ছন্দময় সংসার পর্ব-০২

0
811

#_ছন্দময়_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২_

ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছে তরি। এখনো কুশানের আসার কোনো খবর নেই। তরি উঠে গিয়ে রুমে যায়। রুমে ড্রিম লাইট অন করা,, কিন্তু কুশান নেই। কোথায় কুশান? ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় তরি। নাহ! সেখানেও কুশান নেই। তাহলে কি বারান্দায়?

তরি বারান্দার দিকে এগিয়ে যায়। বারান্দায় গিয়েই দেখতে পায় কুশানকে। চাঁদের আলোয় কুশানকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কুশান একটা থ্রি-কোয়াটার প্যান্টের সাথে একটা টিশার্ট পরিধান করে বারান্দার ডিভানে বসে আছে। কুশানের দৃষ্টি রাতের চাঁদ যুক্ত আকাশের দিকে বিদ্যমান।

তরি আস্তে আস্তে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়। কুশান এখনো বুঝে উঠতে পারেনি তরির উপস্থিতি। তরি কিছু সময় কুশানকে দেখে নেয়। সকালে বলা কুশানের ডিভোর্সের কথা মাথায় ঘুরছে তরির। চোখটাহ ভরে আসছে তরির।

বড্ড ক্ষুধা পাচ্ছে তরির। সকালে খেতে পারে নি,, দুপুরেও খেতে পারে নি,, রাতে এখনো খাওয়া হলো নাহ,, ক্ষুধা তো লাগার কথায়। কিন্তু,, মানুষ টাহ যে এখনো রাতের খাবার খেলো নাহ,, বাহিরে থেকে খেয়ে এসেছে কি নাহ তাও অজানা।

কুশান এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তরির উপস্থিতি সে এখনো টের পায় নি। তরি আরও কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” অনেক রাত হলো,, খাবার দিয়েছি। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সব।”

কুশান একটু কেঁপে উঠে তরির কথায়। আস্তে আস্তে তরির দিকে তাকায় কুশান। তরির শরীরে চাদের স্নিগ্ধ আলো এসে পড়ছে। তরি একটা ফতুয়া আর প্লাজু পরা। শরীরে কোনো ওড়না নাহ থাকায়,, শরীরের সব ভাজ স্পষ্ট। চাঁদের আলোয় তরিকে যেন আরও আকর্ষনীয় লাগছে। তরির কাছে যাওয়ার সম্পূর্ন অধিকার কুশানের আছে,, অনেকবার যাওয়াও হয়েছে এই ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে,, একটা সন্তানও তাদের আছে। তাও আজ কেন যেন তরির কাছে যেতে পারছে নাহ কুশান। তরির এই আবেদনময়ী শরীরের কাছে গিয়ে নিজের পুরুষ উত্তপ্ত মনকে শান্ত করতে আজ যেন,, কুশান কোথাও একটা বাঁধা পাচ্ছে।

কুশান তরির থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বারান্দার রেলিং এ হাত দিয়ে দাড়ায়। তরি বুঝতে পারছে নাহ কি করবে। তাও আবার বলে ওঠে,
–” বাইরে থেকে কি খেয়ে এসেছো? খাবে নাহ?”

কুশান আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি আজ সারাদিন কিছুই খায় নি।”

কথাটাহ শুনে ধুক করে উঠে তরির বুক। মানুষটাহ আজ সারাদিন কিছু খায় নি? সে তো ক্ষুধা সহ্য করতে পারে নাহ,, কেন খায় নি সে? তরির চোখ ছলছল করে উঠে। কান্না যেনো দলা পাকিয়ে আসছে তার। নিজেকে একটু সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” চলো,, খেয়ে নিবে।”

–” খেতে ইচ্ছে করছে নাহ আমার।”

তরি চুপ মেরে যায়। কুশানকে জোরও করতে পারছে নাহ তরি। কিন্তু,, কেন? সে তো তার স্বামী। তাহলে পারছে নাহ কেন? সকালে কুশানের বলা কথায় কোথাও কি খচখচ সৃষ্টি করছে তার মনে? কিছু সময় পর কুশান বলে ওঠে,
–” শিশির আজ আমার জন্য বিরক্ত করে নি?”

–” করেছে।”

–” ওহ! আসলে…”

কুশানকে কথা শেষ করতে নাহ দিয়ে তরি বলে ওঠে,
–” সমস্যা নেই। করতে দাও ওকে এরকম। কয়েকদিন পর বাবা- মা আলাদা হয়ে গেলে,, ওকে হয় মায়ের কাছে আর নয়তো বাবার কাছে থাকতে হবে। যেকোনো একজনের জন্যতো ওকে খুতখুত করতেই হবে। অভ্যাস করুক এখন থেকেই।”

তরির এমন কথায় চমকে তরির দিকে তাকায় কুশান। হালকা থম কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কি বলছো তুমি এইসব?”

তরি এক পলক কুশানের দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সকালে,, তার পাপা নিজেই তার মাম্মামকে ডিভোর্সের কথা বলে গেছে।”

কথাটাহ বলেই তরি চলে যেতে নিলে কুশান বলে ওঠে,
–” তরি!”

থেমে যায় তরি। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার। তাও নিজেকে সামলিয়ে নিচ্ছে তরি। কুশান একটু এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” তরি! আমি আসলে…”

তরি কুশানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি বলবে তুমি কুশান? আমি জানি,, তোমার আমার মাঝে এই কয়েকদিন ধরে অনেক ঝামেলা হচ্ছে। অনেক ছোট্ট ছোট্ট বিষয় নিয়ে অনেক সিনক্রিয়েট হচ্ছে। বুঝতে পারছি নাহ আমি কিছু। আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি নাহ।”

তরির চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসে। শিশিরের পাশে শুয়ে শিশিরকে বুকের কাছে টেনে নেয় তরি। নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে। কুশান রুমে এসে কিছু একটা নিয়ে আবার বারান্দায় চলে যায়।

তরি একটু উঠে বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখে কুশান সিগারেট খাচ্ছে। তরি আবার কিছু নাহ বলে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে। আর এইভাবে কখন যে তরি ঘুমিয়ে যায় সে নিজেও বুঝতে পারে নাহ।


রাতের অন্ধকার সরিয়ে দিনের আলো ফুটে উঠে,, সূর্য কিরন ছড়ায় তার,, এক তেজস্ব রশ্মি দিয়ে ভরিয়ে তুলে চারিদিকে। পাখিদের ঘুম ভেঙে যায়,, সূর্যের আভাস পাওয়ার সাথে সাথেই,, তারপর শুরু হয় তাদের কিচিরমিচির সুরেলা কণ্ঠ। আসলেই,, সকাল সুন্দর।

জানালা দিয়ে সূর্যের আলো চোখের উপর পড়তেই চোখ মুখ কুচকিয়ে নেয় তরি। আস্তে আস্তে চোখ খুলে পাশে তাকিয়ে দেখে,, শিশির ঘুমিয়ে আছে কুশানকে জড়িয়ে ধরে,, কুশানও ছেলেকে আগলে ধরে ঘুমাচ্ছে। তরি উঠে বসতেই দেখে তার শরীরে কম্বল জড়ানো। কে দিলো এই কম্বল? কুশান?

তরি কুশানের দিকে তাকায়। মানুষটার মুখটাহ শুকিয়ে আছে। গতকাল কিছুই খায়নি মানুষ টাহ। তরি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে আসতেই চোখ যায় টেবিলের উপর। খাবার গুলো একইভাবে সাজানো আছে। তরি এগিয়ে গিয়ে দেখে খাবারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। গতকাল একদমই খেয়াল ছিলো নাহ তরির খাবার গুলোর কথা। খাবার গুলো ফেলে দিয়ে নতুন করে খাবার বানাতে শুরু করে তরি।

এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে আসে। তরি রুটি বানাচ্ছিলো,, কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে হাত ধুয়ে দরজা খুলতেই দেখে জিহাদ চৌধুরী ( কুশানের বাবা ),, মায়া চৌধুরী ( কুশানের মা ) আর কুহু ( কুশানের বোন ) সবাই দাড়িয়ে আছে। ওরা সবাই গ্রামে থাকে। তরি ওনাদের দেখে হেসে বলে ওঠে,
–” আরে! বাবা, মা আপনারা? কই আপনারা তো জানান নাই আসছেন?”

কুহু এগিয়ে এসে তরিকে হালকা জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে বলে ওঠে,
–” আসলে ভাবি! আমিই জানাতে বারন করেছিলাম। তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।”

তরিও হেসে বলে ওঠে,
–” আসলেই অনেক সারপ্রাইজড হয়েছি। বেশ করেছো,, এসো ভেতরে এসো। বাবা,, মা আপনারাও আসুন।”

সবাই রুমের দিকে চলে যায়। তরি তাড়াতাড়ি গিয়ে সকালের খাবার বানিয়ে ফেলে। কিছু সময় পর কুশান উঠে ডাইনিং রুমে আসতেই কুহুকে দেখে বলে ওঠে,
–” কুহু! তুই?”

কুহু কুশানের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” সকালেই এসেছি।”

কুশান হালকা ভ্রু কুচকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোরা আসছিস। কই তরিতো আমাকে কিছু বলে নি।”

–” আসলে,, ভাইয়া! ভাবিও জানতো নাহ,, আমরা নাহ জানিয়েই এসেছি।”

–” আব্বু – আম্মু কোথায়?”

–” রুমে।”

কুশান বাবা-মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের বাবা- মাকে দেখে হেসে দেয়। এগিয়ে গিয়ে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” মা! আসছো,, আমাকে বলো নি কেন?”

মায়া চৌধুরী মায়াবী হেসে বলে ওঠে,
–” আমি তো কইতেই চাইছিলাম,, তই কুহু কইতে দিলো নাহ।”

–” আস্তো ফাজিল এই কুহু। যাই হোক,, কেমন আছো তোমরা?”

–” আল্লাহ রাখছে ভালো। তোর কি অবস্থা আব্বা! মুখ এমোন শুকনো লাগে ক্যান তোর?”

–” নাহ মা! আসলে অফিসে অনেক কাজ থাকে তো,, তাই আরকি একটু ক্লান্ত থাকি।”

জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আজ অফিস নাই?”

–” নাহ! আব্বু! আজ আমার অফ ডে।”

–” আইচ্ছা!”

কিছু সময় পর তরি খাবার টেবিল গুছিয়ে সবাইকে ডাকে। মায়া চৌধুরী ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতে আসতে বলে ওঠে,
–” দাদুভাই কই বৌমা?”

–” আসলে মা! শিশির এখনো ঘুম থেকে উঠে নি।”

এর মাঝেই শিশিরের “মাম্মাম” ডাক ভেসে আসে। তরি তাড়াতাড়ি রুমে এসে শিশিরকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে আসে। মায়া চৌধুরী শিশিরকে আদর করতে করতে খাবার খেতে থাকেন।

#_চলবে………🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে