জীবনসঙ্গী ২য় পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy
কিছুক্ষন নিরবতা রেখে তাসপিয়া যা বলল,তা শুনে নিলয়ের চোখ মুখ গম্ভীর ভাবে কালো হয়ে গেল………………
তাসপিয়া বলল—— আপনি কি জানেন আমি আপনার চেয়ে বয়সে প্রায় ২বছরের বড়?
তাসপিয়ার কথা শুনে নিলয়ের মুখটা গম্ভীর ভাবে কালো হয়ে গেল।
তবুও নিজেকে শামলে নিয়ে বলল—– আপনি জানলেন কি করে যে, আপনি আমার চেয়ে বয়সে বড়?
——- যেহেতু আপনারা আমার মায়ের পরিচিত, সেহেতু জানতে আর অসুবিধা হয়নি,মা আমাকে আপনার বেপারে কিছূটা বলেছে।
—— ওও,কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয় আপনি আমার চেয়ে ছোট হবেন!
তাসপিয়া হালকা হেসে বলল—— ঠিকই বলছেন,কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের বয়স বেশি হলেও তাদের দেখে বুঝা যায় না যে তাদের বয়স বেশি,,আবার কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের বয়স কম হলেও তাদের দেখে বুঝা যায় না তাদের বয়স কম।
তেমনি আমার ক্ষেত্রেও এবং আপনার ক্ষেত্রেও।
——– আমার ক্ষেত্রে মানে?
—— কিছু মনে করবেন না,আপনার বয়স আমার চেয়ে কম হলেও কিন্তু দেখে বুঝা যায় আমার চেয়ে বড়।
নিলয় খানিকটা হাসল,হেসে বলল—— হয়তো, আমার একটা কথা বুঝে আসে না।একটা ছেলে তার চেয়ে ১০/১৫ বছরের ছোট মেয়েকে বিয়ে করলেও সমস্যা হয় না।কিন্তু একটা ছেলে তার চেয়ে একটু বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করলেই আমাদের সমাজ ও পরিবারে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের নবীজি (সাঃ)তো তার চেয়ে ১৫ বছরের বড় মা খাদিজা (রাঃ)কে বিয়ে করেছিলেন।
খাদিজা (রাঃ)ছিলেন আরবের মধ্যে সবচেয়ে ধন সম্পদশালী নারী।
তারা যদি বয়সে ছোট বড় কাওকে বিয়ে করতে পারে,, একে অপরকে ভালবাসতে পারে তাহলে আমরা কেন পাড়ব না।
আসলে ভালবাসাটা হয় মন থেকে।
দুটি মনে যখন একে অপরের প্রতি প্রবলভাবে আকর্ষিত হয় ঠিক তখনি ভালবাসার সৃষ্টি হয়।
নিলয় বলল একটা হাদিস বলি শুনুন……………………………………
# হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সঃ) এর স্ত্রীদের মধ্যে হযরত খাদিজা (রাঃ) ছাড়া আর কাউকে ঈর্ষা করি নি।যদিও আমি তাঁকে পাই নি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন বকরী জবেহ করতেন, বলতেন, এই মাংস খাদিজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাতে রাগান্বিত করলাম এবং বললাম, খাদিজাকে এতোই ভালবাসেন? আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তখন বললেন, তাঁর( খাদিজা) ভালবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে।”
– মুসলিম শরীফ (২৪৩৫)।
# হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লা-হু তায়ালা আনহার এর ভালবাসা নবীজি সলল্লাল-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে ।
এইটি আমার খুব পছন্দরের একটি হাদীস। অাসলে, খাদিজা (রাঃ)র প্রতি নবীজি (সঃ) এর অাবেগীয় অনুভুতি সম্পর্কিত যতো হাদীস বা ঘটনা আছে সবগুলোই আমার ভীষণ প্রিয়। পড়ার সময় কেমন যেন একটা শিহরণ বয়ে যায় ভেতরে।
# আজকাল আমাদের সমাজে কতো নিয়ম বিয়ের জন্য। ছেলে বয়সে বড় হতে হবে, মেয়ের বয়স কম হতে হবে ( অন্যথায় মেয়ের চেহারা খারাপ হয়ে গেছে consider করা হবে যেন বিয়াই একমাত্র বিউটি বর্ধক।)
# আবার ছেলের টাকাকড়ি মেয়ের ফ্যামিলির চেয়ে বেশি হতে হবে- এমন কতো কি! একটু গরীব ছেলের সাথে বিয়ে হলে সে মেয়েকে বাপের বাড়িও লজ্জিত হতে হয়!
অথচ পৃথীবির শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে দেখুন। নিজের চেয়ে ১৫ বছরের বড় স্ত্রীর জন্য তার ভালবাসা দেখুন। নবীজি (সঃ) বলেছেন, ” যদি খাদিজা বেঁচে থাকতো, আমি কখনোও দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতাম না (আল হাদিস)। তেমনি খাদিজা (রাঃ) ও নিজে আরবের অন্যতম শ্রষ্ঠ ধনী রমণী হওয়া সত্বেও নিজে নবীজি (সঃ) এর জন্য পাহাড় বেয়ে খাবার নিয়ে হেরা গুহায় চলে যেতেন। নবুওতির কঠিন সময়ে আমৃত্যু পাশে ছিলেন। বড় ডিগ্রী, টাকা, বয়সে ভালবাসা মেলে না। ভালবাসা হল অবস্থা নির্বিশেষে সঙ্গীকে সম্মান করা, দূরে থেকেও আস্থা রাখা, দুঃসময়ে পাশে থাকা।
# কি অপূর্ব খোশ নসিব ! ইসলাম গ্রহন করার পরেই স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাকে সালাম দেন! রাসুল (সঃ) যার ইন্তেকালে সবচেয়ে বেশি কেঁদেছেন,যার ইন্তেকালের বছরটি ছিলো রাসুল (সঃ) এর সবচেয়ে দুঃখ কষ্টের বছর।রাসুল (সঃ) বলেছেন “আসমানের নিচে জমিনের উপরে তারচেয়ে উত্তম মিহিলা আর নাই” হ্যা তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন রাসুল (সঃ) এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ)। যিনি তাঁর সমস্থ সম্পদ ইসলামের কল্যানে আল্লাহর রাসুল (সঃ) কে বিলিয়ে দিয়েছেন।
# শুধু তাই নয় নবুয়তের সময়কার কঠিন যন্ত্রনাময় দিনগুলিতে রাসুল(সঃ) কে শান্তনা দেন, আগলে রাখেন পরম মমতায়। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন আমি একবার রাসূল সঃ কে নিয়ে রাতে শুয়েছিলাম অর্ধেক রাতে দেখলাম তিনি আমার পাশে নেই দেখলাম তিনি নামাযের বিছানায় বসে দোয়া করছেন আমি অযু করে দোয়ায় শামিল হলাম।রাসুল (সাঃ) মুনাজাতে বলছেন হে আল্লাহ কিয়ামতের সেই কঠিন দিনে যখন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ভুলে যায় সেই কঠিন দিনে আমি যেন আমার খাদিজাকে ভুলে না যাই,আমি রাসুলের মুখে খাদিজার কথা শুনে হাত নামিয়ে ফেল্লাম। বল্লাম হে আল্লাহর রাসুল ৪০ বছরের এক বৃদ্ধা যাকে আপনি ২৫ বছর বয়সে পেয়েছেন এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ মহিলা কি আপনার জীবনে আসে নাই ? এই কথা শুনে রাসুল সঃ এর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গিয়েছে তিনি বলেন আয়েশারে তুমি আমার খাদিজার ব্যাপারে আর কক্ষনো এরুপ মন্তব্য করোনা। এই মক্কার জমিনে আমি মুহাম্মদের যখন কেউ খবর নেয়ার ছিলোনা তখন সমস্থ সম্পদ খাদিজা আমাকে বিলি করে দিয়েছেন। আমি যত রাতেই বাড়ি ফিরতাম এই খাদিজা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো,একবার এসে নক করার সাথে সাথে দরজাটা খুলে দিতো।আমি বলতাম খাদিজা ঘুমাও নাই কেন? খাদিজাতুল কুবরা বলতো আপনার আসতে দেরী হলে খুলতে যদি দেরী হয় আপনার সাথে বেয়াদবি হবে তাই এই দরজায় আমি পিঠ লাগিয়ে ঘুমাই।
# এই জীবনে খাদিজা কখনো আমাকে ছাড়া খায় নাই।আমি যখন হেরা গুহায় ধ্যান করতাম এই খাদিজা খাবার নিয়ে হেরা গুহায় উঠে যেত।বসে থাকতো আমাকে ডাকতো না।আমি উঠে দেখতাম খাদিজা ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বসে আছে,আমি বলতাম খাদিজা আমাকে ডাকেন নাই কেন? খাদিজা উত্তর দিতেন আপনি আল্লাহ কে পাওয়ার জন্য ধ্যান করছেন বেয়াদবি হয়ে যাবে সেই জন্য আমি ডাকি নাই।এ জন্যি আল্লাহ তায়ালা খাদিজাকে এতো মর্যাদা দিয়েছেন যে বিশ্ব নবির সাথে কালিমা পড়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা নিজে খাদিজাকে সালাম দিয়েছেন।
# আমাদের নারীরা যদি খাদিজা রাঃ এর আদর্শ গ্রহন করতো তাহলে এই পৃথিবীটা কতো সুন্দর হতো। রাসুল (সাঃ) এর মুখে এই কথা শুনে আয়েশা (রাঃ) বলেন আমার ভুল হয়ে গেছে হে আল্লাহর রাসুল।আমি আর কখনো খাদিজা (রাঃ) ব্যাপারে এই কথা বলবো না।
বুঝলেন তো,খাদিজা(রাঃ)প্রতি রাসুল (সাঃ)এর এত ভালবাসা থাকার কারনে আয়েশা (রাঃ)ও ইর্ষা করতেন।
যেখানে তাদের বয়সের তফাৎ ছিল ১৫ বছরের।
আর আমাদের মাত্র ২ বছরের।
সে যাইহোক আমি মাকে বুঝিয়ে বলব,।আপনার তো পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে।
আর আমার জানামতে ধার্মিক মেয়েরা বেশিরভাগই হুজুর টাইপের ছেলেদেরই জীবনসঙ্গী করে।
আল্লাহ আমার ভাগ্য যাকে রেখেছেন সে আজ হোক কাল হোক আমার কাছেই আসবে।
সে যদি আমার মনের মতন না হয় আমি ইনশাল্লাহ তাকে আমার মনের মতন করেই তৈরি করে নিব।
আজ তাহলে আসি,বলেই উঠতে যাবে নিলয় তখনি তাসপিয়া বলে উঠল—— প্লিজ আরেকটু বসুন,যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আরেকটা প্রশ্ন করতে পারি?
তাসপিয়ার আবদার স্বরে নিলয় বসে বলল—- জ্বি,অবশ্যই! বলুন কি বলতে চান?
——- আপনি কি কখনও প্রেম করেছেন,আপনার কি কোন প্রেমিকা আছে?
নিলয় হেসে বলল—— না এরকম কিছুই আমি করিনি।।
আমার কলেজ ফ্রেন্ডসরা যখন আমার পাশে থেকেই তাদের প্রেমিকার সাথে মিষ্টি মিষ্টি প্রেম ভালবাসার গল্প করত,তখন আমার খুব মন খারাপ থাকত।
আমি তাদের পাশে থেকে চলে অন্য কোথাও বসে থাকতাম, বই পরতাম,নানান কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম।
আর মনে মনে ভাবতাম বিয়ের পর আমিও আমার বউয়ের সাথে এমনিভাবেই প্রেম করব।যেটা হল হালাল প্রেম,যে প্রেমে আল্লাহর রহমত থাকবে।আর আমার ফ্রেন্ডরা যে বিয়ের আগে প্রেম করত তা ছিল হারাম।
যেখানে ছিল নোংরামি, কিন্তু বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর প্রেম ভালবাসা হলো হালাল।
তাই ধৈর্য ধারন করে এসেছি,আর আল্লাহর কাছে একজন পুণ্যবতী জীবনসঙ্গী চেয়ে এসেছি,,যে আমাকে বুঝবে আমার মনের কথা বুঝবে,,যার কাছে আমিই একমাত্র তার প্রেমিক পুরুষ হব।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল ইমরানের ১৫৯ নাম্বার আয়াতে বলেছেন—-তুমি আস্থা রাখ আমার প্রতি।
আল্লাহ তায়ালা ভরসাকারীদের পছন্দ করেন।
তাই তো আল্লাহর উপর আস্থা আর ভরসা করেই এতদিন কারো সাথে কোন অবৈধ সম্পর্কে জড়াইনি।
যাইহোক অনেক কথাই বলে ফেলেছি।।
আমি তাহলে আসি।
সেদিন তাসপিয়ার মায়ের সাথে কথা বলে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছিল নিলয়।
নিলয়ের কথাশুনে মায়ের মনটাও খারাপ হয়েগিয়েছিল সেদিন।
,
,
সেদিন রাতে রুমে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিল নিলয়।
এমন সময় খাটের উপর রাখা ফোনটা বেজে ঊঠলে নিলয় কাজ রেখে ফোনের কাছে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার ভেসে উঠেছে ফোনের স্ক্রিনে।
কিছুক্ষন ভেবে অবশেষে কলটা রিসিভ করল নিলয়!
কল রিসিভ করে সালাম দেওয়ার আগেই ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠের সালাম পেল নিলয়।
নিলয়ও সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করল—– কে আপনি?এতো রাতে ফোন দিলেন যে?
——- আমি পেত্নী, আমি আপনার ঘাড় মটকাব তাই এত রাতে ফোন দিয়েছি,বলেই হেসে দিল সে!
নিলয় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল*—– দেখুন আমি আপনার সাথে কথা বলে আমার সময় নষ্ট করতে পারব না,আমার অফিসের অনেক কাজ বাকি আছে।পরিচয় দিলে দেন নয়তো আমি ফোন রাখলাম।
——আরে, আরে আমি তাসপিয়া। আপনার হবু বউ।হবু বউয়ের সাথে কথা বলার চেয়ে আপনার কাছে আপনার অফিসের কাজটাই বেশি হয়ে গেল তাই না!
তাসপিয়ার কথাশুনে নিলয়ের মনে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হলো,,তাসপিয়ার মুখে হবু বউ কথাটা শুনে আরও বেশি ভাবনায় পরে গেল নিলয়।
কিছু একটা ভাবছে নিলয়, এমন সময় তাসপিয়া যা বলল তাতে নিলয় চমকে উঠল………………………………
……………………………………………………♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
চলবে ইনশাল্লাহ …………………………………………??