গল্প :- জলচক্ষু
পর্ব :- ০৩
লেখক :- অনন্য শফিক
.
.
-:” রাতে অপেক্ষা করছিলাম মিতু কখন ঘুমাবে সেই সময়ের জন্য। কিন্তু মিতু তো আর সকাল সকাল কিছুতেই ঘুমাতে যাবে না।মাঝরাত পর্যন্ত সে জাগবে। তারপর ঘুম।আমি এবার একটা ছাল চাললাম। বললাম,’মিতু, আমার শরীরটা তো খুব খারাপ।আজ যদি তুই একটু সকাল সকাল শুয়ে পড়তি!লাইটের আলোটা আমার চোখ পুড়িয়ে দিচ্ছে রে!’
মিতু বললো,’ঠিক আছে। এক্ষুনি শুয়ে পড়ছি।’
বলে সে সুইচ অফ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
এরপর আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম তার দুই চোখ লেগে আসার জন্য। মিতুর দুই চোখ লাগতে খুব একটা দেরি হলো না।ও যখন ঘুমিয়ে পড়লো তখন আমি শিমুলকে ফোন করলাম। প্রথম দু বার সে ফোন রিসিভ করলো না। ফোন রিসিভ করলো তৃতীয় বার।
ফোন রিসিভ করে সে জিজ্ঞেস করলো,’ফোন দিছো কেন?’
ওর এমন কর্কশ গলা শুনে আমার চোখ ভিজে উঠলো জলে।আমি কান্নামাখা গলায় বললাম,’তুমি আমায় একা রেখে কীভাবে চলে গিয়েছিলে সন্ধ্যা বেলায়?আমি না তোমার স্ত্রী?’
শিমুল রাগত স্বরে বললো,
‘মায়া কান্না রাখো তো বাবা!এই জন্যই তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না আমার।এতো কাঁদতেছো কেন হ্যা?বোঝা যায় বাপ মরে গেছে একেবারে!’
শিমুলের এমন আচরণ আমার ভেতরটাকে আরো ক্ষত বিক্ষত করে তুললো। তবুও বেহায়ার মতো তার সাথে আমি ভালো আচরণ করে যেতে লাগলাম। ভালো আচরণ যে তার সাথে আমার করেই যেতে হবে! কারণ আমি যে মস্ত ভুল করে ফেলেছি। তাকে বিয়ে করে ভুল করেছি। তাকে ভালোবেসে ভুল করেছি। পেটের ভেতর তার সন্তান ধারণ করে ভুল করেছি!
‘
আমি কেঁদে কেঁদে বললাম,’শিমুল তুমি যদি আমার সাথে এমন আচরণ করো তবে আমি কোথায় যাবো বলো?কার কাছে যাবো?’
শিমুল আমার কথার কোন জবাব দিলো না।
আমি আবার বললাম।বলতে শুরু করলাম,’শিমুল, তোমার অস্তিত্ব আমার পেটের ভেতর। তোমার বংশের রক্ত। শিমুল, আমাকে তুমি কষ্ট দিলে আমার পেটে থাকা তোমার সন্তানেরও তো কষ্ট হবে। নিজের সন্তানের কষ্ট কী করে তুমি সহ্য করবে বলো?’
শিমুল ও পাশ থেকে ঘুম জড়ানো গলায় তখন বললো,’আমার ঘুম পেয়েছে। এখন রাখছি।’
বলে সঙ্গে সঙ্গে সে ফোন কেটে দিলো।
ও ফোন কেটে দিলে আমি আবার ডায়েল করলাম। একবার,দু বার, বারবার।
কিন্তু শিমুল একবারও আর ফোন রিসিভ করলো না।
বারবার ব্যার্থ হয়ে যখন চোখের জল ফেলে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম আমি তখন মিতু আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর দু চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,’অনেক কিছুই করে ফেলেছিস না? একসাথে দুজন থাকি অথচ আমি কিছুই জানি না!’
আমি তখন ওর বুকে মুখ ডুবিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম।
মিতু আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,’বোকা মেয়ে শান্ত হ।কান্না থামা। আল্লাহ তো আছেন। তিনি সবকিছু দেখছেন।আর তিনিই উত্তম পরিকল্পনা কারী। তিনি তোর কিছুতেই অমঙ্গল করবেন না।’
আমি কান্নাভেজা গলায় বললাম,’নারে মিতু না। আমার অমঙ্গল আমি নিজেই ডেকে এনেছি।বাবা মাকে ভুলে গিয়ে মাত্র তিন বছরের চেনা জানা একটা ছেলেকে হুট করে বিয়ে করে ফেলেছি। বিয়ে করার সময় ভেবেছিলাম শিমুল আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা। পৃথিবীতে শিমুলের চেয়ে ভালো আর কেউ নেই।শিমুল আমায় ছাড়া বাঁচবে না এবং আমিও তাকে ছাড়া বাঁচবো না!
আমি বুঝতে পারি নি রে মিতু এইসব কিছু যে ছলনা ছিল!’
মিতু বললো,’আচ্ছা বাদ দে এসব।শোন, সকাল বেলা শিমুলের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা কর। আমিও থাকবো ওখানে।কথা বলবো। এখন ঘুমিয়ে পর। এভাবে রাত জাগলে আর কান্নাকাটি করলে তোর পেটের বাবুটার তো ক্ষতি হবে!’
মিতুর চোখের দিকে তাকালাম আমি।তার চোখে মুখে কী অসম্ভব মায়া। তার মুখ নিঃসৃত কথাগুলো কত মোহনীয়।কী সরল একটা মেয়ে এই মিতু। আমার খুব ইচ্ছে করে মিতু হতে। কিন্তু মিতু হওয়ার সব পথ যে আমি রুদ্ধ করে দিয়েছি!
.
.
চলবে…………