ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০৩
– আবির খান
আবিরে টয়লেট থেকে বের হয়ে ক্লাস খুজতে খুজতে যখন তার ক্লাসটা খুঁজে পায় আর ভিতরে ঢুকে, আবির যেন আকাশ দিয়ে পরে। হায় আল্লাহ এখন কি হবে আমার।
আবির দেখে সেই রিয়া মেয়েটা আর সাথে তার বন্ধবীটা, যার কাছে কুকুরটা ছিল। অবশ্য এখন আর কুকুরটা নেই। না জানি আবার কোথা থেকে এসে ধাওয়া দেয়। আল্লাহ এদের থেকে আমায় রক্ষা করো।
সানজিদাঃ দোস্ত ওই দেখ, তুই যাকে মেরেছিলি সেতো এই ক্লাসেই মানে আমাদের সাথে।
রিয়াঃ হুম ভালোই হইছে। ওর কপালে আরো মার আছে মনে হয়।
সানজিদাঃ তুই এমন কেন, দেখ ছেলেটা কিন্তু দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম আছে শুধু ড্রেসিংটা একটু।
রিয়াঃ আস্তো ফকিন্নি একটা। আর কচু হ্যান্ডসাম হুমহ।
সানজিদাঃ ধুহ তুইও নাহ একটা পেরা।
আবির আস্তে করে সবার সামনের বেঞ্চে বসলো।একটুপরেই স্যার আসলেন।
স্যারঃ সবাইকে গুড মর্নিং। সবাই কেমন আছো?
সবাইঃ ভালো স্যার।
স্যারঃ তোমাদের মাঝে আবির কে??
আবিরঃ জ্বি স্যার আমি। (হাত তুলে)
স্যারঃ ওহ গ্রেট। এদিকে আসো।
আবিরের হাত পা রীতিমতো কাপছে। এতো গুলো শিক্ষার্থীর সামনে দাঁড়াবে ভাবতেই শরীর অসর হয়ে আসছে। তাও নিজেকে সংযত করে স্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আবির।
স্যারঃ আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা এই হলো আমাদের আবির। খুবই মেধাবী একজন ছেলে কিন্তু। আমদের ভারসিটির পরীক্ষায় সে একাই প্রথম হয়েছে। সবাই তার জন্য একটা আস্তে করে তালি দেওতো।
সবাই বিষ্ময়ের চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে হাত তালি দিচ্ছে।
স্যারঃ ওকে ওকে থামো এবার।আবির, তোমার মতো এতো ভালো একজন মেধাবী ছাত্র পেয়ে আমরা খুবই খুশি। তোমার কোন সমস্যা হলে আমাদের জানাবে।
আবিরঃ ধন্যবাদ স্যার।
স্যারঃ তুমি এখন আসতে পারো।
আবির তার আসনে গিয়ে বসে পরে। এরপর আস্তে আস্তে স্যার সবার সাথে পরিচিত হন। সবাই সবার পরিচয় বলে। কে কোথা থেকে এসেছে। কিন্তু সবকিছুর শেষে আমাদের আবিরই হিরো ছিলো। তার গুরুত্বটাই সবার কাছে বেশি ছিলো।
ক্লাস শেষে সবাই আবিরের বন্ধু হওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। আবিরতো পুরো অবাক। একটু আগে যারা তার উপর হাসছিলো এখন তারা ওর বন্ধু হওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে। অবশ্য আবিরের একটু লজ্জা লাগছে। কারণ বন্ধুর চেয়ে বান্ধবীর সংখ্যাই বেশি।
সানজিদাঃ দেখসিস রিয়া, বলছিলাম নাহ ছেলেটার মধ্যে একটা ব্যপার আছে।
এদিকে রিয়া জ্বলে পুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ সেও কিন্তু সেকেন্ড হয়েছে। অথচ তাকে কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না। স্যার বলেছিলো সবাইকে যে রিয়া সেকেন্ড হয়েছে তাও সবাই আবিরকে নিয়েই ব্যস্ত।
আসলে আমাদের আবিরটা গরিব হলেও দেখতে সে অনেক হ্যান্ডসাম আর সুন্দর। যেকোনো মেয়েই তার প্রেমে পরতে বাধ্য। সুঠান দেহ,লম্বা, চুলগুলো মাঝারি আর সিল্কি বটে তবে গুছানো না। মুখের গঠনটাই বেশ। সবার মন কারে।
সানজিদাঃ দোস্ত, সবাই ওর সাথে বন্ধুত্ব করছে চলনা আমরাও করি।
রিয়াঃ তোর ইচ্ছা থাকলে তুই কর। আমি এসব ফকিন্নিদের সাথে বন্ধুত্বে নাই। আমার ক্লাস আলাদা।
সানজিদাঃ তুই না করলে নাই। আমি যাই।
আবিরের কাছে সানজিদা গেলো।
সানজিদাঃ হায় আমি সানজিদা। বন্ধু হওয়ার জায়গাটা কি ফাকা আছে??(মজা করে)
আবিরঃ(কিঞ্চিৎ হেসে) জ্বি আছে।
সানজিদাঃ আমাকে তুমিই করেই বলো। একই ব্যাচমেটতো আমরা।
আবিরঃ আচ্ছা।
সানজিদাঃ তুমি যেহেতু এতো ভালো স্টুডেন্ট তাই আমাকে কিন্তু এসাইনমেন্টে সাহায্য করতে হবে।
আবিরঃ আচ্ছা করবো।
(আবির মনে মনে, সবাই আসলো কিন্তু পরীটাই আসলো নাহ। এতো দেমাগ কেন তার।)
সানজিদাঃ তাহলে আজ যাই পরে কথা হবে।
আবিরঃ আচ্ছা।
আবিরও সবাইকে বিদায় দিয়ে চাচার বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
রিয়াঃ কিরে কি বল্লো তাদের হিরো নাম্বার ওয়ান?
সানজিদাঃ ছেলেটা অনেক ভদ্র আর ভালো আছেরে।
রিয়াঃ হুমহ ছোটলোকরা এমনই হয় বুঝলি। বাইরে একরকম ভিতরে অন্যরকম। তোর হিরোকে জিরো বানাবো আমি দেখিস। নেক্সট এক্সামে ও আর ফার্স্ট পজিশনে থাকছে না।
সানজিদাঃ তাহলে ওর যায়গায় কে হবে??
রিয়াঃ কেন রিয়া চৌধুরী।
সানজিদাঃ ওকে লেটস সি।
রিয়াঃ ডান।
চাচার বাসায়….
বিকেল ৪টা,
মায়াঃ কিগো ভাইয়া কেমন গেলো আজকে তোমার প্রথম ক্লাস??
আবিরঃ হুম অনেক ভালো রে। তোর পড়াশোনা কেমন চলে??আজ রাতে পড়তে আসিস কিন্তু আমার কাছে।
মায়াঃ আচ্ছা। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি।
আবিরঃ আচ্ছা মায়া তুই এতো কিছু করিস কেন আমার জন্য??
মায়াঃ তুমি যে কিউটু তাই। (হাসতে হাসতে চলে গেলো)
আবির মায়ার কথা কিছুই বুঝলো নাহ। তাই ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বের হতেই,
মায়াঃ ভাইয়া খেতে আস…
আবিরঃ এই এই সর সর বাইরে যা। আমার গায়ে জামা নাই।
আবির তারাতাড়ি জামা পরছে। ধুহ ঢুকেও না এখন জামাটা। মায়া অন্যদিকে তাকিয়ে বলছে,
মায়াঃ জামাটা ভিতরে বসে পরে বের হওয়া যায় না বুঝি।
আবিরঃ আরে আমি কি জানি নাকি তুই এভাবে এসে পরবি। হইছে আমার।
মায়া আবিরের দিকে তাকায়।
মায়াঃ খেতে আসো এখন। (মিটমিট হাসছে)
আবিরঃ কিরে তুই এভাবে হাসছিস কেন??
মায়াঃ হাসবো না, আয়নাটায় একবার নিজেকে দেখে নিয়েন। আমি যাই। (হাসতে হাসতে চলে গেলো)
আবিরঃ ওর যে মাঝে মাঝে কি হয়,
আবির আয়নার সামনে এসে নিজেই হাসিতে ভেঙে পরে। পরবেই বা না কেন, সে যে জামাটা উল্টা পরেছে।
আবিরঃ নাহ আজ দিনটাই মনে হয় খারাপ। প্রথম কুকুর , তারপর পরীর মার উহহ এখনো একটু ব্যাথা করছে আর এখন এই মায়া। কিন্তু পরীটা যা সুন্দর ছিলো না আহ মহান আল্লাহর সৃষ্টি যে এতো সুন্দর হয় আগে বুঝতেই পারি নি।
আবির এসব ভাবতে ভাবতে জামাটা ঠিক করে খেতে যায়।
চাচিঃ এই যে মহারাজ এসেছেন বসেন বসেন। আপনার জন্যই আমরা চাকরানীরা বসে আছি।আসেন আসেন এখন খেয়ে আমাদের উদ্ধার করেন।
মায়াঃ মা এসব কি??এমন ভাবে কথা বলছো কেন??
চাচিঃ হুহ তুইও দেখি তোর বাপের মতো। সবাই খালি এখানে আসে ফ্রী খাইতে থাকতে টাকাতো গাছে ধরে।(আস্তে আস্তে বলল)
কিন্তু চাচির কথাটা আবিরের কান ভালো ভাবেই শুনলো। প্রতিদিনই এভাবে চাচি আবিরকে খোটা দেয়। আবিরও নিরুপায় হয়ে মন খারাপ করে খেয়ে চলে যায়।
আবির রুমে জানালার বাইরে তাকিয়ে বসে আছে। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো কাধে।
আবিরঃ আরে মায়া তুই??
মায়াঃ মায়ের কথায় মন খারাপ করেছো বুঝি??
আবিরঃ আরে না চাচিতো আমার মায়ের মতো। উনার কথায় কি মন খারাপ করতে হয়।
মায়া আবিরের চোখটা হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলল,
মায়াঃ বেশ বুঝেছি যে তুমি মন খারাপ করোনি। এই যে চোখের পানি। জিজ্ঞেস করলে বলবে চোখে ময়লা গিয়েছিল তাইনা??
আবির মায়ার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
আবিরঃ বারে মায়া, তুইতো আসলেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস রে।
মায়াঃ তাই নাকি কি বলো আমিতো টেরই পাইনি হা হা হা।
আবিরঃ দুষ্ট মেয়ে হাহা।
মায়াঃ আচ্ছা ভাইয়া আজকে ভারসিটিতে কি কি করলা বলো না।
আবিরঃ তুই শুনে কি করবি??
মায়াঃ আরে বলো না একটু শুনি প্লিজ।
আবিরঃ আচ্ছা বাবা বলছি বলছি।
আবির এরপর মায়াকে সব খুলে বলল। মায়া সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
আবিরঃ কিরে এভাবে হাসছিস কেন??
মায়াঃ কুকুর কে কেউ এভাবে ভয় পায়!! হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আবির মায়ার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে।
মায়াঃ আচ্ছা বাবা আর হাসবো না। এভাবে তাকিও না কিউটু। হা হা।
আবিরঃ এর জন্যই তোকে বলতে চাইনি। আর এই কিউটু কিউটু কিরে??
মায়াঃ তুমি বুঝবা না। তোমাকে ভালোবেসে কিউটু বলি হি হি। মায়ার হাসিটা অনেক সুন্দর।
আবিরঃ হইছে হইছে যাতো এখন। রাতে পড়তে আসিস। আর ২ মাস বাকি এসএসসি পরীক্ষার।
মায়াঃ আচ্ছা আচ্ছা। বলেই একটু চলে গিয়েই আবার ফিরে আসে।
মায়াঃ ঘেউ ঘেউ ঘেউ…
আবিরঃ এই এই কুত্তা আসলো কোথা থেকে।
আবির দেখে মায়া প্রচন্ডভাবে হাসছে দরজায় দাঁড়িয়ে।
আবিরঃ মায়া…..জোরে ডাক দিলো।
মায়া একদৌড়ে চলে গেলো। মায়া চলে যাওয়ার পর আবিরও হাসছে। কি দুষ্ট মেয়েরে বাবা। মাকে একটা ফোন দেওয়া যাক।
আবিরঃ হ্যালো মা, কেমন আছো??
মাঃ আছি বাবা ভালো। তোর আজকে কেমন গেলো বাবা??
আবিরঃ অনেক ভালো মা। তোমার শরীর ভালো আছেতো?তোমার কথা খুব মনে পরে। (অসহায় কণ্ঠে)
মাঃ শরীর ভালো আছে রে। আর আমারও তোর কথা অনেক মনে পরে। তুই ছাড়া আমার কেউ আছে বল।
আবিরঃ মা কয়েকটা টিউশনি করবো। এভাবে চাচির উপর বসে আর কত দিন খাবো।
মাঃ চাচি কিছু বলছে তাই না??
আবিরঃ না মা উনি অনেক ভালো কিছু বলে নায়।(মিথ্যা বলল)
মাঃ সবই বুঝি বাবা।তুই যা ভালো মনে করিস তাই করিস।
আবিরঃ আচ্ছা মা তাহলে এখন রাখি একটু ঘুমাবো। পরে কথা হবে নে।
মাঃ আচ্ছা।
আবির এরপর ঘুমিয়ে পরে। হঠাৎ আবির ঘুম থেকে….
চলবে…?