জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ৬
চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় সবাই আমার পাশে বসা
শ্রাবন: কি হয়েছে হঠাৎ এমনভাবে চিৎকার দিয়েছ কেন আর অজ্ঞান হয়ে গেলা কিভাবে
আকাশ: তোমার চিৎকার আমাদের বাসা থেকে শুনা গেছে দৌড়ে এসে দেখি তুমি অজ্ঞান কি হয়েছে
আমি: ঐ নাম্বার থেকে আবার ফোন আসছিল হারামজাদা বলে আব্বু নাকি মারা গেছে
শ্রাবন: গাদি ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে কান্না শুরু করে দিলে
আমি: বিশ্বাস করিনি আর ও তোমাকেও হুমকি দিয়েছে
শ্রাবন: মানে
আমি: বলেছে তোমাকে যেন বলে দেই পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন প্রাণটা না হারাও
আকাশ: তারমানে ও সবাইকে চিনে আর শ্রাবনেরও শত্রু
শ্রাবন: আমার তো কোনো শত্রু নেই
রিয়া: পুলিশের শত্রু হতে কতক্ষণ
শ্রাবন: ঠিক আছে আমি দেখছি তুমি ভয় পেয়ো না
আকাশ আর শ্রাবন নিজেদের মধ্যে কি যেন কথা বললো তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমার পাশে রিয়া, মেঘা আপু, মা আর আন্টি বসা
রিয়া: ফোনটা তো ভেঙ্গে ফেললি
আমি: ভালো হয়েছে বদমাইশটা আর আমাকে ফোনে পাবে না
রিয়া: ও হয়তো আমাদের সবাই কে চিনে
আমি: আচ্ছা ও আম্মুর লোক নয়তো আম্মুর পক্ষে তো সবই সম্ভব
রিয়া: হলে হতেও পারে
সারাদিন শ্রাবন আর আকাশ বাসায় আসেনি কোথায় গেছে তাও জানিনা কেউ ফোন রিসিভ করে না, এদিকে আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে এসব কি আম্মু করতেছে কিন্তু কিসের জন্য
রাতে শ্রাবন আর আকাশ বাসায় আসলো এসে যা জানালো আমার তো মাথা ঘুরে গেছে, অচেনা নাম্বার থেকে ফোন দেয় আকাশের মামা রাকিব, আম্মু আর রাকিব মিলেই নাকি এসব করতেছে, আম্মু যদি রাকিবের সাথে মিলে এসব করবে তাহলে আব্বু আর তুলি কোথায় উফফফফফ মাথায় কিচ্ছু আসছে না, আম্মু কেন এসব করছে ঐ জমিটার জন্য….?
সকালে আমার জ্বর প্রচন্ড বেড়ে গেলো, আকাশ আর শ্রাবন অফিসে তাই রিয়া আর মেঘা আপু আমাকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে আসলো
ডক্টর এর কাছ থেকে আসার সময় রিয়া বললো একটু ঘুরে আসতে তাহলে আমার ভাল লাগবে, আমরা হাটতে হাটতে একটু দূরে গেলাম উদ্দেশ্য পার্কে যাবো, মাঝ রাস্তায় হঠাৎ লক্ষ করলাম একটি মেয়ে দৌড়াচ্ছে, আমাদের থেকে অনেক দূরে তাই বুঝা যাচ্ছে না কিছু, হঠাৎ দেখলাম মেয়েটির পিছনে কয়েকটা লোক তার মানে মেয়েটি কে ধরার জন্য দাওয়া করছে আর মেয়েটা প্রাণপণে দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে, এই রাস্তায় তেমন মানুষ নেই মাঝে মাঝে কয়েকটা দোকানপাট
মেয়েটি আমাদের কাছে আসতেই হুচট খেয়ে পড়ে গেলো, মুখ উড়না দিয়ে পেছানো কিন্তু কেমন যেন চেনাচেনা লাগছে, রিয়া গিয়ে মেয়েটিকে তুললো আমাদের দেখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলো, মেয়েটা হাপাতে হাপাতে মুখ থেকে উড়না সরালো, মেয়েটির মুখের দিকে থাকিয়ে আমি যেন থ হয়ে গেলাম কাঠের মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছি, রিয়া ওকে জাপটে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো তুলি তুই, রিয়ার চিৎকারে আমার হুশ হলো তুলিকে বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলাম, হ্যা আমি আমার ছোট্ট বোনটা কে ফিরে পেয়েছি কিন্তু এই অবস্থায় ফিরে পাবো কল্পনাও করিনি, তুলি আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতেছে
আমি: এই তুলি তোর এই অবস্থা কেন আর ওরা কারা
তুলি: ওরা সন্ত্রাসী পরে সব বলবো আপু আগে আমাকে বাচাও আমার পা কেটে গেছে
ওর কথা শুনে পায়ের দিকে থাকালাম খুব রক্ত ঝরছে তাড়াতাড়ি পাশের হসপিটালে নিয়ে গেলাম
তুলির চিকিৎসা করছে ডক্টর আমরা তিনজন বাইরে বসে আছি, মাথায় কিছু আসছে না তুলির এই অবস্থা কেন আব্বু আম্মু কোথায় আর সন্ত্রাসীরা ওকে ধরতে চায় কেন
একটু পর ডক্টর বেড়িয়ে আসলেন
–ডক্টর তুলি…..
–রোগি আপনার কি হয়
–বোন
–মেয়েটার বয়স তো বেশি না এই ছোট মেয়েটা কে অনেক শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে সারা শরীরে আগাতের চিহ্ন, রোগীকে কয়েক দিন রেস্টে রাখতে হবে
–ওর কিছু হবে না তো
–হসপিটালে রাখুন কয়েকদিন চিকিৎসা চললে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে
–ঠিক আছে
শ্রাবনকে ফোন করে বললাম হসপিটালে আসতে, তারপর তুলির কাছে গেলাম, তুলিটা বেডে শুয়ে আছে মুখে যন্ত্রণার চাপ স্পষ্ট ফুটে আছে, মাথার পাশে বসে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম
আমি: তুলি তোর এই অবস্থা কেন আব্বু আম্মু কোথায়
তুলি: আগে বল তুমি কোথায় ছিলে কত খুঁজেছি তোমাকে জানো
আমি: এদিকেই থাকি আমি আমাদের বাসায় অনেকবার গিয়েছি কিন্তু তোদের পাইনি
তুলি: কিভাবে পাবে আমরা তো ওখানে থাকতাম না চলে গিয়েছিলাম অন্য জায়গায়
আমি: কোথায় গিয়েছিলি আর আমাকে জানাসনি কেন
তুলি: তোমার ফোন বন্ধ ছিল অনেক চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করার কিন্তু পারিনি
আমি: আমার ফোন ছিনতাই হয়েছিল
তুলি: হুম জানি
আমি: তুই কিভাবে জানিস
তুলি: সে অনেক কথা
রিয়া: তমা এসব পরে শুনতে পারবি এখন তুলির রেস্টের প্রয়োজন
তুলি: আমি ভালো আছি রিয়া আপু তোমরা অনেক কিছু জানোনা তোমাদের জানা প্রয়োজন
আমি: কি জানিনা আর কি জানা প্রয়োজন
তুলি: তোমার ফোন কে ছিনতাই করেছিল, আমরা হুট করে কোথায় চলে গিয়েছিলাম, আব্বু কোথায় আছেন আর আমার এই অবস্থা কেন
আমি: তাহলে সব বল
তুলি: বলছি
তুলি বলতে শুরু করলো……
চলবে?