#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৩৮.
বারোটা বাজতেই কিছুর শব্দ শুনে অহনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে কিছুই নেই। চোখ কচলে উঠে পড়ে। ঘরের বারান্দায় কাউকে দেখা যাচ্ছে। অহনা বিচলিত পায়ে হেঁটে যায় সেখানে। দেখল মাহতিম দাঁড়িয়ে আছে। অহনা তার পেছনে গিয়ে সোজাসুজি দাঁড়ায়। দু হাত মাহতিমের বুকের সাথে নিয়ে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে। উচ্চারণ করল,’ আমার মানসিক প্রশান্তি।’
অহনা মাহতিমের পিঠে চুমু খায়। চোখ বুঁজে হাজার প্রশান্তি নিয়ে শংকিত হয়ে আলিঙ্গন করে। মাহতিম আলতো করে তার হাত ছাড়িয়ে নেয়। মৃদু কন্ঠে বলল,’ এত মায়া বাড়াচ্ছ কেন?’
অহনা তার পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়। রাতের আকাশটা ভীষণ সুন্দর মনে হচ্ছে। তার প্রকৃত সৌন্দর্য হচ্ছে মাহতিম। মাহতিম পাশে থাকার কারণেই রাতটাকে এত সুন্দর লাগছে।
মাহতিম অহনার হাতে হাত রেখে বলল,’ কোথাও যাব তোমাকে নিয়ে।’
অহনা অমত করল না, বলল,’ তোমার সাথে মৃত্যুপুরীতে যেতেও রাজি আছি আমি।’
‘ এত বিশ্বাস করো?’
‘ আমার কাছে বিশ্বাসটা ছাড়া আর কি অবশিষ্ট আছে? এই বিশ্বাসকে নিয়েইতো এখনো দিব্যি আছি।’
মাহতিম অহনার চোখে চোখ রেখে দুহাত শক্ত করে ধরে। মুহুর্তেই আকাশ পথে পাড়ি জমালো।
অহনা দেখতে পায় বিচিত্র সব পরিবেশ। উপরে থাকার দরুন সবকিছু কেমন কালো মনে হচ্ছে। আজ একটু বেশী অন্ধকার। পূর্ণিমা নয়, অমাবস্যা বলা যায়। অহনা মাহতিমের পোশাক খামচে ধরে, বলল,’ কি অদ্ভুত দেখো, আজকের রাতটা কতটা অন্ধকার। যদি পূর্ণিমা হতো তাহলে কতইনা ভালো হতো।’
‘ তুমি কি পূর্ণিমা চাও?’
‘, হুম।’
‘ তবে তাই হোক। একটু পরেই পূর্ণিমা উপভোগ করবে তুমি।’
অহনার চুলগুলো বাতাসের দক্ষতায় উড়ছে। মাহতিম বিভোর হয়ে চেয়ে থাকে। একটা মানুষকে ঠিক কতটা সুন্দর লাগে তা তার জানা নেই। অথচ অহনার রুপ আকাশচুম্বী। তারা দিকে তাকিয়ে থাকলেও আলাদা প্রশান্তি পাওয়া যায়। মাহতিম আলতো করে তার চুলগুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। বাতাসের দাপটে চুলগুলোও মুক্ত হয়ে উড়তে চায়।
অহনা বলল,’ এই সময়টা কত সুন্দর। আমার জীবনে যেন এমন সময় বার বার আসে, হাজারবার আসে।’
‘ আসবে সবসময়।’
‘ আমি চাই। পাশের লোকটাও তোমাকেই চাই। যাকে নিয়ে এত আবেগ, এত অনুভূতি তাকেই চাই চিরসুখী সেই সময়ে। তুমি থাকবেতো সবসময় আমার পাশে?’
ওরা এসে পড়ে একটি গুহার পাশে। নিচে নামতেই অহনার আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই। চারিদিকে বাহারী ফুলের সমারোহ প্রকৃতিকে আরো সৌন্দর্য দান করেছে। অহনা এক ফুল থেকে অন্য ফুলকে ছুঁয়ে যেতে ব্যস্ত। এই দিকটায় পূর্ণিমার প্রখর আলো। সবটা অন্ধকার, শুধু কিছুটা জায়গাজুরেই পূর্ণিমা। পাশেই কয়েকটা খরগোশকে দেখতে পেল। তারা আপনমনে খেলছে। এর পাশেই হরিণ। অহনা অবাক হয়ে যায় এসব প্রাণী দেখে। কিছুটা দূরে আরো কিছু প্রাণী দেখতে পায়। অহনার চোখ মুখ কুঁচকে আসে। নিরালায় এই বনে এত পশুপাখি থাকারতো কথা না। কিভাবে এলো সব? অহনার মনে হলো মাহতিম একজন ম্যাজিশিয়ান। পরক্ষণেই মনে হয়, একজন ম্যাজিশিয়ান এটাও করতে পারে? সন্দেহ প্রখর হয়।
মাহতিম অহনার দুষ্টুমি দেখছে। কেমন বাচ্চাদের মতো সব নিছক জিনিসের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছে।
অহনা এগিয়ে এসে বলল,’ তুমি কি কালো জাদু জানো?’
মাহতিম থমথম খেয়ে যায়। অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,’ হঠাৎ এমন কথা কেন বললে?’
‘ এতসব কান্ড ঘটানো একজন সাধারণ মানুষ করতে পারেনা। যদি এমন ম্যাজিশিয়ান থাকত তাহলে সে তার দেশের জন্য কিছু না করে থাকত না। যদি ধরো সে খারাপ, তাহলে সে নিজের জন্য এই দেশটাকেই নরক বানিয়ে দিত।’
মাহতিম মনে মনে ভাবল,’ মেয়ে মানেই সন্দেহকারী। একটু আঁচ পেলেই কেমন সন্দেহের দৃষ্টি বাড়িয়ে দেয়। এরা কি সন্দেহ করা ছাড়া থাকতে পারে না? যা চোখের সামনে দেখছে, তা নিয়েও হাজারটা প্রশ্ন।’
অহনা পুনরায় বলল,’ চুপ করে আছ কেন? বলো কিভাবে এসব করলে?’
‘ তুমি দেখতে পাচ্ছ না। এখনতো রাত তাই আরকি। এইসব ব্যাটারি চালিত জিনিস। একটারো প্রান নেই।’
‘ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে জীবন্ত। যাই হোক, বাংলাদেশে এসব দেখাও বোকামি। কিছুই নেই এই দেশের মধ্যখান বলো আর পাশ বলো।’
‘ তবুও, এই দেশটাই ফিরে আসার জায়গা। আর কোথাও তুমি শান্তি পাবে না।’
‘ আমি জানি। সবার কাছেই নিজ দেশ প্রিয়।’
‘ চলো ভেতরে যাই।’
‘ মানে? আরো কিছু আছে?’
‘ আসল জিনিসটাই বাকি আছে।’
তারা দুজন মিলে গুহার ভেতরে প্রবেশ করে। অহনা পা দিতেই উপর থেকে আলো এবং ফুল ঝড়ে পড়ে তাদের মাথার উপর। কয়েক প্রকার পাখিরাও ডানা ঝাপটায়। অহনা খুশিতে বাকহারা। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ভেতরে তাকিয়ে দেখল সুন্দর একটি কক্ষ।
গুহার ভেতর কক্ষ দেখে অহনা আরো অবাক হয়। ছুটে যায় তার দিকে।
পালঙ্ক, নিভু নিভু মোমবাতি, বড় পেয়ালায় গোলাপের পাপড়ি বিছানো। সব মিলিয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্য। অহনা মোমবাতিগুলো ছুঁয়ে দেখে। পালঙ্কে গিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে, হাত দুটো প্রসারিত করে থপাশ করে শুয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে একটা সাদা ঘর।
মাহতিম অহনাকে বলল,’তুমি বলেছিলে, সাদা তোমার প্রিয় তাই সবকিছু সাদাতেই সাজালাম।’
অহনা মুখ চেপে হেসে বলল,’ একটা জিনিস এখনো সাদা করা বাকি আছে?’
‘ কি সেটা? সবকিছুই তো সাদাই।’
‘ বুঝোনি?’
‘ নাতো।’
‘ তুমি নিজেই সাদা না। তোমার পরনে দেখো, একটা শেরওয়ানী। রংটা বোধ হয় ছাঁই রংয়ের।’
অহনা হেসে ফেলে। মাহতিম বলল,’ তুই নিজেও সাদা পরে নেই, দেখতে পাচ্ছ?’
মাহতিম কোনো কথা না বলে পাশে রাখা একটা বাক্স খুলে। অল্পক্ষণ পরেই বলল,’ এবার কেমন হলো?’
অহনা দেখল, সাদা সিল্কের শাড়ি। কত সুন্দর দেখা যাচ্ছে। অহনা খুশিতে গদোগদো হয়ে শাড়িখানা হাতে তুলে নেয়। বলল,’ তুমিও সাদা গায়ে দাও।’
‘ সম্ভব না। তবে যেটা পরিধেয় আছে সেটাকে সাদা বানাতে পারি।’
‘ তবে তাই করো। কিন্তু একটা কথা বলো, তুমি এই একটা জামা গায়ে দিয়ে আর কয় যুগ পার করবে?’
‘ এটাই আমার পৃথিবীর শেষ সম্বল। পৃথিবীবাসীর জন্য অনেক থাকলেও আমার জন্য নেই।’
‘ পৃথিবীবাসী? তুমি যেন ভিনগ্রহে থাকো?’
মাহতিম নিজের পরনের পাঞ্জাবিটা সাদা আরে নেয়। অহনাও শাড়ি পরার জন্য তৈরি হয়।
মাহতিমের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,’ তুমি থাকলে আমি কি করে শাড়ি পরব?’
‘ আমাকে যেতেই হবে?’
‘ না গেলে কি ম্যাজিক করে পরব নাকি? ম্যাজিকতো তুমি জানো। আমি না।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চলে যাই বাইরে।’
‘ বাইরে না। আমার ভয় করবে। তুমি কোণায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকো।’
মাহতিম অহনার কথা মতো কোণায় গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ কেটে গেল। অহনা শাড়িটাকেই এখনো পেছাতে পারেনি। মনে মনে রাগ হয় নিজের পড়াশোনার উপর। মনে মনে বলল,’এত পড়াশোনা করে লাভ কি হলো, যদি একটা শাড়িই পরতে না পারি?’ পরপরই আবার নিজেকে শাঁসায়, পড়াশোনার সাথে শাড়ি পড়ার কি সম্পর্ক।’
উপায় না পেয়ে মাহতিমকে ডাকল,
‘ এদিকে আসবে একটু?’
মাহতিম জানত এমনটাই হবে। তাই ঘুরে তাকায় পেছনে।
রাত একটায় রূপ নিয়েছে। আরিশ এখনো বাংলোয় বসে ফাইল দেখছে। কিছু সূত্র বের করার চেষ্টা করছে। এই কয়দিনে মা’র্ডার হওয়া আর্মি অফিসার এবং সিক্রেট এজেন্টদের খুঁটিনাটি দেখছে। অদ্ভুত বিষয় হলো এটাই, এখানে পাঁচজনকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেছে তারা জানে না।
পুলিশ অফিসাররাও হাত গুটিয়ে বসে আছে। কোনো কিনারা করতে পারেনি।
আরিশ শেষের ফাইলটা খুলে দেখে অনুজের। অনুজকে কেউ খু’ন করেছে এটাই স্পষ্ট। তবে কোনো মানুষের পক্ষে এতো নির্মমভাবে হ’ত্যা করা সম্ভব না। আরিশের মাথা ধরে আসে। কি হয়েছে কিছুই আন্দাজ করতে পারছে না।
আরিশ এক মগ কফি নিয়ে আবার বসে পড়ে। আজ রাতের মধ্যেই সে সব উদঘাটন করবে। সে ল্যাপটপ অন করে সমস্ত আর্মি অফিসারদের জীবনী দেখতে থাকে। গত কয়েক বছরে কতজন এলো আর গেল, সব।
হঠাৎ তার চোখ যায় একটি ছবির দিকে। যেটাকে উধাও করা হয়েছে।
চলবে….
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৩৯.
মাহতিম ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকে অহনার দিকে। অহনা এক হাতে ধরে আছে শাড়ির কুচি করার পার্ট এবং অন্য হাতে ধরা আঁচল। মাহতিম এগিয়ে আসতেই বলল,’, সাহায্য করো আমাকে।’
মাহতিম ইতস্তত করে। তবুও সিদ্ধান্ত নেয় অহনাকে শাড়ি পরতে সাহায্য করবে। মাহতিম বলল,’ আমি দেখিয়ে দিচ্ছি, তুমি চেষ্টা করো।’
মাহতিম বলল, আর অহনা পরার চেষ্টা করল। তাতেও কাজ হলো না। অহনা পারছেই না। অগত্যা মাহতিম নিজের হাতে নেয় শাড়ির একটা অংশ। পেছন থেকে সামনে নিয়ে এসে বলল,’ শাড়িটাই পরতে পারো না এখনো। তোমার শিখে নেওয়া উচিত ছিল।’
অহনা কিছু বলে না। মাহতিম কুঁচি করে করে সেটা গুঁজতে গেলেই তার চোখ যায় অহনার উন্মুক্ত উদরের দিকে। মাহতিম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
অহনার চোখ বন্ধ অবস্থায় ছিল। কিছুতেই খোলার সাহস পেল না। মাহতিম অহনার উদরে কুঁচি গুঁজার সময় উদরে হাত লাগতেই অহনা শিহরিত হয়ে উঠে। তার পুরো শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহ খেলে যায়। অহনা এক হাত দিয়ে মাহতিমের হাত চেপে ধরে।
লজ্জায় লাল হয়ে আছে অহনা। ঠোঁট দুটো হালকা নড়ে ওঠে। মাহতিমের হাতটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
অহনা চোখ খোলে। কম্পমান দৃষ্টিতে তাকায় মাহতিমের দিকে। মাহতিম অহনার এই আচরণ বুঝে উঠতে পারেনি। কয়েক পল তাকিয়ে থেকেই বলল,’ কুঁচিটা ঠিক করে নাও।’
অহনা ছোট করে উত্তর দিল,’ লাগবে না।’
‘ কেন?’
মাহতিমের হৃদয়ে ঝড় চলছিল। এত কাছ থেকে প্রিয় মানুষটিকে দেখছে। খুব কাছে থাকা সত্ত্বেও অনেকটাই দূরে। ইচ্ছে করছে মিশে একাকার হয়ে যাক। কিন্তু অহনা কি সেই সুযোগ দেবে?
মাহতিম একনজর অবলোকন করল অহনার সমস্ত শরীর। এত কাছে থাকা মেয়েটির চোখ, নাক, ঠোঁট, গলা, উদর সবকিছুই কেমন সেজে উঠেছে। মাহতিম নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই অহনা তার বাহু চেপে ধরে আরো কিছুটা সামনে নিয়ে আসে।
সাদা শাড়িতে অহনাকে সাদা পরী লাগছে। অমায়িক সৌন্দর্যের রানী মনে হচ্ছে। সাদায় পরিবেষ্টিত ঘরটিতে দুটো সাদা প্রাণীও প্রেমলীলায় মত্ত।
মাহতিম নিজেকে আঁটকে রাখতে অসফল হয়। অহনার খোলা চুলের ঘ্রাণ নেয়। মাহতিম ভাবে, এই যে তার শরীর, আর হয়তো বেশীক্ষণ নেই, যেকোনো সময় মিলিয়ে যেতে পারে। যতক্ষণ আছে ততক্ষণে সে মিলতে চায় অহনার সাথে। হয়তো আর কখনোই সে সুযোগ পাবে না। নিজের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় মাহতিমের। অহনার গালে দু হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলল,’ তোমায় কিছু দেওয়ার আছে।’
অহনা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মাহতিম অহনার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কুঁচিটা গুঁজে দেয়। অহনা চোখ মুখ খিঁচে নেয়। মাহতিম মৃদু হাসে। আঁচলটা টেনে দিয়ে ঘরটির এক পাশের একটি সিন্দুক খোলে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু জিনিস নিয়ে ফিরে আসে অহনার কাছে। একটা ডায়রি, পুরনো একখানা ছবির এলবাম,কিছু ফুল, এবং চকলেট অহনার নিকট তুলে ধরে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
‘ভালোবাসাকে নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে আমি আগেও ব্যর্থ ছিলাম আর এখনো। মন মস্তিষ্ক দুটোই ফাঁকা। কি দিয়ে শুরু করা উচিত জানা নেই আমার। তোমার আমার পরিচয় কিছু সময়ের নয়। কয়েক যুগ ধরে। এই কয়েক যুগের ধারাবাহিকতায় আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি, আমি তোমাকে চাই। এতটাই চাই, যতটা পেলে আমাদের শরীর আলাদা থাকবে, কিন্তু হৃদয় মিশে একাকার হয়ে যাবে। পুরনো সেই ট্রাকের পেছনে দৌড়ানোর কথাটা হয়তো ভুলে গেছ, সেদিন তুমি আমাকে বলেছিলে, ভালবাসতে হলে নাকি ট্রাকের পেছনে দৌড়ে তার প্রমাণ দিতে হয়। তোমার অবুঝ চাওয়া পূরণ করতেই কয়েক মাইল দৌড়ালাম। তবুও আমি পেলাম না তোমায়। ভাগ্যের পরিহাসে আমি নিছক স্বপ্নের মতো তোমার কাছে ধরা দিই। কথাগুলো হয়তো তোমার কাছে আন্যরকম শোনাচ্ছে। ভাবছ আবার আমার মাথায় ভূত চেপেছে। তুমি ডায়রিটা পড়লেই সব জানতে পারবে। ডায়রিটা তোমার লেখা এবং এলবামটাও তোমার তৈরি করা।
আমার জীবনে তোমার আগমন ছিল রাস্তায় ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘ’টনার মতো। এখনের চঞ্চল তুমি ছিলে নিশ্চুপ বেশি। একা থাকা পছন্দ করতে সবসময়। তোমাকে জয় করার জন্য অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছিল। অবশেষে জয় করেও নিলাম। আর কিছু সময়ের পরেই আমরা পুরোপুরি এক হয়ে যেতাম। তার আগেই ঘটে যায় জীবনের মোড়। আলাদা হয়ে গেলাম সারাজীবনের মতো। ভেবেছিলাম আর কখনো দেখা হবে না। অথচ হয়ে গেল। সৃষ্টিকর্তা হয়তো চায়নি এতটাও কষ্ট দিতে। তাই তোমাকে পাওয়ার দ্বিতীয় সুযোগ পেলাম আমি।
আগের থেকেও হাজারগুন ভালোবাসা নিয়ে হাজির হয়েছি। যে ভালোবাসা ক্ষয়ে যাবে না, মুছে যাবে না, তিক্ত হৃদয়কে অনায়াসেই জাগিয়ে তুলবে। আমি চাই তুমি আমাকে তোমার সেই প্রেমিক পুরুষ বানিয়ে নাও, যাকে আগেও একবার গ্রহণ করেছিলে, যাকে জীবনসঙ্গী বানানোর শপথ নিয়েছিলে।
আমার আহি, তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। এখনো, ঠিক আগের মতো ভালোবাসি।’
অহনার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে। তৎক্ষণাৎ কোনো কিছু না ভেবেই উত্তর দেয়,’ আমিও…. আমিও তোমায় ভালোবাসি, খুব বেশি ভালোবাসি। এই ভালোবাসার গভীরতা কখনো মাপা যাবে না, গননা করা যাবে না।’
অহনা এক ঝটকায় মাহতিমের হাতের সব জিনিস নিয়ে নেয়। খাটের উপর রেখে দিয়েই মাহতিমের বুকে আয়েশ করে মাথা রাখে। কাঁদো কাঁদো মুখে উচ্চারণ করে,’ পেয়ে গেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা, আমার ব্যক্তিগত ভালোবাসা। আমার মত সুখী আর কয়জন আছে?’
আবারো বলল,’ জানো, তোমার এই বুকে আমার অনেক প্রশান্তি। প্রতিটি হরমোন আমাকে তোমার দিকে টানে।’
মাহতিম হেসে বলল,’ হরমোনের উপস্থিতি টের পাও তুমি?’
অহনা কিছু বলল না। মাহতিম অহনার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে। চোখে মুখে তার ভালোলাগা ভীড় করে। কপালের এলো কেশ সরিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খায়।
অহনা মাহতিমের বাহু খামচে ধরে। পুরো শরীরে এক অমায়িক ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে। মাহতিম অহনার নিষ্প্রাণ ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি দেয়। ঠোঁটজোড়াকে নিজের আয়ত্তে করার জন্য অহনার দিকে তাকায়, সাঁয় চায়। অহনা চোখ বন্ধ করে নেয়। মাহতিম অহনার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের ঠোঁটজোড়া অহনার ঠোঁটে মিলিয়ে নেয়।
অহনা কেঁপে উঠে। মাহতিমকে জড়িয়ে ধরে। চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে।
মাহতিম খেয়াল করে সেই অশ্রু বিন্দু। বলল,’ কাঁদছ কেন?’
অহনার উত্তর আসে না। নিজেকে সে মাহতিমের কাছে উৎসর্গ করে দেয়। মাহতিম পুনরায় জিজ্ঞেস করে,’ তোমার কি খারাপ লাগছে আমার ছোঁয়া?’
‘ না।’ ছোট করে উত্তর দিল অহনা।
পরক্ষণেই অহনা তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল,’বাড়ি যাব আমি।’
মাহতিম অবাক হয়ে বলল,’ কেন?’
‘ যাব বলছি। আমার নিজেকে কেমন খাপছাড়া লাগছে। আমি চাই না এমন কিছু হোক। আমার কথা হয়তো বুঝতে পেরছ।’
মাহতিম হেসে বলল,’ শুধু চুমু খেয়েছি। এতেই ভয় পেয়ে গেলে? মূলত এই কাজগুলো আগেই আমাদের কমপ্লিট। ভুলে যাওয়ার দরুন এটা হচ্ছে তোমার সাথে।’
‘ বাজে কথা রাখো। আমি বাড়ি যাব। তোমাকেও ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা রাত উপহার দেওয়ার জন্য। তবে বিয়ের আগে আর ঘনিষ্ট হতে চাই না।’
মাহতিম হাসে, বলল,’ তুমি চাইলেও আমি হব না। কারণ এটা সম্ভব না। আজ রাতটা এখানেই কাটিয়ে দাও। কাল ভোরে বাড়ি চলে যেও।’
‘ঠিক বলেছ। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ঘুমিয়ে পড়ি।
অহনা সাথে সাথেই খাটে গিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ে। শাড়ি সামলাতে না পারার দরুন উদর উন্মুক্ত হয়ে আছে। মাহতিম খেয়াল করতেই কাঁথা টেনে দেয়।
প্রশান্তি আর এক রাশ ভালোবাসা নিয়ে মাহতিম অহনার দিকে তাকিয়ে থাকে। কখন যে সকাল হয়ে যায় টেরই পেল না।
শেষ রাতেই আরিশের চোখ লেগে এসেছিল। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই আবার সজাগ হয়ে যায়। সারারাত ঘাঁটাঘাঁটি করেও কারো কোনো কূল কিনারা পায়নি। শেষ ফাইলটা ছিল মাহতিমের, যেটা থেকে তার বায়োডাটা মুছে ফেলা হয়েছে।
আরিশের ঘাপলা লাগতেই সে এটা নিয়ে সব খুঁজে দেখছিল। তখনি চোখ লেগে যায়। সকাল ভোরেই কাউকে কল করে বলল,’ একটা আইডি পাঠালাম। এই আইডির লোকের সব ডিটেইলস আমার চাই। নিশ্চয় কোনো যোগসূত্র পাব।’
আরিশ সমস্ত ফাইল জমা করে রাখে। অহনার সাথে দেখা করবে বলে মনটাও ফুরফুরে। কয়েকদিনেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। পাওয়ার ইচ্ছেকে আর বেঁধে রাখতে পারছে না। তড়িগড়ি হয়ে বাড়ি যায়। মোড়ল বাইরে বসে হাওয়া খাচ্ছিল আর জমিজমার খুঁটিনাটি দেখছিল।
আরিশ উশখুশ করতে করতেই মোড়লের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মোড়ল তাকিয়ে বলল,’ সুপ্রভাত।’
‘ সুপ্রভাত বাবা।’
বলেই আরিশ হাত কচলাতে থাকে। মোড়ল খেয়াল করে বলল,’ কিছু বলবি?’
‘ জ্বী বাবা।’
‘ ওই বাবা… আসলে… আমি চাই বিয়েটা তারাতাড়ি করে নিতে।’
চলবে….
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৪০.
মোড়ল উঠে চলে গেল। ঘরে গিয়ে আরিশের মাকে বলল,’ ছেলের ভিমরুতির জন্য বিয়ে পেছনে নিয়েছি, এখন সে কোন সাহসে আবার সামনে আগাতে বলে। ছেলেকে বিষয়টা বুঝিয়ে দাও।’
আরিশ শুনে নেয় কথাগুলো। কিছু না বলে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। রাস্তায় গিয়ে অহনাকে কল করে। ওপাশ থেকে অহনা বলল,’ হ্যালো।’
‘ কি করছ?’
‘ শুয়ে আছি।’
‘ সকাল হয়ে গেছেতো।’
‘ আমি সেটা জানি। ঘুম থেকে উঠে বাড়ি এসে আবার ঘুমিয়েছি।’
‘ বাড়ি এসে আবার ঘুম মানে? রাতে কোথায় ছিলে?’
‘ গুহায়!’
‘ ঘুমের ঘোরে কিসব বলছ। উঠে পড়ো।’
‘ আরেকটু ঘুমাই। অনেকটা কম ঘুমিয়েছি কাল রাতে।’
‘ তুমিতো বললে রাত জাগোনা। তাহলে কি করেছিল কাল রাতে?’
‘ অনেক কিছু। দাঁড়াও ঘুম থেকে উঠে সব বলব।’
‘ আর ঘুমানো যাবে না। উঠে পড়ো। ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নাও। দেখা করবে বলেছিলে। আমি রওনা দিয়েছি, দশটার মধ্যে পৌঁছে যাব। প্রভাত রেস্টুরেন্টে দেখা করব, চলে এসো।’
‘ ঠিক আছে, বায়।’
‘ টেক কেয়ার অফ ইউরসেল্ফ!’
অহনা কল রেখেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
রোস্তম এসে দরজা ধাক্কাতেই হুড়মুড় করে উঠে। চোখ কচলে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে। অনেক বেলা গড়িয়েছে। অহনা দরজা খুলে দিতেই রোস্তম ঘরে ঢুকে।
প্রথমেই তার চোখ যায় অহনার পোশাকের দিকে, বলল,’ এমন সাদা শাড়ি কখন পরলি?’
অহনা থমথম খেয়ে যায়। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে, কি বলবে বুঝতে পারে না। রোস্তম পুনরায় বলল,’ তোকে দেখে তোর দাদির কথা খুব মনে পড়ছে। আব্বা মারা যাবার পরতো সাদা শাড়িই পরে থাকতো, আজ তোকে তার মতো লাগছে। ঠিক আমার আম্মার মতো।’
অহনা বলল,’ কি বললে তুমি? আমাকে তুমি বুড়ি বানিয়ে দিলে?’
‘ আরে না, আমি সেটা বলিনি। বলেছি তোকে দেখে আম্মার কথা মনে পড়ে গেল। তোর মতোই সুন্দরী ছিল আমার আম্মা। তুই তোর দাদির মতো হয়েছিস।’
‘ দাদা কি সুন্দর ছিল না?’
‘ শ্যামবর্ণ ছিল আব্বা। মা তাকে চোখে হারাতো। সে অনেক কাহিনী। আব্বা আম্মার জন্য আমার দাদার কাছে কত মা’র খেয়েছে। অনেক সংগ্রাম শেষে তোর দাদিকে বিয়ে করতে পেরেছে।’
অহনা ভাবে, মাহতিমও কি তাই হবে? সেও কি অনেক সংগ্রাম করবে? তাকেওতো অহনা ভালোবাসে। অনেক বেশি ভালোবাসে। মাহতিমের প্রতিটি কথা, তার চালচলন অহনার খুব প্রিয়। অহনা মনে মনে বলল,’ ইশশ্, কোথায় যেন চলে গেল। কারো যদি নজর লেগে যায়, তখন আমার কি হবে? একটা কালো ফোঁটা দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।’
রোস্তম মেয়েকে অন্যমনস্ক দেখে জিজ্ঞেস করল,’ কিরে ভাবছিস কি?’
‘ কিছু না বাবা।’
‘ বললি নাতো এই সাদা শাড়ি কোথা থেকে আনলি আর কেনইবা পরলি?’
অহনা কি উত্তর দেবে বুঝতে পারেনা। হঠাৎ বুদ্ধি করে বলল,’ ইরার থেকে নিয়েছিলাম। শাড়িটা পছন্দ হয়েছিল তাই কালকেই নিয়েছি। রাতে সখের বসে পরলাম।’
‘ কিন্তু মা, তুইতো শাড়ি পরতে পারিস না। আমার জানামতে তুই শাড়ি পরতে পছন্দ করিস না। কে পরিয়ে দিল।’
‘ তুমিওনা বাবা। এখন ইন্টারনেটের যুগ। অনলাইনেই অনেক রকম ভাবে শাড়ি পরার কৌশল বলা আছে। তুমি যাও এখন, আমি ফ্রেশ হবো।’
‘ ঠিক আছে, আমি যাই তবে।’
অহনা তাকিয়ে থাকে রোস্তমের যাওয়ার দিকে। একজন যোগ্য পিতা রোস্তম। মা মরা মেয়েটাকে কেমন আগলে রাখছে। মাও এত যত্ন নিতে ভুলে যায়, কিন্তু রোস্তম ভুলছে না। অহনার চোখ চিকচিক করে উঠে বাবার প্রতি ভালোবাসায়। কতটা ভালোবেসে বাবা তার খেয়াল রাখে।
অহনা দীর্ঘ হাই তুলে শাড়ি পরিবর্তন করতে লাগে। এমন সময় কোথা থেকে মাহতিম এসে পড়ে। অহনাকে দেখে তার স্পন্দনহীন হৃদয়টা আঁতকে উঠে। অহনার নজরে নেই সেটা। মাহতিম বোকার মতো তাকিয়ে রইল। বাকহারা হয়ে চেয়ে আছে।
শাড়ির আঁচলটা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শরীরের ভাঁজ স্পষ্ট। অহনা পুরোপুরি অর্ধ’নগ্ন অবস্থায়। আর বেশি কিছু হওয়ার আগেই মাহতিম জোরেশোরে বলল,’ আমার নক করে আসা উচিত ছিল। আমি কিছু দেখতে পাইনি।’
অহনা মাহতিমকে দেখেই আঁচল জড়িয়ে নেয় গায়ে,
‘ তুমি হুট করে ঢুকে গেলে কেন?’
‘ আমি বুঝতে পারিনি তুমি চেঞ্জ করবে!’
‘ কোথায় গিয়েছিলে?’
‘ একটু কাজ ছিল।’
‘ জানতাম, এটাই বলবে। তাই কোথায় গিয়েছ দ্বিতীয়বার আর জিজ্ঞেস করব না। ভেতরে আসো।’
‘ তুমি চেঞ্জ করো, আমি বাইরে যাই।’
‘ লজ্জা হরণ করে এখন মজা নিচ্ছ? ভেতরেই দাঁড়াও, আমি ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে আসি। ঘরে কেউ ছিল না তাই তখন… বাদ দাও আমি আসছি।’
অহনা ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসে। একটি অফ হোয়াইট শার্ট এর সাথে জিন্স প্যান্ট পরেছে।
মাহতিম দেখেই বলল,’ এটা পরবে না তুমি!’
‘ কেন?’
‘ সালোয়ার কামিজ বা শাড়িই পরো। এসবে ভালো দেখায় না তোমাকে। নারীকে সালোয়ার, শাড়িতেই সুন্দর লাগে।’
‘ ঐসবে কম্পোর্ট ফিল করি না আমি।’
‘ ছেলেদের পোশাক এসব। তুমি কেন পরবে?’
‘ সমান অধিকার এখন বুঝেছ, পরতেই পারি।’
‘ সমান অধিকার যেহেতু তুমি রিক্সা চালাও, আমি শাড়ি পরে বসে থাকি। সমান অধিকার বলে কথা।’
‘ এসব কি বলছ?’
‘ কিছুই না। তুমি এই ড্রেস পরিবর্তন করে আসো।’
‘ আচ্ছা যাচ্ছি।’ মুখ বাঁকিয়ে অহনা ওয়াসরুমে চলে গেল।
দশটা বাজতেই অহনা বেরিয়ে যায়। মাহতিমের সাথে কথা বলতে বলতে পথ চলে। রিক্সা নেয়নি। হেঁটেই অনেকটা পথ পাড়ি দেবে বলে ঠিক করেছে।
রাস্তার পাশে থাকা নয়নতারা ফুল ছিঁড়ে মাহতিম অহনার কানে গুঁজে দেয়। গোলাপী রঙের এই ফুলে অহনাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে।
হঠাৎ সালোয়ার কামিজ পরার দরুণ সৌন্দর্য আরো কয়েক গুন বেড়ে গেল। মাহতিম বলল,’ একজন প্রেমিককে শেষ করার জন্য প্রেমিকার ভুবনমোহিনী চাহনিই যথেষ্ট, যেটা তোমার মধ্যে রয়েছে।’
‘ তাই বুঝি?’
‘ একদম। তোমাকে দেখলেই দেখতে ইচ্ছে করে। এই দেখা যেন কখনো শেষ হবার নয়। বার বার, শত কোটি বার প্রেমে পড়লেও যেন এই পড়া শেষ হবে না।’
অহনা হেসে বলল,’ এটা বুঝতে পারছি না। এতবার যদি প্রেমে পড়ো, তাহলে প্রতিবার তোমাকে তোলে কে?’
‘ ইয়ারকি মারছ তাই না?’
‘ উত্তরতো দিবে।’
তারা পৌঁছে যায় প্রভাত রেস্টুরেন্টের সামনে। মাহতিম বলল,’ এবার তুমি যাও, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।’
অহনা মাহতিমের হাত টেনে ধরে,’ না, তুমিও যাবে।’
‘ জোর করো না। তোমাদের মাঝে আমি কি করব?’
‘ আমার পাশে বসে থাকবে।’
কয়েকজন লোক খেয়াল করল বিষয়টা। তারা দেখতে পেল অহনা কাউকে টেনে ধরে আছে, অথচ কাউকে নজরে পড়ছে না। লোকজন এগিয়ে আসে। একজন বলল,’ কি হলো মেয়ে। এভাবে কাকে টানছ? এখানে তো কেউ নেই।’
অহনার মনে পড়ল মাহতিমকে দেখা যায় না যে। তাই কোনো কথা না বাড়িয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলে যায়। মাহতিম কাবাবে হাড্ডি হতে অহনার পাশে বসে পড়ে। অপরপাশে বসে আছে আরিশ। মোবাইলের থেকে চোখ সরিয়ে বলল,’ আমি বাড়ি থেকে এখানে আসতে সময়ের হেরফের করিনি। তুমি দশ মিনিটের রাস্তা পাড় হতে দেরি করলে। কথায় আছে না, মক্কার মানুষ হজ পায় না, ঠিক তেমন ব্যাপার ঘটল।’
‘ আমি ঘুমিয়েছিলাম। আপনার এটা বোঝা উচিত ছিল। বকা দিচ্ছেন কেন?’
‘ বকছি না। কথাটা বললাম শুধু। তোমার জন্যতো আমি সারা জনম অপেক্ষা করতেও রাজি আছি।’
‘ তাহলে অপেক্ষা করে থাকুন সারাজীবন।’ গলা নামিয়ে বলল অহনা।
‘ কি বললে তুমি?’
‘ বলেছি অপেক্ষা বেশিদিন থাকে না, পূর্ণতা পাবেই।’
‘ আমি এটা বিশ্বাস করি। এটাও বিশ্বাস করি, কিছুদিনের মধ্যেই তোমার থেকে ভালো কোনো উত্তর পাব।’
‘ পাবেন না।’ অহনা ছোট করে বলল।
‘ কিছু বললে?’
‘ কই নাতো।’
‘ আজকাল মনে মনে কথা বলা শুরু করে দিলে নাকি?’
‘ তেমন কোনো ব্যাপার না। আমি খুব খিদে পেয়েছে, কিছু খেতে দিন।’
অহনা অযথাই বলল। আসার সময়েই খেয়ে এসেছে। কথা এড়ানোর জন্য খাবারের কথা বলল।
আরিশ তৎক্ষণাৎ খাবার অর্ডার করে, বলল,’ চাচা কেমন আছে?’
‘ ভালো।’
অহনা আরিশের দিকে তাকাতেই কেমন অন্যরকম লাগল। চোখগুলো ফুলে রয়েছে। অহনা জিজ্ঞেস করল,’ আপনি কি কাল করতে ঘুমাননি?’
‘ না, ততটা ঘুমাতে পারিনি। কিছু কাজ করেছি, শেষ রাতে ঘুমাতাম। তোমার সাথে দেখা করব তাই উঠে পড়লাম।’
‘ কি এমন কাজ রাত জেগে করলেন?’
‘ আর্মি অফিসারদের কিছু ফাইল। একজনের বায়োডাটা খুঁজতে গিয়ে দেরি করে ফেললাম বেশি।’
‘ কার?’
‘ নামটা ছিল মাহতিম…..
চলবে….