#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ১৪
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ডাক্তার বলল “শান্ত হন মিস্টার চৌধুরী। টেনশন নিয়েন না।”
তামিম তার লাল চোখ নিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল “কি বলছেন এগুলো। আমার জানটা এমন হুট করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো আর আমি শান্ত থাকবো। কিভাবে বলুন আমাকে।”
ডাক্তার সাহেব মুচকি হেসে বলল “মিস্টার চৌধুরী মিষ্টি মুখ করাবেন না আমাদের।”
ডাক্তারের কথা শুনে তামিম বলল “মানে”
ডাক্তার সাহেব বলল “মানে আপনি বাবা হতে চলেছেন মিস্টার চৌধুরী।”
তামিম অবাক হয়ে বলল “আমি বাবা হবো।” তামিমের চোখ ছলছল করে উঠলো। খুশিতে চোখ মুখ চিকমিক করে উঠলো তার।
ও খুশিতে ডাক্তারকে জরিয়ে ধরে বলল “ধন্যবাদ ডাক্তার। অনেক অনেক ধন্যবাদ”
ডাক্তার সাহেব হেসে দিলেন আর বললেন “মিস্টার চৌধুরী ওনার শরীরটা একটু দুর্বল আর অতিরিক্ত টেনশনে আছে। যেটা এই সময় তার জন্য একদম ভালো না। আমি জানি ওনার কেয়ারের কোনো কমতি হবে না। ভালো থাকবেন দুইজন। আর একটু পরেই ওনার জ্ঞান ফিরে আসবে। টেনশন করবেন না একদম।” বলেই মুচকি হেসে চলে গেল ডাক্তার সাহেব।
তামিম ফোন হাতে নিয়ে নিলয়ের নাম্বারে কল দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দিলো আর তাহিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে বলল।
নিলয় তাহিয়ার রুমের দরজায় টোকা দিলো। কিন্তু তাহিয়ার কোনো সাড়াশব্দ নেই। নিলয় আবার ডাকতে লাগলো কিন্তু তাহিয়ার কোনো হেলদোল না দেখে সে রুমের ভিতরে ঢুকে পরলো। রুমে এসে নিলয় দেখলো তাহিয়া পড়ার টেবিলেই ঘুমিয়ে পরেছে। নিলয় তাহিয়ার অবস্থা দেখে মুচকি হাসে। নিলয় হাটু গেড়ে তাহিয়ার কাছে বসে। মেয়েটাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। মেয়েটার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। এলোমেলো চুলগুলো খুব বিরক্ত করছে তাহিয়াকে। নিলয় আলতো হাতে তাহিয়ার চুলগুলো ওর মুখে থেকে সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো। নিলয়ের স্পর্শে কেঁপে উঠলো তাহিয়া। নিলয় মুচকি হেসে তাহিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
“মায়াবতী তুমি কি আমাকে আজকে পাগল করে ছাড়বে।”
নিলয়ের এমন ফিসফিসিয়ে বলা কথায় হুড়মুড়িয়ে উঠে পরলো তাহিয়া। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। ঘুম থেকে আচমকা এমন উঠে পরায় সে থতমত খেয়ে বসে রইলো। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাহিয়া অবাক হয়ে বলল
“তুমি এখানে ভাইয়া জানে তুমি এখানে।”
নিলয় মুচকি হাসি দিয়ে বলল “এতো টেনশন নিয়ো না মায়াবতী।”
তাহিয়া একপলকে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। শ্যামলা বর্ণের ছেলেটির মুখের মুচকি হাসিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে সে।
তাহিয়াকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিলয় তুরে বাজিয়ে বলল “এই যে মেডাম এরকম করে না তাকিয়ে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নেও। তামিম হাসপাতাল থেকে ডাকছে।” তাহিয়া চমকে উঠে বলল “হাসপাতাল মানে কি হয়েছে ভাইয়ার ও ঠিক আছে তো।”
নিলয় বলল “হাইপার হচ্ছো কেন মায়াবতী তেমন কিছু না তুমি ফুফু হতে চলেছ।”
তাহিয়া বিষয়টি বুঝে খুশি হয়ে নিলয়কে জরিয়ে ধরলো। তাহিয়া যে নিলয়কে এমন হুট করে জরিয়ে ধরবে সে কল্পণাও করেনি। নিলয়ের হৃদস্পন্দন দূতগতিতে চলছে। তাহিয়া খুশির চটে নিলয়ের গালে টুক করে একটা কিস দিলো। তাহিয়ার কান্ডে মুখ হা হয়ে গেল নিলয়ের। তাহিয়ে লজ্জা পেয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। নিলয়ের মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।
———–
তামিম ঐশীর মুখের দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে। ঐশীর জ্ঞান ফিরতেই তামিম ঐশীকে নিজের বুকের সঙ্গে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো। ঐশী উতলা হয়ে বলল
“আম্মুর কি হয়েছে বলুন না।” বলেই ফুপিয়ে উঠলো সে।
তামিম নিজের বুক থেকে ঐশীকে তুলে ওর গালে আলতো করে হাত রেখে বলল
“আন্টি এখন ভালো আছেন। আর জানো জান তুমি আমাকে যে সুখ দিয়েছ তার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না” বলেই ঐশীর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
ঐশী অবাক হয়ে বলল “মানে”
তামিম ছোটের কোণে একটা মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বলল “মানে তুমি মা আর আমি বাবা হতে চলেছি জান।”
তামিমের কথায় ঐশীর মুখেও খুশির ঝলক ফুটে উঠলো। ঐশী তামিমকে জরিয়ে ধরলো।
রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গিয়েছে। আফসানা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে। তামিম আর ঐশী বসে আছে তার বেডে পাশে। ঐশী আফসানা বেগমের হাত জরিয়ে ধরে বলল
“আম্মু তোমার এমন অবস্থা হলো কি করে।”
আফসানা বেগম ছলছল নয়নের মেয়ের দিকে তাকালেন আর বলল “মা আজকে তোকে তোর জীবনের সবচেয়ে বড় একটা সত্যি বলবো। তবে ওয়াদা কর তুই হাইপার হবি না।”
ঐশী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল “বলো আম্মু আমি নিজেকে সামলিয়ে নিবো।”
আফসানা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন “তোর বাবার বিজনেস এ অনেক ভালো একটা পজিশনে ছিলো। ওনার পিএ আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। তোর তখন একবছর হঠাৎ একদিন খুব চিন্তিত অবস্থায় তোর বাবা অফিস থেকে এসে তাড়াহুড়ো করে বলেছেন আজকে নাকি আমাদের পালাতে হবে। অনেক দূরে পালাতে হবে। জীবন বাঁচাতে হলে এখনই পালাতে। তার পিএ তার সঙ্গে বেইমানি করেছে। অফিসের সব কিছু নিজের নাম করে নিয়েছে সে। এখন আসছে আমাদের খুন করতে। আমি শুনে অনেক কষ্ট পাই কারণ মানুষটাকে আমি নিজের ছোট ভাইয়ের চোখে দেখেছিলাম। কতো রান্না করে খাইতেছিলাম তাকে। তোর বাবার সঙ্গে বের হতে নিবো কিন্তু পারিনি। তার আগেই আমাদের ঘিরে ফেলল ওনার পিএের লোক। আর ওনার পিএ এসে ওনাকে পরপর চারটা গুলি করে দেয়। আমার চোখে সামনেই ওনি লুটিয়ে পরে মেঝেতে। আমার সামনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে ওনি। কান্নায় ভেঙে পরি আমি। শুধু এটুকুতেই সে দমে যায়নি ওইদিন রাতে আমাকে ধর্ষণ করে সে। এরপর থেকে বিভিন্ন নির্যাতন করে আমাকে। কিন্তু তোমার বিশ বছর পযর্ন্ত তোমাকে কিছু করতে পারবে না বলে তারা তোমার কোনো ক্ষতি করেনি। কারণ সম্পত্তি ছিলো তোমার নামে আর তুমি বিশ বছর হওয়া না পযর্ন্ত তোমার যদি কোনো ক্ষতি হয় বা মারা যাও তাহলে সম্পত্তি চলে যাবে অনাথ আশ্রমের নামে। আর ওরা দুইজন অনেক অসামাজিক কাজে নিয়োজিত। জানো তো লোকটা এতো পাষাণ ছিলো যে সে নিজের বউকে খুন করেছিলো। পরে তার সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থেকে যায়। আমি তারপর থেকে নির্যাতনের শিকার হতে থাকি। জীবনটা আমার জাহান্নামে পরিণতি হয়। কিন্তু তোকে হারানোর ভয়ে আমি কিছু করতে পারতাম না। আমি ওদের ষড়যন্ত্রের সব কথা জানতে পারি। আমি জানি তোকে বাঁচাতে পারবে একমাত্র তামিম। ছেলেটার চোখে আমি তোর জন্য অসীম ভালোবাসা দেখতে পাই। আমি বিভিন্নভাবে তোকে আর তামিমকে মিলাতে উঠেপরে লাগি। ওইদিন নিলয়ের সঙ্গে তোকে পালিয়ে দেওয়াতে
#চলবে