জীবন সঙ্গী শেষ পার্ট

0
2819

জীবন সঙ্গী শেষ পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

হঠাৎ করে তাসপিয়ার এমন কান্নায় নিলয় কিছুটা ঘাবড়ে গেল।তবুও নিজেকে শান্ত করে হালকা করে তাসপিয়াকে বুকে জড়িয়ে নিল।তাসপিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে দিতে বলল—তাসপিয়া, এই তাসপিয়া, কি হয়েছে তোমার, তুমি এভাবে কান্না করতেছ কেন?
তাসপিয়া নিলয়কে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল—না কিছু হয়নি!
—– তাহলে এভাবে কান্না করছ যে,কি হয়েছে প্লিজ বলো আমাকে?
তাসপিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল—- তুমি আবার ভাল হয়ে যাবে,তুমি আবার আগের মতন হাটতে পারবে,আজ আমি অনেক খুশি,এই খুশিতেই আমার চোখে পানি চলে এসেছে,আল্লাহ তায়ালা আমার দোয়া কবুল করেছেন, আল্লাহর রহমতেই তুমি আবার আগের মতন পূর্নঙ্গ সুস্থ হয়ে যাবে।
তাসপিয়ার কথা শুনে নিলয় হতভম্ব হয়ে তাসপিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল—- কি বলছ এসব,আমিতো এর কিছুই বুঝতে পারছি না,আর তোমাকে ফোন দিছিল কে?
তাসলিয়া হেসে বলল—– আমি ঠিকই বলছি,ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়েছিল।ভাইয়া বলল যে,ঢাকা মেডিকেল এ সিঙ্গাপুর থেকে কিছু ভিজিটর ডাক্তার এসেছে,ভাইয়া তাদের সাথে তোমার বেপারে কথা বলেছে,তারা নাকি ভাইয়াকে জানিয়েছে যে তুমি আবার সুস্থ হয়ে যাবে,ভিজিটর ডাক্তাররা অপারেশন করে তোমার পা সুস্থ করে দিবে।
কিছুদিন পরই তারা আবার ভিজিট শেষ করে সিঙ্গাপুর চলে যাবে,তাই ভাইয়া বলছে আগামীকালই অপারেশন এর জন্য তোমাকে নিয়ে যাবে।
—- তু,তুমি সত্যি বলছ তাসপিয়া, আমি আবার আগের মতন হাটতে পারব,আমার পা সুস্থ হয়ে যাবে?
তাসপিয়া হেসে মাথা নাড়াল।
নিলয় খুশিতে তাসপিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দিল,কখন যে খুশিতে দুচোখ দিয়ে দুফোটা জল লুটিয়ে পরছে তা কেও জানে না।
………..
…….

আজ নিলয়ের অপারেশনের দিন।সকালেই তাসপিয়ার ভাই নিলয়ের বাসায় গিয়ে নিলয়, তাসপিয়া ও নিলয়ের মাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসে।অপারেশনের আগ মুহুর্তে তাসপিয়ার বাবা মাও চলে আসে।
…………
……

অপারেশন থিয়েটারে নিলয়ের অপারেশন চলছে।বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে।তাসপিয়া আজ রোজা রেখেছে,নিলয়ের সুস্থতা কামনায় দোয়া দরুদ পাঠ করছে।সবাই বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে,কিন্তু তাসপিয়া কেবিনের এক প্রান্তে চুপচাপ বসে দোয়া দরুদ পাঠ করছে।
………

বেশ কিছুক্ষন পরে ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন অপারেশন থিয়েটার থেকে।সবাই অধীর আগ্রহে এগিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে।তাসপিয়াও পিছু পিছু গিয়ে সবার আড়ালে বড় ঘোমটা টেনে দাঁড়াল।
তাসপিয়ার বড় ভাই নিলয়ের অবস্থা জানতে চাইলে,ডাক্তার বলে অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।নিলয় এখন অবচেতন অবস্থায় আছে,বেশি কিছুক্ষন পর তার জ্ঞান ফিরবে।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই খুশি হল।তাসপিয়া মনে মনে আল্লাহর দরবারে শুক্রিয়া আদায় করল।
…………
……

এশার নামাজের পর পরই নিলয়ের জ্ঞান ফিরল।তাসপিয়া হাসপাতালের নামাজ কক্ষে নামাজ পরে অনেক্ষন মুনাজাতে কাটিয়ে নিলয়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করে।
জ্ঞান ফেরার পরপরই ডাক্তার এসে নিলয়কে একটা ইনজেকশন দিয়ে আস্তে আস্তে বেডে থেকে নামিয়ে হাটতে বলে দিয়ে ডাক্তার চলে জরুরি কাজের কথা বলে চলে গেলেন।
নিলয়ের বেডে তখন সবাই উপস্থিত, কিন্তু তাসপিয়াকে এমন সময় না দেখে তার মন অস্থির হয়ে উঠল।যে অসুস্থ অবস্থায় এতদিন তার সেবা যত্ন করল আর আজ তার সুস্থতায় সেই মানুষটিই তার কাছে নেই।
নিলয় মায়ের কাছে তাসপিয়ার কথা জানতে চাইলে মা বললেন-তাসপিয়া নামাজের কক্ষে নামাজ পড়তেছে।
নিলয় মাকে বলল–অসুস্থ অবস্থায় তোমার পাশাপাশি এতদিন যে আমার সেবা যত্ন করে এসেছে আজ তার হাত ধরেই আমি আবার হাটতে চাই।
নিলয়ের মা ছেলের কথা বুঝতে পেরে নামাজের কক্ষ থেকে তাসপিয়াকে ডেকে বেড়ে নিয়ে আসলেন।
নিলয়ের সুস্থতার কথা শুনে তাসপিয়ার মুখে হাসি ফুটল।
নিলয় তাসপিয়া ও মায়ের কাধে ভর করে আস্তে আস্তে হাটতে লাগল।বেশ কিছুক্ষন হাটার পরই হঠাৎ করে ব্যাথ্যায় কুকড়িয়ে উঠল নিলয়।তারপর মা আর তাসপিয়া কে ছেড়ে দিয়ে একা একাই বেশ কিছুক্ষন বেডের পাশেই হাটল।নিলয়ের একা হাটতে দেখে এবার সবাই নিশ্চিত হল যে নিলয়ের পায়ে এখন আর কোন সমস্যা নেই এখন সে সম্পুর্ন সুস্থ আছে,এখন সে নিজে নিজেই হাটতে পারবে।নিলয় হাটতে হাটতে লক্ষ করল তাসপিয়া ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতেছে,তাই নিলয় তাসপিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলে তাসপিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে হাসতে থাকে।
নিলয় এখন সম্পুর্ন সুস্থ,এখন সে আগের মতন হাটতে পারে,দৌড়াতে পারে।
…………
……

আজ তাসপিয়া আর নিলয় এসেছে কক্সবাজার ভ্রমন করতে।অনেক আগেই এখানে আসার কথা ছিল কিন্তু নিলয়ের এক্সিডেন্ট এর কারনে তখন আর আসা হয়নি।
নিলয় আগে থেকেই একটা হোটেলে রুম বুকিং করে রেখেছিল সেখানেই উঠেছে তারা।
এখানে আসার পরপরই তাসপিয়া বায়না ধরেছে সে নাকি সমুদ্রের পানিতে ভিজবে গোসল করবে।
তার নাকি অনেকদিনের ইচ্ছা এটা।তাই নিলয়ও আর তাসপিয়ার ইচ্ছায় অমত করতে পারল না।
………
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছে।
বিকেলের দিকে দুজন মিলে সমুদ্রের কাছে এল। কারন বিকেল বাদে প্রায় সারাক্ষণই সমুদ্র ও সমুদ্রের পাড়ে অনেক মানুষ থাকে কিন্তু বিকেলের দিকে লোকজন অনেকটাই কম থাকে।
তাই সারাদিন ঘুরাঘুরি করে বিকেলে এসে দুজন মিলে সমুদ্রের পানিতে ভিজে গোসল করে।
বেশ কিছুক্ষন গোসল করার পরও তাসপিয়া সমুদ্র থেকে ঊঠতে চাইছিল না।এদিকে প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসছে,তাই নিলয় অনেক বুঝিয়ে জুরাজুরি করেই তাসপিয়াকে নিয়ে হোটেলে তাদের রুমে আসল।
…………
এশার নামাজের পর হালকা নাস্তা করে দুজন বেলকনিতে বসে কফি খেতে খেতে গল্প করছিল।
হঠাৎ করে প্রচণ্ড ঝড়ু হাওয়া ও বাজ পরতে লাগল।
মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকাচ্ছে,তারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এসেছে।
বাজ পড়ার শব্দে তাসপিয়া ভয় পেয়ে নিলয়ের কোলে গিয়ে বসে নিলয়কে জরিয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখে।
কিছুক্ষন পরই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যায়।সাথে আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে আর প্রচণ্ড জোরে জোরে বাজ পরছে।ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস এসে লাগছে তাসপিয়া আর নিলয়ের গায়ে।

বৃষ্টির ছিটাফোঁটা বেলকনিতে আসছে।তাই নিলয় তাসপিয়াকে কোলে নিয়েই রুমে চলে আসল।তাসপিয়া এখনো নিলয়কে জড়িয়ে ধরে আছে।
হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জোরে জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসতে লাগল।
যে বাতাসে তাসপিয়া আর নিলয়ের মনে এক অজানা প্রাপ্তির সৃষ্টি হলো।
দুজনের মনের ভেতরেই সৃষ্টি হল ভালবাসার রঙিন অনুভূতি। এখনো দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে।দুজনের শরীরেই বিদুৎ প্রবাহ চলতেছে।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে দুজন দুজনকে।এমন সময় ঠান্ডা বাতাস থেমে গিয়ে মুশল ধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
তাতে তাসপিয়া আর নিলয়ও দুজন দুজনার মাঝে মিশে একাকার হয়ে গেল♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
…………
……

দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েকটা মাস।এরই মধ্যে তাসপিয়া আর নিলয়সহ দু পরিবারের সবাই জানতে পারল যে তাসপিয়া প্রেগন্যান্ট। একথা শুনার পরই সবার মাঝে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করল।
নিলয় বাবা হতে চলেছে যেনে সে এখন পুর্বের তুলনায় অনেক আগেই বাসায় ফিরে তাসপিয়া যাবতীয় কাজ ও ভারী কাজগুলা করে তাসপিয়া কে পূর্ন রেস্ট এ থাকতে বলে দেয়।

………
……
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাসপিয়া কে।অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে সবাই পায়চারি করছে।
নিলয় নামাজ পরে এসে দোয়া দরুদপাঠ করতে শুরু করেছে।তাসপিয়া আর তার সন্তানের জেন কোন ক্ষতি না হয় সেই মুনাজাত করে কাটিয়েছে অনেক্ষন।
…………………
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসলেন অপারেশন থিয়েটার থেকে।
সবাই অধীর আগ্রহে এগিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তার হাসি মুখে জানায় যে তাসপিয়া ও নিলয়ের কন্যাসন্তান হয়েছে,, মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ আছে।
নিলয়ের মুখে এবার হাসি ফুটল।
মনে মনে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করল।
ডাক্তারের সাথে কিছু কথা বলে তাসপিয়ার বেডে গেল নিলয়।বেডে গিয়ে দেখে সবাই একে একে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাসাহাসি করতেছে,দোয়া করতেছে।
একে একে সবাই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দোয়া করে বেড থেকে বেরিয়ে গেল।
কেবল বেডে তাসপিয়ার পাশে রইল নিলয়।নিলয় তাসপিয়ার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে চুমু একে দিল তাসপিয়ার কপালে।
তাসপিয়া মুচকি হেসে মেয়ে প্রথমবারের মতন নিলয়ের কোলে তুলে দিল।
নিলয় মেয়েকে কোলে নিয়ে আস্তে করে মেয়ের কপালে চুমু দিল।
বেশ কিছুক্ষন দুজন কথা বলার পর তাসপিয়া বলল— আচ্ছা আমাদের মেয়ের কি নাম রাখব?
নিলয় হেসে বলল — সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না।আমি নামাজ পরে আসার সময় হুজুরের কাছে থেকে একটা সুন্দর ইসলামিক নাম শুনে এসেছি সেই নামটাই রাখব আমার মেয়ের জন্য!
তাসপিয়া নিলয়ের হাত ঝাঁকিয়ে বলল— কি নাম রাখব আমাদের মেয়ের বল না প্লিজ!
নিলয় পুনরায় মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলল—– আজ থেকে আমাদের মেয়ের নাম রাখলাম””””রাইমা বিনতে রাওহা”””
তাসপিয়া হেসে বলল—- মাশাল্লা, খুব সুন্দর নাম হয়েছে আমাদের মেয়ের!
—– আলহামদুলিল্লাহ, দেখছ আমাদের মেয়েটা দেখতে দেখতে কত্ত সুন্দরী হয়েছে,একদম তোমার মতই হয়েছে।
—– না,আমার মেয়ে আমার চেয়েও সুন্দরী হয়েছে।
—– হুম,কিন্তু নাম আর চেহারা সুন্দর হলেই হবে না।আমার মেয়েকে তুমি তোমার আদর্শে বড় করে গড়ে তুলবে।তোমার মতন পর্দানশীন আর ইসলামিক করে গড়ে তুলবে আমার মেয়েকে।
রাওহা যাতে তোমার মতন কারও জীবনসঙ্গী হতে পারে সেই প্ল্যানিং অনুযায়ী গড়ে তুলবে আমাদের রাওহা কে। তুমি যেমন আমার কাছে আমার আদর্শ স্ত্রী ও আদর্শ জীবনসঙ্গী, ঠিক আমার মেয়েও যেন তার স্বামীর আদর্শ স্ত্রী আর আদর্শ জীবনসঙ্গী হতে পারে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করবে আমাদের রাওহা কে।
—– ইনশাল্লাহ, আমি আমার সর্বোত্তম চেষ্টা করব।আমি আমার চেয়েও অনেক বড় গুনে অনেক বড় আদর্শে আমি আমাদের মেয়েকে গড়ে তুলব।যাতে করে সে কারও জীবনসঙ্গী হয়ে কারও অন্ধকার জীবনকেও ভালবাসা দিয়ে আলোকিত করে দিতে পারে।
—– আলহামদুলিল্লাহ, আমার বিশ্বাস ইনশাল্লাহ তুমি এই কাজে সফল হবে,আর আমিও তোমাকে তাতে সর্বোত্তম সহায়তা করব।
কারন,আমি আর তুমি একে অপরের জীবনসঙ্গী। যত বাধাই আসুক না কেন,মৃত্যু ব্যতীত কোন বাধাই আমাদের আলাদা করতে পারবে না, ইনশাল্লাহ।
তুমি যেমন আমার কাছে আমার একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী ঠিক আমিও তোমার কাছে তোমার একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী হয়ে সারাজীবন সুখে দুঃখে তোমার পাশে থাকতে চাই,বলে তাসপিয়া কপালে চুমু দিল নিলয়।
—- ইনশাল্লাহ, আল্লাহ আমাদের কবুল করুক।
—- আমিন।
—- ছুম্মা আমিন।

……………………সমাপ্তি………………………

ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে