জীবনসঙ্গী ৩য় পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy
কিছু একটা ভাবছে নিলয়,এমন সময় তাসপিয়া যা বলল তা শুনে চমকে উঠল নিলয়……………………………
তাসপিয়া বলল—– এই যে শুনছেন,আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি!আপনি যদি চান তাহলে আমি আপনার জীবনসঙ্গী হতে রাজি আছি।
তাসপিয়ার এমন কথা শুনে নিলয় নিশ্চুপ হয়ে গেল।
কোন কথাই বের হচ্ছে না তার মুখ দিয়ে,ফোন কানে নিয়েই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে,,মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছে সে,তাই নিজেই নিজের হাতে কয়েকটা চিমটি কাটল.!
নিলয়ের এমন নিশ্চুপ ভাব দেখে তাসপিয়া অভিমানী কন্ঠে বলল*—— কি হলো,কিছু বলছেন না যে!ওও আমিতো আপনার অফিসের কাজে বিরক্ত করলাম।আচ্ছা সরি,রাখছি আমি,ভাল থাকবেন।
তাসপিয়া কল কাটার আগেই নিলয় তড়িঘড়ি করে বলে ঊঠল—–এই না না,প্লিজ ফোন রেখে দিও না।তাহলে যে অনেক কষ্ট পাব।
*—— তাহলে এতক্ষন কথা বললেন না কেনো?
——- আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছিল আমি যেন স্বপ্ন দেখছি,তাই নিজেই নিজেত গাঁয়ে চিমটি কাটলাম।
তাসপিয়া হাসল—– তা কি মনে হল,স্বপ্ন নাকি সত্যিই?.
—— মনে হলো সত্যিই! তা আরেকবার একটু বলবেন প্লিজ, খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।
—– কেন তখন যে বললাম, তখন শুনেননি নাকি?
—– হুম শুনেছি,কিন্তু এখন আরেকটু ভাল করে শুনব।তখনতো ঘুরের মাঝেই শুনেছি।প্লিজ আরেকবার বলুন না?
তাসপিয়া আবারও হাসল—– আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি!আপনি চাইলে আমি আপনার জীবনসঙ্গী হতে চাই!আমাকে কি আপনার জীবনসঙ্গী বানাবেন?
নিলয় হাসল—– আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমি অনেক খুশি।হুম বানাবো ইনশাল্লাহ!
তা আপনারতো হুজুর ছেলে পছন্দ, আমাকে বিয়ে করতে,আমার জীবনসঙ্গী হতে রাজি হলেন যে!
—— বিয়ের পর বলব,এখন লজ্জা লাগতেছে।
—— আচ্ছা,সমস্যা নেই।
তাহলে বিয়ে কি এখনি হবে নাকি কয়েকমাস পরে?
—— আপনি যখন চাইবেন তখনি হবে ইনশাল্লাহ।
নিলয় দুষ্টুমি করে বলল—– আমিতো আজ এখনি চাচ্ছি বিয়েটা সেরে ফেলতে,আর যে অপেক্ষা সইছে না।
নিলয়ের কথায় তাসপিয়া কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল—– হুম করতে পারেন,আমার কোন আপত্তি নেই।
কিছুদিন পর তো রমজান মাস।তাই এখন যদিও আমাদের বিয়েটা হয় তাহলে আমি কিন্তু আপনার বাড়িতে যাব ঈদের পরে।
নিলয় অবাক হয়ে প্রশ্ন করল—– কেন?
—— আসলে রমজানে মা এত কিছু একা সামলে নিতে পারবে না তাই, আর আপনিতো জানেনই আমি এখনো সেরকমভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই।
নিলয় হাসল—– আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে আমার মনের আশাটাও এবার পূর্ন হবে!
তাসপিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল—– আপনার আবার কি মনের আশা?
—– আমার সেই অনেক আগে থেকেই একটাই ইচ্ছা,বিয়ের পর বউয়ের সাথে হালাল প্রেম করব।তাই এখন যদি আমাদের বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে আমরা প্রায় ২ মাস হালাল প্রেম করার সুযোগ পাব,যদি আপনি রাজি থাকেন আর কি?
তাসপিয়া হেঁসে বলল—— বাহ!আপনার ইচ্ছের সাথে আমার ইচ্ছেটাও পূরন হয়ে যাবে।আসলে আমিও এমনটাই চাইছিলাম,তার আগেই আপনি তা বলে দিলেন।
*——- আলহামদুলিল্লাহ, বিয়ের আগেই তো মনে মনে প্রেম হয়ে গেল।সে যাই হোক আজ তাহলে রাখছি,এখন অযথা কথা বললে গুনাহ হবে।তারচেয়ে ভাল বিয়ের পর দুজন প্রেমের কথা বলব।
তখন আরও সওয়াব হবে।আজ তাহলে রাখি কেমন?
—— জ্বি,
——- আরেকটা কথা,আমি কিন্তু এই সপ্তাহের মধ্যেই মা কে আপনার বাসায় বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার জন্য পাঠাব,যদি আপনি অনুমতি দেন?
—— আলহামদুলিল্লাহ আমি রাজি,।
—— আজ তাহলে রাখি,ভাল থাকবেন,।
*—– হুম,আপনিও ভাল থাকবেন।
*—— আল্লাহ হাফেজ আর শুভ রাত্রি।
—— আল্লাহ হাফেজ আর আপনাকেও জানাই শুভ রাত্রি।
নিলয় হেসে বলল—- আজ রাতে ঘুম হয় কিনা আল্লাহই জানে,আজ যে আমার স্বপ্নগুলা সত্যি হতে যাচ্ছে।
নিলয়ের কথা শুনে তাসপিয়া হেসে ফোন রেখে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
নিলয়ের সাথে কথা বলার সময় তার বুকের মধ্যে যেন কেও হাতুড়ি পেটাচ্ছিল।
,
,
পরদিন নিলয়ের মা এসে তাসপিয়ার মায়ের সাথে নিলয় আর তাসপিয়ার বিয়ের বেপারে কথা বলল।
তাসপিয়ার মা জানায়,আগামী সপ্তাহে তাসপিয়ার বাবা বিদেশ থেকে ফিরলেই তাদের বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করে ফেলবেন।
,
,
তাসপিয়ার বাবা দেশে ফিরলে, কোন এক শুক্রবার নিলয় আর তাসপিয়ার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়।
যেহেতু তাসপিয়া বিয়ের পরে রমজান মাসের পুরোটাই তার বাসায় থাকবে, তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাসপিয়ার বাসায় বিয়ের কাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিল।
নিলয় এতে অসম্মত জানালে তাসপিয়ার বাবা জানায়,আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা,আর তাছাড়া বিয়েটা তো আর তেমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে হচ্ছে না।
ছোটখাটো একটা আয়োজনের মধ্য দিয়েই বিয়ে হচ্ছে।তাই এই সামান্য খরচটূকূ না হয় আমরাই করি।
আর আমাদের রাসুল (সাঃ)বলেছেন— যে বিয়েতে খরচ কম,সেই বিয়ে বরকতময়।
তাই আমি চাচ্ছি তোমাদের বিয়েটা নবীজির সুন্নৎ মুতাবেক হোক।
নিলয় আর সেদিন তাসপিয়ার বাবার কথায় আপত্তি জানায়নি।
,
,
আজ নিলয় আর তাসপিয়ার বিয়ে।
তাসপিয়ার বাড়িতে বেশ কিছু লোকের সমাগম।আজ বাড়িটাও বেশ সুন্দর করে নববধূর মতন করে সাজানো হয়েছে।
যেহেতু সুন্নৎ মোতাবেক বিয়েটা হবে, তাই তেমন কোন বিশেষ আয়োজন ছাড়া অন্য কোন আয়োজন নেই তাসপিয়ার বাসায়।
তাসপিয়াকে আজ সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে তার বান্ধবিরা।একটা রুমের মধ্যে আছে তাসপিয়া আর তার বান্ধবিরা।যেখানে কোন পরপুরুষ যাওয়া সম্পুর্ন নিষেধ।
,
,
মাগরিবের নামাজের পর নিলয় ও তার সাথে কিছু মুরুব্বী আসলে তাদের যথাসাধ্য আপায়ন করেন তাসপিয়ার পরিবার।
এশার নামাজের পর কাজি সাহেব বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলে নিলয় সহ সবাই বাসার দিকে রওনা দিবে,এমন সময় নিলয়ের ফোন বেজে উঠল।
নিলয় ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল তাসপিয়ার নাম্বার।
ফোন রিসিভ করতেই তাসপিয়া সালাম দিয়ে তার রুমে যেতে বলল।নিলয় সালামের জবাব দিয়ে তাসপিয়ার রুমের দিকে পা বাড়াল।
রুমে ডুকতে যাবে এমন সময় কয়েকজন মেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল নিলয়ের পাশ দিয়ে।
রুমে ডুকতেই সালাম দিল নিলয়।
তাসপিয়া সালামের উত্তর দিয়ে বলল—— এত দূরে আছেন কেন?এদিকে এসে আমার পাশে বসুন।
নিলয় এগিয়ে গিয়ে তাসপিয়ার খাটের একপ্রান্তে বসে পরল।তারপর ধীর কন্ঠে বলল—– হঠাৎ আমাকে এখানে আগমন জানানোর কারন কি যানতে পারি?
তাসপিয়া মাথা নিচু করে বলল—– না মানে আজকের রাতটা না হয় এখানেই থেকে যেতেন!
সামনে সপ্তাহে থেকে তো রমজান শুরু।তখন তো আমি এক জায়গায় আর আপনি এক জায়গায় থাকব।তাই বলছিলাম কি আজ আমাদের বিয়ের প্রথম রাত,আজ আমরা কিছুক্ষন আগে স্বামী স্ত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হলাম।আজ থেকে আমাদের আমল নামায় সওয়াব লেখা শুরু হয়েছে।
কারন হাদিসে আছে যে……কোন পুরুষ বিয়ের সময় তার স্ত্রী কে কালিমা পরে কবুল বলে দোয়া করল,,তখন সেই সময় হতে মৃত্যু পর্যন্ত স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় সওয়াব লিখা হয়(মুসলিম)
তাই বলছিলাম আজকের রাতটা না হয় আমরা এক সাথেই গল্পগুজব, আল্লাহর এবাদত করেই কাটাই?
নিলয় দুষ্টুমি করে বলল—- বাব্বাহ!প্রথম দিনই এতো ভালবাসা, না জানি পরে আরও কত ভালবাসবে!
নিলয় তাসপিয়ার হাত ধরে আবার বলল—- কিন্তু মহারানী,লোকে কি বলবে এসব শুনলে,লোকে টিটকারি মেরে বলবে আমাদের বাসর রাত তোমাদের বাড়িতে হয়েছে,তখন কি বলব বলেন তো?
——-পাছের লোকের কথায় কান দিতে নেই কখনওই, তাহলে জীবন চলার পথে সবসময় পিছিয়ে থাকবেন।আর আমাদের এখানে বিয়ের প্রথম রাত মেয়ের বাড়িতে কাটানোর রেওয়াজ আছে।
নিলয় হেসে বলল—– তবুও আমার পক্ষে সম্ভব না গো,কাল যে আমার অফিসে গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে।তাই আপনি চাইলেও আমি থাকতে পারছি না।
আমি আসি তাহলে,বাহিরে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে,আর হ্যা ভাল থাকবেন সবসময় নিজের খেয়াল রাখবেন,বলেই নিলয় হাটতে হাটতে দরজার সামনে এসে আবার পিছনে ফিরে তাসপিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল তাসপিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে।চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল দুচোখে প্রচণ্ড মেঘ জমেছে, যেকোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।
তবুও নিলয় দরজাটা টেনে বাহিরে বের হয়ে গেল।
নিলয় চলে যেতেই তাসপিয়া উঠে রুমের দরজা লাগিয়ে বালিশে মুখ চেপে কান্না শুরু করে দিল।
কত স্বপ্ন ছিল বিয়ের প্রথম রাত নিয়ে, কত স্বপ্ন ছিল স্বামী নিয়ে, কিন্তু আজ আমার কপালে এই ছিল।
এই আমি কাকে বিয়ে করলাম,যে কিনা আমার মনের কথা একটুও বুঝল না,বুঝার চেষ্টা করল না।
এরকম আরও কিছু ভাবছে তাসপিয়া আর মনে মনে নিলয়কে নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে।
কিছুক্ষন পর কেও একজন দরজা নক করলে তাসপিয়া তড়িঘড়ি করে শাড়ির আচল দিয়ে নিজের চোখ মুখ মুছে নিয়ে দরজা খুলে দিল।
দরজা খুলে দেখে নিলয় দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে,, নিলয় তাসপিয়াকে দেখে মুসকি হাসল।তাসপিয়া আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিলয়কে…নিলয় তাসপিয়াকে এমনভাবে দেখে অবাক চাইনিতে তাকিয়ে রইল তাসপিয়ার দিকে……………………………
………………………………………………………………………
চলবে ইনশাল্লাহ ………………………………………..????