#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-৫৯
রাত গভীর হতে শুরু করেছে। অন্ধকার এসে ভর করেছে ধরণীতলে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে, কাছেই কোনও জঙ্গল হতে। শিহরণ হাঁটু ভাঁজ করে তার উপরে কনুই রেখে মাথায় সেই হাতটা ঠেকিয়ে রেখেছে। তার চোখের কোণা বেয়ে ঝরে পড়া অশ্রুবিন্দু শুকিয়ে গেছে। বিধ্বস্ত অবস্থায় সর্বস্ব খোয়ানো মুসাফিরের ন্যায় দ্বিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বসে আছে সে। ছোঁয়ার এহেন অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করতেও কালবিলম্ব করল না তার বেপরোয়া মন। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার।
রাত বেড়ে গেলেও শিহরণ বাসায় না ফেরাতে চিন্তিত হয়ে পড়েন সাবিহা সাবরিন। ছেলের পথ চেয়ে বসে ছিলেন অনেকক্ষণ। নিজের রুমে গিয়েও অস্থির হয়ে পায়চারি করলেন বেশ কিছুক্ষণ। তবুও শিহরণের দেখা পেলেন না। সন্তানের জন্য চিন্তা হলেও মনের মধ্যে জমে থাকা অভিমানের পাহাড়ের কারণে নিজে থেকে খবরও নিতে পারছেন না। এক সময় বহ্নিকে বললেন কল করে খবর নিতে বলেন। বহ্নি বারবার কল দিলেও শিহরণ ফোন রিসিভ না করায় অতলকে কল দিল। অতলের কাছ থেকে পুরো বিষয়টা জেনে বহ্নি ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। মাকে ছোঁয়ার এক্সিডেন্টের বিষয়টা জানিয়ে সে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল।
একজন নার্স যখন ছোঁয়ার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে এলো। অতল নার্সকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে জিনিসগুলো নিল। তারপর সেগুলো শিহরণকে দিল।
শিহরণ ছোঁয়ার জিনিসগুলো বুকের সাথে চেপে ধরে রাখল অনেকক্ষণ। পুরো হাসপাতাল জুড়ে নিস্তব্ধতা, কারও মুখে কোনো কথা নেই। সবাই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। শিহরণকে এভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে বহ্নির খুব কষ্ট হতে লাগল।
শিহরণের পাশে বসে বহ্নি বলল, ‘ভাইয়া, তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো হবে না। নিজেকে শক্ত করো। ছোঁয়া আপুর কিছুই হবে না। তুমি পাশে থাকলে উনি সুস্থ হয়ে যাবে। আমি বলছি তো তোমাকে।’
শিহরণ নিভু নিভু চোখে তাকাল বহ্নির দিকে। বহ্নি হুট করেই শিহরণকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। এভাবেই কেটে গেল অনেকক্ষণ। অহনা, হিয়া, ফাহমিদা বেগম, সাইফ, অতল, রাদিদ, সবাই নীরব দর্শকের মতো শিহরণকে ভেঙ্গে পড়তে দেখছিল। সবাই মনে মনে যেন একটা কথাই বলল, ‘ভাগ্যিস বহ্নি এসেছিল।’
রাদিদের মন এক অব্যক্ত ভালো লাগায় ছেয়ে গেল। বহ্নির মতো এমন একজন মানুষকে পাশে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। সে যেই ভূমিকাতেই থাকুক না কেন। এসব ভাবনার মাঝেই রাদিদের বুক চিরে এক হতাশার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
ওটি থেকে বেরিয়ে ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, তবে পেশেন্টের জ্ঞান ফেরেনি। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত পা কাটতে হয়নি। তবে পেশেন্ট আর হাঁটতে পারবে বলে মনে হয় না। একটা পা পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে।’
শিহরণ ডাক্তারের কথা শুনে আঁতকে উঠল। বহ্নি শিহরণকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘তেমন কিছুই হবে না, ভাইয়া। তুমি দেখে নিও।’
সবাই সমস্ত কাজ ফেলে হাসপাতালে বসে আছে। মায়া আর সাইফ দুজন মিলে সবাইকে চলে যেতে বলল। কিন্তু কেউ রাজী হলো না। অবশেষে শিহরণ সবাইকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিল। দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ‘আমি আছি আমার প্রিয়তার সাথে। সবাই এখানে থাকা ঠিক হবে না।’
বহ্নিকেও জোর করে পাঠিয়ে দিল সে। রাদিদ অহনা, হিয়া আর ফাহমিদা বেগমকে সাথে করে নিয়ে গেল। সাইফ, মায়াকে পৌঁছে দিতে গেল। যদিও সে বাসায় যাবে না বলে কাঠ হয়ে বসেছিল। অতল আর বহ্নি একসাথে গেল।
_____________________
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অতল হুট করেই বহ্নির হাত ধরে ফেলল। বহ্নি বলল, ‘কী শুরু করেছ? কেউ দেখে ফেলবে তো।’
অতল বহ্নির হাত আরও শক্ত করে ধরে নির্বিকার ভঙ্গিতে ম্লান কণ্ঠে বলল, ‘দেখলে দেখুক। আমার পরীর হাত আমি না ধরলে আর কে ধরবে?’
এতসব বিষণ্নতার মধ্যেও বহ্নি অতলের করা পাগলামির জন্য ক্ষণিকের জন্য ঠোঁট টিপে হাসল। হাসি চেপে রেখে বলল, ‘কেন? পরীর হাত তো অনেকেই ধরতে চাইতে পারে। তাই না?’
‘চাইলে কি সব পারা যায়, এঞ্জেল?’
হঠাৎ করেই বহ্নির মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল, ‘ঠিক বলছ। চাইলেই সব পারা যায় না। ছোঁয়া আপু আর ভাইয়ার জন্য খুব খারাপ লাগছে। এমন কেন হয়? সবকিছু ঠিক হয়েও হয় না। সবাই ভালো থাকতে চেয়েও ভালো থাকতে পারে না। আমি তো জানি ভাইয়া কেমন পাগলের মতো ভালোবাসে আপুকে। ছোঁয়া আপুর কিছু হয়ে গেলে ভাইয়া একদম শেষ হয়ে যাবে।’
অতল দৃঢ়তার সাথে বলল, ‘ছোঁয়ার কিছুই হবে না। একটু আগেই তো তুমি বলেছ, শিহরণকে। এখন নিজেই ভেঙ্গে পড়ছ!’
‘অন্যকে বোঝানো সহজ। কিন্তু নিজেকে বোঝানো অনেক কঠিন। ভয় হচ্ছে আমার। খুব ভয় হচ্ছে।’
রাদিদ যখন অহনা, হিয়া আর ফাহমিদা বেগমকে নিয়ে গাড়িতে উঠছিল ঠিক তখন চোরা চোখে একবার তাকাল অতল আর বহ্নির দিকে। বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল সে। তবুও সেটাকে পাত্তা দিল না। অবাধ্য দৃষ্টিকে সংযত করে নিল সে।
_____________________
সাব্বির আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইটের জন্য বেরিয়েছেন কেবল। এনাউন্সমেন্ট হবার পর পরই খবরটা পেলেন তিনি। এই বিজনেস ট্যুরটা তার জন্য যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার নিজের সন্তান। সন্তানকে এই অবস্থায় ফেলে রেখে তিনি বিজনেস ট্যুরে যেতে পারলেন না।
সাব্বির আহমেদ যখন হাসপাতালে পৌঁছালেন তখন রাত প্রায় বারোটা। শিহরণকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তিনি চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন শিহরণের কাছে। শিহরণ বাবাকে দেখে উঠে দাঁড়াল, শক্ত করে জড়িয়ে ধরল বাবাকে। ক্লান্ত গলায় বলল, ‘আব্বু, ছোঁয়ার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচব না।’
সাব্বির আহমেদ ছেলের পিঠে চাপড় মেরে বললেন,’আমার ছেলে তো এভাবে ভেঙ্গে পড়ার কথা নয়। আমার বউমার কিচ্ছু হবে না।’
বাবার মুখে উচ্চারিত ‘বউমা’ শব্দটা শুনে শিহরণ আবেগের বশে বাবাকে আবারও জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘সত্যি বলছ, আব্বু?’
সাব্বির আহমেদ প্রশস্ত হেসে বললেন, ‘একদম সত্যি বলছি।’
শিহরণ হঠাৎ মরিয়া হয়ে বলল, ‘আব্বু, ডাক্তার বলেছে ও আর হাঁটতে পারবে না।’
কথাটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না সাব্বির আহমেদ। তবুও নিজেকে সংযত করে নিলেন মুহূর্তেই। স্মিত হেসে বললেন, ‘ছোঁয়া যদি হাঁটতে না পারে তবে কী তার প্রতি তোমার ভালোবাসা কমে যাবে?’
শিহরণ আঁতকে উঠে বলল, ‘কীসব বলছ আব্বু?’
‘এইতো।’ সাব্বির আহমেদ এবার প্রশস্ত হেসে বললেন, ‘ভালোবাসার মানুষ যেমন তাকে তেমনভাবেই গ্রহণ করা উচিত। ও হাঁটতে না পারলেও তোমার ভালোবাসা একটুও কম হবে না। তবে এত চিন্তা কিসের?’
‘আব্বু, ছোঁয়া এটা সহ্য করতে পারবে না।’ মলিন গলায় বলল শিহরণ।
‘এইখানে কাজ না হলে স্পেশালিস্টকে দেখাব। তুমি এত ভেবো না, বাবা।’ একটু থেমে সাব্বির আহমেদ বললেন,’ছোঁয়া হাঁটতে পারুক আর না পারুক এই মেয়েটাই কিন্তু আমার পুত্রবধূ হবে। এই ক্ষেত্রে আমি তোমার আপত্তিও শুনব না।’
এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও শিহরণ হেসে ফেলল। সাব্বির আহমেদ বললেন, ‘এভাবেই সবসময় হাসতে থেকো, বাবা। এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার কাজের ব্যস্ততা সবকিছু এভাবে উল্টেপাল্টে দেবে তা তো ভাবনাতেই আসেনি। তবে আমি তোমার উপর খুব রাগ করেছি। এই মেয়েটির কথা জানাওনি কেন আমায়?’
শিহরণ মাথা নিচু করে ফেলল। সাব্বির আহমেদ গম্ভীর মুখ করে বললেন, ‘সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসো অথচ আমাকে জানাওনি। এই কারণে আমি খুবই রুষ্ট হয়েছি তোমার উপর। ছোটোবেলায় তো খুব করে বলেছিলে, এই মেয়েকে তোমার অন্য এক বন্ধু ভালোবাসে, তুমি নও। অথচ বন্ধুর নাম দিয়ে নিজের সমস্যার সমাধান চাইছিলে। এবারও না হয় ঠিক তেমনটাই করতে। এতে অন্তত বিষয়টা আমার জানা হয়ে যেত।’
শিহরণ কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,’তুমি তখন বুঝতে পেরেছিলে?’
‘তোমার বাবাও তো তোমার মাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। এটা ভুলে যাও কেন, শিহরণ।’
‘তোমার ফ্লাইটের কী হলো, আব্বু? আর এসব কীভাবেই বা জেনেছ, আব্বু?’ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জানতে চাইল শিহরণ।
‘ফ্লাইট ক্যানসেল করে দিয়েছি। আর যার কাছ থেকেই জানি না কেন, শুধু এটা জেনে রাখো, সে তোমার সবচাইতে বড়ো শুভাকাঙ্ক্ষী। তুমি তো আব্বুকে ভরসা করো না। কিন্তু যে বলেছে, সে ভাবে আমি একজন সুপারম্যান যে সব সমস্যার সমাধান নিমেষেই করে দিতে পারে।’ সাব্বির আহমেদ ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললেন।
বাবাকে সব কথা কে জানিয়েছে সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকল না শিহরণের। শিহরণ স্মিত হেসে বলল, ‘সত্যিই আব্বু, তুমি আমাদের জন্য সুপারম্যান।’
‘ঠিক আছে। এখন আর এসব লোক শুনানো কথা বলে আমাকে খুশি করতে হবে না। এখন চলো কিছু খাবে।’
‘আমার খিদে নেই, আব্বু।’
‘এখন কি আব্বুর সাথে মিথ্যে কথা বলবে?’
‘সত্যি বলছি তো। আমি এখন কিছু খেতে পারব না। ছোঁয়া ভালো নেই। আমি কী করে খাব, আব্বু?’
‘ছোঁয়ার জন্যই তো খেতে বলছি। সে কিন্তু ভীষণ রাগ করবে যখন জানতে পারবে তুমি সারাদিন ধরে কিছু খাওনি। আমার কিন্তু ভীষণ খিদে পেয়েছে। আমাকে কম্পানি দিতে অন্তত কিছু মুখে দিও।’
খাওয়ানোর জন্য বাবার ফন্দি দেখে মনে মনে আপ্লুত হলো শিহরণ। বলল, ‘ঠিক আছে। কম্পানি দেওয়া যাবে।’
______________
সাবিহা সাবরিনের চোখ থেকে যেন ঘুম চলে গেছে। মাথার উপরে ফ্যান চলছে। তিনি সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সাব্বির আহমেদ যখন রুমে ঢুকলেন তখন তাকে এত রাতে দেখে সাবিহা সাবরিন চমকে উঠলেন। বললেন, ‘তোমার না অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা? এখানে কীভাবে?’
সাব্বির আহমেদ গমগমে গলায় বললেন, ‘আমি চলে গেলে খুব খুশি হতে নিশ্চয়ই?’
সাবিহা সাবরিন ভীষণ অবাক হয়ে বললেন, ‘এসব কী বলছ তুমি? আর এভাবে কেনই বা কথা বলছ?’
সাব্বির আহমেদ স্ত্রীর প্রশ্ন সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে বললেন, ‘তোমার কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি, সাবিহা।’
‘আমি কী করেছি?’ অসহায় গলায় প্রশ্ন করলেন, সাবহা সাবরিন।
‘বাহ্! খুব সুন্দর প্রশ্ন।’ তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন সাব্বির আহমেদ।
‘তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন, সাব্বির?’ সাবিহা সাবরিন ভীষণ অবাক হয়ে জানতে চাইলেন।
‘শিহরণ কোনো বাচ্চা ছেলে নয়, সাবিহা। তুমি ওর উপর জোর করে যা খুশি তাই করাতে পারো না। ছেলে বাধ্য বলেই কি তার উপর অন্যায় করতে হবে?’
‘এখন সব দোষ তবে আমার।’
‘নিজের বোনের মেয়েকে এতোই পছন্দ হলে তুমি ওই মেয়েকে নিজের কাছে এনে রাখতে পারো। তবে আমার ছেলের বউ হিসেবে নয়। আমার ছেলে যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তার বিয়ে হবে।’
‘আমি রাফিয়াকে কথা দিয়েছি, সাব্বির।’
‘ওটা ছিল তোমার জীবনে করা সেরা বোকামি। তোমার বোনকে দেওয়া কথা রাখার জন্য আমি আমার ছেলের খুশি মাটি করতে পারব না।’ কাটকাট উত্তর দিলেন সাব্বির আহমেদ।
‘তুমি এটা করতে পারো না, সাব্বির।’
‘আমার ছেলের খুশির জন্য আমি এটা অবশ্যই করব।’ সাবিহা সাবরিনের দু’হাত ঝাঁকিয়ে সাব্বির আহমেদ বললেন, ‘একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখেছ কী অবস্থা হয়েছে তার? মাত্র একটা দিনে ওর কী ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে দেখেছে তুমি? তুমি তোমার অভিমান নিয়ে থাকো। আমার যা করার আমি তাই করব।’
সাবিহা সাবরিন বিছানার উপর বসে পড়লেন। সাব্বির আহমেদ আবারও বললেন, ‘তুমি ওই মেয়েটাকে বলেছ মিডল ক্লাস! সিরিয়াসলি, সাবিহা? তুমি কখন থেকে ক্লাস মেইনটেইন করছ? আমার তো তোমার এই অসাধারণ শ্রেণীবিন্যাসের ব্যাপারে কোনো ধারণা ছিল না। এমন আর কি কি আছে যা আমে এখনও জানি না? আমাকে জানাও প্লিজ। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।’
‘সাব্বির!’ সাবিহা সাবরিন চিৎকার করে উঠলেন। বিষণ্ন কণ্ঠে বললেন, ‘আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছিলাম। আমার যে ছেলেটা কখনও আবাধ্য হতো না। আজ সেই ছেলেটাকে এতোটা অবাধ্য হতে দেখে আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ওই মেয়ের উপরে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল। তাই রাগের বশে বলে ফেলেছিলাম।’
‘সাবিহা, তুমি কি জানো এই মেয়েটাকে শিহরণ সেই ছোটোবেলা থেকে ভালোবাসো? মাঝখানে কতো ঝামেলা গেল, তবুও সে এই মেয়েটাকে ভুলেনি। ওদের মধ্যেকার এত দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও ওদের ভালোবাসা নিঃশেষ হয়ে যায়নি।’
সাবিহা সাবরিন অসহায় বোধ করলেন। এসবের কিছুই তিনি জানেন না। জানলে হয়তো বোনকে কথা দিতেন না। তাছাড়া মান্নাতকেও তিনি খুবই পছন্দ করেন। এখন তিনি কী করবেন তিনি কোনোভাবেই ভেবে পাচ্ছেন না!
____________________
বি.দ্র. এই পর্বটা ডেডিকেট করলাম রুপুকে। আজকে তার জন্মদিন। হ্যাপি বার্থ ডে রুপু❤।
#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-৬০
রাত বাড়ছে। নিশাচর পাখিদের ডাক ভেসে আসছে বাতাসে ভর করে। থেকে থেকে ওই ডাক ভয়ংকর হয়ে উঠছে। ঠিক যেন অতিপ্রাকৃতিক কোনো কিছুর উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। হঠাৎ একরাশ শীতল দমকা বাতাস এসে শীতলতার স্পর্শ দিয়ে গেল শিহরণের শরীরে। শিহরণ একটা জানালা খোলা রেখেছে। তার উদাস দৃষ্টি জানালার বাইরে ঘন জঙ্গলের দিকে নিবদ্ধ। ভয়ংকর এক অন্ধকার গ্রাস করে ফেলেছে সবুজের সমারোহে ঘেরা জঙ্গলটিকে। এমনতর গ্রাসের কথা ভেবে হু হু করে কেঁপে উঠল শিহরণের মর্মদেশ। খুব অদ্ভুত সব মিল খুঁজে বেড়াচ্ছে শিহরণ! তার মাথার ঝাঁকড়া চুলগুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়ে আছে অবহেলায়। সবুজাভ চোখ জোড়া নিষ্প্রভ, নিষ্প্রাণ। যেন বহুদিন যাবত সঞ্চিবনী সঞ্চার হয়নি ও চোখে। মশার দল হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছে জানালার ফাঁক গলে। শিহরণ দ্রুত জানালা বন্ধ করে দিল। তারপর ছোঁয়ার শিয়রের পাশে বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ছোঁয়ার দিকে। এতক্ষণ পরে সে ছোঁয়ার মুখটা খেয়াল করল। ছোঁয়ার মুখের একপাশে বেশ ক্ষত হয়েছে, কালচে দাগ পড়েছে চেহারার বাম পাশের অংশটাতে। চোখের নিচে কালি দৃশ্যমান। শিহরণ বিড়বিড় করে বলল , ‘কিছু কিছু অভিমানের মাশুল বড়ো বেশি ভয়ংকর। যে অভিমান দু’টো মানুষের হৃদয়ে সমানভাবে প্রভাব ফেলে সে অভিমানের ঝড়ো হাওয়া কেন আসে তাদের জীবনে! ভালোবাসার গভীরতা প্রমাণে না-কি ঢুনকো বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে?’
সারারাত নির্ঘুম কেটেছে শিহরণের। ছোঁয়ার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মুখের সাথে লাগিয়ে রেখেছে, যেন হাতটা ছেড়ে দিলেই সে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে। ভোরের দিকে ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরল। চোখ খুলেই দেখতে পেল শিহরণকে। তার পাশে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে মাথা হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। তার হাতটা এখনও শিহরণের হাতের মুঠোয়।
মাথার ঝাঁকড়া চুলগুলো উস্কখুস্ক আর এলোমেলো হয়ে আছে। সেই চুলগুলো দেখে ছোঁয়ার ইচ্ছে হলো এখনি ঠিক করে দিতে অবহেলায় পড়ে থাকা চুলগুলোকে। হালকা সবুজাভ চোখ জোড়া যেন তার সবুজাভ হারিয়ে ম্লান হয়ে আছে, সেখানে শুধুই হাহাকার দেখতে পেল ছোঁয়া। ছোঁয়া হাতটা নাড়াতেই শিহরণ চোখ খুলে তাকাল। শিহরণের মুখে তৎক্ষণাৎ হাসি ফুটে উঠল। ঠিক যেন বহু প্রতীক্ষার পর এক পশলা বৃষ্টির পরশ পেয়ে স্নিগ্ধ, সতেজ হয়ে উঠে প্রকৃতি। শিহরণ ছোঁয়ার কপাল আর মুখে তার ভালোবাসার পরশে সিক্ত করে দিল, বিশেষ করে সদ্য ক্ষত হওয়া মুখের সেই অংশটাতে। ছোঁয়া ম্যাড়মেড়ে গলায় বলল, ‘কী শুরু করেছ? আমার মুখটা কি খেয়ে ফেলার অভিসন্ধি আছে না-কি? আর কী অবস্থা করেছ নিজের? এরকম ভূতগ্রস্তের মতো দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?’
নিজের এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়ও তার কথা ভাবাতে শিহরণ ভারী অবাক হলো। অভিমানে ভরা কণ্ঠে বলল, ‘আমার কথা ভাবতে হবে না তোমার। নিজের কথা ভাবো। একটাবারও ভাবলে না তোমাকে ছাড়া আমার কী হবে?’
‘এখনও কী আমার সাথে রাগ করেই যাবে?’ শিহরণের দিকে কাতর নয়নে তাকিয়ে ব্যাকুল কণ্ঠে বলল ছোঁয়া।
‘হুম।’ সংক্ষেপে বলল শিহরণ। পরক্ষণেই ব্যথাতুর কণ্ঠে বলল, ‘এখন কেমন লাগছে তোমার?’
‘আমি ঠিক আছি।’ কথাটা বলেই ছোঁয়া উঠার চেষ্টা করল। কিন্তু কোনোভাবেই পা নড়াতে সক্ষম হলো না। ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিল শিহরণ। কাতর স্বরে সে বলল, ‘আহা! তুমি উঠছ কেন? ডাক্তার বলেছে
কয়েক মাস অবধি তোমাকে ফুল বেড রেস্টে থাকতে হবে।’
ছোঁয়া আতঙ্কিত হয়ে বলল, ‘আমি পা নাড়াতে পারছি না কেন শিহরণ? আমার পায়ে কী হয়েছে?’
শিহরণ আঁতকে উঠল। তার বুকের ভেতর তীব্র ব্যথা হতে শুরু করল। চোখ বন্ধ করে একটা গভীর শ্বাস নিয়ে সে বলল, ‘কিছুই হয়নি ছোঁয়া। এক্সিডেন্টে পায়ে সামান্য ফ্যাকচার হয়েছে। ট্রিটমেন্ট করলে পা আবারও ঠিক হয়ে যাবে।’
ছোঁয়া করুণ চোখে তাকাল শিহরণের দিকে। চোখ দিয়ে উষ্ণ নোনা জল বেরিয়ে পড়ছে। ছোঁয়ার চোখ উপচে পড়া হৃদয়ের রক্তক্ষরণের চিহ্নস্বরূপ উষ্ণ নোনাজলের উপরে শিহরণ তার শুষ্ক, তৃষ্ণার্ত অধরদ্বয়ের পরশ দিয়ে সেই রক্তক্ষরণ প্রশমিত করার চেষ্টায় লিপ্ত হলো। ছোঁয়া বিদগ্ধ হৃদয়ের মৃদু প্রকাশমান গভীরতর কষ্ট বুকে চেপে রেখে ম্লান কণ্ঠে বলল, ‘আমি আর হাঁটতে পারব না। তাই না, শিহরণ?’
এই প্রশ্নটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না শিহরণ। তার বুকের ভেতর এক অজানা ব্যথা থেকে থেকে আছড়ে পড়ছে সমুদ্র তীরে উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ার মতো করেই। সে ছোঁয়ার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, ‘তুমি অবশ্যই হাঁটতে পারবে। আমি আছি তো তোমার সাথে।’
‘মিথ্যে সান্ত্বনা চাই না আমার।’ অভিমানী গলায় বলল ছোঁয়া।
‘আমি কি কখনও তোমাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছি?’
ছোঁয়া ছলছল চোখে তাকাল শিহরণের দিকে। কিছুই বলল না। শুধু তাকিয়েই থাকল। দূর থেকে আজানের সুমধুর ধ্বনিতে মুখরিত হতে থাকল চারপাশের প্রকৃতি। পাখির কিচির মিচির আওয়াজে স্নিগ্ধ সকালের আমেজ বোঝা গেল। দু’টো মানুষ কোনো প্রকার বাক্য ব্যয় না করেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকল নিঃশব্দে, নীরবে দু’টো হৃদয়ের অব্যক্ত কথন শুধুমাত্র দৃষ্টির মাধ্যমে আদান-প্রদান হচ্ছে। এই দৃষ্টির বিনিময় যেন বহু প্রতীক্ষীত ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষারত দু’টো হৃদয়ের তরে। যেখানে বিরাজ করছে ব্যক্ত, অব্যক্ত ভালোবাসার উপাখ্যান। ব্যথা আর আর্তানাদে ভরা এই সঙ্কটময় সময়ের সান্ত্বনা ভরা অব্যক্ত আশ্বাস।
________________
বহ্নি হুট করে এসেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ আব্বু। তুমি ফিরে না এলে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যেত। ভাইয়াকে কিছুতেই সামলানো যেত না।’
‘বাবকে কি কেউ ধন্যবাদ দেয়, এঞ্জেল?’
বহ্নি মুচকি হেসে বলল, ‘আব্বুকে ধন্যবাদ দিইনি তো। আমাদের সুপারম্যানকে ধন্যবাদ দিয়েছি।’
‘আমার এঞ্জেল তাহলে কথা এড়াতে শিখে গেছে?’
‘আব্বু!’ বহ্নি মুখ গোমড়া করে বলল, ‘তুমি আমার সত্যি কথাগুলো বিশ্বাস করো না কেন?’
‘এত বড়ো অপবাদ!’ সাব্বির আহমেদ অবাক হবার ভান করে বললেন, ‘আমার মামুণিটার কথা বিশ্বাস না করলে কি ফিরে আসতাম?’
‘হু, তাও ঠিক।’ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, ‘এরপর কী হবে আব্বু? কিছু ভেবেছ?’
‘আমার বউমাকে আমাদের ঘরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া তো আর কিছু আপাতত ভাবতে পারছি না।’
বহ্নি উৎফুল্ল হয়ে বলল, ‘ইউ আর দ্যা বেস্ট ফাদার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।’
সাব্বির আহমেদ হেসে বহ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘অ্যান্ড ইউ আর দ্যা বেস্ট সিস্টার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।’
বহ্নি এবার দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘মাই ব্রাদার অলসো দ্যা বেস্ট ব্রাদার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।’
সাবিহা সাবরিন বাবা-মেয়ের কথা শুনে মুখটা মলিন করে ফেললেন। মনে মনে ভাবলেন, ‘বাহ্! সবাই কী সুন্দর করে আমাকে ভুলে গেল। সত্যিই দারুণ। বাইরের একটা মেয়ের জন্য আমাকে ভুলে গেল সবাই! সবকিছু ওই মেয়েটার জন্য। যে মানুষটা আমার জন্য পাগল সেই মানুষটাও আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলছে না। আমি ওই মেয়েকে কখনোই মেনে নিতে পারব না।’
কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে সাবিহা সাবরিন দরজার আড়াল থেকে সরে দাঁড়ালেন। যদি আর কিছুক্ষণ থাকতেন তবে শুনতে পেতেন সাব্বির আহমেদের বলা কথাগুলো।
সাব্বির আহমেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘তোমার আম্মুও বেস্ট আম্মু এটা ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু।’
বহ্নি হেসে বলল,’ভুলে যাওয়ার মতো কোনো অপশন নেই আব্বু।’
____________
সাব্বির আহমেদ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলেন। শিহরণ বাসায় ফিরলে তিনি জরুরি ভিত্তিতে বলেন, ‘দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসো। তোমার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।’
শিরহণ এতটাই ক্লান্ত ছিল যে কোনো কথা না বলেই শুধুমাত্র মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল ফ্রেশ হতে। সাব্বির আহমেদ ছেলের এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পেলেন। তাই অবশেষে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন। নয়তো কিছুদিন অপেক্ষা করাই যেত।
সাবিহা সাবরিন বললেন,’কী ভাবছ সাব্বির?’
সাব্বির আহমেদ মাথা ঝাঁকালেন। বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করো। সবকিছুই বলব।’
শিহরণ ফ্রেশ হয়ে এসে বসল বাবার পাশে। সাব্বির আহমেদ কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন, ‘ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়েছে। ছোঁয়ার পায়ের ফ্র্যাকচারটা বেশি। হাঁটতে পারলেও তাতে সময় লাগবে। কোনও স্পেশালিস্টকে দেখাতে হবে।’
শিহরণ মাথা নিচু করে মলিন কণ্ঠে বলল, ‘আমি জানি আব্বু।’
‘এই অবস্থায় কি তুমি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী আছ? মানে ছোঁয়াকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি নেই তো?’
সাবিহা সাবরিন চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘তুমি কীসব বলছ? তোমার মাথা ঠিক আছে? যে মেয়েটা হাঁটতে পারবে কি না নিশ্চিত নেই সেই মেয়েটাকে তুমি আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছ?’
সাব্বির আহমেদ একটা হাত তুলে স্ত্রীকে থামার ইশারা করে বললেন, ‘আমি যা করছি আমাদের ছেলের ভালোর জন্যই করছি। একটু আস্থা রাখো আমার উপর।’
শিহরণ এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে। কোনো কথাই যেন বেরুতে চাইছে না। বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও সে ছলছল চোখে তাকিয়েই থাকল।
সাব্বির আহমেদ পুনরায় বললেন,’ছোঁয়া হয়তো কখনোই হাঁটতে পারবে না। এই সত্য মেনে নিয়েই তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবার বলো, ছোঁয়াকে বিয়ে করতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?’
‘আপত্তি!’ ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল শিহরণ। বাবাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। ধরে আসা গলায় সে বলল, ‘ও যদি কোনোদিন হাঁটতে না পারে তবুও আমার কোনো আপত্তি নেই আব্বু। আমি তো ওর বাহ্যিক সৌন্দর্যের মোহে পড়িনি। আমি ব্যক্তি মানুষটাকে ভালোবেসেছি।’
‘তাহলে এই কথায় রইল।’ সাব্বির আহমেদ বললেন, ‘আমি বাকি কাজটুকু শীঘ্রই শেষ করে ফেলতে চাই।’
সাবিহা সাবরিন বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলেন। অপরদিকে শিহরণ মন্ত্রমুগ্ধের মতন করে বাবার গমনপথের দিকে তাকিয়ে থাকল। বহ্নি শিহরণের গা ঘেঁষে বসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, ‘আমার ভাইটা কি খুশি হতে ভুলে গেছে?’
শিহরণ বহ্নির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। বলল, ‘মেন্টাল শক ট্রিটমেন্ট মানুষের বোধশক্তি ক্ষণিকের জন্য লোপ পেয়ে যায়। আমারও এমন অবস্থা হয়েছে আরকি।’
‘তাহলে তো বলতেই হচ্ছে আব্বু বেশ ভালো শক ট্রিটমেন্ট দিতে পারে।’ বহ্নি বেশ ভাব নিয়ে বলল।
‘স্বীকার না করার আর কোনো উপায় তো থাকল না, বার্বি ডল।’
সাবিহা সাবরিন যেন এতক্ষণ পরে সংবিৎ ফিরে পেলেন। ছেলে, মেয়ে, স্বামী কেউই তার কোনো প্রকার তোয়াক্কা করছে না। এই বিষয়টা তিনি মানতেই পারছেন না। হঠাৎ করেই বহ্নির উপরে তার খুব রাগ হলো। এই মেয়েটা বড্ড বেশি বেয়াড়া। কথা শুনতে চায় না। এই সবকিছু এই মেয়ের জন্যই হয়েছে, তিনি এই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। তিনি নিজে নিজেই স্বগোতোক্তি করে বললেন, ‘তবে কি আমি মেয়েটার লাগাম টানার ক্ষেত্রে ভুল করে ফেললাম?’
এসবকিছু ছাপিয়ে ছোঁয়ার উপরে গিয়ে পড়ল তার সমস্ত ক্রোধ। মাত্র দুদিনের পরিচয়ে এই মেয়েটা তার আপনজনদের জাদুমন্ত্র বলে তার বিপক্ষে নিয়ে গেছে। তিনি কোনোভাবেই এই মেয়েটাকে মেনে নিতে পারবেন না। কোনোভাবেই না! মনে মনে তিনি এক শক্ত প্রতিজ্ঞা করে বসলেন।
_________________