জলছবি পর্ব-১১

0
1133

১১.
#জলছবি
#পার্ট_১১(প্রথম অংশ)
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
যেহেতু বিকেলের দিকেই অনেক ভ্রমণ স্পোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে তাই দ্বীপ বলল,
“কারো অসুবিধে না থাকলে, এখনই বের হই?”
সবাই জানালো তাদের কোনো অসুবিধে নেই। বরং ভালো। কেবল দশ মিনিটের মাথায় সবাই তৈরি হয়ে নিলো। সঙ্গে করে যার যার অতিব প্রয়োজনী জিনিসপত্র এবং পানি নিয়ে নিলো। সবার শেষে নোলক বেরিয়ে আসার পর ফয়সাল কৌতুক করে বলল,
“হায়রে লেইট লতিফা! তুই আর ঠিক হইলি না।”
দ্বীপ হেসে দিয়ে বলল,
“আরেহ! নোলক থেকে লতিফা? নাইস তো!”
সৃজন তার কোঁকড়ানো চুল চুলকাতে চুলকাতে বলে,
“তিনি লেইট লতিফের ফিমেইল ভার্সন ভাইয়া।”
দ্বীপ হা হা করে হাসে। নোলক ফয়সাল আর সৃজনকে আলতো করে থাপ্পড় মেরে বলে,
“বেয়াদপগুলা সুযোগ পেলেই পঁচায়।”
ইশান আর আদ্র নিচে নেমে আসে। ইশান নোলকের পক্ষ নেয়ার মতো করে বলে,
“এই তোমাদের সাহস তো কম না, অগ্নিশর্মাকে পঁচাও! একদম আগুনে জ্বালিয়ে দিবে। বাঁচতে চাও তো জলদি পা বাড়াও।”
হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে সবাই বের হলো। সাড়ে দশটার দিকে যাত্রা শুরু করলো সবাই। দুইটা মাইক্রো রিজার্ভ করা হলো। একটাতে মেয়ে বাহিনী অপরটাতে ছেলে বাহিনী। তবে মেয়েদের সেফটির কথা চিন্তা করে ফয়সাল থেকে গেলো নোলকদের সঙ্গে। ড্রাইভারের সঙ্গে বসলো সে। মেয়ে বাহিনীরর উত্তেজনায় ত্যাক্ত হয়ে বলল,
“ভাই, তোরা এমন করতেছস যেন মঙ্গল গ্রহে যাইতেছি। এর লাইগাই মাইনষে কয়, মাইয়া জাতি একটা প্যারা। কোন দুঃখে যে থাকতে গেলাম! আল্লাহ রক্ষা করো আমার কান’টারে!”
শেষের কথাটা ফয়সাল আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার মতো করে বলল।
নোলক পাল্টা ঝাজ দেখিয়ে বলে,
“দেখ, ফ্যাসালের ছাও? তোরে দয়া করে আমাদের টিমে জায়গা দিয়েছি। সো চুপচাপ সইতে পারলে থাক, না পারলে ফুট।”
ফয়সাল ঠোঁট উল্টে বলে,
“লও ঠেলা! যাগো লাইগা করলাম চুরি তারাই কয় চোর! হায়রে, মাইয়া মানুষ!”
মনপ্রাণ সতেজ থাকলে অতি অল্পেই খুশিতে মন ভরে উঠে। নোলকদেরও হলো তাই। কলকল ধ্বনিতে হেসে উঠলো তারা।

ছেলেদের মাইক্রোতেও বেশ আলাপ জমে উঠলো, জুনিয়র সিনিয়রদের মাঝে। এই আলাপে বাদ গেলো না আদ্রও। নিষাদ এক পর্যায়ে বলে বসলো,
“ভাই, আপনি খুব বেশি চুপচাপ। আমি সারা জিবনে এতো চুপচাপ ছেলে দেখি নাই। ছেলে মানুষ এত চুপচাপ হয় নাকি? আপনাকে দেখলে মনে হয়, দুঃখে ভেসে যাচ্ছেন!”
এই প্রশ্ন কমন প্রশ্ন আদ্র’র জন্য। আদ্র রহস্যময় হেসে বলে,
“দুঃখ-সুখের জীবন। সুখে তলিয়ে যাওয়া কিংবা দুঃখে ভেসে যাওয়া কোনটাই অস্বাভাবিক নয়।”
নিষাদের বোধহয় বোধগম্য হয়নি কথাটা। ঠোঁট উল্টে বাকিদের দিকে চায়। হাসল ইশান আর দ্বীপ। এই অদ্ভুত কিছিমের ছেলেটাই তাদের খুব পছন্দের।

দুইটা মাইক্রো শো শো করে এগিয়ে যায়। অনেক কিছুই পেছনে ফেলে।
বেশ অনেক্ষণ পর শ্রেয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
“দোস্ত? আমার বমি পাচ্ছে।”
ফয়সাল মুখ ফ্যাকাসে করে বলে,
“নে এবার এই ঘুরনি আলির যন্ত্রনা।”
নোলক শ্রেয়াকে মাঝখান থেকে কিনারে এনে বসায়। বলে,
“বাহিরের দিকে মনযোগ দে। চুপ করে থাক। কথা বলিস না।”
লুবনা বলে,
“দোস্ত আমারও খারাপ লাগছে!”
ফয়সাল তেঁতে উঠে বলে,
“এই তোগোরে ঘুরতে বাইর হইতে কইছে কেডা?”
কেউ কোনো প্রতিবাদ করার অবস্থায় নাই। নোলক ক্ষণে শ্রেয়াকে ক্ষণে লুবনাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।
ফয়সাল ড্রাইভারকে বলে গাড়ি দাঁড় করায়। পরিবেশটা খুবই দারুন। আশেপাশে খুব বেশি দোকান নেই। নেই কোনো ভীরভাট্টা। ভাগ্যক্রমে কাছেই একটা ফার্মেসি পেয়ে যায়। ফার্মেসি থেকে বমির ঔষধ নিয়ে দুজনকে খাওয়ায়। আদ্রদের গাড়ি পেছনে ছিলো। ওরা ততক্ষণে কাছে চলে এলো। ওদের গাড়ি থামানো দেখে তাদেরটাও থামালো। কারন জানার পর আদ্র, ইশান, দ্বীপ নিরুত্তাপ থাকলেও সৃজন আর নিষাদ বিরক্তি প্রকাশ করলো।
লুবনা বলল,
“তোরা এত খারাপ ক্যান রে? মানুষের কষ্টেও বকাঝকা করিস। নির্দয়, পাষাণ।”
ইশানের হাসি পেয়ে গেলো এই আহ্লাদী কথায়। তবে হাসলো না। না জানি আবার বলে বসে, “আপনি কেমন হ্যা? অন্যের কষ্টে হাসেন, নিষ্ঠুর!”
হাসি কন্ট্রোল করে বলে,
“এই তোমরা বরং এখানে একটু রেস্ট নাও। পরিবেশটা সুন্দর।”
দ্বীপও ইশানের সাথে সহমত পোষন করে বলে,
“হ্যা, হ্যা। তাই করো। অসুস্থ হয়ে গেলে তো সমস্যা।”
নোলক ততক্ষণে রাস্তার কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূর-দূরান্তের বাড়িঘর গুলো দেখার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আদ্র একবার নোলকে দেখে নিয়ে ইশানকে বলে,
“এই প্রথম বোধহয়, তোর অগ্নিশর্মা আগুন লাগালো না। আই মিন, অঘটন ঘটালো না।”
ইশান হেসে দিয়ে বলে,
“তুই যে কেন মেয়েটার পিছে লেগে থাকিস!”

প্রায় দশ পনেরো মিনিট পর যখন পুনরায় যাত্রার উদ্দেশ্যে সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলা হলো তখন শ্রেয়া জানালো,
“সে ঘুরতে-টুরতে যাবে না।”
কেন যাবে না জানতে চাওয়া হলে জানালো,
সবাই তাকে খুব বকাবকি করেছে তাই যাবে না। অনেক অনুনয়বিনয় করে অবশেষে তার মান ভাঙিয়ে যাত্রা শুরু হলো। এক ঘন্টা দশ মিনিটের মাথায় তারা সীতাকুণ্ড শহরে প্রবেশ করলো। চারপাশে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুনিপুণ দৃশ্য। নোলক বাইনোকুলার দিয়ে দূরের পাহাড় দেখে মুগ্ধ চোখে।

সামনের গাড়িতে ইশান চলন্ত গাড়ি থেকেই ভিডিও করে সব। মাঝখানে রাস্তা আর চারপাশে সবুজ পাহাড়ি ঢল! পাহার কন্যার রূপ যেন উতলে উতলে পড়ছে। আদ্র বিমোহিত প্রশ্ন ছুড়ে,
“পাহারে একলা একা বসত গড়লে কেমন হয়?”
সৃজন বলে,
“সঙ্গে বউ থাকলে জোশ হয়, না থাকলে সুখ নাই।”
আদ্র হেসে বলে,
“তোমার ধারনা, মেয়েরা সুখ বিক্রি করে বেড়ায়?”
সৃজনকে করা প্রশ্নের জবাবে নিষাদ বলে,
“না ভাই, যন্ত্রনা। উঠতে বসতে খালি যন্ত্রনা বিক্রি করে।”
দ্বীপ হেসে দিয়ে বলে,
“কেন ছোট ভাই? তুমি কি এই যন্ত্রনার ক্রেতা নাকি?”
নিষাদ চোখেমুখে বিস্তর হাসি এঁকে বলে,
“হ ভাই! প্রথমে ক্রাশ অতঃপর বাশ! এবং সবশেষে সে কইন্যার যন্ত্রনার ভুক্তভোগী হিসেবে দশ কেজি ওজনের ইন্তেকাল! যন্ত্রনা কিনতে কিনতে ফকির হয়ে গেলাম, তবুও এই যন্ত্রনা শেষ হয় না। জীবনডা যন্ত্রনাময়, ভাই!”
সবাই কলকল ধ্বনিতে হেসে উঠে। ইশান বলে,
“সেই কইন্যা যদি এই কথাগুলো শোনে, কি হবে ছোট ভাই?”
নিষাদ বিরস মুখে বলে,
“আরো দশ কেজি ওজনের ইতি ঘটিবে, আর কি হইবে!”
পুনরায় হাসির রোল পরে যায়।

টাটকা রোদের কড়া দুপুরে ক্লান্ত বাহিনী প্রথমে ঠিক করে, তারা আগে ইকোপার্ক এর সুপ্তধারা ঝর্ণায় গিয়ে সুপ্তসুখ অনুভব করবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
দুপুর দেরটা নাগাত তারা ইকোপার্কে গিয়ে পৌছায়। সবচাইতে উচ্ছ্বসিত নোলক। সে যা-ই দেখছে তাতেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। চারপাশে পাহাড়ি গাছ মাঝখানে পাহাড়ি মাটির রাস্তা। কি যে সুন্দর!

ইশান আর দ্বীপ সবার সামনে। ইশান সব কিছুই ক্যামেরাবন্দি করছে। তার ধারনা মতে, প্রকৃতির এই চমৎকার রূপ উপভোগের পাশাপাশি ক্যামেরা বন্দি না করা অন্যায়! শ্রেয়া আর লুবনা ইশানের পেছনেই। সৃজন, নিষাদ আর ফয়সাল সবাইকে তাদের সামনে রেখে তারা পেছনে হাঁটছে। এক প্রকার প্রটেকশন বলা চলে। মাঝে-মধ্যে হাক ছেড়ে সবাইকে সাবধানে হাঁটতে বলছে।
নোলক মুগ্ধ নয়নে দেখছে আর ক্ষণে ক্ষণে থেমে দাঁড়াচ্ছে। দূরের দৃশ্য দেখতে বাইনোকুলার ব্যবহার করছে। থেমে থেমে হাঁটার ফলে সে শ্রেয়া আর লুবনার থেকে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে। নোলকের পাশেই আদ্র। একটু সাবধান করার মতো করে বলল,
“একটু নিচে তাকিয়ে হাঁটুন। পাহাড়ি রাস্তায় এমন চোখ আকাশে তুলে হাঁটা বিপজ্জনক।”
“আমার চোখ আমি আকাশে, বাতাসে, পাহাড়ে যেখানে ইচ্ছে সেখানে তুলে হাঁটবো। আপনার কি? সমস্যা হলে আগে আগে হাঁটুন।”
কথাটা বলেই নোলক মুখ বাঁকিয়ে আগের মতো হেলেদুলে হাঁটতে লাগলো। তীক্ষ্ণ রাগ নিয়ে আদ্র নোলককে ফেলে অনেকখানি এগিয়ে গেলো। উঁহু, রাগটা নোলকের উপর নয়। ভুল মানুষকে সতর্কবার্তা দেয়ার জন্য, নিজের উপর-ই রাগ হলো।
পথিমধ্যে পানির এক সরু রেখা বয়ে গেলো। নোলক চেঁচিয়ে বলে,
“গাইজ? পানি যাচ্ছে এদিক দিয়ে।”
পেছন থেকে ফয়সাল বলে,
“হ্যাঁ, শুয়ে পড় এখন।”
ফয়সালের টিটকারিতে খুব বেশি গা মাখে না উচ্ছ্বসিত কন্যা।
পোশাক কিছুটা উপরে তুলে ধীরে ধীরে পার হতে লাগলো জায়গাটা। দ্বীপ বলে,
“এই তোমরা এদিক দিয়ে আসো। তাহলে জলদি পৌঁছানো যাবে।”
সবাই তাই করলো।
প্রায় আধাঘণ্টা হাঁটার পর তারা সেই মনোরোম স্থানে এসে পৌছায়। পাহাড়ের গা বেয়ে অঝোরে পড়ে সুপ্ত ঝর্ণাধারা। চারপাশের সবুজের মাঝে এই মনোরোম দৃশ্য খানিক চুপ হয়ে থেকে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করে সবাই। সবুজের মাঝে শিতল পানির ধারা। নোলক চেঁচিয়ে বলে,
“আমি ঝর্নায় ভিজবো।”
বলেই সে অনেকখানি সামনে এগিয়ে যায় কারো অনুমতির অপেক্ষা না করে। একটু সামনে এগিয়ে যায়। পাথরের উপর তীব্র বেগে বয়ে চলা ঝর্ণা ধারার তাল আকস্মিক সামলাতে না পেরে পা পিছলে পড়ে যায়। সবাই ছুটে আসে। আদ্র বিনা সংকোচে নোলককে টেনে তোলে। কড়া ধমকের সুরে বলে,
“সব কিছুতে একটা বাড়াবাড়ি টাইপ স্বভাব। কি সমস্যা আপনার? ঘুরতে এসেছেন শান্ত ভাবে ঘুরে যাবেন। এত ছটফট কেন করেন? ঝর্ণার স্রোত সম্পর্কে কোনো ধারনা আছে আপনার? অদ্ভুত!”
ভিজে একাকার নোলক মিনমিন করে বলে,
“অনেকেই তো ভিজছে!”
“অনেকে আর আপনি এক না। অনেকের সঙ্গে আপনার অনেক তফাত। জাস্ট চুপচাপ এখানে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন।”
বলে সে সরে যায়। ইশান কাছে এসে বলে,
“এই অগ্নিশর্মা? আর সামনে এগিয়ো না। এখানেই দাঁড়িয়ে একটু হাসো তো প্লিজ।”
নোলক হাসে না। কপাল কুঁচকে তাকায়। রাজ্যের বিতৃষ্ণা ভর করে তার উপর। ইশান সেই ছবিই ক্যাপচার করে।

চারপাশ ঘুরেঘুরে দেখে সবাই। দ্বীপ হুংকার দিয়ে বলে,”কেউ দূরে কোথাও যেও না!”

দ্বীপ, সৃজন, শ্রেয়া, নিষাদকে লক্ষ্য করে যেতে লাগলে লুবনার হাত টেনে নিজের পাশে বসায় ফয়সাল। লুবনা বলে,
“আমি এখানে বসবো না। ওদিক যাবো। তুই গেলে তুইও আয়।”
বলে উঠতে নিলে আবার টেনে বসায়। চোখমুখ শক্ত করে বলে,
“দিবো এক চড়! বসতে বলেছি চুপচাপ বসে থাকবি। নয়তো ঘুষি মেরে বোচা নাক আরো বোচা বানিয়ে দিমু।”
লুবনা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে মুখখানা ফ্যাকাসে করে নিজের নাকে হাত বুলায়। পান থেকে চুন ঘষলে এই ছেলে ওর নাক নিয়ে খোঁচা দিবে!
একটা ছোট কিছু একটা হাতে কঁচলাতে কঁচলাতেই লুবনার সেই ফুলিয়ে রাখা মুখ দেখে মিটিমিটি হাসে ছেলেটা। হাতের জিনিসটা দূরে ছুড়ে মারে। পানিতে হাত ধুয়ে সেই হাত দিয়ে লুবনার নাক টেনে বলে,
“বাট আই লাভ দিজ বোঁচা না!”
লুবনা ফয়সালের দিকে তাকায়। মুখ বাকিয়ে বলে,
“জুতা মেরে গরু দান। লাগবো না তোর গরু। যা সর।”
ফয়সাল লুবনার আরেকটু কাছে গিয়ে বলে,
“না সরুম না। একদম তোর কাছে কাছেই থাকমু।”
লুবনা বিরক্তি নিয়ে তাকাতে উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
দূর থেকে বাকিরা ডেকে বলে,
“এই তোরা আসবি না?”
ফয়সাল হাক ছেড়ে বলে,
“না, তোরা যা।”

নোলক মন খারাপ করে পানিতে পা ভিজিয়ে পাহাড়ি মাটির শক্ত দলার উপর বসে থাকে। মধ্যদুপুরের চকচকে রোদ এসে লাগে অতৃপ্ত গালে। নোলকের পাশেই ইশান নানা ট্রাজেডির গল্প শোনায়। একপ্রকার বুঝ দেয়া যাকে বলে। নোলক গাল ফুলিয়ে বলে,
“আমি তো ভেতরে যাইনি! এইটুকুতে এত কথা শোনানো লাগে? আমি যা ইচ্ছে তাই করবো, আপনার বন্ধুর তাতে কি?”
ইশান হেসে দিয়ে বলে,
“আরে বোকা ও তো খারাপ কিছু বলেনি। তোমার ভালোর জন্যই বলেছে। আচ্ছা, ওর হয়ে আমি স্যরি বলছি। হ্যাপি? এবার একটু হাসো, প্লিজ।”
নোলক খ্যাঁচখ্যাচ করে বলে,
“আপনি খুবই আজব লোক। দোষ করে একজন আর স্যরি বলে আপনি।”
বলেই উঠে চলে যায়। ইশানের ডাক সে শোনে না। শান্ত ঝর্ণাধারায় ছলছল আওয়াজ তুলে অনেকখানি দূরে গিয়ে ঝর্নার দিকে মুখ করে তাকায়।
নোলক প্রথমে খেয়াল করেনি, আদ্র তার ঠিক পাশেই দাঁড়ানো। যখন খেয়াল করলো তখন একটু সরে আসে।
আদ্র হেসে ফেলে। রোদের কিরণে লাল আভা ফুটে উঠা অতৃপ্ত তৃষ্ণার্ত মুখখানা দেখে। আদ্র ভাবে, এই চোখমুখ, গাল জুড়ে লাল আভা রোদের তেজী কিরণে নাকি তার নিজস্ব তেজে?
আদ্র বুকে দু’হাত বেধে রসাত্মক ভাবে বলে,
“সাপের মতো ফোঁসফোঁস না করে চোখেমুখে একটু ঝর্ণাবতীর জল ছোঁয়ান, সঙ্গে একটু মাথায়। চারপাশ ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
নোলক তার চেপে রাখা রাগ আর চেপে রাখতে না পেরে নিচু হয়ে দু’হাত ভরে পানি নিয়ে আদ্র’র মুখ জুড়ে ছুড়ে মারলো। তারপর কটমট করে বলল,
“এখন সব ঠান্ডা। খারাপ মানুষ একটা!”
বলে হনহনিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। আকস্মিক ঘটায় প্রথমে কিছুই ঠাওর করতে পারেনি আদ্র। নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ থেকে চশমাটা খুলে বা’হাতে মুখ মুছলো। চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকাল ঝর্ণাধারার মধ্যিখানে জ্বল জ্বল করে জ্বলা অগ্নিকন্যার দিকে। আদ্র আসলে বুঝে উঠতে পারলো না, তার আসলে, রাগ করা উচিত, নাকি উচিত না?
এই বোঝা না বোঝা মাঝেই কি ভেবে হেসে ফেললো। বিড়বিড় করে বলল,
“পাগল একটা! এত চঞ্চল কেউ হয়?”………(চলবে)

#জলছবি
#পার্ট_১১(শেষ অংশ)
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
সূর্যের তেজ কমে তেজহীন দ্যুতি ছড়াচ্ছে চমৎকার পাহাড়টির গায়! আঁকাবাঁকা হয়ে বয়ে চলা ঝর্ণাধারা চিকচিক করে উঠছে ক্ষণে। পাহারে গা থেকে ভেসে আসে স্বচ্ছ বাতাস।
কেউ ঘুরে ঘুরে এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছে, কেউ কেউ ঝর্ণার পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছে, ছুঁয়ে দিচ্ছে পানি।
দ্বীপ দূর হতে হাঁক ছেড়ে বলে,
“এখন আমাদের বের হতে হবে। সবাই প্রস্তুত হও।”
যারা ঝর্ণার উপরে উঠেছিল তারা নিচে নেমে আসতে শুরু করলো। নোলক আর শ্রেয়া পা ভিজিয়ে বসে ছিলো। তারাও উঠে দাঁড়াল। নোলক পাশ থেকে একটা ছোট্ট ডাল জাতীয় কিছু একটা নিয়ে মাটির ভিটার উপর গোটা গোটা অক্ষরে লিখল,”নোলক!”
সে তার কাজ সাধন করে বিস্তর হাসলো। যেন খুব মহৎকর্ম সাধন করেছে।
শ্রেয়া প্রথমে হাসলেও পরে কি মনে করে মুখ মলিন করে ফেললো। নোলককে নিজের মনের শংকা জানালো,
“দোস্ত? আমার যেন কেমন লাগছে! মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে!”
নোলক আশ্বাস দিয়ে বলল,
“আল্লাহ্‌ ভরসা। অযথা কিছু নিয়ে টেনশন করিস না তো।”

সুপ্তধারায় ঘন্টা খানিক ঘুরে সবাই চন্দ্রনাথ মন্দিরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। পাহারের উপর মন্দির শুনে সবার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। চোখেমুখে খুশির ঝলক একে শ্রেয়া জানালো, তার খুব ইচ্ছে ছিলো চন্দ্রনাথের মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করার। অবশেষে তার সুপ্ত ইচ্ছে পূরণ হতে যাওয়ায় তার আগ্রহ-ই বোধহয় সবচাইতে বেশি। সৃজন জানালো, তার মায়ের খুব ইচ্ছে। নেক্সট টাইম মাকে নিয়ে সে আসবে।

প্রায় ঘন্টা খানিকের মাঝেই তারা তাদের গন্তব্য স্থানে এসে পৌঁছাল। বিশাল পাহারের মাথায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এত উপরে উঠতে হবে ভেবে আগেই হাঁপিয়ে উঠলো সবাই। সহায়ক হিসেবে সবাই মাঝারি সাইজের বাশ কিংবা লাঠি নিয়ে নিলো সাথে। যাতে পথ চলতে সুবিধা হয়।
দ্বীপ বলল,
“এই মেয়ের দল আগে চলো। আমরা পেছনে আছি।”
প্রখর উৎসাহের কাছে ক্লান্তি মহাশয় বিশেষ পাত্তা পেলো না। সবাই এডভেঞ্চারের মজা পেতেই বেশি আগ্রহী। অনেক মানুষ এসেছে পাহার এবং মন্দির একত্রে দর্শন করতে। বেশিরভাগই সনাতন ধর্মাবলম্বী। কেউ হয়তো পূজা দিতে এসেছে, কেউ-বা মানত করেছে তাই, আর বেশিরভাগই প্রাকৃতিক রূপ দর্শন করতে এসেছে।
দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে পাহাড়ের পথে খানিক বাদে বাদে সিড়ির মতো করে মাটির সিঁড়িপথ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় মিনিট বিশেক হাঁটার পর নোলক বসে পড়লো। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলল,
“আর উঠতে পাড়ছি না। পা ব্যথা করছে।”
নোলকের পাশে লুবনাও বসে পড়ে বলল,
“আমিও পাড়ছি না।”
নিষাদ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“এইটুকুতেই? আরো অনেক পথ বাকি।”
দ্বীপ জিজ্ঞেস করলো,
“বেশি খারাপ লাগছে?”
নোলক ফ্যাকাসে মুখ করে বলল,
“না।”
ইশান বলল,
“বেশি খারাপ লাগলে বাদ দেই?”
নোলক উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“না, পারবো যেতে।”
বলে সিড়ি ভাঙতে সুরু করে। লুবনাকে তখনও বসে থাকতে দেখে ফয়সাল বলে,
“তুই বইসা রইছিস ক্যা? এইখানে আপনার কোনো হিরো নাই যে আপনারে কোলে কইরা নিয়ে যাবে। উঠে হাঁটা ধরেন। ঢং-ফং বাদ।”
লুবনা মলিন মুখে উঠে দাঁড়ায়। হাঁটা শুরু করতে লাগলে ফয়সাল ডেকে বলে,
“এই দাঁড়া।”
একরাশ বিরক্তি নিয়ে লুবনা দাঁড়ায়। ফয়সাল বলে,
“হাত ধর।”
লুবনা হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“লাগবে না। এত ঢং নাই মনে। তোর ঐ রোবোট মার্কা হাত ধরতে যামু কোন দুঃখে?”
ফয়সাল এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“দিমু এক থাপ্পড়, ফাজিল। সব কথায় ত্যাড়ামি স্বভাব।”
লুবনা ঠিক বুঝতে পারে না ছেলেটা এমন ক্যান! এই ভালো, এই খারাপ! খারাপ না ঠিক, কিন্তু খুব রুক্ষ। কোনো রসকষ নেই কথার মাঝে। ভালো করে কথা বলা যেন তার ধাতের বাহিরে!

প্রায় ঘন্টা খানিক হাঁটার পর বেশ অনেক খানি উপরে উঠে যায় সকলে। একপাশে বসে একটু জিরিয়ে নেয়। পানি পান করে সবাই। আদ্র’র পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় খেতে পারে না। নোলক লক্ষ্য করে তা। নিজের বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে,
“নিন। এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন।”
আদ্র তার গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে,
“ধন্যবাদ। কিন্তু প্রয়োজন নেই।”
নোলকের খুব ইগোতে লাগে। সাধলো বলে ভাব বেড়ে গেলো নাকি? মনে মনে বেশ কিছু বকাঝকা দিয়ে বলে,
“প্রয়োজন নেই মানে? আমি যখন সেধেছি, প্রয়োজন না হলেও খেতে হবে।”
“আচ্ছা পাগলের জ্বালায় পড়লাম দেখি!”
কথাটা অবশ্য মনে মনে বলে আদ্র। নোলক খ্যাট করে বলে,
“কি হলো, নিন? নাহলে কিন্তু মাথায় ঢেলে দিবো।”
আদ্র হেসে দিয়ে বোতলটা নিলো। নোলক ভ্রু কুঁচকে আদ্র’র দিকে তকিয়ে মনেমনে বলে,’হাসলে তো ভালোই দেখায়। না হেসে সারাক্ষণ অমন হুতুম পেঁচার মতো মুখে করে রাখতে হবে ক্যান? আজব!’
আদ্র পানি খাওয়ার সময় নোলক এক প্রকার শোধ নেয়ার মতন করে বলে,
“কেউ একজন নিজের জিনিস শেয়ার কিংবা এক্সচেঞ্জ করতে অভ্যস্ত নন। তবে অন্যের থেকে শেয়ার করতে বোধহয় অভ্যস্ত!”
দুই ঢোক গিলে আদ্র বোতলটা নোলকের কোলের উপর রেখে বলে,
“জোর করে খাইয়ে খোঁচা মারলেন?”
নোলক মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“খোঁচা কেন মারবো? কেউ একজন কটকট করে তার এই মহান বানি শুনিয়েছিলেন তাই একটু স্মরণ করিয়ে দিলাম জাস্ট।”
আদ্র অসস্থিতে পড়ে গেলো যেন। সরল দৃষ্টি ফেলে তাকালো নোলকের দিকে। নোলক খুব মজার পাওয়ার মতো খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
দ্বীপ হাঁক ছেড়ে বলল,
“সবার বিশ্রাম হলে আবার শুরু করো। সন্ধ্যার আগেই আবার নামতে হবে কিন্তু।”
নোলক হাসি হাসি মুখ নিয়েই উঠে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে পড়ে একটু নিচু হয়ে মৃদু স্বরে বলে,
“ডাজেন্ট ম্যাটার। আমি আমার জিনিস অন্যদের সঙ্গে শেয়ারে অভ্যস্ত।”
এটুকু বলেই চলে গেলো। আদ্র বিস্ময় নিয়ে নোলকের চলে যাওয়ার দিলে তাকিয়ে স্বল্প আওয়াজে বলে,”ডেঞ্জারাস!”

সকলে যখন মন্দিরের কাছে এসে পৌঁছালো তখন পুরাদস্তুর বিকেলের ছায়া। সৃজন, শ্রেয়া আর দ্বীপ মন্দিরের ভেতরে চলে যায় প্রথমে। প্রণাম করে। দু’হাত মিলিয়ে প্রার্থনা করে চোখ বুজে।
বাকিরা অন্যপাশে চলে আসে। ঘোর লাগানো সৌন্দর্যের মায়ায় হারিয়ে যায়। পাহারের চূড়ায় উঠতে পেরে সকলেই বিমুগ্ধ। দূর-দূরান্তের সুবুজ গাছগাছালি কিছুটা ঘোলাটে দেখাচ্ছে। সূর্যের দেখা মিললো না এখানে এসে। মনে হচ্ছে যেন, হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যাবে! স্বচ্ছ মেঘ। একবারের জন্য মনে হলো শুন্যে ভাসছে সকলে!

পাহারের অনেক অনেক উপরে তারা। ইশান চুপিসারে মুগ্ধ নোলকের বেশ কিছু ছবি ক্যাপচার করে। অন্যদেরও করে।
নোলক বাকরুদ্ধ প্রায়। অস্ফুট স্বরে বলে,
“এত বেশি সুন্দর! আমরা কত উপরে?”
নিষাদ বলে,
“মনে তো হচ্ছে অনেক উপরে।”
উচ্ছ্বাসে পাগল প্রায় নোলক উদগ্রীব হয়ে বলে,
“এই আমার এখান থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে!”
আদ্র এতক্ষণ অন্যদিকে ফিরে থাকলেও নোলকের এই অদ্ভুত কথা কানে যেতেই চমকে উঠে। ওর ধারনামতে এই মেয়ে যা খুশি করতে পারে! দুনিয়ার যত আজব কর্মকান্ড সাধনের কারণেই তার জন্ম। আদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান নোলকের হাত টেনে দূরে সরিয়ে আনে। নোলক খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলে,
“আরেহ! মজা করে বলেছি। সত্যি সত্যি লাফ দিবো মনে হলো নাকি? আমি অতো গাধা নই, ওকে?”
আদ্র বাকা হেসে নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলে,
“গাধা হলে তো হতো-ই। আধ পাগল হয়েই তো যন্ত্রনা!”
ইশান বলে,
“না, তোমার অতো কিনারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। খুব রিস্ক এখানে। বাইনোকুলার আছে না তোমার? দূর থেকেই দেখ। অনেক দূর্ঘটনা ঘটে এখানে।”
ফয়সাল কাটকাট কন্ঠে বলে,
“এই মাইয়াডারে সারাক্ষণ ‘সুখে থাকতে ভূতে কিলায়’।”
বলেই আবার নিষাদের সঙ্গে নানান আঙ্গিকের ছবিতে বন্দি করতে লাগল নিজেদের।

লুবনা ওদের পাশ কাটিয়ে একটু কিনারে যেতে লাগলেই ফয়সাল ছবি তোলা বন্ধ করে হাত টেনে ওদের সামনে নিয়ে আসে লুবনাকে। ধমকের সুরে বলে,
“মরতে যাচ্ছিস? এক চড়ে গাল লাল করে দিবো, ফাজিল। কিছুক্ষণ আগে নোলককে নিষেধ করা হলো শুনিস নি? বাচ্চাদের মতো একেকটার কর্মকান্ড! মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে।”
লুবনা ফয়সালের বকাঝকায় যতটা না কষ্ট পেয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে আশেপাশে কিছু লোক আড়চোখে তাকানোর ফলে। নিষাদ হাত চেপে ফয়সালকে শান্ত হতে বলে। ইশানও ইশারায় থামতে বলে। ফয়সাল নিজেও বুঝতে পারে সে ওভার-রিয়েক্ট করে ফেলেছে। লুবনা ভীষণ মনঃক্ষোভ নিয়ে অন্যপ্রান্তে চলে গেলো। নোলক কাছে এসে তেজী স্বরে বলে,
“তুই ওর সাথে একটু বেশি করিস। আশ্চর্য! ঘুরতে এসে তোদের জন্য স্বাধীন ভাবে ঘুরা যাচ্ছে না। ডিসগাস্টিং!”
নোলক আর দাঁড়াল না। শ্রেয়ার কাছে গেলো।
আদ্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবটা দেখে। কিন্তু কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া করে না।

ফয়সাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লুবনার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। লুবনা চলে আসতে লাগলে শক্ত করে হাত টেনে নিজের সঙ্গে দাঁড় করায়। লুবনার দিকে ফিরে বলে,
“বেশি বকে ফেলেছি, না? আচ্ছা, স্যরি। আর বকবো না।”
লুবনা রাগ এবং অনুরাগের চোখে তাকায়। চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলে,
“কই, অন্যদের তো এমন বকিস না! তোর সব শাসন কি শুধু আমাকে ঘিরেই, ফয়সাল? কেন সহ্য করতে পারিস না আমায়? কেন অন্যদের সামনে এভাবে ছোট করিস সবসময়? আমি কোনো প্রতিবাদ করি না তাই? নাকি আমায় এতোই অপছন্দ যে অপমান করে সুখ পাস।”
তীব্র আক্রোশ লুবনার প্রতিটা কথায়। ফয়সাল মাথা পেতে নেয় প্রতিটা শব্দ, বাক্য, কথা! নত স্বীকার করে বলে,
“স্যরি!”
লুবনা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
“তোর আছেই এই একটা সম্বল। যা ইচ্ছে হয় তাই করবি, তারপর স্যরি! কত সহজ! হাত ছাড়।”
ফয়সাল ছেড়ে দেয় হাত। ধরে রাখার সাধ্য তার নেই। তার অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বলতে পারে না। কোথায় যেন কিসের একটা দ্বিধা, বাধা!
“বলে দাও। যা বলার বলে দাও। এত দ্বিধাদন্দে থেকো না ছোট ভাই!”
লুবনা চলে যেতেই ক্যামেরা হাতে ফয়সালের সামনে এসে দাঁড়ায় ইশান। ক্যামেরা দৃষ্টি রেখে কিছু উলোট-পালোট করতে করতেই কথাটা বলে সে।

ফয়সাল ঘার ঘুরিয়ে তাকায় ইশানের দিকে। খুব একটা চমকেছে তেমন নয়। ইশান ক্যামেরা থেকে মুখ তুলে ফয়সালের দিকে চায়। রহস্যজনক হেসে বলে,
“না বললে এই বোকা মেয়ে উল্টো ভুলই বুঝবে। সে বুঝবেই না যে, সোহাগ করে যে শাসন করে সে। অনুভূতি বেশিদিন চেপে রাখতে নেই। বলে ফেল। বন্ধু বলে দ্বিধাদন্দে ভুগো না।”
ফয়সাল বিপরীতে একটা অতৃপ্ত হাসি ফিরিয়ে দেয়। ‘ইচ্ছে থাকলেও যে, মানুষ বেশিরভাগ সময় ইচ্ছে সফল করতে পারে না’ সে কথা আর মুখ ফুটে বলে না। সুন্দর প্রকৃতির দিকে চেয়ে তপ্ত এক দীর্ঘশ্বাঃস ফেলার চেয়ে আর বেশি কিছুই করার নেই তার।

হঠাৎ মন্দিরের ভেতর থেকে মৃদু কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। ফয়সাল আর ইশান দুজন দুজনের দিকে চায় অবাক হয়ে। ইশান বলে,
“কাঁদছে কে?”
ফয়সাল আকাশ সমান বিস্ময় নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,
“শ-শ্রেয়া! চলুন তো।”
বলেই দুজন মন্দিরের দিকে ছুটে আসে।
……..(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে