন।
নিলয় তাসপিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল—- আলহামদুলিল্লাহ,, এই যে আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করি এতেও সওয়াব পাওয়া যায়,কারন……………যে স্বামী স্ত্রী উভয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিবে,আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতিটি হাসিতে স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় ১০ টি করে নেকী দান করবেন(আবু দাউদ)
এমনসব কথাবার্তা বলার পর নিলয় আর তাসপিয়া এক প্লেটে খানার নিয়ে একে অপরকে খাবার খাইয়ে দিল।
,
খাওয়া শেষে তাসপিয়া বলল—– ঐ চলো না ছাঁদে যাই!
—— এত রাতে, আর এই বাসর রাতে বাসর না করে ছাঁদে কেন!।
—— দেখছ না আকাশে আজ কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে,চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে সবকিছু।আমার কত দিনের ইচ্ছা কাওকে সাথে নিয়ে চাদের আলোতে দুজন মিলে জোৎনা বিলাস করব।
নিলয় তাসপিয়ার কথার জবাব না দিয়ে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পরল।আর নিলয়ের এমন আচরন দেখে তাসপিয়া মন খারাপ করে বেলকনিতে চলে গেল।
,
কিছুক্ষন পর তাসপিয়া কারও স্পর্শ অনুভব করল,কেও একজন তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে।পেছনে তাকিয়ে দেখল নিলয়।
নিলয় এমনসময় তাসপিয়ার কানে কানে কিছু একটা বলতে তাসপিয়া নিলয়কে ধাক্কা দিয়ে রুমে চলে আসল………………………………
………………………………………!!!!
চলবে ………………………………………
……??