#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ০৮
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশী দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল। আর তামিম হো হো করে হাসতে লাগল। আজ তামিম অফিস যায়নি। ঐশীও ভার্সিটি যায়নি কারণ জ্বরের কারণে এখনো শরীরটা দুর্বল তার। সকালের নাস্তা তামিম ঐশীকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল। জোর করে ঔষধ ও খাইয়ে দিল। তাহিয়া কলেজে চলে গেছে।
ঐশীর কথায় তামিম ঐশীর সঙ্গে টিভি দেখতে বসেছে। ঐশী টিভি দেখছে আর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর তামিম বিরক্তিকর দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ টিভিতে কার্টুন চলছে।
তামিম টিভি থেকে চোখ সরিয়ে ঐশীর দিকে। ঐশী চকলেট খাচ্ছে আর হাসছে। অন্যরকম সুন্দর লাগছে ঐশীকে তামিমের কাছে। তামিম একদৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে তামিম ঐশীর কোমর জরিয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঐশী চোখ গোল গোল করে অবাক হয়ে তামিমের দিকে তাকালো। আর তামিম টুক করে ওর ঠোঁট ঐশীর ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে দিলো। ঐশীর চোখ যেন এখন কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।
কিছুক্ষণ পর তামিম ঐশীর ঠোঁট ছেড়ে দিলো। দুইজনই হাপাচ্ছে। ঐশী বলল
“ওই মিয়া আপনি হুটহাট এমন করে কিস করেন কেন! হ্যাঁ”
তামিম ঘোর লাগা কন্ঠে ঐশীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল “জান তোমাকে দেখলে যে আমার মাথা ঠিক থাকে। কি করব বলো তুমি। আমার তো মনে চায় সারাক্ষণ তোমাকে কিস করি।”
ঐশী তামিমকে কিল ঘুসি দিতে দিতে বলল “ইশ শখ কতো ছাড়ুন আমাকে। আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না মিস্টার অসভ্য। ভুলে যাবেন না কিন্তু এটা আপনার রুম না।”
তামিম ঐশীকে আরো শক্ত করে নিজের সঙ্গে আকড়ে ধরে বলল “আমার শখ হবে না তো কার শখ হবে জান। আর আমার রুম হয় নি তো কি হয়েছে। বাসার কেউ এখন এখানে আসবেনা সো নো টেনশন। বলতে হবে চকলেট টা অনেক টেস্টি ছিল।”
ঐশী চকলেট এগিয়ে দিয়ে বলল “তো নেন খান আমাকে ছেড়ে দেন।”
তামিম দুষ্টামি হাসি দিয়ে ঐশীর ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলল না “ওইখানের চকলেটটা মজা।”
ঐশী তামিমকে তাড়া দিয়ে বলল “ছাড়ুন তো এখন দুপুর হয়ে এলো। গোসল করে খাবার খেতে হবে। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু আজকে ঘুরতে যাবো। তবে আপনার পাশে কিন্তু কোনো বডিগাড রাখতে পারবেন না।”
তামিম বলল “ঠিক আছে মহারানি কিন্তু বডিগাড ছাড়াই বের হতে হবে। আসলে শত্রুর তো অভাব নেই সেফটির জন্য একটা অন্তত বডিগাড নিয়ে যাই।”
ঐশী কোমরে হাত রেখে বলল “আমি বলছি না ওই কালো গোমড়া মুখো হনুমানদের না নিতে।”
তামিম বলল “আচ্ছা ঠিক আছে নিবো না।”
ঐশী খুশি হয়ে তামিমকে জরিয়ে ধরে ওর গালে টুক করে একটা কিস করে দৌড়ে চলে গেল।
তামিমের কিছু সময় লাগল ব্যাপরটা বুঝতে। “ওরে রেএ দুষ্টু” বলেই ঐশীর পিছনে দৌড় দিলো।
———————
ঐশী শুধু আমার। ওকে পাওয়ার জন্য আমি সব করবো। আর তামিম তোকে তো আমি ছাড়ব না। ভালোই দিন কাটাচ্ছিস তাই তো। কাটিয়ে নে আমি আসছি। বলেই হো হো করে হেসে উঠলো লোকটা।
————–
শেষ বিকেলের বৃষ্টির আগের হাওয়া। সময় সময় মেঘের গর্জন হচ্ছে। তামিম আর ঐশী এসেছে একটা পার্কে। ঐশীর কথা মতো কোনো বডিগাড রাখে নি সঙ্গে তামিম। নিজেই সেফ রাখবে তার কলিজাকে।
ইতিমধ্যে বৃষ্টি ও পড়তে শুরু করেছে। ঐশী তামিমের হাত ধরে টেনে বৃষ্টির মধ্যে নিয়ে গেল। তামিম বলল “ওই তোমার না জ্বর আসছিল কাল রাতে। আর আজকে আবার বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছো।”
ঐশী আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে বলল “ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে জ্বর আসে না বুঝলেন।”
বৃষ্টিতে ভেজার কারণে অনেক সিগ্ধ লাগছে ঐশীকে। কালো শাড়িটা বৃষ্টির পানিতে শরীরের সঙ্গে লেপটে রয়েছে তার। ঐশী দুই হাত দুইপাশে প্রসারিত করে বৃষ্টি অনুভব করছে। তামিম খেয়াল করল ঐশীর শাড়ির কিছুটা অংশ সরে গিয়েছে বলে তার পেট দেখা যাচ্ছে। তামিমের কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে। ও একটা ঢোক গিলে নিল। নেশাভরা কন্ঠে বলে উঠলো
“বৃষ্টির সিগ্ধমায়ায় বৃষ্টিবিলাসী প্রিয়সীর অপূর্ব সুন্দরের মায়ায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই আমি। তাকে মনের গহিনে লুকিয়ে রাখতে চাই। যাতে কেউ আমার বৃষ্টিবিলাসীকে নজর দিতে না পারে।” বলতে বলতে ঐশীর একদম কাছে চলে গেল। ঐশী সে তো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত। আর তামিম সে তো তার প্রীয়সীর সিগ্ধতায় ডুব দিচ্ছে।
হঠাৎ ঐশীর হাঁচি আসায় তামিমের হুশ ফিরলো সে ঐশীর হাত শক্ত করে ধরে দৌড় দিলো। ঐশীকে বাসায় নিয়ে এসে সোজা রুমে নিয়ে গেল ওকে তামিম। এতক্ষণে ঐশীর অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। হাঁচি দিতে দিতে শেষ একদম। তামিম একটা টাওয়েল নিয়ে ঐশীর মাথা মুছে দিতে দিতে বলল
“আমি ভিজতে না করেছিলাম না। আমার কথা কে কানে নেয়। যার যেমন মনে হয় তেমন ভাবে চলে। আর আমার কথা কেউ শুনবেই বা কেন আমি কে কারও কিছু হই যে আমার কথা শুনবে।”
ঐশী বুঝতে পারলো তামিম রাগ করেছে। ঐশী একটা মুচকি হাসি দিয়ে টুক করে একটা কিস দিয়ে দিল তামিমের গালে। হুট করে ঐশীর এমন কাজে তামিমের হাত থেকে টাওয়েল পরে গেল। আর আপনাআপনি হাত চলে গেল কিস করা সেই জায়গায়।
ঐশী মেঝে থেকে টাওয়েলটা তুলে তামিমকে টেনে বেডে বসিয়ে দিয়ে ওর মাথা মুছিয়ে দিলো। তামিম এবার থতমত খেয়ে গেল। তারপর তাড়াহুড়ো করে তামিম বলল “ওয়াশরুম থেকে চেন্স করে আসো। এমনিতেই অসুখ বাধিয়েছ আগে এখন আরো বেশি করতে চাও। যাও এখনি।”
ঐশীও বাধ্য মেয়ের মতো চলে গেল ওয়াশরুমে। তামিম আবার তার গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো।
ঐশী কিছুক্ষণ পর চেন্স করে বেরিয়ে এলো। মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তামিম এক গ্লাস দুধ ঐশীর সামনে এগিয়ে দিলো। ঐশী নাক শিটকে বলল
“আমি খাবো না।”
তামিম রাগী দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল “আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। এখন না খেলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে বলে দিলাম।”
তামিমের ধমকে ঐশী ভয় পেয়ে নাক মুখ কুচকে দুধ খেয়ে নিলো। তামিম এক পলক ঐশীর দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিল।
ঐশী চোখ ছোট ছোট করে তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “কি হয়ে এমন পাগলের মতো হাসছেন কেন!”
তামিম বলল “তোমার মুখ আয়নায় দেখ একটু”
ঐশী দেখলো ওর ঠোঁটে উপর দুধ লেগে আছে। ঐশীও ফিক করে হেসে দিলো।
রাতে আবারও জ্বর এলো ঐশীর। তামিম যত্ন নিয়ে জলপট্টি দিয়েছে। ঐশীকে জরিয়ে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে তামিম।
পরেরদিন তামিম বাসায় বসে অফিসের করছে। আর ঐশীও ভার্সিটি যায়নি আজ। অপরদিকে দুইদিন যাবত ঐশীকে ভার্সিটি আসতে না দেখে অস্থির হয়ে পরেছে ফারাবি। সে ঐশীর নাম্বার নিয়ে কল করলো ঐশীর নাম্বারে। দুইবার কলটা কেটে গেল। তিনবারের বার কল দিতেই কলটা রিসিভ হলো।
ঐশী বিরক্তিকর কন্ঠে বলল “কে বলছেন”
(চলবে)