ছোট গল্প: নতুন জীবন
লেখিকা: সামিহা হোসেন শৈলী
•••
ক্লাস ফোরের গণিত ক্লাসটা লাস্ট পিরিয়ডে। সামনে বাচ্চাদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। তাই ক্লাসটা না নিলেই নয়। এদিকে শায়লার শরীরটাও ভালো লাগছে না। জ্বর জ্বর ভাব। দুপুরের মধ্যে জ্বরটাও হয়তো এসে পড়বে। কেন যে কাল বৃষ্টিতে ভেজার লোভটা সামলাতে পারলো না। তাও ভালো, কাল শুক্রবার। শুক্র-শনি দুদিনের মাঝে সুস্থ হয়ে গেলে ইনশাল্লাহ স্কুলটা মিস যাবে না।
.
শায়লা আহমেদ। তিন ভাইবোনের মধ্যে শায়লা মেঝো। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য হিসেবে বরাবর একটু বেশিই আদর পেতো শানু। তাই আবদারের ঝুঁড়িটাও হতো ভারী। তার মধ্যবিত্ত বাবার পক্ষে সবসময় সব আবদার হয়তো পূরণ করা সম্ভব হতো না। তবে ইচ্ছেগুলো কখনো অপূর্ণ থাকতো না। শাখাওয়াত-শায়লা টিউশনের টাকা থেকে যতটুকু পারতো, তা দিয়েই ছোট বোনের আবদার পূরণ করতো।
.
সেই ছোট্ট শানু আজ দুই পুত্রের জননী। স্বামী-সন্তান নিয়ে কানাডায় থাকে। বেশ সুখেই আছে।
.
বড়োভাই সাখাওয়াতের একটাই মেয়ে, তুলি। শায়লার চোখের মনি। এবার জেএসসি দিবে। শাখাওয়াতও ভালো আছে তার সংসার নিয়ে।
.
শুধু ভালো নেই শায়লা। একটা সময় তারও স্বামী-সংসার ছিলো।স্বামী আদনান, শ্বশুর-শাশুড়ি, একমাত্র ননদ আরজু। সবাইকে নিয়ে ভালোই ছিলো। কিন্তু বিয়ের পর পাঁচ বছরেও সে যখন মা হতে পারলো না, সবাই বদলে গেল। “মা” ছাড়া কখনো কথা বলতো না সেই শাশুড়িও উঠতে বসতে কথা শোনাতে ছাড়েনি। এতো সাধের স্বামীর ভালোবাসা রূপ নিলো অবহেলায়।
.
মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পরেছিলো শায়লা। সবাই বদলে গেলেও আরজু কখনো কটুকথা শোনায় নি তার বড়ভাবীকে। অনেক কষ্টে রাজী করিয়ে আদনানকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো। বাড়ি ফেরার পর সবাই জানতে পারলো শায়লা কখনো মা হতে পারবে না। শশুর সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলের আবার বিয়ে দেবেন। তাদের যে বংশোধর চাই!
.
ডিভোর্সের দিন কোর্টে শেষবারের মতো পাঁচ মিনিট কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। তেমন কোনো কথা হয়নি তাদের।চলে আসার আগে আদনানের হাতে একটা সাদা খাম দিয়ে বলেছিলো,
” নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছো, তোমায় দেয়ার মতো কিছুই নেই। তাই এই ছোট্ট উপহার। ভালো থেকো। নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইল…”
এরপর আর কোনোদিন পেছনে ফিরে তাকায় নি শায়লা।
.
স্কুলের চাকরিটা নিয়ে ভাইয়ের বাসার কাছাকাছি বাসা ভাড়া নেয়। মা-বাবাকে সাথেই রাখলো। চাইলে ভাইয়ের সাথে থাকতে পারতো। ভাইয়ের বউ তমা শায়লাকে কখনো ননদ ভাবে নি। নিজের বোনের মতোই স্নেহ করে। তবুও কারো ওপর নির্ভরশীল হতে মন সায় দিলো না।
.
সারাদিন ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে স্কুলে সময় কাটে। আর বাসায় বাবা-মার সাথে। তাদের শেষ বয়সেও এভাবে কাছে পেয়ে শায়লা মনের মাঝে গাঢ় প্রশান্তি অনুভব করে।
কে বলেছে সে ভালো নেই?
বেশ তো আছে। ভালো আছে, আনন্দে আছে, সুখে আছে।
.
তবুও কখনো কখনো খুব করে জানতে ইচ্ছে করে… ডাক্তারি রিপোর্টে যখন আদনান জানতে পারলো, অক্ষমতা শায়লার নয়, তার নিজের। তখন কেমন ছিলো তার নতুন জীবন?
…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/